
বেশ্যাকন্যা
পর্ব ৩৮
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : এপ্রিল ০৯, ২০১৮
ঝুমুর সৌন্দর্য একটু ভিন্নভাবে আজকে আমার সামনে উপস্থাপিত হয়েছে। বরাবরের চেয়ে আজ একটু ভিন্ন লাগছে তাকে। তাকে কখনও চশমা পরা অবস্থায় দেখিনি। আজ তার চোখে কালো রঙের সানগ্লাস, দেখে বেশ ভালো লাগছে। সাজলেই বুঝি মেয়েদের বেশি মানায়। আজকে কালো সানগ্লাসে ঝুমুকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। আমি বললাম, বন্ধু, তোমাকে আজকে নায়িকাদের মতো লাগছে।
হা হা হা শব্দে হেসে উঠল সে, মজা করছো?
না না। মজা করছি না। প্রতিটি নারীই ব্যস্তব জীবনে তার কাঙ্ক্ষিত পুরুষের কাছে একজন নায়িকা।
তুমি মিডিয়ার মানুষ। তোমার ভাবনা সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেকটা ভিন্ন। তাই তোমরা ভিন্ন কিছু চিন্তা করতে পারো।
আচ্ছা বন্ধু, তুমি সব বয়সের খদ্দেরই কি ঘরে তোলো?
না। আমার পছন্দ না হলে খদ্দের ঘরে তুলি না। বয়স বেশি, ভুড়িঅলা মানুষদের আমি ঘরে তুলি না।
বেশি বয়সটা না হয় বুঝলাম, কিন্তু ভুড়িঅলা হলে কী সমস্যা?
আরে বেডা সমস্যা মানে? খদ্দেরের আকাল পড়লে মাঝে মাঝে বয়স্ক বেডাও ঘরে তুলি। কিন্তু মোটা ভুড়িঅলা কখনও তুলি না।
বুঝলাম সেইটা, কিন্তু ভুড়ির সমস্যা কি?
শোনও বন্ধু, কিছু দিন আগে আমাদের এক বড় বোন এক মোটা ভুড়িঅলা বেডারে নিয়ে আমার পাশের ঘরে তুলছিল। ওই বেডা বইতে গিয়েই মারা গেছিল...
বলো কী! আমি কি হাসব নাকি কাঁদবো? বইতে গিয়ে মানুষ মরে নাকি?
আর বলো না। হেই বেডা মরার পর বিচ্ছিরি কারবার। পুলিশ আইসা ধরে নিয়ে গেছিল হেই আপারে।
তোমাদের সেই আপাই কি তারে মারছে?
আরে ধুর, খদ্দের হচ্ছে ঘরের লক্ষ্মী, কেউ তারে মারতে পারে?
তাহলে লোকটি মরলো কিভাবে?
পরে জানছি, বেডার প্রেসার হাই হওয়াতে নাকি মরে গেছিলো।
ভয়ানক ব্যাপার! আচ্ছা তোমাদের সাথে বসতে গেলে কি প্রেসার হাই হয় নাকি?
হা হা হা... কেমনে কই? তুমি বইসা দেখ!
না বাবা, এত বড় রিস্ক নেয়া যাবে না। তারপর তোমার বোনের কি হলো?
তারপর কি আর হবে? আমাগো নেত্রী গিয়ে তাকে থানা থেকে ছাড়ায়ে নিয়ে আইছে। এরপর থেকে আমরা অনেকেই যাদের বড় ভুড়ি থাকে তাদেরকে ঘরে তুলি না।
এইটা কি করলে তোমরা? সাোন্য একটা ঘটনার কারণে তোমরা ভুড়িঅলাদের ত্যাগ করবা? এটা কি ভালো হলো? তাদের সুখ বলে কি কিছু থাকবে না?
সুখ থাকবে না কেন? তারা নিজের বউয়ের সাথে নিজ ঘরে গিয়ে সুখ করুক। আমাদেরকে জেল খাটানোর জন্য এখানে আসবে কেন?
যাক! আমার কোনও ভুড়ি নাই, চিন্তাও নাই।
হা হা হা... চিন্তা করো না, তোমার বড় ভুড়ি হলেও তোমারে আমার সাথে বইতে দেব।
আহা, সেটা তো আমার সৌভাগ্য। তবে আগে আমার মোটা ভুড়ি হোক, তারপর দেখা যাবে।
চোখটা খুব জ্বালা করতিছে...
চশমাটা খুলে ফেলো।
না না, চশমা খোলা যাবে না। তোমার সমস্যা হবে।
আমার সমস্যা? কেন?
আমার চোখ উঠছে।
বলো কি? এতক্ষণ ধরে আমাকে বলোনি কেন? চোখে ওষুদ দিচ্ছো?
ধুর, এজন্য আবার ওষুদ লাগে নাকি! এমনি এমনি ভালো হয়ে যাবে। শুনছি, পোলাগোর ওইডা চোখে ঠেকাইলে নাকি চোখ তাড়াতারি ভালো হয়ে যায়।
হা হা হা... তোমারে এসব কে বলে?
লোকজনে কয়, শুনি। আজকে কোনও খদ্দের নিব না, তাই ভাবতেছি কারটা চোখে নিয়ে ছোঁয়াবো?
ফাজলামি মারো? চোখে ওষুদ দাও। পরিষ্কার কাপড় দিয়ে চোখ মুছবে, দু’এক দিন খদ্দের না নিলে খাবে কি?
কি আর করব? সমিতিতে অল্প কিছু টাকা জমায়ে ছিলাম, তা থেকে কিছু লোন নিয়ে কয়েক দিন কষ্ট করে চলতে হবে।
আমি কি তোমাকে কিছু টাকা হেল্প করবো?
সম্ভব হলে যাওয়ার সময় কিছু টাকা দিয়ে যেও, একেই বলে রিজিক।
রিজিক দেয়ার মালিক ওপরে।
আমি সেই দিনের মতো ঝুমুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রশিদ ভাইকে নিয়ে চলে গেলাম মর্জিনা আপার বাসায়। মর্জিনা আপার সাথে দেখা করলাম। কথা হলো অনেকক্ষণ। এর মধ্যে মর্জিনা আপার ছোট বোনের সাথে দেখা হলো। বাড়ির আঙিনায় বসে থেকে নিজের মাথায় বিনি কেটে নিচ্ছে। আমাকে মর্জিনা আপা তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন, উনি মাথা নিচু করে মাথা আঁচড়িয়ে নিচ্ছিলেন, আমার কথা শুনে তিনি আমার দিকে মুখ তুলে তাকালেন। ওনার দিকে তাকাতেই আমি যারপর নাই অবাক হলাম। বুকে আঘাত পেলাম কঠিনভাবে।
চলবে