শিমুল বাশারের স্মৃতিগদ্য ‘ঘোলা চাঁদ ও পাগলকথন’

প্রকাশিত : জুলাই ৩১, ২০২০

আরেফিনের কথা মনে পড়ে। রাস্তায় মেয়েদের পেছনে পেছনে হাঁটে আর একা একা কথা বলে, আমার একটা কলার বাগান আছে। সেখানে দোয়েল পাখি বাসা বেঁধেছে। ছোটটো সুন্দর সেই বাসায় বসে মিষ্টি দোয়েল পাখি সারাদিন ট্যুট ট্যুট গান করে।

আরেফিনের এই আচরণে ভদ্র ঘরের মেয়েদের খুব অপমান বোধ হয়। বাসায় নিজের ভাই অথবা বাবার কাছে বিচার দেয় আরেফিনের নামে। আরেফিন মার খায়। আবার কেউ কেউ আরেফিনের কথা মনে করে আজীবন একা একা হাসে।

আরেফিনের ভয় হয়, সুস্থ মানুষেরা যদি তার কলাবাগানের কলা চুরি করে নিয়ে যায়! সুতরাং আরেফিন তার বাগানের কলা পরিপক্ক হবার আগেই কেটে ফ্যালে। আরেফিনের সেই কলা আর কখনোই পাকে না।

আরেফিন আমাকে বলে, শিমুল ভাই, আমি ১৫টা উপন্যাস লিখেছি। আপনি ছাপায়া দ্যান আপনার নামে।
আমি বুঝি, আরেফিন কিছুই লেখে নাই। এসব বলতে আর ভাবতে তার ভাল্লাগে।

আমি এ জীবনে পাগল ছাড়া সুস্থ মানুষদের খুব বেশি ভালোবাসিনি। বড়জোর সৌজন্যতার দেয়াল অটুট রেখে সুস্থদের সাথে পাশে পাশে হেঁটেছি। কখনোই নিজের ভেতরের প্রকৃত আমাকে গ্রহণের দাবি জানাইনি। অপাত্রে সব দিতে নেই। জীবনের কাছ থেকে কম শিখিনি। কারণ—
আমি সেই অবহেলা, আমি সেই নতমুখ
নীরবে ফিরে যাওয়া অভিমান-ভেজা চোখ...

এসব কবিদের কথা। আমি কবি নই। আমাকে গ্রহণ করার কোনও দরকারও নাই। আমি নক্ষত্রের আলো ধার করা চাঁদও নই। আমার পৃথিবী আলোকিত করার মতো পর্যাপ্ত আলো হৃদয়ে আছে। আমার বন্ধু সরফরাজও তেমনই এক পাগল। মাঝে মাঝে এ শহরের বঞ্চনা আর গ্লানি ঘিরে ধরলে আমি তার ছোট্ট কুটিরে বেড়াতে যাই। ডাল, ভাত আর আলু ভর্তা খাই। অপরিণামদর্শীর মতো এলোমেলো আর অহেতুক কথা বলি... তামাশা করি। মধ্যরাতে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়ায়া থাকি। কোনো কোনো রাতে সরফরাজ যখন কাঁদে তখন আকাশের চাঁদ ঘোলা হয়ে যায়।

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও সংবাদকর্মী