চিত্রকর্ম Piotr Antonow

চিত্রকর্ম Piotr Antonow

বেশ্যাকন্যা

পর্ব ১৩

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : মার্চ ০৯, ২০১৮

মেয়েটি তার মেমোরিতে থাকা আরও কিছু নতুন আদি-রসের ঘ্রাণ মিশ্রিত কর্ণ-বিচূর্ণ হবার মতো খিস্তি দিয়ে চলল। দেখতে দেখতে আমাদের ঘিরে ছোটখাটো একটা মানুষের জটলা তৈরি হয়ে গেল। পাশেই একটা লোক ডাব বেচছিল। তাকে আমি বললাম, ওই মিয়া, কথা হোনেন না, ধোন ধইরা বইসা থাকলে হইবো? কখন থ্যাইকা কইতাছি ডাব দ্যাও ডাব দ্যাও... ধোনের ব্যবসা করো মিয়া? কাস্টমার ডাব চাইতেছে, আর তুমি মিয়া হেতের দুধের দিকে তাকাই রইছো। মিয়া, মশকরা চোদাও?

এবার পরিবেশটা অন্যদিকে মোড় নিল। ডাবঅলা বলল, আরে মিয়া, কখন কইলেন ডাব দিতে?
ওই মিয়া, এক কথা কি দশবার কওন লাগব?
আরে ভাই, আপনে তো একবারও কন নাই।
ধুর মিয়া, আমি এবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম, আপা, আপনে কইতে পারেন না? ডাব চাইছি কীনা?
মেয়েটি এবার চুপ। ভাবছে কী বলবে। আমি বললাম, ওই মিয়া, এখনও তাকায়ে রইছেন, দশটা ডাব কাটেন। এরপর মেয়েটির দিকে ফিরে বললা, আপা, এখন কন কি হইছে?
একটা ডাব নিয়ে তার হাতে দিলাম। সে বলল, ভাই, মাথাটা অনেক গরম হয়ে গেছিল তো তাই...
ঠিক আছে, ঠিক আছে। ডাব খেয়ে নেন। মাথা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। খদ্দের পান নাই?
পামু কামনে? আপনারা যা শুরু করছেন।
ও আচ্ছা, ঠিকাছে ঠিকাছে, আমরা আর বেশিক্ষণ শুটিং করব না।
হ ভাই। আপনারা যান গা। আপনো লাইগা অনেক খদ্দের ভিতরে আইতে পারতাছে না।
আচ্ছা ঠিকাছে।
রুমি ভাই এসে বলল, চলুন যাই বিলকিস আপার ঘরে।

এই পল্লীর নারীরা তাদের কোলের নিষ্পাপ শিশুটির জন্য হলেও ভুলে যেতে চায় জীবনের এই পঙ্কিলতাকে। আর এজন্য তারা চায় সরকারের পাশাপাশি সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের একান্ত সহযোগিতা আর সুষ্ঠু-পুনর্বাসন।

আমরা বিলকিস আপার ঘরের সামনে গেলাম। তিনি আমাকে দেখেই ছেলেকে বলল, বাবা, তোর মামাকে বসার মোড়াটা দে।
আপা, লাগবে না। বরং আপনাদের সাথে দাঁড়ায়ে কথা বলি।
মেহেদী ভাই, আমার এই লোকটারে দেহাই, এই লোকটাও দু’দিন বছর পর কইবার পারে, আমার এ বাচ্চা তার নয়। সে তো আর জন্ম দেয়নি। আছে না? আছে, এরকম লোকও আছে। সবাই কি পরিচয় দেয়? সবাই কি দায়িত্ব পালন করে বাপের? আমার এক ছেলে আর এক মেয়ে। এই হচ্ছে আমার সন্তানের বাপ।
লোকটাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার নাম কি?
আমার নাম শহর আলী।
বাড়ি কোথায়?
ময়মনসিংহ।
এখানে কেন থাকেন?
ভালো লাগে।
কি ভালো লাগে?
ছেলেমেয়েদের জন্য।
এখান থেকে ওদেরকে নিয়ে যান না কেন?
আগে এখান থেকে বাইরে বের হবার চেষ্টা করি নাই। তবে আপনার সাথে কথা বলার পর মনে হইচে, ওদেরকে নিয়া এখান থেকে বের হয়ে যাব।
যাক, ভালো লাগল কথাটা শুনে। ধন্যবাদ শহর ভাই।

এরপর আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে কান্দাপট্টি ত্যাগ করলাম। পৌঁছালাম সোনার বাংলা চাইল্ড হোমে। সেখানে মেরির মার্শাল আর্টের কিছু দৃশ্য এবং তার সাথে তার মায়ের একটি দৃশ্য ধারণ করলাম। এখানে মেরির মা হিসেবে প্রিন্সিপ্যাল স্যার অর্থাৎ আমার মিতা মেহেদী ভাইয়ের স্ত্রীকে মেরির মা সাজিয়ে কিছু দৃশ্যধারণ শেষ করে এবং মেহেদী ভাইয়ের ইন্টারভিউ নিয়ে রাতে ফিরলাম টাঙ্গাইল এসএসএস এর রেস্ট হাউজে। ফিরেই, রাতে রেস্ট হাউজের ছাদে লাইট জ্বালিয়ে ইন্টারভিউ নিলাম এসএসএস এর সহ-সভাপতি, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলা ভাইয়ের।

পরদিন সকালে কান্দাপট্টি পতিতাপল্লীর নারীদের সংগঠন মুক্তি মহিলা সংঘের সাধারণ সম্পাদক হাসি বেগমের ইন্টাররভিউ ক্যামেরায় ধারণ শেষে আমরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিলাম। আরও একটা দিন এখানে শুটিং করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু পল্লীর নারীদের কথা চিন্তা করে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। এখন আমার মনের মধ্যে আগ্রহ কঠিনভাবে দানা বেঁধেছে, দেশের সর্বহৎ নিষিদ্ধপল্লী রাজবাড়ী জেলার দৌলৎদিয়া ঘাটের মানুষদের নিয়ে কাজ করার।

 

চলবে...