
বেশ্যাকন্যা
পর্ব ২৮
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : মার্চ ২৪, ২০১৮
ডকুড্রামার নায়িকা খুঁজতে হবে। এজন্য পল্লীর যাদেরকে সিলেক্ট করব, তাদেরকে রিহার্সেল করাতে হবে। নায়িকা হিসেবে যাকে সিলেক্ট করব, তাকে হতে হবে মোটামুটি অভিনয়ে পারদর্শী এবং দেখতে মোটামুটি সুন্দরী। এরা সারাদিন খদ্দের নিয়েই পড়ে থাকে। অভিনয় শিখবে কখন? আর অভিনয় জানলে এখানে পড়ে থাকবে কেন? আমি খুঁজছি এবং খুঁজেই চলেছি। এরমধ্যে দুজন বলে রেখেছে তারা নায়িকা হতে চায়। তাদের মধ্যে একজন প্রচণ্ড মদ্যপ। তার প্রতি আমার ভরসা নেই বললেই চলে। অন্যজন বেশ খোলামেলা স্বভাবের। বসতে বললে শুয়ে পড়ার সম্ভাবনায় বেশি। আমার এমন কাউকে দরকার যে আমার জন্য তার বাবুকেও ছাড়তে পারে। একেই বলে, গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। যৌনপল্লীতে এসেছি নায়িকা খুঁজতে!
রশিদ ভাইয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে প্রচুর আলাপ করলাম। তিনি বললেন, আগামী সপ্তাহে আসেন। একজনের সাথে পরিচয় করায়ে দেব। আমি তার ভরসায় থাকলাম এবং পরিবর্তী সপ্তাহে পল্লীতে গেলাম। আজকে রশিদ ভাইয়ের অনুরোধে প্রথমেই ওনার বাসায় গেলাম। ওনার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে বড় এবং মেয়েটি ছোট। সেখান থেকে হালকা খাবার খেয়ে বের হলাম। ভাবনার আকাশে মেঘমালা কেমন জানি মাথার উপর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে চাইছে। ভাগ্য কী সুপ্রসন্ন হবে? যাই হোক, মাথার ওপরের মেঘমালার ভাবনার সাথে আমার ভাবনা কেন জানি একটু বাকবিতণ্ডা করছে। আমরা সরাসরি চলে গেলাম সেই মেয়েটির ঘরে, যাকে আমরা নায়িকা করার কথা ভাবছি। মেয়েটির ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দরজা বন্ধ। আমরা তাকে ডাক দিলাম। কিছুক্ষণ পর ঘরের দরজা খুলে মেয়েটি আমাদেরকে একটু অপেক্ষা করতে বলল। আমরা অপেক্ষা করছি। এরমধ্যে এক যুবক তার ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মেয়েটি ঘরদোর গুছিয়ে একটু বাইরে গেল। এরপর ফিরে এসে আমাদেরকে নিয়ে তার ঘরে ঢুকল।
মেয়েটি দেখতে শ্যামলা। আমার শ্যামলা মেয়ে পছন্দ। বয়স ২০-২২ বছরের মধ্যেই হওয়ার সম্ভাবনায় বেশি। একেবারেই সুঠাম দেহি। সালোয়ার কামিজ পরে আছে। পায়ে ঝুমকা পড়েছে। কোমরে বাঁধা রয়েছে চাঁদির কাঁকন। মেয়েটির নাম মায়া। বাড়ি ঢাকার বড় মগবাজারে। সে সময়-সুযোগ পেলে মায়ের সাথে দেখা করতে আসে ঢাকাতে। জন্ম ঢাকাতেই। পড়ালেখার গণ্ডিও পার করেছে অনেকটা দূর। ভালোবাসার মানুষকে বিশ্বাস করেই আজকে জীবনে তার এই পরিণতি। সম্রাট শাহজাহান মমতাজের জন্য নির্মাণ করেছেন তাজমহল। মায়ার মতো মেয়েদের ভালবাসার পুরুষরা তাদেরকে ভালবেসে নির্মাণ করেছে বেশ্যামহল। ভালবাসার কোনও দোষ নেই। দোষ হচ্ছে ভালবাসার ব্যবসায়িকদের। তারা ভালবাসার নাটক করবে। এরপর মেয়েদের ছুড়ে ফেলে দেবে এ অন্ধকারে। চালচলনে মায়া অনেক আধুনিক। সে এখানে থাকার পাশাপাশি একটি এনজিওতে কাজ করত। এখন তাদের এখানকার স্থানীয় সংগঠনে কাজ করে। সে বাংলাদেশের পল্লী নিয়ে কাজ করে এমন এনজিওর কাছে খুবই চেনা মুখ। সে এরই মধ্যে সিঙ্গাপুর ও ব্যাংককে গিয়ে অংশগ্রহণ করেছে এনজিও সম্পর্কিত বিভিন্ন সেমিনারে। সে কারও কথার ধার ধারতে চায় না। নিজে যেটা ভালো বোঝে সেটাই করতে চেষ্টা করে।
মায়া জিজ্ঞেস করল, মেহেদী ভাই কেমন আছেন?
হ্যাঁ, ভালো আছি। তুমি আমাকে চেন?
আপনাকে না চেনার কোনও কারণ নেই। পল্লীর অনেকেই আপনাকে চেনে।
তাহলে তো আমি বিখ্যাত হয়ে গেলাম।
কেউ বিখ্যাত হলেই কি, না হলেই কি! বিখ্যাত মানুষদের আমাদের কাছে কোনও মূল্য নেই। সবাই সমান। আপনে আমাদেরকে নিয়ে কাজ করছেন তাই আমরা সবাই আপনাকে চিনি এবং সম্মান করি।
এটা আমার জন্য বিশাল পাওয়া। পল্লীর মেয়েদের দেহ পাওয়া যায় অনায়াসেই, কিন্তু কিন্তু মন পাওয়া খুবই কঠিন। এদের বুকের ভিতর লালিত যে স্বপ্ন ছিল, তা সভ্যমাজের মানুষদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে নষ্ট হয়ে তেতো হয়ে গেছে। কেউ ভালোবাসতে চাইলেই তাদের মন সায় দেয় না। তারা এখন দেহের মুল্য বোঝে। ভালোবাসার মূল্য বোঝে না। তাই কেউ তাদেরকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসলে তা অন্তর দিয়েই প্রতিদান দেবার চেষ্টা করে। তার সাথে অনেক কথা হলো। বললাম নাটকে নায়িকা চরিত্রটি করার জন্য। মায়া বলল, না-না মেহেদী ভাই, আমি নায়িকার চরিত্র করতে পারব না।
বলো কী, কেন পারবা না?
সে বলল, না-না, আমার লজ্জা করে।
সমস্যা নেই। তুমি কাপড় পরেই অভিনয় কইরো।
হা হা হা... কী যে বলেন না ভাই! আমি পথনাটক করেছি কিন্তু ক্যামারার সামনে কিভাবে দাঁড়াব?
সমস্যা কি? আমি তা আছিই। সমস্যা হলে তোমাকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে ক্যামেরার সামনে বসিয়ে দিয়ে আসব।
হা হা হা... ভাই, মসকরা করেন?
মশকরা করি না। তোমাকে অভিনয় করতেই হবে। তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে।
কি দেখে পছন্দ করলেন আমায়?
না থাক, বলব না। বললে লজ্জা পাবে।
চলবে...