বেশ্যাকন্যা

পর্ব ৩৭

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৩, ২০১৮

দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা চা পান করছি। অনেকেই আমাদেরকে আড়চোখে দেখছে। আমাদের পাশেই একটি ১২-১৩ বছরের মেয়ে দাঁড়িয়ে থেকে জ্বলন্ত সিগারেটের নির্গত ধোঁয়ার কুণ্ডলি নির্বিকার মনে নির্গমন করে চলেছে। মেয়েটি তার জীবনের সকল কালিমালিপ্ত অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটানোর চেষ্টা করছে যেন জ্বলন্ত এই সিগারেটের ধোঁয়ায়। নিষ্পাপ চেহারা। পল্লীর মেয়েদের বয়সের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া বড়ই কঠিন। কথিত আছে, এসব পল্লীর ছোট ছোট মেয়েদের দ্রুত এই পেশায় নিয়োজিত করার জন্য গরুর মোটা-তাজাকরণের ওষুধ খাওয়ানো হয়। এখানে জন্ম নেয়া শিশু কিংবা বাইরে থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে নিয়ে আসা শিশুদের অনেক সময়ই এসব পল্লীর কিছু অসাধু বাড়িঅওয়ালি দ্রুত যৌন পেশায় নিযুক্ত করে অর্থ সংগ্রহের ভয়ানক কাজ করে থাকে। যেহেতু নিয়ম মাফিক এখানকার মেয়েরা ১৮ বছরের নিচে যৌন পেশায় নিযুক্ত হতে পারে না, সেহেতু অন্যায়ভাবে গোপনে কিছু কিছু বাড়িওয়ালি এ ধরনের জঘন্য কাজ করে থাকে। গরুর মোটা-তাজাকরণের ওষুধ সেবনে অল্প বয়সী মেয়েদেরকে অতি সহজেই মোটা ও শারীরিক বৃদ্ধি ঘটিয়ে মেয়েদের জীবনের বিরাট ক্ষতিসাধন করে থাকে। এই ওষুধ সেবনে কিছু দিন তারা ভালোভাবে কাজকর্ম করতে পারলেও অল্প দু’এক বছরেই শরীর অস্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে যায়। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ বাঁকা হতে শুরু করে। তাদের মুখমণ্ডল অস্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে গিয়ে মুখের চোয়াল বাঁকা হয়ে যায়। পরবর্তিতে তারা কঠিনভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এটি একটি জঘন্য অপরাধ। এর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন পল্লীর স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এর বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেক পল্লীতেই বয়সের ভারে যৌনকর্মীরা শুকিয়ে গেলে তারা এই গরুর মোটা-তাজাকরণের ওষুধ সেবন করে থাকে। বয়সের কারণে শুকিয়ে গিয়ে শরীরের সৌন্দর্য হারিয়ে গেলে খদ্দের পাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। তখন অনেক নারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবনের ক্ষতিসাধনের বিষটি জেনেও শুধুমাত্র পেটের জ্বালায় এই কাজটি করতে বাধ্য হয়। এটি তাদের কাছে একটা নিয়তি।

এ পল্লীর সকল নারীরাই মনে হয় পানসুপারি খেতে পছন্দ করে। এখানকার প্রায় প্রতিটি দোকানেই রয়েছে পান বিক্রির ব্যবস্থা। আমাদের পাশের দোকানে রয়েছে হরেক রকমের পান-সুপুরি থরে থরে সাজানো। এত সুন্দরভাবে সাজানো যে, দেখেই লোভ হচ্ছে একটা পানের খিলি মুখে পুড়ে দেই। আমার মনের ভাব বুঝতে পেরেই যেন ঝুমু বলল, কি, পান খাবে?
না... না, পান খাব না।
তাহলে ওইভাবে পানের দিকে তাকিয়ে ছিলে কেন?
দেখছিলাম। দোকানদার কত সুন্দরভাবে পান-সুপারি সাজিয়ে রেখে মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করছে।
ঝুমু তার চা শেষ করা মাত্রই সেই দোকান থেকে একটি পান নিয়ে মুখে চালান করে দিল। সে সিগারেট খায় শুনেছি, কিন্তু আমার সামনে কখনও সিগারেই হাতে নেয়নি। তার সৌন্দর্যের সাথে কিছুটা হলেও পান-সুপারি`ই যায়, পানের রক্তিম লালরঙে তার দুটি ঠোঁট রাঙা হয়ে উঠলে বেশ মানায় তাকে। সে পানের জাবর কাটছে। আর আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে...। জিজ্ঞেস করল, কি দেখ ওইভাবে?
তোমাকে দেখছি।
আমাকে দেখার কি হলো?
পানের রক্তিম লালে তোমার সুন্দর ঠোঁট আরও কত সুন্দর হতে পারে, তাই দেখছি।
হা হা হা... তুমি যে কতভাবে দেখ! তোমার ভাবনাতে মনে হয় কুচকুচে কাল নারীও দেখতেও সুন্দর।
তা অবশ্যই। গায়ের রং কালো হলেই কি মানুষ অসুন্দর হয়? একটি কালো মেয়েও তো তার বহুবিধ গুণাবলিতে মানুষের সামনে সুন্দর হয়ে উঠতে পারে।

চলবে