শ্রেয়া চক্রবর্তী

শ্রেয়া চক্রবর্তী

শ্রেয়া চক্রবর্তীর আত্মগদ্য ‘রাত গভীরের সংলাপ’

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৬, ২০২১

১.
মেয়েদের এখনো অনেকে ভাবে নরম মাটি। ক্ষমতা অর্জিত সম্পদের মতো সেও অধিকার করার বস্তু। কৈশোর থেকে যৌবনে পা রাখার সন্ধিক্ষণে অনেক সদ্য গোঁফ ওঠা কিশোরকে বলতে শুনেছি, ‘মালটাকে তুলতে হবে’ কিংবা  ‘ও তো ওকে তুলে নিয়েছে’। এটাই রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আমার এক প্রেমিক একবার এক পরীক্ষায় পাশ না করতে পারার কষ্টে আমাকে খপাৎ করে ধরে চুমু খেয়েছিল। অর্থাৎ ও পরীক্ষায় ফেল হলেও এ পরীক্ষায় পাশ। হাতের নারী পাশে থাকলে সাহস বাড়ে। বুঝি। কিন্তু তাকে মূল্য দেয়ার বেলা? এক প্রেমিকের থেকে বিদায় চেয়েছিলাম।  সে বলেছিল, ‘আমার জিনিস নিয়ে নিলো।’ আজও বুঝতে পারি না কোন্ যন্ত্রণা তার বেশি ছিল, আমাকে হারানোর নাকি অন্যের হাতে আমাকে হারানোর। আজও কানে বাজে, ‘আমার জিনিস নিয়ে নিলো।’ এক বুড়ো প্রেমিকের হাত থেকে আমাকে উদ্ধার করতে চাওয়ায় সেই লোকটি বলেছিল, ‘দেখি কি করে আমার থেকে কেড়ে নেয়।’ যুযুধান দুই পক্ষের মধ্যে আমি ছিলাম সেই কেড়ে নেওয়ার জিনিস। মাল। বস্তু।

কোনোদিন কারোর ভালোবাসার ছিলাম কি? চিরদিনই আমার স্ট্যাটাসটা অনেকটা ট্রফির মতো। গোল পোস্টে বলটা মেরে যাকে হৈ হৈ করে বাড়ি নিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু তারপর? যাকে পেতে ইচ্ছে হয় পাওয়া যেতেও পারে। কিন্তু তারপর? ভালোবাসা বড় জটিল জিনিস, দুর্মূল্য, অতকিছু আশাও করি না, শুধু মূল্যটুকু দিতে পারে ক’জন? উঁচু নয় নিচুও নয়, সমানে সমানে। যে তুলে নেয়ার মাল নয়, জয় করার বস্তু নয়, আসলে অনুভব করার, তাকে জানতে বুঝতে তার সমস্ত কিছুর সাথে একাত্ম হতে একটা মন প্রয়োজন।  একটা সুস্থ মন । একটা সাদা মন। একটা মন যা মানুষের, যে নিজেকে অকারণ বড়ও ভাবে না আবার ছোটও নয়। যে নিজেকে ভাসিয়ে রাখে, শুধু অকারণ পুলকে, প্রেমে, ভালোবাসায়। একটা বয়স হচ্ছে তো। আমিও ক্লান্ত। আমি আর কারোর দ্বারা বিজিত হব বলে বসে নেই। সূক্ষ্ম স্থূল কোনো অর্থেই নয়। যতদূর মনে পড়ে, মানুষকে তার যোগ্য সম্মান দিয়েই মিশি। ভদ্রভাবে মিশি। সুতরাং আই অ্যাম নট দেয়ার এনি মোর ফর টেকিং এনি শিট। আমি কারো বিজয়ের গৌরব নই। কারো সুলভ শৌচাগারও নই যেখানে ইচ্ছে মতো ধুয়ে ফেলা যায়। সময়টা প্রত্যেকের জন্য কঠিন। আসুন আগামী দিনগুলিতে আমরা আরও বেশি সংবেদনশীল হই, প্রত্যেকে প্রত্যেকের প্রতি।

২.
আমি আমার সবথেকে ভেতরের কথাগুলো কাউকে বলতে পারি না। আসলে সবথেকে ভেতরে যেগুলো থাকে সেগুলো কোনো কথা নয়। সেটা আসলে ক্রমশ ঝাপসা হতে থাকা একটা দেয়াল। যেখানে অজস্র হরফ লেখা, অর্ধেক উঠে গেছে কিছু কিছু এখনো অমলিন, দেয়ালের একপ্রান্ত থেকে ইট খুলে পড়ে গেছে, আরেকদিকে শ্যাওলা। কিংবা একটা অন্ধকার কুয়ো, যার তলা অবধি দেখা যায় না। শুধু মাঝরাতে দড়ি বালতির শব্দ শোনা যায়। বালতি কেবল নামে আর নামে, জল ওঠে না। আমরা এমন অনেকেই আমাদের সবথেকে ভেতরের কথাগুলো কাউকে বলতে পারি না। মা, বাবা, স্বামী, স্ত্রী, প্রেমিক কিংবা বন্ধু যারা কেউই হয়তো তেমন খারাপ মানুষ নয়, তবু তারা বোঝে না কলরব করে বেড়ানো মানুষটি আসলে ভেতর ভেতর কত শূন্য, একটা খড়কুটো খুঁজে বেড়ায়। তারা বোঝে না কারণ তারা বিচারক হয়ে বসে। মানুষটির থেকে নিজেকে আলগা করে দূরে সরিয়ে সম্পর্কের পাদুকা জোড়া বাইরে খুলে রেখে নিরপেক্ষ বিচারটুকু হয়ে ওঠে না। দড়ি কেবল লম্বা হয়, বালতি পায় না জলের তল।
 
কাউকে কাউকে কেবল দেয়াল হতে হয়। অপ্রকাশিত থেকে যাওয়া মানুষগুলো কেউ উন্মাদ নয়। শুধু উন্মুক্ত হতে চায়। কেউ শুনুক তো। আমার সবথেকে প্রিয় গ্রন্হ আমি নিজে। কত মননের সাথে নিজেকে পাঠ করি। আর লিখি। পাঠ প্রক্রিয়া ক্রমশ দীর্ঘতর হয় নিজেকে অতিক্রম করে আরও অনেকের মাঝে শুধু দেয়াল হয়ে বসে। আমি কম বলি। কারণ আমি আসলে অনেক বেশি শুনি। প্রতিটি ধ্বনিতে আমার কান পাতা। আমি বিযুক্ত, কারণ আমার যোগসূত্র আমার গভীরে।  যে শিল্পী অরণ্যে ঘুম ভেঙে সূর্যস্নাত আকাশের দিকে তাকিয়ে গুহার গায়ে আঁকাবাঁকা আঁচড়ে কিছু লিখেছিল, আমি তার মতো। আদিম। একা। শুদ্ধ। যার মুগ্ধতা আছে। সমর্পণ আছে। ভিড় থেকে দূরে যে মানুষের যূথবদ্ধ খেয়ালি নিরবচ্ছিন্ন সুখস্রোতে ভেসে চলার দিকে চেয়ে থাকে। আর ওদের হয়ে প্রশ্ন করে নিজেকে। যা কিছু দেয়ালের মতো নির্মোহ করে তোলে তেমনই অস্বস্তিকর কিছু প্রশ্ন, ধ্বনি লেগে স্রোতের ভেতর যদি কারো ঘুম ভাঙে তাতে!

৩.
ইথারাইজড টেবিলে সার্জিক্যাল ছুরি দিয়ে সাদা চামড়ার আস্তরণ নিপুণভাবে কেটে ফেলার পর ডাক্তার বাবু যা দেখেন, তা কি সুন্দর? রক্ত মাংস নাড়ি ভুঁড়ি জর্জরিত আরও অন্তর্গত যা কিছু একটি মসৃণ চামড়ার আস্তরণে ঢেকে কতই না রমণীয় হয়ে ওঠে। সঙ্কোচন প্রসারণের মাধ্যমে ধমনীতে রক্ত প্রবাহের কারণ হয়ে ওঠে প্রেমের প্রতীক, হৃদয়, ওই আবরণের নিচে চাপা পড়ে। একটি আস্তরণ খুব প্রয়োজন। আগুনের গোলা লক্ষ কোটি বছর ধরে শান্ত হয়ে বুকের ভেতর ধারণ করে কাঠ কয়লা গরল। অথচ ওপরে তার মাটি, ফুল ফল ফসলের আস্তরণে ঢাকা। মানুষের মনের ভেতরেই বা কি আছে? যুগ-যুগান্তের অন্ধকার, ভয়, নিরাপত্তাহীনতা, ঈর্ষা, জিঘাংসা, যন্ত্রণার বোধ। ওপর থেকে ধ্বনি দিয়ে, শব্দ দিয়ে, কাব্য দিয়ে, সঙ্গীত দিয়ে শিল্পী তাকে সুন্দরতা দিয়েছে। ভালোবাসার আবরণ দিয়ে মানুষ তাকে করেছে মোহময়। ওই চাদরটুকু সরিয়ে নাও। দেখতে পাবে তার নিরাবরণ নিরাভরণ সত্তাটুকু। যেমন দেখা যায় পোস্ট মর্টেমের টেবিলে, রক্ত মাংস নাড়ি ভুঁড়ি জর্জরিত আরও অন্তর্গত যা কিছু, হয়তো বা মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কিংবা সময়।

এসবের বাইরেও এক সাধনা আছে। আলোকিত হওয়ার সাধনা। এই ব্রহ্মাণ্ডের অকূল তিমিরে দূরে দূরে  যেমন এক একটি নক্ষত্রের আলো, তেমনই মনের ভেতর অন্ধকারে প্রদীপ জ্বালানোর সাধনা। যে মানুষ সেই সাধনায় নিমগ্ন  হন, তিনি ক্রমশই নীরব হন। তার আর কারও কাছেই কিছুমাত্র প্রমাণ করার থাকে না। বাকি আমরা সবাই কেবল ওপরের সাধনাটুকু করছি। তবে অভিপ্রায় এমন যদি বা কোনোদিন চকমকি ঠুকে ঠুকে প্রকৃত আলোটাই জ্বলে ওঠে...

৪.
জীবনে এমন একটা সময় আসতে পারে যখন হয়তো আপনি একেবারে একা। একা বলতে নিঃসঙ্গ নয়। একা অর্থে ভিড়ের মধ্যেও একা। যেন একটা স্ফটিকের অর্বুদের ভেতর আটকে পড়েছেন আপনি। আপনার বাইরে যে দেয়াল তার ভেতর দিয়ে আপনাকে দেখা যায় কেবল কিন্তু স্পর্শ করা যায় না। ওই স্ফটিক ভেঙে বেরিয়ে আসার শক্তি নেই আপনার যতক্ষণ না তা গলে জল হয়ে যায় স্বাভাবিক ওমে। বাইরের কেউ ওই দেয়ালটি দেখতে পায় না। তারা ভাবে এত সহজ ভাবে আপনাকে দেখা যায় তাই হয়তো স্পর্শও করা যায় যতক্ষণ না হাত বাড়াতে গিয়ে কঠিন কিছু ঠেকে। আপনিও স্বাভাবিক ভাবেই চলে ফিরে বেড়ান অথচ আপনার চলা ফেরার ছন্দের আড়ালে আপনি যে কোনো এক অর্বুদের ভেতর বন্দি, সেকথা আপনি ছাড়া কেউই জানে না। হয়তো আপনাকে সঙ্গ দিতে প্রস্তুত অনেকেই, কিন্তু আপনি সে অবধি পৌঁছতে পারেন না। আবার যার কাছে আছে ওম আপনার স্ফটিক যথেচ্ছ গলানোর মতো সে হয়তো এ সম্পর্কে উদাসীন, অন্যত্র মগ্ন। সুতরাং আপনার দিন কাটে, কাটে অপেক্ষায়। ঘড়িটিও সময় জানিয়ে যায় টিক টক। কিন্তু আপনি কিই বা করবেন। আপনি ভাবেন কবে সেই মানুষটি আপনার কাছাকাছি আসবে যার অন্তর্দৃষ্টিতে ধরা দেবে আপনার স্ফটিক স্বচ্ছ কারাগার আর তখনই সে আগুনের আয়োজনে ব্যস্ত হবে... সেই আগুন কেবল যা আপনাকে মুক্ত করবে এই চিরবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার অভিশাপ থেকে, যুক্ত করবে বন্ধনে।

৫.
এই পৃথিবীতে যেদিন থেকে মানুষ অবতীর্ণ হয় সেদিন থেকেই তার অদৃশ্য লড়াই শুরু। নিজেকে রক্ষা করার শক্তি জন্মগত ভাবে আপনি পেয়েছেন। আপনার ভ্রূণ তৈরি হয়েছে একটি ডিম্বাণু ও অনেকগুলো শুক্রাণুকে পিছনে ফেলে জিতে আসা বিজয়ী শুক্রাণুর মিলনে। এই লড়াই অবিরাম। ভ্রূণ অবস্থায় মাতৃজঠরে যেটুকু আপনি সুরক্ষিত তাও ঝরে যাওয়ার একশো শতাংশ সম্ভাবনাকে মিথ্যে প্রমাণিত করেই পৃথিবীতে মানুষের আগমন। জন্ম হলে মানুষ জীবন ধারণ করবে, জীবনের আনন্দ নেবে, কারণ জিজীবিষা তার অন্তর্গত। কিন্তু মৃত্যুর কোনো বিরাম নেই। প্রতিটি কোষের মৃত্যু হচ্ছে , পুনর্গঠন হচ্ছে আর নতুন মানুষ হয়ে উঠছেন আপনি রোজ নিজেরই অজান্তে। জন্ম হলে মৃত্যুই একমাত্র সত্য। প্রকৃতি নির্বিচার তাই এই ব্যাপারে আপনাকে কোনো বিশেষ সুবিধা দেয়ার ক্ষমতা তার নেই। এইবার এই মাঝের সময়টুকু এই পুতুল খেলার সংসারে আপনি কিভাবে ব্যয় করবেন সে আপনার ব্যাপার। কিভাবে করবেন তা দেয়া আছে আপনার সফটওয়্যারে মানে আপনার জিনের ভেতরেই। আপনার জিন সুনির্দিষ্ট প্রবণতা যা নিয়ে আপনি জন্মেছেন এবং জন্ম থেকে যত অনির্বচনীয় ও অপ্রত্যাশিত ঘটনার আপনি সম্মুখীন হবেন এই দুইয়ের মধ্যে যে বিক্রিয়া তাই আপনি ও আপনার জীবন।

কোন দুটি জীবন এক নয়, কারণ জিনের ছাপ আলাদা পরিস্থিতি আলাদা এবং এই দুইয়ের বিক্রিয়া প্রক্রিয়ায় যে ফলাফল উঠে এলো তাও আলাদা। তাহলে ভাগ্য কি? ডেসটিনি বলে কিছু আছে?  আপনি মরণশীল এর বাইরে জন্ম থেকে বাকি আর সবটাই অলিখিত। আপনি যেসব বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেছেন আপনার জিন অনুযায়ী তা নির্দিষ্ট হলেও আপনি কোন্ কোন্ ঘটনার সম্মুখীন হবেন সেটা বেশ অপ্রত্যাশিতই বলা চলে। এটা অনেকটা লাকি ড্র এর মতো। কোনটা আপনার হাতে উঠে আসবে আপনি জানেন না, সুতরাং ভালো হলে বলবেন ভাগ্য ভালো খারাপ হলে বলবেন ভাগ্য খারাপ। এরপর আপনি আপনার প্রবণতা অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাবেন এবং আপনার মস্তিষ্কের কোষ সেই অনুযায়ী কিছু তথ্য রেকর্ড করে নেবে, যেটা হলো অভিজ্ঞতা। এইভাবে সারাজীবন খেলার পর খেলা চলবে। বারবার আপনি ভাঙবেন, পরিবর্তিত হবেন, নিজেকে সফল ভেবে আহ্লাদিত হবেন বা ব্যর্থ ভেবে কষ্ট পাবেন, তারপর একদিন আপনার মৃত্যু হবে। সারাজীবন এই যে অজস্র ঘটনা বা পরিস্থিতির সম্মুখীন আপনি হবেন যা আপনার পরিবর্তনে ভূমিকা নেবে তার মধ্যে মানুষ খুব গুরুত্বপূর্ণ।

একটা বয়স অবধি আপনার মা বাবা আপনাকে প্রভাবিত করবেন, ভালো মন্দ দুভাবেই। কোনটা কার জন্য ভালো বা খারাপ সেটাও ব্যক্তি প্রবণতার ওপর। এরপরও আপনার জীবনে এমন কেউ কেউ আসতে পারেন যাদের দ্বারা আপনি প্রভাবিত হবেন। প্রভাবিত হওয়ার জন্য যা লাগে তা হলো মন, যার সারল্য গুণ আছে এবং যে মন সংবেদনশীল। একটি বয়সের পর সেই সংবেদনশীলতা আর থাকে না, কারও কারও সারা জীবনেও থাকে না। সে যাই হোক, যে মানুষ সংবেদনশীল সে দুর্বল নয়। কিন্তু তার থেকেও শক্তিশালী কোনো মানুষ সেই মনকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে দুভাবেই, অর্থাৎ ফলাফল ভালো বা খারাপ দুইই হতে পারে। ব্যক্তির জন্য যদি তা সদর্থক হয় তবে ভালোই, আর যদি উল্টো হয় তবে তাকে অতিক্রম করা অসম্ভব না হলেও সময় সাপেক্ষ হতে পারে। এতসব অভিজ্ঞতা নেয়ার মতো সুচারু যদি কেউ নাও হন, অর্থাৎ মনের এমনই কাঠিন্য যে কোনকিছুতেই দাগ লাগে না বেঁকে না বা মোচড় ধরে না, তবে এতটাই রসে বশে থাকার মতো যে শারীরিক ও মানসিক শক্তি সেটাও জন্মগত অর্থাৎ ব্যক্তির জিনপুলের মধ্যেই সংরক্ষিত। কাজেই সারাটা সময় কেবল আমি আমি করে নেচে বেড়ানো নিষ্প্রয়োজন। কে আপনি তা আপনার জন্মেই স্হির হয়ে গেছে অর্ধেক। বাকিটা তো লাকি ড্র, ওটাই ডেসটিনি। জীবনে তেমন অপ্রত্যাশিতের সম্মুখীন যদি না হয়ে থাকেন, মানে হাতে যা উঠেছে সবই মোটামুটি প্রত্যাশা অনুযায়ী, তা হলে আপনি বেশ নাদান।  মূর্খের অহংকার আপনাকেই শোভা পায় কারণ জীবনের ভেতরে নামার সুযোগ আপনার হলো না অন্তত এজন্মে।

৭.
নন্দুর মতো করে গাড়ির যত্ন কোন গাড়ি চালককেই নিতে দেখিনি। গাড়িকে ও দেবতার মতো পুজো করতো। বলতো, গাড়িকে তেমন করে ভালো না বাসলে গাড়িও বিট্রে করে। এ সত্য যে কোন সংযোগেই খাটে। নন্দুর সে ভালোবাসা কেমন ছিল? ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে ধোপদুরস্ত জামা কাপড় পরে মা কালী আর জয় বজরংবলীর পুজো সেরে নিয়েই লেগে পড়তো গাড়ির সাজ সজ্জায়। শ্যাম্পু দিয়ে গাড়িকে স্নান করানোর এমন ঘটা যে অর্ধেক দিন বাড়ির ট্যাঙ্ক ফাঁকা হয়ে যেত। ভালোবাসা যত পরিচ্ছন্ন সম্পর্কও তত। নন্দুর একটি কালো অতীত ছিলো। ওর বউ আত্মহত্যা করে। একসময় ওর মাথাটা কেমন বিগড়ে গেলো। নিজের মনে সারাক্ষণ কি সব বকবক করতো। গাড়ি চালাতো অতি ধীর গতিতে। এমনিতে এত ভদ্র ছেলে আমি খুব কম দেখেছি। কোন দিনে ওর আচরণে সম্ভ্রমের কোন ঘাটতি দেখিনি। গাড়ির সামনের লুকিং গ্লাসটাও বেঁকিয়ে রাখতো নন্দু।  পাছে ম্যাডামের চোখে চোখ পড়ে যায়!

রোগ বালাই মাথায় উঠলো। নন্দু নাকি রোজই স্বপ্ন দেখে স্যার প্রেতাত্মার রূপ নিয়ে ওকে মারতে আসছে। রোজই কোনক্রমে মা কালীর কৃপায় ওর প্রাণ বাঁচে। ভয়ে ঘুমোয় না নন্দু। গাড়ি চালাতে গিয়ে ঢুলুনি আসে। এরপর শুরু হলো জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা। একজন সায়ক্রিয়াট্রিস্ট দেখাতে ডাক্তার বললেন স্কিৎজোফ্রেনিয়ার প্রথম অবস্থা। ওষুধ দিলেন। নন্দু ওষুধ খেত। কিন্তু হঠাৎ ই একদিন সব ছেড়ে ছুড়ে কোথায়  চলে গেলো। নন্দু সুন্দর কথা বলতো। একদিন বলেছিল, ‘আচ্ছা ওই যে লোকনাথ বাবা বলেছেন রণে বনে জলে জঙ্গলে কোথাও বিপদে পড়লেই ওনাকে স্মরণ করতে। তা উনি সংসারের কথা কেন বলেননি? সংসারে বিপদে পড়লে কে বাঁচাবে?’ বড় দার্শনিকের মত বিচার। সত্যিই তো। সংসারের চেয়ে বেশি  বিপন্ন মানুষ আর কোথায়? ঐ রণ বন জল জঙ্গল সবই তো সংসারে। বনে নয়, সংসারেই আসল বন্যতা।

নন্দু এখন কোথায় আছে কে জানে। এখনও কি হ্যালুশিনেট করে? রাত দুপুরে ওর ওপর এখন কার ভর হয় কে জানে। সমাজে সংসারে সবার ওপরেই কেউ না কেউ ভর করে আছে। কেবল সকলের ক্ষেত্রে তেমন করে সে আরোপ অনুভূত হয়না। অন্যের বস্ত্রে মানুষ নিজেকে এমন ভাবেই গুছিয়ে নেয়, অন্যের চরিত্রে কথা বলে এতটাই আত্মগত হয়ে। নিজেকে ভুলে থাকার নামই সমাজ। অবিমিশ্র সত্য বলে এ সমাজে কিছু নেই। রণ বন জল জঙ্গল সব পার করে জেগে আছে কেবল হা করা চিতার কাঠ... সেই সত্য!

৮.
পোনেরো ষোল বছর আগে, এক `ভ্যালেন্টাইন্স ডে` র দিন, আমি গোলাপী শিফন শাড়ি পরে চকলেট ফাউন্টেন এর পাশে দাঁড়িয়ে গোল করে ঘুরে ঘুরে নেচেছিলাম। তখন আমার ওজন ছিলো বাহান্ন কিলো। লম্বা চুল ছিলো। তখন আমি হাতে অনেক কাচের চুড়ি পরতাম। নাকে নোজ পিন ছিলো। কানে থাকতো লম্বা দুল। সেদিন আমি ও আমার দ্য দেন বয়ফ্রেন্ড একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম হয়েছিলাম। পুরস্কার স্বরূপ পেয়েছিলাম শহরের একটি নাইট ক্লাবের কাপল পাশ। ঠিক পরেরদিন সন্ধ্যা বেলা নাইট ক্লাবে এন্ট্রি নিয়ে দুজনে মিলে দু তিন সিপ নিয়ে ডিজের তালে খুব নেচেছিলাম।

এখন ওজন বেড়েছে। চুল কেটে ফেলেছি। নোসপিন আর পরি না। কাচের চুড়ির গুচ্ছ কোথায় যে হারিয়ে গেছে। আমি  ঠিক সেই মেয়েটি নই আর। কিংবা সে আমারই অজস্র সত্তার ভাঙা গড়ার স্তূপের মাঝে কোথাও লুকিয়ে পড়েছে। বা আমিই তাকে লুকিয়ে ফেলেছি। আমি এখন আগের থেকে অনেক বেশি ঋজু। নিরাভরণ। আজ একটি বাচ্চা ছেলে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, দিদি, আপনি কি খুব গম্ভীর?’ আমি তাকে বললাম, "‘আমাকে দেখে যত ভয় করে আসলে আমি তত ভয়ঙ্কর নই।’ তবু , আমি জানি, আমি একটি অদৃশ্য বর্ম নিয়ে চলি। প্রকৃতিতে যে যেমন আবহাওয়ায় বড় হয় তাকে তেমন আবরণ নিয়েই চলতে হয়। আমার অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার কারণে ওই বর্ম শামুকের খোলসের মত এমনিই গড়ে উঠেছে। এত সব সত্ত্বেও যারা আমার খুব কাছের হয় তারা অভূতপূর্ব, বড় রকমের রোমাঞ্চ তাদের পছন্দ, অথবা আমি তাদের ভীষণ ভালোবাসি।

ছেলেটি বললো, ‘আপনার ভেতর একটা কঠিন মানুষ আছে। ওটাই আমার ভালো লাগে।’ কঠিন না জটিল? সরল নাকি ধাঁধা? জানি না তা। তবে একটা জিনিস মনে হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমি ক্রমশ উবে যাচ্ছি, মেধাতুর অলস উদ্বায়ী পরাগের মত। আমাকে মধুর মত ধরবে, বোতল বন্দী করবে, এমন ম্যাজিশিয়ন কই? আজ কেন জানি না, ঐ গোলাপী শিফন শাড়িটার জন্য খুব মায়া হচ্ছে...

৯.
আমাদের বাড়িতে কোনদিন সরস্বতী পুজো হয়নি। স্কুলে পড়াকালীন সকাল সকাল মা আমার যে কোন একটা বই আর একখানা কলম পাশের বাড়ির পুজোয় দেবীচরণে রেখে আসত। বইয়ের সাথে ফেরৎ আসা যে গাঁদা ফুলের পাপড়ি তা আমার বইয়ের ফাঁকে সারা বছর থাকত। থেকে থেকে শুকিয়ে যেত একসময়। বইয়ের পাতায় লেগে থাকত তার হলুদ স্পর্শ দাগ।
 
সরস্বতী পুজো বলতে খুব বুঝতাম স্কুলের পুজো। সে ছিল এক বর্ণাঢ্য ব্যাপার। গোটা সপ্তাহ ধরে তার প্রস্তুতি চলত। আমাদের গার্লস স্কুল। কিন্তু কেবল সরস্বতী পুজোর দিনটিতেই স্কুলের গেট ছিল অবারিত দ্বার। বয়েজ স্কুলের সদ্য গোঁফ ওঠার দল নবম শ্রেণীর দেবীর সাথে সিঁড়ির নীচে আড়াআড়ি দৃষ্টি বিনিময়ের পুলকে দীপ্যমান সহাস্য বদনে স্কুলের মাঠে বিচরণ করত। আমাদের বাড়িতে কোনদিন কোন পুজোই হয়নি। কেন জানিনা এত উপচারে আমার মন বসত না। দ্বিচারিতা করিনি। তবে যে কোন কাজে নিজের সবটুকু সমর্পণ করাকেই পুজো বলে জেনেছি চিরকাল। সে হোক লেখাপড়া, পেশা কিংবা শিল্প, হোক সংসার সখ্যতা প্রেম অথবা সম্পর্ক যখন যেখানে থেকেছি কোথাও ফাঁকি দেইনি। ছাপ তোলা সন্দেশের ছাঁচের মতই নিজের হৃদয়ের ছাপটুকু রেখে এসেছি ষোল আনা স্হান কাল পাত্র অনুযায়ী।

এটুকুই আমি, যাকে অকৃত্রিম ভাবে রাখার সাহসটুকু জোটাতে পেরেছি কোনরকম ভান ছাড়াই। আমি ও আমার ঈশ্বর এভাবেই মিলেমিশে আছি, মাঝে ফাঁক থাকলেও ফাঁকিটুকু নেই।

১০.
আমার অগাধ সারল্যে ভরা নিমগ্ন আমি আমার হঠাৎ ঘোর কেটে জেগে ওঠা রুষ্ট আমি আমার তুষ্ট আমি আমার তুষ্টিহীন অনন্ত রাতজাগা আমি আমার প্রবল বিশ্বাসে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা আমি আমার কাঁধে মাথা রাখা আমি আমার বিশ্বাস ভঙ্গ বুকে নিয়ে টুকরো টুকরো ছড়িয়ে পড়তে থাকা আমি আমার ভরদুপুরে ফুটপাত ধরে স্ট্রিট ফুডের গন্ধ নিতে নিতে এগিয়ে চলা আমি আমার ফাইল হাতে আমি আমার মোকাম্বোর আমি আমার খেতে না পাওয়া পথশিশুটাকে পাপী দৃষ্টি নিয়ে এড়িয়ে যেতে চাওয়া আমি ব্যস্ত এজলাসে মাথার ভেতর শূন্যের সাথে কথপোকথন রত আমি স্পাইডার ম্যানের মত সমস্ত দূরত্ব ছু মন্তরে হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়া অশোকবাবুকে সবিস্ময় দেখতে থাকা আমি আমার কবিতা লেখা আমি আমার খালি গলায় গেয়ে ওঠা আমি আমার ভূত বিলাসের আমি আমার নিত্য নতুন রেসিপি ট্রাই করা আমি আমার প্রেমে পড়তে চাওয়া আমি আমার প্রেমে না পড়তে পারা আমি আমার রবীন্দ্র জীবনানন্দের আমি আমার ক্রমশ একলা হতে হতে লাসনি কাবাবের স্বাদ নিতে চাওয়া আমি আমার তোমাকে ছুঁতে চাওয়া আমি আমার তোমাকে না ছুঁতে পারা আমি আমার সেতুর মা হয়ে ওঠা আমি আমার সেতুর মেয়ে হতে চাওয়া আমি আমার সফল আমি আমার হাজার ব্যর্থ আমি আমার আমি হতে চাওয়া আমি আমার আমিহীন আমি আমার সব থেকে প্রিয় আমি আমার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া আমি আমার তোমাকে সওয়াল করতে চাওয়া আমি আমার তোমার কাছে নিরুত্তর থেকে যাওয়া আমি আমার আনন্দ আমি আমার বেদনা আমি...
কাউকে ফেলে দিতে পারিনা যে। আমি তো আমারও সন্তান। আমিও তো আমারই সন্তান।

১১.
আমি যা বিশ্বাস করি না তা বলতে পারিনা তাই আর আমার দ্বারা প্রেম হয়না। আসলে ভালোবাসায় দায়িত্ব থাকে। দায়িত্ব হীন যোগাযোগ ক্ষণিকের ভালোলাগা হলেও বা হতে পারে, প্রেম নয়। কেবলমাত্র একজনই নিষ্ঠুর ভাবে বলতে পেরেছিল, ‘আসলে তো প্রেম ট্রেম নয়... আসলে তো লোভ।’ এমন নির্দয় সততা আমার ভালো লাগে, সে যত কঠিন হোক তাকে হজম করার ক্ষমতা রাখি। মানুষের কত রকমের লোভ।  তার ওপর আবার প্রেমের প্রচুর ইগো। অত সামলানো যায় না। প্রেম নিজেকে ভালোবাসে, বন্ধুত্ব বন্ধুকে। এই বুড়ো বয়সে আর ক্যাঁচাল ভাল্লাগেনা, মানে প্রেমের কতা বলচি।

১২.
আপনি যদি কাউকে সত্যি ভালোবাসেন  তবে বলবেন না ‘আমি ওর প্রতি দুর্বল’, বরং বলতে শিখুন, ‘আমি ওর প্রতি সবল।’ কারণ কাউকে গভীরভাবে ভালোবাসলে আপনার  ভেতরের সেরা গুণগুলি সে ব্যক্তির ওপর প্রতিভাত হবে। আপনি রত্নাকর হলেও বাল্মীকির মতো আচরণ করবেন সেই মানুষের প্রতি। তাহলে আপনি দুর্বল হলেন কি করে? যে মানুষ আপনার ভেতরের সেরা মানুষটিকে জাগিয়ে তুলবে তাকে আপনি নিশ্চয়ই ভালোবাসেন এবং সবল ভাবে ভালোবাসেন। সমাজ আপনাকে সবকিছুই বিপরীত ভাবতে অভ্যস্ত করে তোলে। দুর্বল আপনি ঐ তুচ্ছ জগতের প্রতি যার ওপর আপনার মোহ আছে কিন্তু ভালোবাসা নেই।

১৩.
পৃথিবী তো বড়ই। তবু নিজস্ব সংস্কারে তাকে আমরা অনেক ছোট করে ফেলি। আসলে ছোট করে ভাবি। সে ভাবনার ছাদ একবার উড়ে গেলে, জানলা দরজার শিকল খুলে গেলে, অনন্ত ব্রহ্মান্ড আর আমার মাঝে কোন বাধা থাকেনা। মুহূর্তে দেখি নদীর জলে চাঁদ উঠেছে আর নুড়ি ফুটেছে আকাশে। দূরের অরণ্যে সঙ্গম রত হরিণ হরিণী, তাদের পুলকে নিঃস্পন্দ পর্ণমোচী বৃক্ষের পাতা। এমন কোন রাতে বুদ্ধের মত স্হির অপলক বসে থাকতে ইচ্ছে হয় মহাসম্ভবী নদীর ধারে। সমস্ত পৃথিবীতে একটিই ধ্বনি বাজে। মর্মর। কে হেঁটে আসে? কে? প্রকৃত আলোর দিকে আমি দেখি তার মুখ, দুটো চোখ বাঙ্ময়, মুঠো ভর্তি আবীর এনেছে, ঝরে ঝরে রেখেছে পথের দাগ যে পথে আমাদের ফিরে যাওয়া স্হির হয়ে আছে আদরে আদরে...

১৪.
আমি নীরব হয়ে থাকতে পারি। কিন্তু নির্বাক হয়ে থাকতে পারিনা। একটি মাইলফলক থেকে পরের মাইলফলক অবধি পৌঁছতে গেলে আমাকে কথা বলতে হয়, বলতেই হয় নিজের সাথে। চূড়ান্ত নৈঃশব্দ্যের ভেতর অজস্র শব্দের দ্যোতনা তরঙ্গের মত অর্বুদের মত আমার মাথার ভেতর বিস্ফারিত হয়। আমার কিছু করার থাকেনা। মাথার ভেতর অজস্র ছবি। আমি কেবল শব্দে তাদের রূপ দিতে থাকি। খিদে পেলে কষ্ট হবে। ভালোবাসলে আরাম। তৃষ্ণায় বুকের ছাতি ফাটবে। কেউ মারলে ঘা লাগবে। ক্লান্তি এলে ঘুম। চিমটি কাটলে চামড়া লাল হয়ে ফুলে উঠবে, সে ফুলে ওঠা হতেও পারে মনের অদৃশ্য আস্তরণে।কেউ ভালো বললে আনন্দ হবে। কেউ গালি দিলে রাগ। কেউ দিলে তাকে মনে হবে ভগবান আর কেড়ে নিলে শয়তান। নদীর ওপর দিয়ে জ্যান্ত অবস্থায় হেঁটে চলা কোন্ যোগবলে সম্ভব জানিনে, তবে যেকটি উদাহরণ দিলাম সবগুলোই সত্য। প্রতিক্রিয়ায় কে কি করবে সেটা তার আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া। কে কোন্ ভাব দ্বারা অধিক তাড়িত বা চালিত তার ওপরেই নির্ভর করে।

তাই বলছিলাম, আনন্দ আর বেদনা , তৃপ্তি ও অতৃপ্তি এই আমাদের সীমাবদ্ধ জগৎ। এর ওপরে আরেক আছে শুনেছি , আনন্দ বেদনা রহিত এক অবস্থা। শুনেছি কিন্তু খোঁজ পাইনি। যারা খোঁজ পেয়েছে বলে শুনেছি তারাও সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রেখেছে। তবে একটা ইচ্ছে থেকেই গেছে। এই কথা না রাখার পৃথিবী থেকে, এই ক্লান্ত শ্রান্ত বেদনার্ত পৃথিবী থেকে দূরে তোমার বুকে আশ্রয় নেওয়ার। এই তুমি কে তা কুয়াশার মত স্পষ্ট। এই তোমার সাথে আমার নীরব অভিসার। যে কথা বলা হলোনা, যে গান গাওয়া হলোনা, যে চুম্বন অসম্পূর্ণ থেকে গেলো তার দিব্যি দিয়ে বলছি এই তোমাকেই আমি ভালোবাসি। বাকি আর যা কিছু দেখা যাচ্ছে দূর দূর অবধি তা আলোর মত অস্পষ্ট। আমি নীরব হয়ে থেকে যাব। তবু নির্বাক থাকতে পারি না...

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কবি