সাঈফ ইবনে রফিকের রূপকথা ‘ব্যাঙ’

প্রকাশিত : আগস্ট ১৫, ২০১৯

হিব্রু রূপকথা অবলম্বনে

১.
মৃত্যুর আগে হানিনাকে বাবা বললেন, আমার চল্লিশার দিনে বাজারে যাবে। প্রথম তোমাকে যেটা কিনতে অফার করা হবে, সেটাই কিনবা। এটাই তোমার ভাগ্য গড়ে দেবে।

মৃত্যুর পর আদেশ মোতাবেক নির্ধারিত দিনে বাজারের উদ্দেশে রওয়ানা দিলো বাবা-মায়ের অনুগত একমাত্র ছেলে হানিনা। বাজারে ঢোকার আগেই এক বুড়ো তাকে বলল, বাবা এই বাক্সটা কিনে নাও? তোমার লাভ হবে।

রূপার নক্সা করা সুন্দর বাক্সটার দিকে তাকালো হানিনা। জিজ্ঞাসা করলো, কি আছে এর মধ্যে?
বুড়ো বিক্রেতা বলল, জানি না। এর মধ্যে কি আছে জানি না, শুধু জানি এটা তোমার সৌভাগ্য নিশ্চিত করবে।
হানিনা বুঝলো, এর কথাই বলছিল তার বাবা। বেশ, দাম কত? বুড়োকে জিজ্ঞাসা করলো।
‘একদাম, এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা। কমও না, বেশিও না।’ সাফ জবাব বিক্রেতার।
দরদাম না করে বাক্সটা কিনে বাড়ি ফিরল হানিনা। বৌকে সাথে নিয়ে বাক্সটা খুলল। বাক্সের মধ্যে আরেকটা ছোট আরও সুন্দর নক্সাকরা বাক্স। সেটার মধ্যে ছোট্ট একটা ব্যাঙ।

২.
ব্যাঙ দেখে বেশ বিরক্ত হলো হানিনার বউ। এরপরও তাকে খাবার দিলো। দিনে দিনে অস্বাভাবিক বড় হতে লাগলো ব্যাঙটা। অদ্ভুত ব্যাঙটা দুজনের সংসারে যে খাবার, তার বেশিরভাগই খেয়ে ফেলছে। সাইজে হচ্ছে না দেখে দুই দফায় ব্যাঙের জন্য ঘর বানিয়েছে হানিনা। এক সময় ব্যাঙটা মানুষের চেয়েও বড় সাইজের হয়ে গেছে। খালি খায় আর খায়। ব্যাঙের খাবার জোগাতে গিয়ে সংসারের টানাটানি আরও বেড়েছে।

৩.
একদিন হঠাৎ মানুষের ভাষায় কথা বলল ব্যাঙ। বলল, শোনো হানিনার বউ, তোমরা আমাকে অনেক আপ্যায়ন করেছো, আমি তৃপ্ত। বলো, কি চাও।

চমকে উঠলো হানিনার বউ। বললো, টানাটানির সংসারে আর কি চাই, পারলে কিছু খাবার দাও।
হেসে দিলো ব্যাঙ। এমন সময় বাড়ির দরজায় একজন কড়া নাড়লো। দরজা খুলে ঝুড়িতে সাজানো অনেক ফলমূল দেখতে পেল হানিনার বউ।

হানিনা ঘরে ফেরার পর ব্যাঙ তার ইচ্ছার কথা জানতে চাইলো। হানিনা বললো, আমাকে জ্ঞান দাও হে ব্যাঙ। বেশ, বলেই কাগজে ৭০টি ভাষায় কী যেন লিখলো প্রকাণ্ড ব্যাঙ। এগুলো গিলে খাও। সরল বিশ্বাসে কাগজগুলো পানি দিয়ে গিলে খেলো হানিনা। পৃথিবীতে মানুষসহ যত রকম পশুপাখি-কীটপতঙ্গ আছে, সবার ভাষা শিখে ফেলল হানিনা। পৃথিবীর তাবৎ জ্ঞান অর্জন করে ফেলেছে হানিনা। সে-ই হয়ে উঠলো তার সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি।

৪.
একদিন ব্যাঙ বলল, ‘আমি আর তোমাদের সাথে থাকতে পারছি না। আমাকে জঙ্গলে ফিরতে হবে। আমি চাই তোমরা আমাকে জঙ্গলে রেখে আসো।’

নির্ধারিত দিনে প্রকাণ্ড ব্যাঙের সাথে ঘনজঙ্গলে গেলো হানিনা ও তার বউ। জঙ্গলে পৌঁছেই ব্যাঙ চিৎকার করল, আকাশে-গাছে-ডাঙায়-গুহায়-নদীতে যে যেখানে আছো, আমার মেহমানদের জন্য উপহার নিয়ে হাজির হও। দলে দলে হাজার হাজার পশু-পাখি-কীটপতঙ্গ নানা ধরনের সম্পদ নিয়ে হাজির হলো। কেউ এনেছে হাজার বছর পুরোনো গুপ্তধন, কেউ আবার এনেছে জীবনীশক্তি বর্ধক লতাগুল্ম।

‘এই সব তোমাদের।’ হানিনা দম্পতিকে বলল ব্যাঙ।

৫.
বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে হানিনা প্রশ্ন করলো, কে হে তুমি ব্যাঙ? তোমার আসল পরিচয় কি?
ব্যাঙ হেসে জবাব দিলো, ‘আমাকে না চিনেই তোমরা খাবার দিয়েছো, এ কারণেই তোমাদের এই পুরষ্কার। আমি পরীর দেশের রাজপুত্র। তোমাদের পৃথিবীতে আমি যে কোনও আকার ধারণ করতে পারি।’

বলেই ছোট হতে হতে স্বাভাবিক আকারে ফিরলো ব্যাঙ। লাফাতে লাফাতে জঙ্গলে হারিয়ে গেল।

উপহার সামগ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরলো হানিনা দম্পতি। সুখে-শান্তিতে তারা বসবাস করতে শুরু করলো।