
বেশ্যাকন্যা
পর্ব ১৭
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : মার্চ ১৩, ২০১৮
সুমীর ঘরের দরজা খোলা। বাইরে থেকে সুমী সুমী বলে ডাক দিলাম। ঘরের ভিতর থেকে কোনো আওয়াজ এলো না। আমরা কিছুক্ষণ বাইরে অপেক্ষা করলাম। এরপর ঘরের মধ্যে ঢুকলাম। টিনের ঘর। একটি খাট, একটি ড্রেসিং টেবিল, ডেসিন টেবিল, ঘরের টিনের ওয়ালে বেশ কিছু নায়ক-নয়িকার ছবি, ছোট্ট টুলের ওপর একটা সাদা-কালো টিভি। ডিসের ক্যাবল চোখে পড়ল না। টিভির সাথে সংযোগ দেয়া রয়েছে একটি পুরনো ডিভিডি প্লেয়ার। টিভির ওপর বেশ কয়েকটি পর্ণ ছবির ডিভিডি। মাথার ওপর অঝোরে ফ্যান ঘুরছে। শরীরের পোশাক বেশ খানিকটা এলোমেলো। আমরা তাকে আবারও খানিকটা উচ্চস্বরে ডাক দিলাম। সে নড়েচড়ে উঠল। আধখোলা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকল। আমরা আবারও তাকে ডাক দিলাম। এবার কিছুটা বিরক্তস্বরে উঠে বসল খাটে। বুকের ওড়না খোঁজার চেষ্টা, আমি খাটের একটু দূরে রাখা ওড়নাটি তার দিকে এগিয়ে দিলাম। ওড়নাটি হাতে নিয়ে এবার আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে চেনার চেষ্টা করল। রশিদ ভাই আমাকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সে বুঝল, এবং আমাদেরকে বসিয়ে রেখে ঘরের বাইরে ওয়াশরুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে খাটে গিয়ে বসল।
রশিদ ভাই বলল, কিরে বেশি মাল খাইছিস? এত ঘুমাস ক্যা?
না, শইলটা খারাপ লাগতাছে।
রশিদ ভাই উপদেশ দিল, বেঁচে থাকবার চাইলে মালটাল কম খাবি। এরপর আমাকে বলল, মেহেদী ভাই, আপনের ওর সাথে কথা কন। আমি একটু ঘুইরা আসি।
রশিদ ভাই চলে গেলেন। আমরা খাটে বসে থেকে গল্প করছি।
ঘুমাইছো কখন?
এই তো, ৯/১০টার দিকে।
এখন বাজে ৫টা। রাতে ঘুমাও নাই?
না।
খদ্দের ছিল?
খদ্দের? নাহ!
বাবু ছিল?
না।
তাহলে কে?
ওই তোমার মতো এক ব্যাডায়।
আমার মতো?
হ্যাঁ। তোমার মতো হান্ডসাম এক বেডা।
আমার মতো! আমি নই তো আবার?
না, তুমি নয়। তয় পোলাডা বেশ ভালো।
তোমার বাবু?
আমার কোনও বাবু নেই।
ছেলেটা কি সব সময় আসে?
না, মাসে ২/৪ বার আসে।
ছেলের বাড়ি কই?
ও ঢাকা থাইক্যা আসে।
ও কখন গেছে?
সকালে উঠেই চলে গেছে।
রাতে মাল খাইছো?
আর বইলো না, ব্যাডায় বয়নের আগে মাল খাইবো। আমারেও খাওয়াইব। কালকে একটু বেশিই খাওয়া হইছে।
সারা রাত মাল খাইছো, বইস কখন?
সারা রাত ব্যাডাই কি আমারে ঘুমাইতে দিছে?
সারা রাত বইসাই কাটাই দিছো?
না, আর কথা কইতে পারুম না।
কিছু খাবে?
কি খাওয়াবা?
কি খেতে চাও?
তুমি যা খাওয়াইতে চাও।
আমি তাকে একশো টাকার একটা নোট দিয়ে কিছু একটা আনতে বললাম। সে একটা মেয়ের হাতে টাকা দিয়ে সেভেন আপ ও কিছু বিস্কুট আনতে বলল।
ছেলেটা কত টাকা দিছে?
এখন দেয়নি। পরে দিব।
মানে!
বাকি।
বাকি?
হ্যাঁ। পোলাডা আমার পছন্দের। প্রতি মাসেই ২/৪ বার এখানে আসে। সব সময় তো হাতে টাকা থাকে না। পরে যখন সে আইব তখন টাকা দিয়া দিব।
তাহলে বাকিতেও ব্যবসা হয়?
হয়, তবে সবার কাছে নয়।
আমার কাছে?
তোমার কাছে কোনও টাকাই নিব না।
কারণ কি?
তুমি তো বসবা না। তুমি অযথাই কথা বলছো।
কেন? তোমার সাথে বসতে পারি না?
পার, তবে তুমি বসবা না। বসলে বসো, খুলে দিব?
হা হা হা... অতদূর যাওয়ার দরকার নাই। আপাতত তোমার একটা ছবি তুলি।
না-না। ছবি তুলো না।
তোমার মতো সেক্সি মেয়ের ছবি তুলবো না, তা কি করে হয়?
আমি কি সেক্সি?
সেক্সি না বলার কি কোনও সুযোগ আছে?
তুমি কি আমার লগে প্রেম করবা?
প্রেম? প্রেম তো করা যেতেই পারে।
হা হা হা... তুমি আমার সঙ্গে প্রেম করবা না বন্ধু। তারপরও তুমি প্রেম করতে চেয়েছ, তাতেই আমি খুশি। ছবি তুলবা?
হ্যাঁ।
তাহলে তোলো। বলেই ওড়নাটি খুলে ফেলে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
বুকের ওড়না খোলার দরকার নাই।
কেন? ওইটাই তো তোমরা দেখতে চাও।
না-না, ওড়না বুকে দাও। তাতেই ছবিটি ভালো দেখাবে।
না বন্ধু, ওড়না ছাড়াই তুলতে হবে।
কিছু করার নেই। ওড়না ছাড়া ও ওড়নাসহ দু-ধরনের ছবিই দুটা তুললাম।
এর মধ্যে রশিদ ভাই চলে এলেন। আমরা সুমীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে। বিভিন্ন গলি পথ পেরিয়ে আমরা প্রধান গলির সামনে পৌঁছুলাম। একসঙ্গে চা-পানি খেয়ে আমি সেদিনের মতো ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিলাম। পরবর্তী সপ্তাহে আবার যাওয়ার ইচ্ছা আছে।
চলবে...