বেশ্যাকন্যা

পর্ব ৩২

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : মার্চ ২৯, ২০১৮

মায়া আবারও বলল, তোমার হাতটা দেবে?
আমি এবার বললাম, হাত?
হ্যাঁ।
হাত কি করবে?
তোমার হাত ধরতে ইচ্ছে করছে। যদি তোমার সমস্যা না থাকে।
সমস্যা থাকবে কেন? প্রেমিকা প্রেমিকের হাত ধরবে, সমস্যা থাকবে কেন?
হা হা হা...লজ্জা দিচ্ছ? প্রেমিক হিসেবে নয়, বন্ধু হিসেবে তোমার হাতটা ধরতে চাই।
আচ্ছা ধরো।
মায়া আমার একটা হাত ধরে বেশ কিছুটা দূর পর্যন্ত হেঁটে এরপর ছেড়ে দিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার, হাতটা ছেড়ে দিলে কেন?
নাহ, কেমন জানি করছে।
লজ্জা?
না।
তাহলে?
বলা যাবে না।
সমস্যা কি?
নারী শরীরের অব্যক্ত অনুভতি, তোমাকে বুঝানো যাবে না।
তাহলে তুমি বলতে চাচ্ছো, তুমি আমার স্পর্শকে ফিল করছো?
হ্যাঁ।
বাবু তোমার হাত ধরে হাঁটলে কেমন লাগে?
ভালো লাগে। তবে তোমার হাত ধরে যে ফিল হলো, সেরকম কোনও ফিল কাজ করে না।
কারণ কি?
তা বলতে পারব না। তবে আমার মনে হয়, তোমার প্রতি আমার যে চাহিদা বহির্ভূত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তার কারণেই হয়তো এমন হচ্ছে। তবে তোমার হাতটা বেশ নরম।
হা হা হা... বলো কি? এইটা তো কেউ কোনও দিন বলল না।
তুমি কি প্রেম করো?
একটা তো করি।
সে কি খুব সুন্দর?
হ্যাঁ।
সে নিঃশ্চয়ই আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর?
তা বলতে পারছি না। তবে আমার ধারণা, গাছের প্রতিটি গোলাপ ফুলই সৌন্দর্যের দিক দিয়ে সমান সুন্দর। কোন ফুলটি তুমি নেবে, তা নির্ভর করবে তোমার মন মানসিকতার ওপর।
তুমি আসলে খুব ভালো মানুষ।
ওপর থেকে দেখে মনে হচ্ছে আমি বা আমরা ভালো মানুষ, কিন্তু আসলে কি তাই?
আচ্ছা, তুমি যে আমাদেরকে নিয়ে কাজ করো, বেশ্যা পাড়ায় আসো, তোমার প্রেমিকা কিছু বলে না?
সে ও আমার পরিবার জানে, আমি তোমাদেরকে নিয়ে কাজ করছি। এতে তাদের কোন অনিচ্ছা নেই। তারা আমার সম্পর্কেও খারাপ কিছু চিন্তা করে না।
সবাই যদি তোমাদের মতো হতো।
আচ্ছা, তুমি কি এর মধ্যে ঢাকা গিয়েছিলে?
হ্যাঁ। গত সপ্তাহে ঢাকা গিয়ে মায়ের সাথে দেখা করে এসেছি। ওখানে যেতে ইচ্ছা করে না।
কেন, সমস্যা কি?
না, কোনও সমস্যা নয়। মা আমাকে দেখে শুধুই কান্নাকাটি করে। এতে আমারও কান্না পায়। তাই ঘনঘন মায়ের সাথে দেখা করতে গেলে কষ্ট হয়। তারপরও মাঝে মাঝে যাই, তা না হলে বুকের চাপাকষ্ট দিনকে দিন বেড়ে যায়। বুক ফেটে কান্না আসে। তখন মায়ের সাথে দেখা করে আসি।
তোমার ভাইবোনদের সাথে দেখা হয়?
হ্যাঁ। কী আর করার, সবই নিয়তি!
নিয়তি কি তোমার সৃষ্ট?
আমার সৃষ্ট নয়। কিন্তু মানুষ সৃষ্ট আমাদের এই নিয়তিকে সঙ্গে করেই আমাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।
নিজেকে অনেক ধন্য মনে হয়।
কেন?
তোমাদেরকে নিয়ে কাজ করতে পারছি ভেবে।
আমরা তো বেশ্যা। আমাদেরকে নিয়ে কাজ করার কোনও গর্ব আছে নাকি?
যুদ্ধরত কোনও দেশের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া খুবই ভয়ানক এবং রোমাঞ্চকর। কারণ সেখানে থাকে জীবনের নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি যে কোনও সময় মৃত্যুভয়ের ডাক। তোমাদের এখানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার অর্থ হচ্ছে, সভ্য সমাজে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ, আমার সম্মান, সেইটির অবস্থান পায়ের তলানিতে গিয়ে ঠেকে। তোমাদের এখানে কাজ করতে এসে যে কোনও সময় তোমাদের উত্তেজিত জনগোষ্ঠীর দ্বারা আক্রান্ত হবার ভয় থাকে। তোমাদেরকে নিয়ে কাজ করতে গেলে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনও নষ্ট হবার প্রচুর সম্ভাবনা থাকে। তোমাদেরকে নিয়ে কাজ করার পর বিয়ে করার জন্য সভ্য সমাজের কোনও মেয়ে পাব কীনা... এরপনও ব্যাপক ভয় থাকে। এত কিছু ভাবনার পরও যখন তোমাদেরকে নিয়ে কাজ করতে পারছি, এটাকে তো আমার সৌভাগ্য বলেই মনে করতে হবে।
তুমি অনেক কিছু নিয়ে ভাবো।
হা হা হা...। না ভেবে উপায় আছে? সবাই ভাবে, তোমাদের পল্লীর কোনও মেয়েকেই আমি ছাড়ি নাই। সুতরাং এইচআইভি জীবাণু আমার শরীরে কনফার্ম।
হা হা হা...। দারুণ তো। দিনের আলোতে অনেক কিছুই ঢাকা পড়ে যায় যদিও, তা আলো ঝলমলে দিনের সূর্যের আলোতে প্রকাশ হবার কথা, কিন্তু রাতের আলোতেই সব গোপন লালসাকামনা বিক্ষিপ্ত আলোকছটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অন্ধকারের জগত বিশ্বে।
চলো আজকের মতো বিদায় বন্ধু। যদি বেঁচে থাকি দেখা হবে। তোমাদেরই এই নিষিদ্ধ পল্লীর নতুন কোনও অজানা জলসা ঘরে। আচ্ছা বন্ধু, তুমি তো সুন্দর নাচতে পারো।

চলবে...