সিকান্দার আবু জাফরের বিখ্যাত ৩ কবিতা

প্রকাশিত : মার্চ ১৯, ২০২০

কবি, সঙ্গীত রচয়িতা, নাট্যকার ও সাংবাদিক সিকান্দার আবু জাফরের আজ জন্মদিন। ১৯১৮ সালের ১৯ মার্চ খুলনা জেলার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ছাড়পত্রের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে তার রচিত তিনটি কবিতা পুনর্মুদ্রণ করা হলো:

সংগ্রাম চলবেই

জনতার সংগ্রাম চলবেই,
আমাদের সংগ্রাম চলবেই।

হতমানে অপমানে নয়, সুখ সম্মানে
বাঁচবার অধিকার কাড়তে
দাস্যের নির্মোক ছাড়তে
অগণিত মানুষের প্রাণপণ যুদ্ধ
চলবেই চলবেই,
আমাদের সংগ্রাম চলবেই।

প্রতারণা প্রলোভন প্রলেপে
হোক না আঁধার নিশ্ছিদ্র
আমরা তো সময়ের সারথী
নিশিদিন কাটাবো বিনিদ্র।

দিয়েছি তো শান্তি আরও দেব স্বস্তি
দিয়েছি তো সম্ভ্রম আরও দেব অস্থি
প্রয়োজন হলে দেব একনদী রক্ত।
হোক না পথের বাধা প্রস্তর শক্ত,
অবিরাম যাত্রার চির সংঘর্ষে
একদিন সে-পাহাড় টলবেই।
চলবেই চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই

মৃত্যুর ভর্ৎসনা আমরা তো অহরহ শুনছি
আঁধার গোরের ক্ষেতে তবু তো ভোরের বীজ বুনছি।
আমাদের বিক্ষত চিত্তে
জীবনে জীবনে অস্তিত্বে
কালনাগ-ফণা উৎক্ষিপ্ত
বারবার হলাহল মাখছি,
তবু তো ক্লান্তিহীন যত্নে
প্রাণে পিপাসাটুকু স্বপ্নে
প্রতিটি দণ্ডে মেলে রাখছি।
আমাদের কি বা আছে
কি হবে যে অপচয়,
যার সর্বস্বের পণ
কিসে তার পরাজয়?
বন্ধুর পথে পথে দিনান্ত যাত্রী
ভূতের বাঘের ভয়
সে তো আমাদের নয়।

হতে পারি পথশ্রমে আরও বিধ্বস্ত
ধিকৃত নয় তবু চিত্ত
আমরা তো সুস্থির লক্ষ্যের যাত্রী
চলবার আবেগেই তৃপ্ত।
আমাদের পথরেখা দুস্তর দুর্গম
সাথে তবু অগণিত সঙ্গী
বেদনার কোটি কোটি অংশী
আমাদের চোখে চোখে লেলিহান অগ্নি
সকল বিরোধ-বিধ্বংসী।
এই কালো রাত্রির সুকঠিন অর্গল
কোনোদিন আমরা যে ভাঙবোই
মুক্ত প্রাণের সাড়া জানবোই,
আমাদের শপথের প্রদীপ্ত স্বাক্ষরে
নূতন সূর্যশিখা জ্বলবেই।
চলবেই চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই।

বাংলা ছাড়ো

রক্তচোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া আমার বছরগুলো
আজকে যখন হাতের মুঠোয় কণ্ঠনালীর খুন পিয়াসী ছুরি
কাজ কি তবে আগলে রেখে বুকের কাছে কেউটে সাপের ঝাপি
আমার হাতেই নিলাম আমার নির্ভরতার চাবি
তুমি আমার আকাশ থেকে সরাও তোমার ছায়া
তুমি বাংলা ছাড়ো

অনেক মাপের অনেক জুতোর দামে তোমার হাতে
দিয়েছি ফুল হৃদয় সুরভিত
সে ফুল খুঁজে পায়নি তোমার চিত্তরসের ছোঁয়া
পেয়েছে শুধু কঠিন জুতোর তলা
আজকে যখন তাদের স্মৃতি অসন্মানের বিষে
তিক্ত প্রানে শ্বাপদ নখের জ্বালা
কাজ কি চোখের প্রসন্নতায় লুকিয়ে রেখে প্রেতের অট্টহাসি
আমার কাঁধেই নিলাম তুলে আমার যত বোঝা
তুমি আমার বাতাস থেকে মুছো তোমার ধূলো
তুমি বাংলা ছাড়ো

একাগ্নতার স্বপ্ন বিনিময়ে মেঘ চেয়েছি
ভিজিয়ে নিতে যখন পোড়া মাটি
বারে বারেই তোমার খরা আমার খেতে বসিয়ে গেছে ঘাঁটি
আমার প্রীতি তোমার প্রতারনা
যোগ বিয়োগে মিলিয়ে
নিলে তোমার লাভের জটিল অন্কগুলো
আমার কেবল হাড় জুড়ালো হতাশ শ্বাসের ধূলো

আজকে যখন খুঁড়তে গিয়ে নিজের কবরখানা
আপন খুলির কোদাল দেখে সর্বনাশা বজ্র দিয়ে গড়া
কাজ কি দ্বিধায় বিষন্নতায় বন্দী রেখে ঘৃনার অগ্নিগিরি
আমার বুকেই ফিরিয়ে নেব ক্ষীপ্ত বাঘের থাবা
তুমি আমার জল স্থলের মাদুর থেকে নামো
তুমি বাংলা ছাড়ো

গতানুগতিক

আমার জবাব পেলাম।
তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি কিনা?
না!

আমরা যে সমাজের জীব
তারই ধারায় তুমি ভাসমান তৃণ।
ইতিহাস পরিবর্তনের দিন এলে
হৃদয় নিয়ে তুমি খেলবেনা,
আমি জানি।