স্বকৃত নোমানের গল্প ‘আর জনমে’

প্রকাশিত : আগস্ট ১৫, ২০১৯

অজ্ঞানের দ্বারা আচ্ছাদিত হইয়া জীব কখনও পুরুষ, কখনও স্ত্রী, কখনও নপুংসক মানুষ, কখনও দেবতা, কখনও পশু, কখনও পক্ষী ইত্যাদি হয়। এইভাবে সে এই জড়জগতে ভ্রমণ করিতে থাকে। প্রকৃতির গুণের দ্বারা প্রভাবিত হইয়া তাহার কর্ম অনুসারে সে বিভিন্ন প্রকার শরীর ধারণ করে। ―শ্রীমদভাগবত: ৪/২৯/২৯

পাঁচটি গরুই দেখার মতো। গলায় আর কুঁজে রঙিন ফুলের মালা, শিঙগুলো লাল কাপড়ে মোড়া। দুটির গায়ের রং কালো, একটির সাদাকালো চিত্রা, বাকি দুটির হালকা খয়েরি। কোনো খামারের নয়, আমিন ফকিরের গোয়ালের একেবারে দেশি ষাঁড়। নিজহাতে পেলেপুষে বড় করেছে। একটা ইনজেকশন তো দূরের কথা, খড়-খল্লি-ভুসি ও ঘাস ছাড়া কোনোদিন আর কিছু খাওয়ায়নি। জন্মের পর বাড়বাড়ন্তের গতি তেমন ভালো ছিল না বলে মোটাতাজাকরণের ট্যাবলেট খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছিল স্থানীয় পশু চিকিৎসক। সে খাওয়ায়নি। গরু প্রকৃতির সন্তান, প্রাকৃতিক খাবার খেয়েই বেড়ে উঠবে, বেঁচে থাকবে। কৃত্রিম কিছু খাওয়ালে শরীরে রোগ-বালাই বাসা বাঁধবে। তারা তার সন্তানের মতো। তাদের কোনো ক্ষতি সে চায় না।

প্রাকৃতিক খাবার খেয়েই একেকটা হয়েছে সেই রকম। বিশালদেহী। সটান মাংস। কুঁজগুলোও সটান। শিঙগুলোও দেখার মতো। ঢুস মেরে ভুসির বস্তা ফুটো করে দিতে পারে, নিমিষে কলাগাছ উপড়ে ফেলতে পারে। চুঁচড়া শিঙের ভয়ে কেউ কাছে ঘেঁষার সাহস পায় না। শক্তিতেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। গ্রামের মাঠে গত তিন বছর ষাঁড়ের লড়াইয়ের মেডেলটা আমিন ফকিরের ঘরেই এসেছে। প্রতিটি ষাঁড়ই লড়াইয়ে ওস্তাদ। হারতে জানে না।

উল্লাপাড়া থেকে শুক্রবার রাতে ট্রাকে করে শনিবার ভোরে ষাঁড়গুলোকে গাবতলীর হাটে নামানো হয়। ঈদের এক সপ্তাহ বাকি, শহরের রাস্তায় তীব্র যানজট, মার্কেটগুলো জমে উঠেছে, গ্রামে ফেরার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ঢাকাবাসী। গরুর হাটে বেচাকেনা তেমন জমে ওঠেনি। তবে আমিনের ভাগ্য ভালো, সেদিন বিকেলেই সাড়ে আট লাখ টাকায় একসঙ্গে পাঁচটি গরু বিক্রি হয়ে যায়। কিনেছেন শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাকেরুল হক চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি রাজনীতিকও। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের মহানগর কমিটির সহসভাপতি। ভবিষ্যতে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আশা। রাজনীতি করেন, দু-একটা গরু কোরবানি দিলে তো চলে না। ঈদের দিন শত শত গরিব-গুর্বো বাড়িতে ভিড় করে। কাউকে খালি হাতে ফেরান না। ঈদের দিন কোরবানি দেন তিনটি গরু, পরের দিন আরো দুটি।

নিজেই হাটে এসে পছন্দসই গরু কেনার ইচ্ছে ছিল শাকের চৌধুরীর। জরুরি কাজে আটকা পড়ায় ছোট ভাই হারেস ও ভাগিনা জুনায়েদকে পাঠিয়ে দিলেন। সঙ্গে তারা বাড়ির কেয়ারটেকার গোফরানসহ আরো আটজনকে নিল। হাটে ঢোকার মুখেই আমিন ফকিরের ষাঁড়গুলো তাদের পছন্দ হয়। দামও বাজেটের নাগালে। তবু একবার পুরো হাট চক্কর দিয়ে বাজারদর যাচাই করে নিল।

ক্রেতার কাছ থেকে টাকা বুঝে নিয়ে হাটের একটি বেসরকারি ব্যাংকের বুথে জমা করে দিল আমিন। এত টাকা বহন করে বাড়ি ফেরা ঝুঁকিপূর্ণ। কোথায় কোন ছিনতাইকারী তার ওপর গোপনে নজর রাখছে বলা যায় না। পথে ডাকাতের ভয় তো আছেই। তা ছাড়া আজ সে ফিরবেও না। পুরান ঢাকায় তার পীর শাহ সুফি সদর উদ্দিন আহমেদ চিশতির কবর। বহু দিন জেয়ারত করা হয় না। রাতটা পীরের মাজারে জিকির-আজকার করে কাটিয়ে পরদিন নিউ মার্কেট থেকে কিছু কেনাকাটা করে তারপর বাড়ি ফিরবে।

তখন শেষ বিকেল। দেনা মিটিয়েই হারেস বাড়ি ফিরে গেছে। গরুগুলো নিয়ে ধানমন্ডির উদ্দেশে হাঁটা ধরে জুনায়েদ। পাঁচজনের হাতে পাঁচটার দড়ি, সহযোগী হিসেবে পেছনে আরো চারজন। পথচারীরা সরে দাঁড়াচ্ছে, তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে, দাম কত জিজ্ঞেস করছে। গরুগুলো হাঁটছে ধীরপায়ে, হেলেদুলে। জালিবেতের সপাং সপাং বাড়ি খেয়েও হাঁটার গতি বাড়ায় না। জান আর যানবাহনের জট ঠেলে শ্যামলী পৌঁছতেই সন্ধ্যা নেমে গেল।

আট নম্বর বাসে চড়ে সদরঘাট যাচ্ছিল আমিন ফকির। বাসে প্রচণ্ড ভিড়, দরজার কাছে ভিড়ের মধ্যে সে ঝুলছে। শ্যামলী ট্রাফিক সিগন্যালে বাসটি থামে। দীর্ঘ জ্যাম। আট-দশ মিনিটের আগে ছাড়বে বলে মনে হয় না। হঠাৎ গরুগুলোকে দেখে সে বাস থেকে নামে, শেষবারের মতো দেখে নিতে সামনে এসে দাঁড়ায়। তাকে দেখে গরুগুলোও দাঁড়িয়ে পড়ল। লেজ নাড়িয়ে হাম্বা হাম্বা ডাক দিল। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে আমিন। তারা তার হাত শোঁকে, গা শোঁকে, পা শোঁকে। আমিনের চোখ দুটো ছলছল করে। জুনায়েদ তাড়া দেয়, ‘হইলো হইলো ভাই, এবার ছাড়েন।’
কাঁপা গলায় আমিন বলে, ‘পালা গরু তো ভাই, বুঝলেন, খুব মায়া লাগে।’

বলতে বলতে আমিন কেঁদে ফেলে। চোখ মুছে সরে দাঁড়ায়। তখন সিগন্যাল ছেড়ে দেওয়ায় বাসটি চলতে শুরু করে। আমিন দৌড়ে উঠে পড়ে বাসে। তাকে অনুসরণ করে ষাঁড়গুলো। বাসটি ছুট লাগালে ষাঁড়েরাও পিছে পিছে ছুট লাগায়। বাধ্য হয়ে জুনায়েদরাও ছুটতে থাকে। ছোটে আর হৈহৈ করে। জুনায়েদ সামনে গিয়ে থামাতে চেষ্টা করেও পারে না। লোকগুলোর হাত থেকে রশিটা একেকবার ছুটে যেতে চায়, তারা সব শক্তি খাটিয়ে সমানতালে ছুটতে থাকে।

ষাঁড়গুলো ছুটতে ছুটতে শিশুমেলা পৌঁছে বাসটিকে আর দেখতে না পেয়ে থামে। মাথা উঁচিয়ে হাম্বা হাম্বা ডাক দেয়। ‘হাঁট হাঁট’ বলে গোফরান তাড়া দেয়, অথচ তারা নড়ে না। পিঠে জোরসে বেতের বাড়ি কষিয়েও একচুল নড়াতে পারে না। দড়ি ধরে টানে, নড়ে না। পেছন থেকে ঠেলে, তবুও না। যেন যমখুঁটি গেঁড়েছে। গোফরান বিরক্ত হয়ে লম্বা একটা বেত দিয়ে বেদম পিটুনি দেয়। গরুগুলোর কোনো শোধবোধ নেই, তারা আগের মতোই অনড়। জুনায়েদের বিরক্তি চরমে ওঠে। একে তো যানজট, তার উপর রাত, সে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়।

আমিন ফকিরকে বহনকারী বাসটির মতো দেখতে একই রকমের আরেকটি বাস দেখে ষাঁড়ের দল হঠাৎ ছুটতে শুরু করে। এমন জোরে ছোটে, জুনায়েদরা দৌড়ে কুলিয়ে উঠতে পারে না। দড়ির টানে হাতগুলো লাল হয়ে উঠলে ব্যথায় তারা দড়ি ছেড়ে দেয়। ছাড়া পেয়ে ষাঁড়গুলো আরো জোরে ছুটতে লাগায়। তাদের এমন উদ্ভ্রান্ত ছোটাছুটি দেখে পথচারীদেরও ছোটাছুটি শুরু হয়। ছুটতে গিয়ে এক লোক চলন্ত একটা বাসের সঙ্গে ধাক্কা খায়। চাকার নিচে পড়ে তার মাথাটা যায় থেঁতলে। হায় হায় করে চারদিক থেকে লোকজন ছুটে আসে। লোকটাকে একটা সিএনজি অটোরিকশায় তুলে পঙ্গু হাসপাতালের দিকে ছোটে।

ছুটন্ত ষাঁড়গুলো কলেজগেট দিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় ঢুকে পড়ে, তাদের পিছে পিছে হৈহৈ করে ছুটতে থাকে জুনায়েদ ও তার দল। ছুটতে ছুটতে জুনায়েদ ছোটমামাকে ফোন দেয়। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, ‘গরুগুলা খুব পাগলামি শুরু কইরা দিছে মামা। ধইরা রাখবার পারতেছিলাম না বইলা ছাইড়া দিছি। কী করব বুঝতে পারতেছি না।’

মোহাম্মদপুর খেলার মাঠের সামনে গরুগুলো দাঁড়ায়। দেয়ালের ধারে ঘুরঘুর করে। হয়ত ঘাস খোঁজে। ছুটতে ছুটতে হয়রান জুনায়েদ ও তার দল মাঠের সামনে এসে খানিকক্ষণ জিরায়। তারপর একজন চিত্রা ষাঁড়টির দড়ি ধরতে গেলে তার তলপেটে প্রচণ্ড একটা ঢুস মারে কালো ষাঁড়টি। রাস্তার পিচে চিৎ হয়ে পড়ে লোকটার মাথা গেল ফেটে। ষাঁড়টি ছুটে এসে তাকে পায়ে মাড়িয়ে পুবের রাস্তা ধরে ছুট লাগায়। তার সঙ্গে ছুট দেয় বাকিরাও।

আহত লোকটার কাছে ছুটে আসে জুনায়েদ। তলপেট থেকে রক্ত বেরুতে দেখে হায় হায় করে ওঠে। গোফরান ভীষণ ঘাবড়ে যায়। গরুর বদলে আহত লোকটাকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে ওঠে। তাকে একটা রিকশায় তুলে স্থানীয় এক প্রাইভেট ক্লিনিকের উদ্দেশে ছুটল জুনায়েদ, তার সঙ্গে গেল আরেকজন, বাকিরা ছুটল ষাঁড়ের পিছে।

ততক্ষণে ষাঁড়গুলো আসাদগেটে পৌঁছে গেছে। গোফরান ও তার দল ছুটতে ছুটতে আসাদগেটে এসে জানল, একটা হেলভেশিয়ায় হানা দিয়ে ঢুস মেরে সামনের দুটি কাচ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ক্ষিপ্ত ষাঁড়ের দল। হেলভেশিয়ার ম্যানেজার একটা রড হাতে তাড়াতে গিয়ে উল্টো তাড়া খেয়ে দৌড়ে ওভারব্রিজের ওপর আশ্রয় নিয়েছে।

ষাঁড়গুলো তখন ওভারব্রিজের নিচে একটা ডাস্টবিনে খাবার খুঁজছে। গোফরান সাহস করে একটার দড়ি ধরতে সামনে এগিয়ে গেলে হাম্বা হাম্বা ডেকে ধাওয়া দিল তাকে। দৌড়ে সে ওভারব্রিজে ওঠে কোনোরকমে রক্ষা পেল। ব্রিজে অসংখ্য মানুষের ভিড়। ভয়ে কেউ নিচে নামার সাহস পাচ্ছে না। ম্যানেজার তখনো চেঁচাচ্ছে। তার কাণ্ড দেখে গোফরান হে হে করে হাসে। ম্যানেজার তাকে ধমক লাগায়, ‘বলদের মতো হাসেন ক্যান মিয়া, গরু থামান গিয়া।’

রাস্তা খালি দেখে ষাঁড়গুলো ধীর পায়ে রাস্তা পার হওয়া ধরল। সামনে হঠাৎ গরু দেখে একটা প্রাইভেট কার সশব্দে ব্রেক কষল। পেছন থেকে সেটিকে ধাক্কা দিল আরেকটি প্রাইভেট কার। ফটাফট দরজা খুলে দুই চালক নেমে শুরু করে দিল তর্কাতর্কি। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে হাতাহাতি। তাদের থামাতে আরো কজন ড্রাইভার নেমে এলো। ততক্ষণে গোটা রাস্তায় লেগে তীব্র জ্যাম।

রাস্তা পার হয়ে পঞ্চষাঁড় হেলেদুলে শ্যামলীর দিকে হাঁটে। গোফরান ও তার দল হৈহৈ করে তাড়া করলে তারা আবার ছুট দেয়। ডানে বাঁক নিয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানমুখী সড়কটি ধরে পুবদিকে ছুটতে ছুটতে উদ্যানের ঝুলন্ত ব্রিজের সামনে গিয়ে থামে। হাম্বা হাম্বা ডাকে। লোকজন ভয়ে রাস্তা খালি করে দেয়। ষাঁড়ের দল ব্রিজটি পার হয়ে উদ্যানে ঢুকে ঘাস খেতে শুরু করে। এক বাদামওয়ালার তাড়া খেয়ে এক ছুটে জিয়ার মাজারের গেটের সামনে গিয়ে নাদে, পেশাব করে। গোবরে ভরে ওঠে রাস্তাটা। ডিউটিরত দুই আনসার লাঠি হাতে তাড়াতে এলে উল্টো তাড়া খেয়ে ভাগে।

রাত তখন প্রায় সাড়ে আটটা। রোকেয়া সরণিতে উঠে ষাঁড়ের দল ছুটতে ছুটতে বিজয় সরণির মোড়ে এসে থামে। ধীর পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হয়। গাড়িগুলো থেমে তাদের পথ করে দেয়। একটা মাইক্রোবাস চিত্রা ষাঁড়টিকে ধাক্কা দিতে দিতে সশব্দে ব্রেক কষে। ট্রাফিক সার্জেন্ট জোরে বাঁশি ফুঁকে চিৎকার করে বলে, ‘এই গরু কার? গরুর মালিক কোথায়?’

ছুটতে ছুটতে আসা গোফরান হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, ‘আমাদের স্যার, আমাদের। একটু ধরার ব্যবস্থা করেন। খুব জ্বালাইতেছে হারামজাদারা।’

সার্জেন্ট ধমকে ওঠে, ‘রাখো তোমার ধরার ব্যবস্থা! আরেকটু হইলে তো অ্যাকসিডেন্ট ঘইটা যাইত মিয়া। দেখতাছ না কি জ্যাম লাইগা গেছে?’
‘জে স্যার, দেখতাছি। কী করব বলেন, হেই শ্যামলী থেইক্যা দৌড় লাগাইছে হালারা।’
‘কী করব মানে? তাড়াতাড়ি পাঁচশো টাকা বাইর করো। ফাইজলামি পাইছ মিয়া?’

টাকার কথা শুনে গোফরানের সঙ্গীরা পিছু হটে, দ্রুত রাস্তা পার হয়ে ষাঁড়গুলোকে অনুসরণ করে। ফুটপাত ধরে ষাঁড়ের দল জাহাঙ্গীরগেটের দিকে ছুটতে থাকে। লোকগুলো ছুটে সামনে গিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের ধরার চেষ্টা করে, কিন্তু শিঙ নাড়ানির ধরন দেখে ভয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যায়। ডাক দিতে দিতে ষাঁড়ের দল আবার ছুটে চলে। মহাখালী রেলক্রসিং পার হয়ে বাঁয়ে ঘুরে, ফের ডানে ঘুরে গুলশানের দিকে ছোটে। পথে একটা বিউটি পার্লারের কাচ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় এবং একটা পান-সিগারেটের দোকান উল্টে দেয়। এক সার্জেন্টের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাদের পিছু ছোটে। কিন্তু তারা ঠিক কর্তব্য বুঝে উঠতে পারে না। মানুষ হলে কথা ছিল, বোবা প্রাণী কি পুলিশ বোঝে? ব্যর্থ হয়ে তারা হাল ছেড়ে দেয়।

মহাখালী রেলক্রসিংয়ে এসে ষাঁড়ের পেছনে ধাবমান লোকগুলো হঠাৎ আবিষ্কার করে যে তাদের দলে গোফরান নেই। আশ্চর্য! কোথায় গেল গোফরান? দ্রুত তার মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন করে জানল তাকে পুলিশবুথে আটকে রেখেছে ট্রাফিক সার্জেন্ট। ভারী তো বিপদের কথা! তারা কোন দিকে যাবে স্থির করতে পারে না।

দুই.
শাকের চৌধুরীর তদবিরে রাত দশটার দিকে ছাড়া পায় গোফরান। ছাড়া পেয়ে যথারীতি আবার সদলে মহাখালীর দিকে ছোটে। ছুটতে ছুটতে চেয়ারম্যানবাড়ি পৌঁছে হয়রান হয়ে ওঠে। কোথাও ষাঁড়গুলোকে দেখতে পায় না। এত বড় শহর, এত শত শত গলি তার, কোন গলিতে ঢুকেছে জানার তো কোনো উপায় নেই। কোথায় খুঁজবে? লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে কেউ বলে ডানে, কেউ বলে বাঁয়ে। ঠিক ঠিক কেউ হদিস দিতে পারে না। খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে রাত দেড়টার দিকে তারা বাসায় ফেরে।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে মোবাইল ফোনে ফেসবুক ওপেন করে জুনায়েদ একটি খবরের লিংক দেখতে পায়। শিরোনাম, ‘বনানীতে গরুর শিঙের গুঁতোয় অজ্ঞাত ব্যক্তি নিহত।’ একটি জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল সংবাদটি প্রকাশ করেছে। দ্রুত প্রস্তুত হয়ে দলবল নিয়ে বনানীর উদ্দেশে গাড়ি হাঁকাল জুনায়েদ। হারেসও যোগ দিল তাদের সঙ্গে।

ষাঁড়ের দল তখন বনানী গোরস্তানের ফুটপাতে বসে চুপচাপ জাবর কাটছে। রাত তাদের এখানেই কেটেছে। খুঁজতে খুঁজতে হারেসরা যখন গোরস্তানে পৌঁছল তখন দুপুর। ষাঁড়ের দল তখন মহাখালী হয়ে নাবিস্কোর দিকে ধাবমান। ফোনে খবর পেয়ে তারা নাবিস্কোর দিকে গাড়ি হাঁকাল। কিন্তু কাকলি এসে আটকা পড়ল প্রচণ্ড জ্যামে।

বেলা আড়াইটার দিকে শীর্ষ সব কটি অনলাইন নিউজপোর্টালে ‘শহরে পঞ্চ ষাঁড়ের তাণ্ডব’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কয়েকটি টিভি চ্যানেলের স্ক্রলেও যায় সংবাদটি। এক টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক ক্যামেরাম্যান নিয়ে বেরিয়ে পড়ে পঞ্চষাঁড়ের খোঁজে। খুঁজতে খুঁজতে ইস্কাটন গার্ডেনে মহিলা অধিদপ্তরের পেছনে ছোট একটা খালি জায়গায় ষাঁড়গুলোকে দেখতে পায়। ক্যামরাম্যান ক্যামেরা তাক করে শ্যুট করার সময় চিত্রা ষাঁড়টি হঠাৎ ছুটে এসে ধাওয়া দিল তাকে। ক্যামেরা ফেলে সে ছুটে পালায়। ষাঁড়ের পদপিষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ক্যামরাটির ল্যান্স।

বিকেল চারটার দিকে পঞ্চষাঁড় সবজিবাগান হয়ে শেরাটন হোটেলের সামনে এসে থামে। দ্বিতীয় সারির টিভি চ্যানেল ‘মুনটিভি’ ষাঁড়গুলোর গতিবিধি সরাসরি সম্প্রচার শুরু করল। মুহূর্তে সব কটি টেলিভিশন, দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজপোর্টালের সাংবাদিকরা শেরাটন হোটেলের সামনে ভিড় জমায়। ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দ ওঠে। এক রিপোর্টার হাম্বা ডাক রেকর্ড করতে বুম হাতে ষাঁড়গুলোর সামনে গেলে ধাওয়া খেয়ে পালায়। সাকুরা বার এন্ড রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে মুনটিভির রিপোর্টার বুম হাতে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, ‘হ্যালো সুইটি, হ্যালো হ্যালো...হ্যাঁ হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি...। গরুগুলো এখন শেরাটন হোটেলের সামনে। আপনি জানেন যে হোটেলটিতে বাইরের কান্ট্রির অনেক ভিআইপি অবস্থান করছে। আমি খবর পেয়েছি বর্তমানে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। হোটেলের একজন সিকিউরিটি গার্ড গরুগুলোকে দ্রুত এখান থেকে সরানোর দাবি জানিয়েছে। আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি...সুইটি।’

মুনটিভির দেখাদেখি সিটিভিও লাইভ টেলিকাস্ট শুরু করল। কাজকর্ম ফেলে সারা দেশের মানুষ টিভির সামনে বসে গেল। যেন টেলিভিশনে ষাঁড়ের লড়াই শুরু হয়েছে। দর্শকদের কেউ কেউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ছে : পাঁচটা গরু শহরে এমন তাণ্ডব চালাচ্ছে, বসে বসে কি আঙুল চুষছে মন্ত্রী? পুলিশের আইজি-ডিআইজিরা কি ঘোড়ার ঘাস কাটছে? বিরোধী দল মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামলে তো ঠিকই ঠ্যাঙাতে পারে পুলিশ। যতসব চামুচের দল। গেল, দেশটা রসাতলে গেল। এই সরকারকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। বাঙালি জাতটাই আসলে খারাপ। গণআন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাচ্ছে না কেন?

জনৈক নাস্তিক কাম ফেসবুকার স্মার্টফোনের ক্যামেরায় পঞ্চষাঁড়ের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়, ‘লও ঠ্যালা! সভ্যতার এই যুগে পশু হত্যা করে উৎসব আর কতদিন?’

হারেস তখন তার লোকজনসহ কারওয়ান বাজার এলাকায় ষাঁড়গুলোকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। শাকের চৌধুরী তাকে ফোন করে ষাঁড়গুলোর অবস্থান জানালে সে ছুটে আসে শেরাটন হোটেলের সামনে। কিন্তু ষাঁড়গুলোকে দেখতে পায় না। লোকজনের কাছে জিজ্ঞেস করে জানল টিএসসির দিকে গেছে ষাঁড়ের দল। হাঁপিয়ে ওঠে হারেস। ভাইকে ফোন করে রমনা থানার ওসিকে ফোন দিতে বলল। শাকের চৌধুরী ওসির নম্বরে ফোন দিলেন। রিসিভ করলেন না ওসি। ব্যর্থ হয়ে তিনি শাহবাগ থানায় ফোন দিলেন। ওসি ফোন রিসিভ করলেও মিটিংয়ে আছেন বলে লাইন কেটে দিলেন। অগত্যা তিনি ডিএমপি কমিশনারের নম্বর জোগাড় করে তাকে ফোন দিলেন। ফোন ধরলেন কমিশনার। শাকের চৌধুরী নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, ‘একটা কিছু করেন কমিশনার সাহেব। পাগলা গরুগুলো তো জনগণের জান-মালের ক্ষতি করছে। যে করেই হোক ধরার ব্যবস্থা করেন প্লিজ।’

কমিশনার বললেন, ‘দেখুন এটা আমাদের কাজ নয়, এটা পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাজ। আপনি বরং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’

মুনটিভি ও সিটিভিতে ষাঁড়কাণ্ডের লাইভ টেলিকাস্ট দেখে আইজির টনক নড়ল। তিনি ফোন দিলেন ডিএমপি কমিশনারকে। কমিশনার দ্রুত শাহবাগ থানায় ফোন করে ওসিকে নির্দেশ দিলেন, যেভাবে হোক বদমাশ গরুগুলোকে ধরা চাই। জীবিত অথবা মৃত।

কমিশনারের নির্দেশ পেয়ে একদল কনস্টেবল নিয়ে টিএসসির দিকে ছুটল ওসি। ষাঁড়ের দল তখন বাংলা একাডেমি, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট হয়ে প্রেসক্লাবের সামনে চলে গেছে। মোট চারটি টেলিভিশন তাদের গতিবিধি লাইভ টেলিকাস্ট করছে। রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফুটপাতের পথচারীরা ভয়ে যে যেদিকে পারছে পালাচ্ছে। প্রেসক্লাবের সামনে একটা চায়ের স্টল থেকে কেউ একজন একটা পানির বোতল ছুড়ে মারলে ক্ষিপ্ত ষাঁড়ের দল হামলা চালিয়ে দোকানটি উল্টে দেয়। বেচারা দোকানি দৌড়ে পালাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়।

গাড়ির সাইরেন বাজাতে বাজাতে প্রেসক্লাবের সামনে এসে থামল ওসি। ষাঁড়ের দল তখন পল্টনের দিকে ছুটছে। পিস্তল তাক করে সে ‘হোল্ড হোল্ড’ বলে চিৎকার করতে লাগল। এক সিনিয়র কনস্টেবল তার কানে কানে বলল, ‘থামেন স্যার থামেন, লোকজন হাসাহাসি করছে।’ ওসি থামল। উপায় খুঁজে না পেয়ে দ্রুত টিয়ার গ্যাস ছোড়ার নির্দেশ দিল। মুহূর্তে গ্যাসের ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে উঠল চারপাশ। অন্ধকারে ষাঁড়গুলোকে আর দেখা যায় না। ধোঁয়ার কারণে পুলিশের দল সামনে এগোতে ব্যর্থ হয়। ধোঁয়া সরে গেলে আবার তারা গাড়ি হাঁকায়।

ষাঁড়গুলো তখন নয়াপল্টন মোড়ে একটা চা-দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কলার খোসা চিবুচ্ছে। উপরের নির্দেশ পেয়ে পল্টন থানা থেকেও পুলিশের একটি টিম হাজির হয়েছে। চিত্রা ষাঁড়টির দিকে রিভলবার তাক করে গুলি ছুড়ল শাহবাগ থানার ওসি। গুলিটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে এক পথচারীর গলায় বিদ্ধ হলো। সাংবাদিকরা ছুটে এলো। গরু বাদ দিয়ে লোকটার দিকে ক্যামেরা তাক করল। লাইভ টেলিকাস্টে লোকটাকে দেখা যায়। লোকটা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, সাংবাদিকরা তার চারদিক ঘিরে রেখেছে। একটা লোক চিৎকার করছে, ‘সরেন আপনারা সরেন, দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিতে হবে।’ তার চিৎকার সাংবাদিকদের কানে ঢোকে না, ঢুকলেও আমলে নেয় না, তারা যথারীতি তাদের কাজে ব্যস্ত। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে লোকটা ঘটনাস্থলেই মারা গেল।

ওসির ওয়্যারলেসে কমিশনারের নির্দেশ এলো, ‘সাবধান, গুলি ছোড়া যাবে না। তোমরা বরং গরুগুলোকে কোনোভাবে খেদিয়ে শহরের বাইরে নিয়ে যেতে পার কি না দেখ।’

একটা নিরীহ মানুষের মৃত্যুতে কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়েছে ওসি। কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। ষাঁড়গুলো তখন পল্টন ব্রিজের নিচে। মাথায় হাত বুলানোর জন্য সাহস করে সে কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। শিঙ নাড়ানি দেখে গুঁতোর ভয়ে দ্রুত আবার পিছু হটল। ওয়্যারলেসে জরুরি বার্তা পাঠাল, গুলি করে মারা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। নইলে তারা আরো তাণ্ডব চালাবে। কিন্তু কমিশনারের কড়া নির্দেশ, কিছুতেই গুলি করা যাবে না। উপায় খুঁজে না পেয়ে ওসি দূর থেকে ষাঁড়গুলোর প্রতি নজর রাখে। চারদিকে উৎসুক মানুষের ভিড় দেখে তার মেজাজ গেল চড়ে। তার নির্দেশে কনস্টেবলরা হঠাৎ শুরু করল লাঠিচার্জ। দর্শকরা হন্তদন্ত হয়ে এদিক-সেদিক ছুটতে লাগল। লাঠিচার্জে আহতও হলো কয়েকজন।

রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা। চারটি টেলিভিশনে তখনো লাইভ টেলিকাস্ট চলছে। মুনটিভি ও সিটিভিতে টক শো শুরু হয়েছে। মুনটিভির টক শো’র বিষয় ‘গরুর তাণ্ডব ও রাষ্ট্রের ব্যর্থতা।’ অতিথি হয়েছেন পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সাবেক সচিব। সিটিভির টক শো’র বিষয় ‘কোরবানি ও জনসচেতনতা।’ আলোচনায় অংশ নিয়েছেন সরকারি দলের একজন সাংসদ ও বিরোধী দলের প্রথম সারির এক নেতা। সাংসদ এই ঘটনার পেছনে জনসচেতনতার অভাবকে দায়ী করে বললেন, ক্রেতা যদি হাট থেকে একটা ট্রাকে চড়িয়ে গরুগুলোকে বাড়ি নিয়ে যেত তাহলে এমন লঙ্কাকাণ্ড ঘটত না। বিরোধী দলের নেতা বললেন, আপনারা ঢাকা শহরে দিনের বেলায় ট্রাক চলতে দেন? উত্তরে সাংসদ বললেন, দিনের বেলা ট্রাক চলাচল কে বন্ধ করেছিল? আপনাদের আমলেই তো বন্ধ হয়েছে।
ব্যস, শুরু হয়ে গেল দুজনের বাগ্বিতণ্ডা। তাদের থামাতে না পেরে উপস্থাপক তড়িঘড়ি বিজ্ঞাপন বিরতি ঘোষণা করলেন।

তিন.
আমিন ফকির তখন পল্টনের একটা হোটেলে। জরুরি কিছু কাজ থাকায় এখনো তার বাড়ি ফেরা হয়নি। হোটেলকক্ষে শুয়ে টেলিভিশন দেখছিল। মুনটিভির লাইভ টেলিকাস্টে ঘটনার আদ্যোপান্ত শুনে দ্রুত অকুস্থলে ছুটে এলো। মানুষের ভিড় ঠেলে এগিয়ে গেল ষাঁড়গুলোর দিকে। লোকজন হৈহৈ করে উঠল, পাগল নাকি লোকটা! এমন ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের কাছে গিয়ে কেন নিজের বিপদ ডেকে আনছে! ফটোগ্রাফারদের ক্যামেরায় ক্লিক ক্লিক শব্দ ওঠে। টিভির ক্যামেরাগুলো তার দিকে ঘোরে। মুনটিভির রিপোর্টার সড়কদ্বীপে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে থাকে, ‘হ্যাঁ শারমিন, আমি যেমনটি বলছিলাম, যেমনটি বলছিলাম যে পাগলা গরুগুলো এখন নয়াপল্টন মোড়ে। আমরা দেখতে পাচ্ছি একটা লোক সাহস করে গরুগুলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে...এগিয়ে যাচ্ছে...।’

ষাঁড়গুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আমিন ফকির। ষাঁড়েরা তার হাত শোঁকে, গা শোঁকে, পা শোঁকে; হাম্বা হাম্বা ডাক দেয়। তাদের মাথায় হাত বুলায় আমিন। হাত বুলায় আর চোখ মোছে। উৎসুক দর্শকদের কোলাহল থামে। যেন কোনো নাটকের প্রদর্শন চলছে। তারা নাটকের নীরব দর্শক। নিজের অজান্তে ওসি তার মাথার টুপিটা হাতে নামায়। ভিড় ঠেলে হারেস এসে আমিন ফকিরকে ধমকাতে শুরু করে, ‘বাটপার কোথাকার! পাগলা গরু বেচতে আনছো মিয়া! আগে কও নাই কেন? তোমাকে তো পুলিশে দেয়া উচিত।’

আমিন ফকির কিছু বলে না। পালা করে সে ষাঁড়গুলোর গলায় আর মাথায় হাত বুলায়, মা যেভাবে সন্তানকে আদর করে। আরাম পেয়ে তার কাঁধে তারা মাথা তুলে দেয়। যেন মানুষে আর ষাঁড়ের কোলাকুলি। মুনটিভির ক্যামেরাম্যান ষাঁড়গুলোর মুখ জুম করে দেখায়। ষাঁড়গুলোর চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তাদের চোখগুলো মুছে দিতে দিতে আমিন ফকির বলে, ‘পাগলামি করিস না বাপ। আর জনমে মানুষ হয়ে ফিরিস। যা বাপধন, যা যা।’

দড়িগুলো একত্রিত করে হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় আমিন। দড়ির গোছাটি হারেসের দিকে এগিয়ে ধরে বলে, ‘নিয়া যান এবার। আর পাগলামি করবে না।’

না, পাগলামি আর করল না। প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা শহর দাপিয়ে বেড়ানো ক্ষিপ্ত ষাঁড়গুলো একেবারেই দমে গেল। জাবর কাটতে কাটতে তারা হাঁটতে থাকে। তাদের সামনে সাংবাদিকদের ক্যামেরাগুলো ঝলকে ওঠে। চোখ মুছতে মুছতে হোটেলের দিকে হাঁটতে থাকে আমিন ফকির।


রচনাকাল: ২৭.০৯.২০১৫