সাব্বির হোসেনের প্রেমের দুটি গল্প

প্রকাশিত : অক্টোবর ০৩, ২০১৯

পূর্ণিমা

আজ ভরাপূর্ণিমা। ছাদের কার্নিশে হেলান দিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে দিশা ও সিদ্ধার্থ। দিশা বলল, কী বলতে এসেছো তাড়াতাড়ি বলো সিধুদা, আমার স্যার চলে গেছে। এখন আমাকে সবাই খুঁজবে।
সিদ্ধার্থ ছাদের মেঝের দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা-মা আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছে।
চাইবেই তো। করে ফেলো বিয়ে।
করব।
দিশা চুপ।
সিদ্ধার্থ বলল, শেষবারের মতো তোর কাছে আসলাম। যাতে ভবিষ্যতে কোনোদিন আফসোস না করা লাগে।
দিশা চুপ।
সিদ্ধার্থও নিশ্চুপ হয়ে দিশার উত্তরের অপেক্ষা করছে। অনেকক্ষণ দুজনেই চুপচাপ থাকার পর সিদ্ধার্থই দিশার দিকে তাকিয়ে বলল, কিছু বল।
দিশা হঠাৎ সিদ্ধার্থের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল, বিয়ে করে ফেলো। কিন্তু দেখো, মেয়ে যেন আমার চেয়ে একটু হলেও বেশি সুন্দর হয়।
কোথায় পাব? তোর চেয়ে সুন্দর মেয়ে তো এই পৃথিবীতে নেই।
দিশা হেসে বলল, ধ্যাত, তুমি যে কী বলো না! আমার চেয়ে সুন্দর মেয়ে এই মহল্লাতেই বহু আছে। দিশার গলাটা কাঁপছে! ও কি কাঁদছে?
সিদ্ধার্থ বলল, আমার চোখে লাগেনি কখনো।
দিশা বলল, তা লাগবে কী করে! তুমি তো দিশা ছাড়া দিশেহারা। কিন্তু এভাবে তো আজীবন চলবে না।
দিশেহারা হয়েও তো দিশাকে পাব না!
কিছুক্ষণ দুজনই চুপ। একসময় দিশাই বলল, আমি যতদূর জানি, কাকা-কাকিমা আরো আগে তোমার বিয়ে দিতে চেয়েছিল, তুমিই ধানাই পানাই করে রাজি হচ্ছিলে না। কেন সিধুদা?
কারণ আমি তোর বিয়ের পর বিয়ে করতে চাইছিলাম।
সেটা কি কখনো সম্ভব? আমার বিয়ে হতে অনেক দেরি। তুমি আমার থেকে কত বড়। পরিবারের বড় ছেলে, দুহাতে আয় করছো; এখন তো তোমাকে বিয়ে করাবেই। তাছাড়া আমার সাথে তোমার কিছু হওয়া কখনো সম্ভব না। না তুমি মুসলিম হতে পারবে, না আমি হিন্দু হতে পারবো! না আমরা পালিয়ে যেতে পারব। যার যার ধর্মে থেকে যদি আমাদের বিয়ে সম্ভব হতো, কোনো না কোনোদিন দুই পরিবারের মেনে নেয়ার সুযোগ যদি থাকতো, তাহলে আরো আগেই পালিয়ে যেতাম। দুদিন পর বাচ্চাসমেত ফিরতাম। এ কথা বলে দিশা হেসে দিল। সিদ্ধার্থর মুখ গম্ভীর।

দিশা আবার বলল, কিন্তু তুমি ভালো করেই জানো এমনটা করলেও আমাদের কারো পরিবারই মানবে না। এসব কোনো নতুন কথা না, অসংখ্যবার এসব কথা আমি তোমাকে বলেছি। তাই আমার বিয়ের জন্য অপেক্ষা করার কোনো মানে হয় না। শেষ কথাগুলো বলতে বলতে দিশা কেঁদে ফেললো।
সিদ্ধার্থ খুব অবাক হলো। বলল, কাঁদছিস কেন?
দিশা সেকথার কোনো উত্তর না দিয়ে বলল, প্লিজ, তুমি বিয়ে করে ফেলো সিধুদা। একথা বলে দিশা চলে যাচ্ছিল। কিন্তু দিশাকে হাত ধরে থামালো সিদ্ধার্থ। বলল, তুই আমাকে ভালবাসিস? সত্যিটা আমি জানি, কিন্তু একবার তুই নিজের মুখে বল। আর কিচ্ছু চাই না।

দিশা কোনো কথা না বলে সিদ্ধার্থকে জড়িয়ে ধরলো, শক্ত করে; জীবনে প্রথম ও শেষবার। সিদ্ধার্থও আস্তে আস্তে দুহাত উঠিয়ে দিশাকে নিজের বুকে চেপে ধরলো। সে যেন এক মহাসমুদ্রের মাঝে গিয়ে পড়লো, যেখানে কোনো কূল নেই, নেই বাঁচার কোনো আশ্বাস তবে প্রশান্তির অভাব নেই বিন্দুমাত্র।

চুমু

কারো হাতের আলতো স্পর্শ অনুভব করতে পারলাম আমার কাঁধের উপর। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি অর্পিতা দাঁড়িয়ে আছে। এ কোন রূপে দেখতে পাচ্ছি আমি ওকে? আমি যা দেখছি তা কি সত্যি নাকি আমার কল্পনা? এর আগে কখনো ওকে আমি এই রূপে দেখিনি। মেয়েটা হালকা কাজের সোনালি রঙের sleeveless ব্লাউজের সাথে লাল একরঙা জর্জেট শাড়ি পরেছে। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, খোলা চুল, হাতভর্তি চুড়ি, কাঁধের উপর দিয়ে চিকন করে টেনে নেয়া শাড়ির আঁচল। ওর বাম কাঁধে একটা তিল আছে, যেটা আমি আগে কখনো দেখিনি। আজ ও sleeveless ব্লাউজ পরার কারণে তিলটা নজরে পড়লো। ওর গলা আর থুঁতনির তিলটার মতোই এই তিলটাও আমাকে খুব টানছে। ওকে কেমন সুন্দর দেখাচ্ছে তা কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব না। স্বর্গের অপ্সরাকেও বোধহয় আজ ওর সৌন্দর্য হার মানাবে। আমি চোখ ফেরাতে পারছি না ওর কাছ থেকে। আমার বিশ্বাসও হচ্ছে না অর্পি এখানে দাঁড়িয়ে আছে।

অর্পিতা, তুমি কি সত্যিই এখানে দাঁড়িয়ে আছো?
আমাকে ছুঁয়ে দেখো, তাহলেই তো বুঝতে পারবে আমি কি সত্যিই এখানে আছি নাকি নেই। এ কথা বলে ও আমার হাত দুটো টেনে ওর কোমড়ে জড়িয়ে দিলো। আর ও ওর দুহাত আমার ঘাড়ে রাখলো। এবং বললাম, কল্পনাকে স্পর্শ করা যায় না। কিন্তু তুমি আমাকে স্পর্শ করতে পারছো। তারমানে আমি বাস্তব এবং সত্যিই আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

তুমি না টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিলে। না ঘুমিয়ে এখানে এসেছো কেন?
আমি এসেছি বলে তুমি খুশি হওনি?
অবশ্যই হয়েছি। এমন নেশা ধরানো রূপ দেখলে কে না খুশি হয় বলো? তবে একটু আধটু কষ্টও পাচ্ছি। এত নেশা ধরানো রূপ নিজের এতটা কাছে পাওয়ার পরও নেশার স্বাদটা নিতে পারছি না।
কেন নিতে পারবে না? তোমাকে আটকে রেখেছে কে?
তোমার tiredness. আমি চাই না তুমি অসুস্থ হয় পড়ো। এজন্য নিজেকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আর তুমি কিনা মোহনীয় রূপ নিয়ে আমার কাছে এসেছো। এখন তোমার কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে আমার কতটা কষ্ট হবে তুমি বুঝতে পারছো?

ও এবার আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, নাও আমিই তোমার আরও কাছে চলে এলাম। আমার কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আর শোনো, আমি মোটেও tired না। আমি জানতাম তুমি যদি শুনো আমার tired তাহলে অন্য রুমে চলে আসবে অথবা ছাদে বসে রাত কাটিয়ে দিবে। আমি চাচ্ছিলাম তোমাকে একটু চমকে দেই। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তোমার চমকে যাওয়া চাহনি দেখতে। সবাই তো বউ সাজেই বাসর রাতে husband এর সামনে বসে থাকে। আমি না-হয় একটু ব্যতিক্রম কিছু করলাম। আজ নিজেকে সেভাবে তৈরি করেছি যাতে তোমার নজর আটকে যায়।

সত্যিই কি তুমি tired না?
একদম না।
হঠাৎ চোখের পলকে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। অর্পি দৌঁড়ে ঘরের ভেতর চলে যাচ্ছিল। আমি ওর হাত ধরে ওকে টেনে এনে ওর কোমড়ে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
বৃষ্টি হচ্ছে আশফি।
হুম বুঝতে পারছি।
তাহলে ভেতরে চলো। দাঁড়িয়ে আছো কেন?
না, যাব না।

ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্পি সম্ভবত বুঝতে পেরেছে আমি ভেতরে কেন যেতে চাইছি না। ও মুচকি হেসে আমার আরও কাছে এসে আস্তে আস্তে করে আমার দুপায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালো চোখে চোখ রেখে। ওর ঠোঁট জোড়া দিয়ে আস্তে আস্তে আমার ঠোঁটজোড়াকে ও স্পর্শ করলো। ওর একটা হাত আমার কাঁধের উপর রেখে আর একটা দিয়ে খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলো আলতো করে ছুয়ে দিলো।

এই প্রথম অর্পিতা আমার ঠোঁটে চুমু খেলো। সবসময় আমিই ওর ঠোঁটে চুমু খেতাম। ও কখনোই  নিজ থেকে আমার ঠোঁটে চুমু খায়নি। আজই প্রথম ও এমনটা করলো। আজ আমাদের বাসর রাত। আমি জানি অর্পিতা খুব করে চাইছে আমার জন্য এ রাতটা অনেক বেশি special করতে। দুজনের শরীরেই ভিজা কাপড় লেপ্টে আছে।

শাড়িটা একদম ভিজে গেছে। আমি ভেতরে যেয়ে চেঞ্জ করে নিচ্ছি।
চলো আজ আমি তোমার ড্রেস চেঞ্জ করাবো।
তুমি করাবে?
হ্যাঁ আমি করাবো। তোমার সমস্ত কিছুর উপর আমার অধিকার আছে। সে অধিকারের জোরে করবো।
ওকে কোলে করে বেডরুমে যেয়ে গেইটটা আটকে দিলাম।