বেশ্যাকন্যা

পর্ব ১৬

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : মার্চ ১২, ২০১৮

আমরা পায়ে হেঁটে রেললাইনের পথ ধরে যেতে শুরু করলাম বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ নিষিদ্ধ পল্লীর উদ্দেশে। রশিদ ভাইয়ের সঙ্গে এখানে দেখা হবার আগের থেকেই মোবাইলে চেনাশোনা ছিল। অসম্ভব ভালো মানুষ এবং বন্ধুপ্রতিম। আমরা খুব গল্প-গুজব করতে করতে এগুতে থাকলাম। দেখতে থাকলাম আশপাশের পরিবেশ। আমি যতই দেখছি, ততই অবাক হচ্ছি। এটি তো আসলে কোনও পল্লী নয়, এটি একটি গ্রাম। কিংবা অনুন্নত কোনও ছোট্ট শহর। তবে এর বিশালতা ব্যাপক। আর এ কারণেই হয়তো এটা দেশের সর্ব বৃহত্তম পল্লী হবার খেতাব অর্জন করেছে।

এর বিশালতা কত, তা বোঝার জন্যে দু’একদিন ভিডিও ধারণের জন্য গেলেই বোঝা যাবে। এটা বোঝার জন্যে এ পল্লীর একপ্রান্ত হতে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত চষে বেড়াতে হবে। তবেই কিছুটা বোঝা সম্ভব। আমরা মর্জিনা আপার অফিসে গিয়ে পৌঁছালাম। সেখানে গিয়ে হিসাব রক্ষক অফিসার (কেকেএস থেকে নিয়োগকৃত) আশরাফ ভাইয়ের সাথে দেখা হলো। উনি মর্জিনা আপার অফিস রুমে নিয়ে গিয়ে আমাদেরকে বসালেন। মর্জিনা আপাকে আমার আসার খবর দেয়া হলো। আমাদেরকে বসতে বলে উনি বেরিয়ে গেলেন। আমরা অনেকটা সময় অপেক্ষায় থাকলাম। এর মধ্যে আমি মর্জিনা আপার অফিসটি ঘুরে দেখলাম।

খবর এলো, মর্জিনা আপা তার বাসায় আমাদেরকে যেতে বলেছেন। আমরা রওনা দিলাম। অফিস থেকে অসংখ্য গলি-পথ পেরিয়ে মর্জিনা আপার বাড়ির দিকে এগুতে লাগলাম। গলির দু’ধারে অসংখ্য নারী-পুরুষ এলোমেলোভাবে খুনসুটি করছে। সামনের গলির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আর পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখছি, এই গলিপথের ধরণ কেমন। এত বিশাল একটা গ্রাম সদৃশ নিষিদ্ধ পল্লী ভাবতেই গা ছমছম করছে। সামনের নতুন গলির প্রাপ্তির সাথে সাথে পিছনের গলিগুলো নিমেষেই চোখের দৃষ্টির স্থিতিকালকে অতিক্রম করে শূন্যে মিলিয়ে যাচ্ছে। প্রায় তিন হাজার যৌন কর্মীদের বসবাসের স্থান, সাথে যোগ হয়েছে আরও কয়েক হাজার শিশু-ছেলে-পুরুষ-বৃদ্ধাদের বিশাল এক জনগোষ্ঠির বহর। সামনে গলি পেরিয়ে গলির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি কিন্তু গলির কেন জানি শেষ পাচ্ছি না। অসংখ্য নারী-পুরুষের মাদকতাপূর্ণ... খিস্তিযুক্ত... আবেদনময়ী শব্দে চারিদিক মনে হচ্ছে, এ এক কামনার গভীরতম সমুদ্র। এখানে সমগ্র দেশ থেকে তৃষ্ণাতুর মানুষজন অবাধে চলে আসবে... ঝাঁপিয়ে পড়বে নারী দেহের কামনা-দীপ্ত অশান্ত সমুদ্র জলে কামকেলি করতে। নারী দেহের সৌন্দর্যের কত যে বিচিত্রতা, তা এখানে না আসলে বুঝা যায় না।

আমরা এরমধ্যেই মর্জিনা আপার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম। বাড়িতে ঢুকতেই গলির দু-ধারে চারটি ছোট্ট ঘর, সামনে কয়েক কদম এগোতেই একটি ঘরের দরজা। দরজা পেরিয়ে ঘরে ঢুকতেই বিশাল একটা ঘর। ঘরে টিভি, ফ্রিজ, সোফা, পরিপাটি করে বসানো। আমরা সোফায় গিয়ে বসলাম। মর্জিনা আপা পাশের ঘর থেকে আসলেন। পরিচিত হলাম।

আপা কেমন আছেন?
হ্যাঁ, ভালো আছি। আপনার কথা অনেক শুনেছি। মাঝে একদিন জব্বার স্যার ফোন করে আমাকে বলেছেন আপনার কথা। আপনার ডকুমেন্টরিটি আমি দেখেছি।
কিভাবে দেখলেন?
টাঙ্গাইলের হাসি বেগম আমাকে আপনার ডকুমেন্টরির কথা আগেই বলেছিল। কিন্তু ছবি দেখলাম কেকেএস এর কাছ থেকে।
ও আচ্ছা। আমিও আপনার সাথে কথা বলার জন্য মোবাইলে ফোন দিয়েছিলাম।
সরি মেহেদী ভাই, অপরিচিত নাম্বার আমি ধরি না। আপনার নম্বরটা বলেন, আমি মোবাইলে সেভ করে রাখি।

আমার মোবাইল নম্বর দিলাম। কথা হলো। আলোচনা হলো। এরপর উনি আমাকে নিয়ে বের হলেন। ওনাদের বিভিন্নরকম সেবামূলক কার্যক্রম দেখালেন। ওনার আর্জি, আমি যেন তার প্রতিষ্ঠানের ছোট্ট একটা ডকুমেন্টরি বানিয়ে দেই। আমি রাজি হলাম। উনি আমাকে যে কোনও সময় যে কোনও ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিলেন। আমি ও রশিদ ভাই ওনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পল্লীর মেইন গলির দিকে এগিয়ে যাবার জন্য রওনা দিলাম। সময় প্রায় বিকেলের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে। রশিদ ভাই বলল, মেহেদী ভাই চলেন, সুমীর সাথে দেখা করে আসি।
গেলাম সুমীর ঘরে...

 

চলবে...