সংকট সমাধানে জনগণের দায়

আবু সাইয়ীদ

প্রকাশিত : এপ্রিল ১০, ২০১৯

এফ আর টাওয়ারের দুই মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সাতদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। পালিয়ে আছে কেউ কেউ। এই কেইসে সাতদিনের রিমান্ডে নেয়ার কিছু নেই। এদের কাছে বিশেষ গোপন কোনো তথ্য থাকার কথা নয়। এরা কতটা বৈধ-অবৈধ কাজ করেছে তা কাগজপত্রই বলে দেবে। সাতদিন ধরে এদের কি প্রশ্ন করবে? সাতদিন এদেরকে খাওয়াতে হবে, ২-৩ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে ব্যস্ত রাখতে হবে এদের পেছনে, সবকিছু মিলে রাষ্ট্রের একটা খরচ হয়ে যাবে।

এফ আর টাওয়ারের যে ঘটনা তার দায় কি শুধু এই মালিকদের? যারা অনুমোদন দিয়েছে, যাদের তদারকি করার কথা, যারা নকশা তৈরি করেছে, যারা নির্মাণ প্রক্রিয়ায় ছিল, তাদের কি কোনো দায় নেই? অবশ্যই তাদের দায় আছে। এবং তাদের দায় অধিক। কখনো কখনো একজন ভবনের মালিক আলু-পটলের ব্যবসায়ীও হতে পারে, কিন্তু নির্মাণ প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত, অনুমোদন কর্তৃপক্ষ তারা উচ্চ শিক্ষিত মানুষ। সুতরাং তাদেরকেই আগে দায়ী করতে হবে। পেশার সততা বলে একটা কথা আছে।

ধরা যাক এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগেনি, তাহলেই এদের গ্রেফতার করা হতো? অবশ্যই না। আগুন তারা লাগায়নি। তাদের দোষ তারা যে বিল্ডিং তৈরি করেছে তা যথাযথ হয়নি। এই রকম দোষ তো করেছে ঢাকা শহরের হাজারো বিল্ডিংয়ের মালিক। বিচারের আওতায় তো তাদেরও আনা উচিত। এফ আর টাওয়ারের মালিকদের বিরুদ্ধে যদি হত্যা মামলা হয় তাহলে এদের বিরুদ্ধে হতে হবে অ্যাটেম টু মার্ডার।

রাজউক কোন কোন বিধি আমলে নিয়ে ভবন পরীক্ষা করছে? এই সকল বিধি প্রকাশ করা উচিত। তাহলে জনসাধারণও বুঝতে পারবে কি কি বিধি তার ভবন মালিক ভঙ্গ করেছে। সেক্ষেত্রে জনগণও এই প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারবে। তারাও ভবনের ত্রুটিগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারবে। রাজউক বলে তার জনবল কম, এক্ষেত্রে ঢাকাবাসীও রাজউকের জনবল হিসেবে কাজ করতে পারবে। এছাড়া রাজউকের কোনো এক কর্মকর্তা কিছু উপরি নিয়ে কোনো ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ নয়, এমন প্রত্যয়নপত্র দিচ্ছে কিনা তা ওই ভবনে বসবাসকারীরা বুঝতে পারবে।

আমি একটা বিল্ডিংয়ের কথা জানি, বিল্ডিংটির নাম ইউটিসি, পান্থপথে অবস্থিত। বেশ কয়েকবার আমি এই বিল্ডিংয়ে গিয়েছি। এই বিল্ডিংয়ে চমৎকার ছয়টি লিফট আছে। এত চমৎকার লিফট আমি কোথাও দেখিনি। এই বিল্ডিংয়ে সাধারণভাবে ওঠার জন্য কোনো সিঁড়ি নেই। আপনি এক ফ্লোর উপরে উঠতে বা নামতে চাইলে আপনাকে লিফটই ব্যবহার করতে হবে। দু’দিকে দুটি এমারজেন্সি সিঁড়ি আছে। এই সিঁড়ির প্রস্থ এমনই যে, একসাথে তিনজন নামতে পারবে না। এই সিঁড়ি দুটিও আবদ্ধ। একজন স্থপতি এমন একটি ভবনের নকশা কিভাবে করল?

ভবনের মালিক এই নকশা কিভাবে গ্রহণ করলো? রাজউক এই ভবনের অনুমতি কিভাবে দিল? প্রকৌশলীরা এই ভবন কিভাবে নির্মাণ করল? এই ভবনে এমন যদি ব্যবস্থা না থাকে যে, আগুন লাগার সাথে সাথে দেয়াল স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিজে যাবে তাহলে অবিলম্বে এই ভবনে বসবাসকারীদের উচিত হবে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। প্রতিবাদ করা, প্রয়োজনে মামলা করা।

জনগণ যদি তার অধিকার আদায় করে না নেয়, দুর্নিতিবাজ এবং লোভিরা কখনোই জনগণের জন্য কিছু করবে না।

লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা