সুগার ড্যাডির ইতিবৃত্ত ও নারীবাদের যোগসূত্র

আরিফ বিন কামাল

প্রকাশিত : জুন ০৯, ২০২১

জাপানের রাজধানী টোকিওর একটা স্কুলে পড়ে তিন বান্ধবী। একটা নতুন মেয়ে আসে তাদের দলে। সেই মেয়েটা একদিন তাদের লীডার মেয়েটার বাসায় গিয়ে অবাক হয়। এটা ছিল শহরের মাঝখানের একটা বহুতল ভবনের স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট। জিজ্ঞেস করায় তাদের একজন জানায়, `পাপা` এটা  কিনে দিয়েছে। নতুন মেয়েটা বলে, তোমার পাপা নিশ্চয় বড় কেউ হবে। পরে আস্তে আস্তে পরিস্কার হয়, এই `পাপা` আসলে বাবা নয়। গল্প শেষ।

আরেকটি কথা, ষাট বছরের বৃদ্ধার সাথে পয়সা দিলেও কেউ শুতে চায়  না, কিন্তু পয়সাওয়ালা ষাট বছরের বৃদ্ধের জন্য মেয়ের অভাব নেই। পয়সা থাকলেই পিজ্জা অর্ডার করার মতো বেডরুমে মেয়ে পাওয়া যায়, তাতে পুরুষের বয়স যতই হোক  না কেন। এই ব্যাপারটার আধুনিক নাম সুগার ড্যাডি। এই সুগার ড্যাডি কী, তারসাথে নারীবাদের সম্পর্কই বা কী? সুগার ড্যাডি ফর্মাল ভাষায় বলতে গেলে, যে বৃদ্ধ টাকা বা উপহারের বিনিময়ে কম বয়সের মেয়ে ভাড়া করে সেক্সুয়াল সুবিধা নিয়ে থাকে। আর যে নারীকে ভাড়া করা হয় তাকে সুগার বেবি বলা হয়।

ইউরোপ আমেরিকাতে এদের সিংহভাব স্কুল-কলেজের স্টুডেন্ট। এই কালচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান না নিয়ে চিল্লাইয়া লাভ নাই। বাংলায় অনেকটা রক্ষিতার মতো, তবে কিছুটা পার্থক্য আছে। জাপানে একে বলে Enjo-kōsai। এটা জাপানের বেশ পুরোনো কালচার। বহু জাপানি সিনেমা ও অ্যানিমে নির্মাণ করা হয়েছে এই কালচারকে প্রমোট করে। এটাকে শর্ট টার্ম রিলেশনশিপ বললে ভুল হবে না। কারণ সুগার ড্যাডিরা প্রচুর পয়সাওয়ালা হওয়ায় নিয়মিত সুগার বেবি চেঞ্জ করে থাকে। এটি বেশ্যাবৃত্তিরই একটি ধরন, যাকে বলা হয় সফট প্রস্টিটিউশন।

সুগার ড্যাডি ও সুগার বেবির মধ্যকার সম্পর্কের জন্য বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় কিছু অ্যাপস রয়েছ। যেগুলোতে সার্চ করে সুগার ড্যাডি খোঁজা হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো, সিকিং ডটকম। এই সাইট থেকে কিছু  তথ্য-উপাত্ত পেশ করবো, এতে কিছুটা আইডিয়া পাওয়া যাবে।

২০১৮ সালের ডাটা অনুযায়ী, তাদের সাইটে মোট ৪৭ লাখ ছাত্রী সুগার বেবি হবার জন্য রেজিস্ট্রেশন করে, যার মধ্যে আমেরিকার ২৭ লাখ। এরমধ্যে শীর্ষে রয়েছে জর্জিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানকার প্রতি দশজনের একজন সুগার বেবি হতে  চায়। এ তো একটিমাত্র সোর্স, এর বাইরে বেমালুম কত্ত সোর্স আছে তার ইয়ত্তা হয়তো সঠিকভাবে কারো জানা নেই।

তথ্যসূত্রে জানা যায়,আমিরাকা ২০টি নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় এর শীর্ষে। কেন তাদের এই পেশায় এত আসক্তি? এর পেছনের গল্পের পাতাটা উল্টানো যাক। এর সাথে নারীবাদের যোগসূত্রও উন্মোচন হয়ে যাবে।

আমেরিকাতে জানুয়ারি মাসের হিসেব অনুযায়ী, মোট স্টুডেন্ট লোনের পরিমাণ ছিল ১.৬  ট্রিলিয়ন ডলার বা ১,৩৬,১৩,৩৫৫ কোটি টাকা। একজন ছাত্র/ছাত্রী যখন গ্রাজুয়েশন শেষ করে বের হয় তখন গড়ে তার ওপর ৩৭,০০০ ডলার বা ৩০ লাখ টাকার লোন থাকে। এই  টাকা চক্রবৃদ্ধি সুদে কারো কারো কোটিতে পৌঁছায়। এই ঋণের ভোজা আর ঘাড়ের ওপর অর্ধকোটি টাকার লোন ঝুলতে থাকা মেয়ের দায়িত্ব কে নেবে? এই  লোনের টাকা শোধ করতে তার কাছে অল্প কিছু অপশন থাকে। পার্টটাইম জব, টিউশন ইত্যাদি। এই পর্যন্ত সুগার বেবি হবার পিছনের লজিকগুলো মোটামুটি ঠিক আছে।

কিন্তু যখন তাকে ফেমিনিজম দিয়ে জাস্টিফাই করা হয়, তখন তা হিপোক্রেস ছাড়া কিছুই নয়। ফেমিনিজম আবার কোন ঘোড়ার ডিম, তাই ভাবছেন! ফেমিনিজম হলো, একটা দর্শন যা নারীর জন্য সর্ব ক্ষেত্রে পুরুষের সমান অধিকার ও স্বাধীনতাকে সমর্থন করে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে, জেন্ডার ডিস্ক্রিমিনেশন উচ্ছেদ করা। নারী কারো দয়ার পাত্র নয়, পুরুষমাত্রই ধর্ষক, নারীর কোনো পুরুষের দরকার নেই, শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার, আমরা পুরুষের চেয়ে শক্তিশালী— এই টাইপের বক্তব্য সুগার বেবি বা টিনেজদের থেকেই বেশি যায়। দিনশেষে তাদের ভাষায় ধর্ষক, লম্পট সেই পুরুষের সাথেই রাত্রিযাপন। মানিওয়ালা সুগার ড্যাডি পেলে ওইসব নীতি নৈতিকতা ভুলে যায়।

এরাই আবার ফেমিনিজম নিয়ে হুংকার ছাড়ে। আপনি গুগলের Feminist sugar baby লিখে সার্চ দিলে অবাক হবেন এদের হিপোক্রেসি দেখে। এবার কনসেপ্ট টা ক্লিয়ার নারীবাদী হওয়ার পেছনের গল্পটা হয়তোবা জেনেছেন। কেনইবা এরা নারীবাদ গ্রহণ করবে না বলুন তো, কারণ সুগার ড্যাডিতো অন্য পন্থায় মিলে না। সমালোচকরা এই ব্যবস্থাকে যৌন ব্যবসার নামান্তর বললেও, ছাত্রছাত্রীদের কাছে এটা একটা সহায়ক ব্যবস্থা।

কয়েকদিন আগেও নাটালি ডিলান নামের একজন ফেমিনিস্ট তার ভার্জিনিটি বিক্রি করেন ৩.৮ মিলিয়ন ডলারে। টাকার সামনে নারীবাদীদের বিক্রি এখন স্বাভাবিক। এমন হাজারো দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যাবে। দিনশেষে মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক মেয়েই নারীর অধিকারের নামে নারীবাদীর বেড়াজালে আঁটকে যাচ্ছে। টাকার বিনিময়ে নিজের আত্মমর্যাদা বিক্রি করছে।