
ইরানের ভিতরের ‘ছোট্ট আমেরিকা’র মৃত্যু হইছে
সাদ রহমানপ্রকাশিত : জুন ২১, ২০২৫
ইউটিউবে `তেহরান ওয়াকিং ট্যুর` লেইখা সার্চ দিলেই বুঝবেন, ইরানের রাস্তাঘাটে নারীদের চলাফেরায় হিজাব বাধ্যতামূলক বিষয় কিনা। ইরানের মোরাল পুলিশিং ইত্যাদি জিনিসপত্র আছে, কিন্তু ইরানের সাধারণ জীবন পুলিশ কন্ট্রোল করে না। কয়েক বছরে ইরানের রাজনীতিতে সেক্যুলার বনাম ইসলামপন্থীদের মধ্যকার বিভাজন কমাইয়া আনার জন্য ইরান নিজেই কাজ করতেছে। ফলে `রিয়েল ইরান` আর ওয়েস্টার্ন ইনফ্লুয়েন্সারদের দেখাইয়া দেওয়া ইরানের মধ্যে অনেক তফাৎ আছে।
আলাপটা এই সময়ে করলাম কারণ, ইরানে ইসলামি রিপাবলিক রেজিম চেইঞ্জ কইরা দেওয়ার একটা কথা নতুন কইরা সার্কুলেট করা হইতেছে। নানা ধরনের লেফটিস্ট ও মধ্যপন্থী মিডিয়াগুলা এই আলাপ ছড়ানোর দায়িত্ব পালন করতেছে। কিন্তু বাস্তবতা হইলো, ইরানে এমন কিছু কখনোই সম্ভব হবে না। প্রথমত, এখন ইরানের ভিতরে সেই মাত্রার ইসলামি রিপাবলিক বিরোধী রেজিসটেন্স আর নাই। দ্বিতীয়ত, ইজরায়েলের এই হামলার পরে ইরানের ডান-বাম সকল পক্ষ এমন একটা ঐক্যে পৌঁছাইছে, সেখানে আর যাই সম্ভব হোক, কিন্তু ইরানের মানুষ আমেরিকার দেখানো রাস্তায় কাজ করবে না। ইরানের ভিতরের সেই `ছোট্ট আমেরিকা`টির মৃত্যু হইছে।
আমেরিকা ইরানে হামলা করবে কিনা এই প্রশ্নের ইনটেনসিটি অনেকটা কইমা আসছে। তবে প্রশ্নটা এখনো হারাইয়া যায় নাই। ইজরায়েলে প্রতিদিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য ২৮৫ মিলিয়ন ডলার খরচ হইতেছে। এবং এই টাকাটা আসলে যাইতেছে আমেরিকার মানুষের পকেট থেকে। ইজরায়েলি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের এরো থ্রি মিসাইলের কার্যকারিতা কমতে থাকার কারণে এখন থাড মিসাইল ছাড়া আর কিছুই তারা ব্যবহার করতে পারতেছে না। থাড মিসাইল সরাসরি আমেরিকার ভিতরে উৎপাদন হয় এবং পরে সেইগুলা ইজরায়েলে নিয়া যাইতে হয়।
ইরানের আক্রমণ অব্যাহত থাকলে আমেরিকা লম্বা সময়ের জন্য থাড মিসাইল প্রডাকশনে যাবে কিনা সেইটা এখন ভাইটাল প্রশ্ন। এই এক্সপেন্সিভ প্রডাকশনের ভার ঠিক কী কারণে আমেরিকার মানুষ বহন করবে? ফলে, কংগ্রেসের ভিতরে, ট্রাম্পের রিপাবলিক পার্টির ভিতরে, এমনকি ট্রাম্পের নিয়োগ দেওয়া প্রশাসনের ভিতরেও বড়মাত্রার অনৈক্য দেখা দিছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আসলে গভীর চিপায় পইড়া জায়নিস্ট লবির সঙ্গে ফাইট কইরা যাইতেছেন। জায়নিস্ট লবির কথামতো কাজ না করলে ট্রাম্প অ্যাসাসিনেট পর্যন্ত হইতে পারেন। এর আগেও দুইবার তাকে হত্যাচেষ্টা করা হইছে।
ধইরা নেওয়া যায়, এই দুই হত্যাচেষ্টা তার যুদ্ধবিরোধী অবস্থানের কামাই। ২০০৯ সালে কায়রোতে প্যালেস্টাইনের পক্ষে কথাবার্তা বলার কারণে জায়নিস্ট মহলে বারাক ওবামাকে অ্যাসাসিনেট করার ওপেন আলাপ-আলোচনা চলছিল। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্প একপ্রকার জীবনঝুঁকি নিয়া বর্তমানে ইরান ইস্যুতে কাজকারবার কইরা যাইতেছেন। অন্যদিকে, বিগ জায়নিস্ট ডোনার শেলডন অ্যাডেলসন ও মিরিয়াম অ্যাডেলসনের ব্যাপক ডোনেশন ট্রাম্পের পকেটে আছে। শেলডন ওয়ান অফ ট্রাম্পের ক্রিয়েটর। তিনি মারা যাওয়ার পরে গত নির্বাচনেও মিরিয়াম অ্যাডেলসন ট্রাম্পকে একশো মিলিয়নের বেশি ডোনেশন করছেন।
ট্রাম্পের জন্য এই জায়নিস্ট মানি হজম কইরা ফেলা কঠিন। কার্যত, ইরান প্রশ্নে জায়নিস্ট সমাজের বিরুদ্ধে ট্রাম্প সরাসরি কিছুই কখনো বলতে পারবেন না। এইসব কিছু মিলাইয়া, লাস্টলি, ধইরা নিতে হয়, ট্রাম্প যদি ইরানে হামলা করেও সেইটা হবে তার পরাজয় স্বীকার কইরা নেওয়ার রাস্তা। ফলে আত্মঘাতী মনোভাবের। ফলে এই হামলা কনভেনশনাল রাস্তায় হবে না। ইরানে আমেরিকা হামলা করলে আমেরিকার পাওয়ার-কাঠামোর ভিতরের এক বিপুল অনৈক্য এই যুদ্ধকে আমেরিকার জন্য হাইলি প্রতিকূল কইরা তুলবে। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু চল্লিশ বছর ধইরা যেই প্রজেক্ট চালাইয়া গেছেন, তিনি এখন সেই প্রজেক্টের সফলতার দ্বারপ্রান্তে। অর্থাৎ আমেরিকাকে ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে ঢুকাইয়া দেওয়া।
নিশ্চয়ই ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্টগিরির দুর্বলতার কারণেই নেতানিয়াহু কাজটা এইরকম ফাইনাল স্টেজে আইনা দাঁড় করাইয়া দিতে পারছেন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোকই প্রতিরোধ কারে কয় বুঝতে পারে না। ফলে আমরা ইরানের শক্তিমত্তার কথা বললে তারা মনে করে, আমরা পপুলার কথাবার্তা বইলা ভিউ খাইতেছি। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় তারা ইরানের লোকেশনটাই ক্লিয়ার দেখতে পারে না। ফলে কিছু ইজরায়েলি মিসাইল ইরানে আঘাত করতে পারতেছে বইলা তারা ধইরা নিতেছে, ইরান শেষ। ইরান শেষ নয়, এবং ইরান কখনোই শেষ হবে না। বর্তমান আন্তর্জাতিক পাওয়ার স্ট্রাকচারে ইরান একটা ফাউন্ডেশনাল পিলার। ইরানকে উপেক্ষা কইরা এই দুনিয়ার ক্ষমতাঠামোর কিছুই বোঝা যাবে না।
ফলে ইরানকে খাইয়া দিতে চাওয়ার অর্থ টোটাল দুনিয়ার ক্ষমতার ব্যালেন্স নষ্ট কইরা দেওয়া। আমেরিকা তার নিজের স্বার্থেই এই ভারসাম্য নষ্ট করবে না। ফলে যেকোন মূল্যে জায়নিস্ট লবিকে আমেরিকার ডিজমেন্টাল করতে হবে। জায়নিস্ট লবির চাইতে বড় শত্রু আমেরিকার আর নাই।
লেখক: কবি ও রাজনীতি বিশ্লেষক