হাসান মোস্তাফিজের গল্প ‘রাজার দেশ’

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৯

বহুদূর থেকে কেমন অস্পষ্ট কীসব শব্দ শুনি। কেন জানি, ইদানীং তা খুব ভালো লাগে। চোখ দুটি খুলতে গিয়েও খুলি না। কারণ শব্দ তো দেখা যায় না। চোখ তাহলে কেন খুলবো! যেটা করা যায় সেটা হলো, কানগুলোকে আরো সক্রিয় করে তুলি যাতে সেসব শুনতে পারি।

এই রাজার দেশে ওই শব্দগুলোই একমাত্র মুক্তি। আর কিছুতেই মুক্তি নেই। যেন সবাই তালাবদ্ধ। খাঁচায় বন্দি সব পালকহীন পাখি। এসব কথা যত লিখছি তত ভালো লাগছে। এই ডায়েরিটা কিছুক্ষণ পর তারা নিয়ে যাবে। রাজা আমাকে কিছুক্ষণের জন্য ডায়েরি লিখতে দিয়েছেন। এই কিছক্ষণে যা বলার বলছি।

আমি কিছুদিন আগে পানি চুরি করলাম একটা পুকুর থেকে। পুকুরটা ছিল আমাদের রাজার নামে। রাজা ইদানীং সব পানির সোর্স তার নামে করে নিয়েছেন। তিনি শাসক। তাই তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, আর আমরা হা করে তা পালন করতে বাধ্য হয়। পানি চুরি করলাম কারণ বর্তমানে কোথাও পর্যাপ্ত পানি নেই। ফলে রাজা অবশিষ্ট পানির উপর কিছু নিয়ম জারি করেছেন। সে এক অদ্ভুত নিয়ম। নিয়মগুলোর আগের প্রথম কথা, সবার আগে রাজা।

ভাবতে অবাক লাগে, দেশটার জনসংখ্যা প্রায় দশ কোটি, আর রাজা মাত্র একজন! আর সবার আগে কিনা রাজা? এক রাজা দিনে কতটুকুই পানিই বা খান? কিংবা গোসল আর অন্যান্য কাজে সর্বোচ্চ ধরলাম দুই-তিন বালতি পানি লাগে, তাও তিনি পুরো দেশের পানির সোর্স বেদখল করবেন? আর দশ কোটি মানুষ সেটা মেনেও নিলো? সামান্য জেলের ভয়ে যেখানে রাষ্ট্রদোহীদের ইলেকট্রিক শক দিয়ে মারা হয়। আমার মনে হয়, এক গ্লাস পানির জন্য এই শক খেয়ে মরা খারাপ কিছু না। এতে সে করেই হোক দেহে সামান্য তৃপ্তি থাকবে।

আমার ভাবতে অবাক লাগে, আমি এমন সময়ে জন্মেছি যখন পানি শব্দটার কথা ভাবলেই মন তিক্ত হয়ে উঠে অজানা বেদনায়। আগে কত পানি ছিল এই দেশে। চারদিকে পুরো দেশটাকে পানি ঘিরে ছিল। অথচ তখন আমরা পানির উপর করলাম অকাম্য অত্যাচার। কিন্তু কখনো মানুষের দোষ দেখে না। নইলে যুগ হতে যুগ কত যুদ্ধ হচ্ছে, প্রকৃতির বস্ত্র ছিঁড়ে অস্ত্র বানিয়ে যে যুদ্ধ করা হয়েছে, সেটা নিয়েও প্রকৃতির কোনো মৃদু অভিযোগ ছিল না। ছিল অসীম মমতা। আর সেই আমরা শুধু তাকে ধ্বংস করলাম না, তার অন্যতম প্রিয় সন্তান পানির শক্তি কমিয়ে দিলাম করে দিলাম নিষ্ক্রিয়।

আগে কত পানি ছিল। এক গ্লাস পানি ছিল মামুলি ব্যাপার। কিন্তু তখনো পানির অপচয় চলছে প্রবল বেগে। আমি নিজে কত পানি অপচয় করেছি। একবার তিশিয়ার সামনে পুরো এক লিটার পানি ড্রেনে ফেলে দিলাম। প্রিয় তিশিয়া, তুমি তোমার মৃত্যুর সময় আমাকে আঁকড়ে ধরে পানি চেয়েছিলে, আমি তাও দিতে পারলাম না। অথচ আমি দাবি করতাম আমি তোমাকে ভালোবাসি।

যখন কোনো জাতি দিশেহারা হয়, তখন তাদের রক্ষা করতে একজন মানুষ জন্মেই যাকে জাতিরা দেশের সূর্য ভাবে। কিন্তু আমাদের উপর হয়ত ঈশ্বরের তীব্র ঘৃণা জন্মেছে তার দানকৃত মহিমা নষ্ট করার জন্য। নইলে পানির অভাব হওয়ার একশো বছর পরও কেন আমাদের একজন সূর্য জন্মাচ্ছে না যে পথ দেখাবেন এই কুরক্ষেত্র কাটিয়ে উঠার। যারা ক্ষমতা দখল করে বসে আছে তাদের যেন মনে দয়া নামে কোনো কিছুই নেই। প্রতিদিন কত সাধারণ মানুষ, পশুপাখি পানি না পেয়ে মারা যাচ্ছে, তারা তা দেখে লজ্জায় চোখ নামায় না, বরং হলদে দাঁত বের করে হাসে। অথচ মৃতদের অভিশাপ তাদের স্পর্শ করে না। ঈশ্বর যেন ভেকেশনে গেছেন আমাদের থেকে। চুরি করার কয়দিন আগে দেখলাম, রাজার কয়েকজন রক্ষী একটা বিড়ালকে পিটাচ্ছে। কারণ সে বলে তাদের পা আলতো ছুঁয়ে একবার মিউ ঢেকেছে। এই মিউ মানেই বলে পানি প্রার্থনা। ওরা চলে যাবার পর আমি বিড়ালটাকে মাটি ছাপা দিতে পারিনি। কারণ মাটি এখন আগের মতো নেই। পানির অভাব সবাই বুঝে। রক্তাক্ত বিড়ালটির দেহই আমাকে তিশিয়ার কথা মনে করিয়ে দিত।

হায় তিশিয়া! তোমার সেই চন্দ্রমাখা মুখটায় একটুও পানি তুলে দিতে পারিনি। তোমার জন্য আমার পানি চুরির কথা ভাবিনি। অথচ নিজের জন্য আমি এখন পানি চুরি করতে গেছি। না আমি তোমাকে মিথ্যা বলেছিলাম। আমি নিজেকে আসলে তোমার চেয়ে বেশি ভালোবাসি। তাই রাজার দখলকৃত সোর্স হতে জীবনকে এক আঙ্গুলে ভর দিয়ে পানি চুরি করতে গেছি। যে রাজার শিরায় মানুষের না, শয়তানের দানকৃত শূকরের রক্ত প্রবাহিত হয়।

আমার অবাক লাগে আমার পরিবারের কথা ভাবলেও। তাদের জন্যও কি আমি পানি চুরি করতে পারতাম না? তারা পানি পানি বলে যে আর্তনাদ করছিল আমি তখন ঘরের বাইরে তাদের মৃত্যু কামনা করছি। এতই নিকৃষ্ট ছিলাম তখন আমি। এ দেশে আসলে এখন আর কিছুই নেই। একটা অভাব সবাইকে করে দিচ্ছে ঈশ্বরের শয়তান। এখন আসলে কোনো স্কুল কলেজ ভার্সিটিও নেই। পড়াতেও পানি লাগে। কথা শুনতেও পানি খেতে হয়।

এই রাজার অত্যাচারের কথা কিছু না বললেই নয়। কিভাবে কিভাবে জানি উনি এই ক্ষমতায় আছেন। তিনি কিভাবে আসলে গেলেন সেটা নিয়ে আমার ধারণা নেই। তবে যতদূর শুনেছিলাম উনি নিজ পিতাকে হত্যা করে ক্ষমতায় এসেছেন। তখন উনি ছিল জোয়ান ফর্সা এক দেশি নেতা, দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। তখন কে জানত এই ফর্সা জোয়ান আসলে ভেতরে ভেতরে এক কালো জানোয়ার যার মস্তিষ্ক ভর্তি সব কালো কৌতুক।

যখন বড় হলাম, প্রায় কিশোর বলা চলে, সবে প্রেম করছি তিশিয়ার সাথে, তখন থেকেই উনি তার বিখ্যাত নীতিমালা প্রয়োগ করতে লাগলেন। এসবের আইন পাশ করেন উনি নিজেই। ভিতরে ভিতরে কেউ কিছু বলে না। কারণ তারা সাধারণের প্রতিনিধি না, তারা হল রাজার সুতোর গিটমারা পাপেট। তাদের যে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে রাজা খুশি রেখেছেন তা বলাই যায়। বহুদিন ভাত খাইনি। পরিবারের সবাই অসুস্থ। একদিন রাতে বসে আছি খোলা রাস্তায়। তখনই তিশিয়া ফোন দিয়ে এলো আমার কাছে। পলিথিনে সাদা সাদা কিছু দেখে ভেবেছিলাম ও হয়ত চাল নিয়ে এসেছে। এখন মানুষ পানিই পায় না, ভাত রাঁধবে কি। হায়, আগে ভাতের মাড় কি তাচ্ছিল্যের সাথে ফেলে দিতাম। এখন মনে হয়, সেই ভাতের মাড়ই ছিল সোনার চেয়ে দামি।

কিন্তু না, তিশিয়া ভাত নিয়ে এসেছে। রাজার হয়ে তার নীতিমালা প্রচার করলে রাজার পক্ষ থেকে দেড় লিটার পানি দেয় হয়। সেটা দিয়েই ও রেঁধে এনেছে। বাড়ির লোকদেরও খাইয়েছে। এখন ও খাবে আমার সাথে। কিন্তু তখনই সেই মৃদু অন্ধকারের ভিতর হতে দুটো সিকিউরিটি গার্ড আসলো। বুকের সেসব মেডেল দেখলেই বুঝা যায় তারা কে। তিশিয়া আশ্বাস দিলো ভয় নেই, তার কাছে লিগাল পেপার আছে কোনো সমস্যাই হবে না। কিন্তু ফল উল্টো। তারা এসে সেই খাদ্য তো কেড়ে নিলোই, বাধা দেওয়ায় আমাকে আর তিশিয়াকে টেইজার দিয়ে ২০০ ভোল্টের শকও দিলো। সেই পুরো রাত আমি তিশিয়াকে জড়িয়ে ধরে রাস্তায় শুয়ে ছিলাম। সবাই দেখেছে অথচ কেউ কিছু বলেনি। কারণ সতেরো কোটি মানুষ এখন এক শূকরের প্রতি ভীত এক পাথর। তখন অবশ্য একটা কথা ভাবলাম, এটা হলো একটা সুবিচার। আমার পরিবারের কেউ পানি পাচ্ছে না, আর আমি পানি দিয়ে রান্না করা ভাত খেতে বসেছিলাম নিজের প্রেমিকার সাথে। শখটা কত!

আজ খুব তিশিয়ার কথা মনে পড়ছে। ঐরাতের পর ও ভেবেছিল, সে প্রতিবাদ করবে। আমাকে না জানিয়ে কত কি করলো। সভা, মিছিল, দুই পয়সার মানববন্ধন... কিন্তু সেটা আন্দোলন হতে পারেনি। আন্দোলন করতেও পানি লাগে। এসব কখনো টিভিতে কিংবা নিউজে আসতো না, কারণ তারা রাজার সুনামে ব্যস্ত। আর যারা দেখতো প্রকাশ্য, তারা না দেখার ভান করতো। অথচ তারা ইচ্ছে করলেই মুকুটসহ জানোয়ারটাকে ড্রেনে ফেলে দিতে পারতো। কিন্তু না, তারা বন্ধ চোখকে আরো ঢেকে রেখেছে। ফলে জীবন গেল তিশিয়ার। আর কিছুক্ষণ পর প্রাণ যাবে আমার।

আমি মাঝাখানে চাচ্ছিলাম শূকরের গোলাম হতে। কী করব! আমি বাঁচতে চাই। আমি পানি চাই। আমি ভাতের মাড় সব ফেনা উঠা ভাত চাই। কিন্তু কেন জানি আমি হতে পারলাম না। সেদিন রাজার ছিল ভাষণের দিন। রাজা কিভাবে পানি সমস্যা সমাধান করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তার প্রামাণ্যচিত্র রাস্তায় দেখানো হচ্ছে। রাজা বিদেশ সফরে গিয়ে আমাদের জন্য কাঁদছেন, মাথায় এক দেশিকে তুলে ছবি তুলছেন এমন কতকি। ঠিক কিছুক্ষণ পর উনি সামনে আসলেন ঠিক তখনি এক গোষ্ঠী চেঁচিয়ে উঠল ভুয়া ভুয়া বলে।

তখন আমার মনে যে আনন্দ জেগে উঠেছিলো। ওরা যেন তিশিয়ার গড়া চাঁদ। কিন্তু রাজা বেজায় রেগে গেলেন এবং তাদের গ্রেফতার করা গেল। পরের দিন খবর পাওয়া গেল রাষ্ট্রদ্রোহিতা করায় প্রায় তিনশো লোকের হাত পা কেটে দেয়া হয়েছে। কিভাবে পারলেন রাজা? এতজনকে এভাবে পঙ্গু করে দিতে? ওনার এই নির্দেশ দিতে একটুও ঠোঁট কাঁপেনি? ঈশ্বরও তখন ভেকেশনে। আমরা মরছি তার কি? উনি আকাশে বসে হয়তো আমাদের ক্রিয়াকলাপ দেখে মজা পাচ্ছেন। বুঝায় যাই, আমাদের আসলে আর ঈশ্বর বলে কিছু নেই। কয়েকদিন পরই শুনলাম তাদের পরিবারের লোকরা রাজাকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছে।

পানি ছাড়া আজ মানুষ হিংস্র হয়ে গেছে। তাদের আর পিছুটান নেই। আমি বুঝি না, বুদ্ধিজীবীরা এখন কোথায়। একসময় তারা জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছে এখন তারা হয়েছে উন্মাদীয় প্রবাদ। কেমনে সম্ভব? তারা এখন ব্যস্ত রাজার ভাষণ লিখতে। কী সুন্দর সেসব ভাষণ! শব্দভূমিতে চাষ করে যেসব শব্দাবলি জন্মেছে সেসব যোগেই তৈরি করা সেসব ভাষণ। হায়! তারা যদি তাদের মেধাটা আমাদের পানি সমস্যায় ব্যয় করতো! না, তারা এখন সামান্য লিটার পানির জন্য সতেরো কোটি মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এককালের বিখ্যাত বিজ্ঞানী এখন রাজার সবেচেয় গুরুত্বপূর্ণ পাপেট।

শুনেছিলাম হুট করে এক রক্ষী মনের মধ্যে বলে সামান্য দয়া হয়েছিল। তাই উনি প্রায় ওনার জন্য বরাদ্দকৃত পুকুর হতে নির্দিষ্ট টাইমে মানুষকে পানি দিতেন লুকিয়ে লুকিয়ে। রাজার বলে নিষেধ আছে এটা করার। বহুবার আমি ওনার কাছে গিয়ে পানি নিয়েছি। তখন ওনার কালো বীভৎস চেহারাও কেন জানি খুব সুন্দর লাগতো। সেই পানি যেমন আমি পান করেছি, তেমন কিছু পানি নিয়ে তিশিয়ার কবরে ঢেলে কত কেঁদেছি। তিশিয়া বেঁচে থাকলে লোকটাকে অনেক ভক্তি করতো। কিন্তু এই দয়া বেশিদিন থাকলো না। একটা কথা আছে, রাজা সবই জানেন। হলোই তাই। একদিন যারা পানি আনতে গেলো ওনার কাছ থেকে তখন গিয়ে দেখল তারা মাথাছাড়া লাশ পুকুরে ভাসছে। পানি আর রক্তের মিশ্রণের মাঝে ওনার দেহটি ভাসছে। যারা গিয়েছিল তাদের সবার বলে একটা করে আঙুল কেটে নেয়ে হয়েছে হাত ও পা থেকে। তবে রাজা এদিক দিয়ে সামান্য শৌখিন ছিলেন হয়ত। সেজন্য কোন আঙুল কাটা হবে সেটা বাছাইয়ের সিদ্ধান্তটুকু অন্তত দিয়েছেন। সেই আঙুল এখন প্রামাণ্যচিত্রে দেখানো হয়। এগুলো বলে রাষ্ট্রদোহীদের আঙুল।

মাঝখানে হুট করে একদিন দেশে বৃষ্টি হলো। সেই বৃষ্টি ছিল দেখবার মতো। আসলেই, কি সুন্দর ভাবে আকাশ থেকে পড়ছিলো, যেন প্রকৃতি অনেকদিন পর আমাদের কষ্ট দেখে মন খুলে কাঁদছে। কিন্তু সেখানেও বিপদ। যারা সেই বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করলো তাদের সাথে সাথে সংগ্রহ করে ফাঁসি দেয়া হলো। কারণ তারা বলে রাজার বিরুদ্ধে কাজ করে তাকে হত্যা করতে চায়। নাইলে তারা বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করতো না। যেহেতু রাজা সবার আগে, সে অনুযায়ী সেই বৃষ্টির পানিও নাকি রাজার সম্পদ। আমরা একবার ভেবেছিলাম, এসব নির্বিচার টর্চার থেকে আমরা মুক্তি পাবো। কারণ রাজা আকস্মিকভাবে একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লেন। প্রকাশ্য সবাই শোক আর দুঃখ প্রকাশ করলেও গোপনে গোপনে সবাই ঐ দাঁতওয়ালা শুয়োরের মৃত্যু কামনা করছিলো। রাজা তখন দয়ালু হয়ে উঠলেন। ঘোষণা হলো উনি ওনার পানিসম্পদ এর অর্ধেক বিলিয়ে দিবেন। কিন্তু ওতদূর আর যেতে হলো না। কথায় আছে, খারাপ লোকেরা বেশিদিন বাঁচে। সেই জায়গায় রাজা তো বন্য শুয়োর। উনি না বাঁচলে খেলা কিভাবে জমবে।

তিশিয়ার কথা আজ খুব মনে পড়ছে। তিশিয়ার সাথে কিভাবে আমার প্রথম দেখা? ভাসা ভাসা মনে পড়ছে। তবে আমি এখনও অবাক হই কিভাবে এক উপন্যাসের দেবী এক রাস্তার অনিমেষ ছেলের প্রেমে পড়েছিলো, কে জানে! তিশিয়াকে প্রথম দেখেই মনে হয়েছিলো ও আমার। ও এসেছে আমার আদর পাবার জন্য। আমরা ছিলাম এক ক্লাস। তখন সবে মাত্র পানির অভাব শুরু হয়েছে। তবুও সস্তা বিজ্ঞানীরা আশা দিচ্ছিলেন যে, রাজা উপায় বের করছেন, ঠিকই একটা পথ বের হবে। আমরা গোপনে গোপনে বিশ্বাস করতাম না আর তিশিয়া প্রকাশ্যে ওর অবিশ্বাস প্রকাশ করতো। স্যারেরা ওকে এ কারণে কম হেনেস্তা করেনি। তখন ওর জন্য মায়া লাগতো। সেদিন আমি সারাদিন পানি খাইনি। শুনেছি রাজার পক্ষে একটা ফিচার লিখলে এক বোতল পানি পাওয়া যায়। আমি আবার লিখতে পারি। অনেকেই আমার ঘন ঘন উপন্যাস পড়া দেখে বলতো আমার সায়েন্স না, আর্টস পড়া উচিত। রাজাকে নিয়ে আমি সেদিন এমন চমৎকার ফিচার লিখেছিলাম যে পড়ে নিজেই মুগ্ধ হচ্ছিলাম বারবার। ইশ! রাজা যদি আসলেই সেই। ফিচারটার মতো হতেন তাহলে কে জানতো হয়তো আমাদের ওত অভাব থাকতো না। ফিচার জমা দিতেই তারা ফ্রিজ খুলে আমাকে ঠাণ্ডা এক বোতল পানি দিলো। এই পানি দেখলে জিহ্বায় যেরকম লালা আসে কোনো সুস্বাদু খাবার দেখলেও এত লালা আসবে না।

কিন্তু পানি নিয়ে রাস্তায় আসতেই দেখি তিশিয়া আর ওর কয়েকজন বন্ধু এক ছেলেকে নিয়ে দৌড়াচ্ছে। তার মাথা ফেটে গেছে। আমি তখন না বুঝে পানিটা নিয়ে রক্তাক্ত ছেলেটার মুখে ঢেলে দিলাম। পরে জানলাম ছেলেটি তিশিয়ার ছোটভাই। মরবার সময় ও বলে অনেক তৃপ্ত নিয়েই মরেছে। তার জন্য আমার মহৎকর্মই দায়ী। এরপর থেকেই তিশিয়া আমার কাছে ঘন ঘন কারণ ছাড়া আসতো। আমি আর পারলাম না। একদিন ঠিকই ওকে মনের কথা বললাম আর অনুমতি চাইলাম ওকে আদর করবার জন্য। তিশিয়া সেদিন যদিও সেদিন অনুমতি দিলো না। কিন্তু আমার বুকে ঠিকই নিজের মাথা ঢুকিয়ে দিলো। আমি ঘোরের মাথায় ওর ডান কানে আলতো কামড় দিলাম। আহা! কি মুহূর্তই না ছিলো।

কিছুক্ষণ আগে জেলর এসেছিলেন। ওনাকে কোড মানতে হবে। কোড অনুযায়ী রাষ্ট্রদোহীকে ইলেকট্রিক লাঠি দিয়ে মারতে হবে। আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলো আমি এখনই মার খেতে চাই না ডায়েরি লেখার পর। জিজ্ঞাসা করে জানতে পেলাম মার এখন খেয়ে নিলে পরদিন সকালে আমাকে মেরে ফেলা হবে। আর মার পরে খাই তাহলে দুদিন পর মারা হবে। তাই বলে নিলাম আমি এখনই মার খেতে চাই। মার খেয়ে এরপর আরামে ডায়েরি লিখব। মরার কথা ভাবলেই আনন্দ হয়। তিশিয়া আমার অপেক্ষায় আছে।

মার ভালোই দিয়েছে বলতে গেলে। সারা শরীর এখনো শিরশির করছে। ঠোঁট ফেটে রক্ত জমাট বেধে গেছে। হাতের আঙ্গুল ফুলে একদম সমুদ্রের পাথরের মতো হয়ে গেছে। লেখায় মনোযোগ দিতে পারছি না। শুনেছি আমাকে মারার ভিডিও আগামীকালের খবরে দেখানো হবে। রাজার রাষ্ট্রদোহীদের বিরুদ্ধে প্রবল পদক্ষেপের প্রশংসা করে। আমরা কি আসলে এমন চেয়েছিলাম? একটা অত্যাচারিত পানিহীন দেশ যেখানে চুরি করে এক গ্লাস পানি খাওয়ার জন্য তাকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে মেরে ফেলা হয়? পৃথিবী আসলেই বড় অদ্ভুত হয়ে উঠেছে। এরজন্য হয়ত তথাকথিত ঈশ্বর দায়ী নাহয় মানুষের উচ্চাশা দায়ী। আমার কি কোনো উচ্চাশা ছিলো? মনে তো হয় না। শুধু চাইতাম তিশিয়ার গর্ভে আমার সন্তাম জন্মাক। তারপর আমরা চলে যাব দূরে কোথাও যেখানে শুয়োররা শাসন করে না।

আমার চোখে কেন জানি পানি জমছে। অথচ আমি বহুদিন কাঁদিনি। কাঁদার জন্য শরীরে পানি দরকার। এখন কিভাবে পানি আসছে বুঝলাম না। কে জানে এটা হয়ত রক্ত। বেশি মার খেলে বলে চোখ দিয়েও রক্ত ঝরে কিন্তু সেটাকে এখন গুরুত্ব দিতে ইচ্ছা করছে না। রাজার বলে তিনটা ছেলে আছে। আচ্ছা, তাদের প্রতি রাজার ব্যবহার কেমন? উনি কি একজন আনন্দময়ী পিতা নাকি সেখানেও উনি শুয়োরপনা করেন? এই দেশ একবারই একজন সৎ রাজা এসেছিলো যিনি নিজেকে আমাদের জন্য বিলিয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু কথা হলো ভালোরা বেশিদিন বাঁচে না। তাই তিনি ঠিকই ক্ষমতায় বসার একবছরের মাথায় মারা গেলেন। এরপর বসলো শুয়োর বংশ। তারা কিভাবে ক্ষমতায় এলো এখনো আমার অবাক লাগে? তাহলে ক্ষমতা কি? ক্ষমতা কি তাহলে খেলনা? আর জনগণ তার ফলাফল?

কত উগ্র থিওরি আমি ভাবছি। এসব ধারণা আমার মধ্যে বপন করেছিলো তিশিয়া। তিশিয়া খুব সুন্দর করে সরকারের সমালোচনা করতো। তা ছিলো আসলেই উপভোগ করার মতো। আমাদের দুজনকে পুলিশ তার জন্য কত যে ফাইন করেছে তার ঠিক নেই। তাও তিশিয়া থামতো না, যেখানে একবার ভালোমতো আগুন লাগে সে আগুন নেভানো অত সোজা না। তিশিয়া তাহলে কেন মারা গেল? আমিই তো দায়ী, ওকে একা মিছিলে যেতে দিয়েছিলাম। নইলে ওর সাথে আমিও মরতাম। এখন ভাবি মরণ তো ভাগ্যে ছিলই, তাহলে প্রিয়মানুষের সাথে মরতে কি দোষ ছিলো? রাজাকে এভাবে শুয়োর বলে গালিগালাজ করছি অথচ আমিও কত নিকৃষ্ট। আচ্ছা, আমি যদি রাজার জায়গায় থাকতাম তাহলে কি হত? আমি কি রাজাকে শুয়োর বলতে পারতাম না নিজে শুয়োর হতাম? মনে হয় হতাম। কারণ ক্ষমতার মোহ সবাই ভাঙতে পারে না। আমি তো আরো দুর্বল, আমি ক্ষমতায় মোহতেই বন্দি থাকতাম।

রাজার শাসন এই নিয়ে চলছে ৬২ বছর। এই ৬২ বছরে তিনি কত কি না করেছেন নিজের পক্ষে। তার আইনগুলো আসলেই মজার। এই মজার আইন কেউই মানতে চায় না অথচ মানতে বাধ্য। নাইলে ইলেকট্রিক শক খেতে হবে। কিন্তু আমি এটা বুঝি না তারা যখন মরবে তাদের একটুও পানি খেতে দেওয়া হবে না। আবার রাজার পক্ষে থেকেও পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না তাহলে বিদ্রোহ করলে ক্ষতি কি? আমার মাথা এখন খুব ব্যাথা করছে। তাকাতে পারছি না। অবশ্য এসব আমাকে ঠিকমতো কাবু করতে পারছে না। কারণ কিছুক্ষণ পরই তো মারি যাব। ইলেকট্রিক শকে আমাকে মেরে ফেলা হবে। এরচেয়ে ভয়ংকর আর কি? ভয়ংকর কিছু কাজ আমিও করেছি। কিছুদিন আগে যখন আমি পথে ঘুরছি লোমউঠা কুকুরের মতো,তখন হুট করে এক ভদ্রলোক আমাকে আশ্রয় দিলো। তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আমার যত্ন নিলো, খাবার দিলো। ভদ্রলোক একজন সাধারণ চাকুরিজীবী। রাজার জন্য চাকুরি করেন। বিনিময়ে কিছু টাকা আর কয় লিটার পানি পান। সেই ভদ্রলোক এত যত্ন করার সত্ত্বেও তাকে আমাদের ভালো লাগেনি। বরং প্রবলভাবে ঘৃণা লেগেছে। আমি তখনো তিশিয়ার মৃত্যুর জন্য একটু উগ্র ছিলাম। মনে হলো, রাজার পক্ষের একজনকে খুন করতে পারলে অনেক ভালোই হয়। কিছুদিন পর সুযোগও এলো। আমাকে নিয়ে উনি একদিন বের হলেন বাজার করার জন্য। মেইন রাস্তায় আসতেই আমরা রাজার পুকুরের কাছে চলে এলাম। সেই পুকুর ইলেকট্রিক ফেন্স দিয়ে ঘেরা। আমি আর বসে থাকলাম না। হাতে ওনার চামড়ার ব্যাগটা পেঁচিয়ে নিয়ে ওনাকে ফেন্সের নিকট চেপে ধরলাম। যন্ত্রণা আর চিৎকারে উনি কাহিল হয়ে পড়েছিলেন। যখন উনি মারা গেলেন তখন ওনাকে ছেড়ে দিলাম। পুরো শরীর পুড়ে গেছে। মুখও পড়ে গেছে। সেদিন খুব আনন্দ হলেও আজ মনে হচ্ছে কি দরকার ছিলো তাকে হত্যা করার। সে তো আমাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলো।

আমার বাবা-মা কখনই সুখী হতে পারেননি। তারা সবসময় বিভিন্ন অসুখে কাবু হয়ে থাকতেন। এজন্য তাদের ব্যবহারও উগ্র হত। আমার সাথে পালা করে তারা খারাপ ব্যবহার করতেন। কিন্তু আমি কখনো তাদের উপর রাগ করতাম না। কারণ আমি জানতাম তাদের উগ্রতার জন্য দায়ী হলো রাজা। বাবাকে নিয়ে অনেক কিছুই মনে আছে। বাবা এককালে খুব ভালো দেহের অধিকারী ছিলেন। উনি সাধারণদের সাহায্য করতে এককালে ভালোবাসতেন। কিন্তু পানির অভাব শুরুর পর থেকে তিনি আর কাউকে সাহায্য করতেন না। যারা মিছিল করতো, সরকারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, লেখালেখি করতো তাদের তিনি বোধহীনভাবে গালি দিতেন। কিন্তু তাতে তার মনে কোনো প্রশান্তি আসতো না, বরং তার শরীর আরো খারাপ হতো। মা সবসময় চুপচাপ থাকতেন। কোনোকিছুতে অভিযোগ করতেন না। তার সেটাই ছিল একমাত্র গুণ। দেখতেও উনি অত সুন্দর ছিলেন না। কিন্তু তার ঐ গুণের জন্যই বাবা ওনার দিকে আকৃষ্ট হয়েছিলেন।

আর কি লিখব? আর তো মাথায় আসছে না। তিশিয়ার কথা ওত আর লিখতে ইচ্ছা করছে না। আবার বাঁচার সময়ও বেশিক্ষণ নেই তাই না লিখেও উপায় নেই। এককালে আমি বাঁচতে চাইতাম। সেই বাঁচার জন্যেই আমি তিশিয়াকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছি। আজ হুট করে আমার বাঁচার আশাটা কোথায় দূষিত গ্যাসের মতো মিলিয়ে গেল কে জানে। একসময় দেশটা খুব সুন্দর ছিলো। শহরে বানর ছিলো। বানরগুলো দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। পানির অভাব শুরুর পর থেকেই বানরগুলো চুরি করা বাড়িয়ে দিলো। তারা প্রায়ই ইলেকট্রিক ফেন্স পেরিয়ে রাজার পুকুরে গোসল করতো। আমরা সবাই এতে অবাক হতাম। কিন্তু বানরের দোষ দেয়া যায় না। তারা অবুঝ প্রাণী। কিন্তু রাজাকে ঐসব বুঝায় কে? উনি হুকুম করলেন দেশের সব বানর মেরে ফেলতে। যেই কথা সেই কাজ। সেদিন পুরো শহর ভরে গিয়েছিলো বানরের কান্নায়।

সব বানর মারার উপর আবার রাস্তায় সেই প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হল। সেখানেও রাজার প্রশংসা যেন উগড়ে পড়ছে। রাজা আমাদের জন্য একটা প্রাণীর একটা পুরো জাত উনি বিলুপ্ত করতে রাজি। এখন আর বানর দেখা যায় না। আমার মনে আছে সেই অবুঝ জানোয়ারগুলোর জন্য তিশিয়া অনেক কেঁদেছিলো। একটা বানরের বাচ্চা ও জোগাড়ও করে এনেছিলো কিভাবে কিভাবে জানি। কিন্তু বানরটির সারা শরীর থেকে তখন রক্ত ঝড়ছে। সেটা সর্বোচ্চ আধঘণ্টা বেঁচেছিলো এর বেশি নয়।

তিশিয়া খুব দয়ালু মেয়ে ছিলো। আর আমি ওকে সেজন্য অনেক আদর করতাম। কিন্তু মাঝখানে আমাদের সম্পর্কটা প্রায় ভেঙে যাচ্ছিলো। কারণ আমি মিছিল করি না, রাজার বিপক্ষে কথা বলি না, লিখি না, এসব ও পছন্দ করতে পারতো না। তাই একদিন হুট করে এসে জিজ্ঞাসা করলো আমি এসব করি না কেন। আমি সত্যি বললাম যে আমি অনেক ভীতু ছেলে। এরপর দুইদিন ও আমার সাথে দেখা করেননি। আমি ওকে হারানোর ভয়ে কাতর থাকতাম প্রতিনিয়ত। কিন্তু এরপর ও দিলো এক অদ্ভুত শর্ত। আমাকে অন্তত সপ্তাহে একদিন মিছিলে যেতে হবে। আমি সরাসরি হ্যাঁ বললেও এখন ভেবে লজ্জা লাগে যে, আমি আসলে ওর একটা কথাও রাখিনি। আমি মোটেও মিছিলে যেতাম না। তাও ওকে বলতাম হ্যাঁ গিয়েছি। এর ফল আমি পাচ্ছি। কিছুক্ষণ পরই যে আমার মৃত্যু হবে।

অনেক গল্প তো বলা হলো। এবার বরং আমার চুরির গল্পটা বলি। আমি যখন পানি চুরি করলাম তখন আসলে রাজার প্রহরীরা সোর্স থেকে পানি সরবরাহ করছিলো। রাজার গোসলের সময় তখন। রাজা বলে পানিতে গা ডুবিয়ে গোসল করতে ভালোবাসেন। ভাবলেই হাসি পায়। ধরে নিলাম গা ডুবানোর জন্য লাগে তিন বালতি পানি, কিন্তু তার জন্য পুরো দেশের পানির সোর্স বন্ধ করে দিয়ে পানি নিতে হবে? না, আমি মানতে পারিনি। আমার পরিবারের সবাই পানি না খেয়ে মারা গেছে। আমি পানি খেয়ে মরতে চাচ্ছিলাম। তাই রাজার এক আনুগত্য গোলাম যখন পানি নিয়ে যাচ্ছিলো একা একা তখনই সুযোগ বুঝে তাকে আক্রমণ করলাম। আমি ছিলাম একজন কিশোর আর সে বলবান এক খাঁটি অন্ধ অনুগত যুবক। তার সাথে কখনই পেরে উঠা সম্ভব না। তাই প্রথম কৌশলেই তার মাথায় ছুরিটা ঢুকিয়ে দিলাম। পরে তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলাম যাতে তার ফিনকি দিয়ে ঝরা রক্ত ঐ পবিত্র পানিতে ছিটিয়ে না পড়ে। কিন্তু পানি পানের সময় পেলাম না। তার আগেই ঐ যুবকের ট্র‍্যাকিং ডিভাইস বেজে উঠলো। ফলাফল আমি জেলে। কিছুক্ষণ পরই আমাকে ইলেকট্রিক শকে মেরে ফেলা হবে। মরার আগে নিয়মমতো আমার শেষ ইচ্ছা জানালাম। এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি খেতে চাই। জেলর গম্ভীর গলায় বললো, রাষ্ট্রদোহীদের পানি দেয়া হয় না। তুমি যদি কিছু লিখতে চাও তবে ডায়েরি আর কলম দিতে পারি।

জেলরকে দেখে কেন জানি মনে হয়েছিলো উনি আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছেন। কি জানতো, এমন এক দিন আসবে যেদিন পানির জন্য মানুষকে মৃত্যুদণ্ড পেতে হয়। কলম আর ডায়েরিই চাইলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম পারলে কিছু কবিতা লিখব পরে দেখলাম মাথায় ছন্দ আসে না। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা শেষ সময়ে ছন্দজ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

এতক্ষণ যা লিখলাম তা ছিলো মহা অপচয়। কে পড়বে এসব লেখা। শুধু শুধু কালি আর কাগজের উপর অত্যাচার। এরচেয়ে বড় করে লেখা উচিত ছিল, সব দেশই এখন রাজাদের দেশ।