বেশ্যাকন্যা

পর্ব ৪১

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৩, ২০১৮

রুপালি বলল, হ্যাঁ, চিন্তা তো করি। কিন্তু কী যে হবে! কিচ্ছু বুঝি না।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার বাবু কি বলে?
সে তার ছেলেরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু ছেলে আমাকে ছাড়া তার বাপের সাথে থাকতে পারবে না, তাই যেতে চায় না।
এটা তো ঠিক নয়। সে নিয়ে যেতে চাচ্ছে তাকে পাঠায়ে দাও। তুমি কি বাবুর সাথে গ্রামে যেতে চাও না?
আমিও বাবুর সাথে চলে যেতে চাই। বাবুর আগের পরিবারে আমাকে নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে, সমস্যা মিটে গেলেই আমরা চলে যাব।
বাহ! সুন্দর সিদ্ধান্ত। তোমার বাবু কি প্রতি মাসেই আসে?
হু। এসে ১০-১২ দিন টানা থেকে তারপর চলে যায়।

দৌলতদিয়া ঘাট খুলনা বিভাগের সাথে দেশের যোগাযোগের প্রধান একটা মাধ্যম। সাধারণত ফেরিঘাটে মাল বহনকারী ট্রাকের থাকে প্রচুর জ্যাম। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ট্রাক ড্রাইভাররা তাদের ট্রাক নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট পাড়ি দেবার সময় এই ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন অবস্থান করে। এ অবসরে ড্রাইভাররা তাদের জৈবিক ক্ষুধা মেটানোর জন্য ছুটে যায় এই নিষিদ্ধ পল্লীতে। দৌলতদিয়া ঘাট নিষিদ্ধ পল্লীর নারীদের প্রধান খদ্দের হচ্ছে ট্রাক ড্রাইভার, যশোর-বেনাপোল বন্দর থেকে বিভিন্ন ধরনের আমদানি পণ্য বোঝায় ট্রাক নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নৌযান এখানে এসে অবস্থান করে দিনের পর দিন। এরকম বিভিন্ন কারণে গড়ে উঠেছে দৌলতদিয়া ঘাটে দেশের সর্ব বৃহৎ নিষিদ্ধ পল্লী। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যেসকল মানুষ ব্যবসায়ী ‍কাজে এই ঘাট পাড়ি দেন, তাদের মধ্যে থেকেও কেউ কেউ এই নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াত করে থাকে। অনেক উৎসাহী মানুষজনও বিভিন্ন সময়ে এই পল্লীতে খদ্দের হিসেবে এসে থাকে। এই পল্লীতে প্রবেশের মেইন গেটের দুধারে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন মানের রেস্ট হাউজ। রেস্ট হাউজগুলো অধিকাংশয় টিনের দ্বারা তৈরিকৃত, প্রায় সবগুলো দ্বিতল, টিনের ছোট ছোট ঘর, ঘরের মধ্যে শুধু একটি করে চকি বসানো, ঘরের টিনের ছাদে একটি করে ফ্যান লাগানো। সবচেয়ে মজার বিষয়, এই রেস্টুরেন্টের দু-তলার ঘরগুলোতে যাবার জন্য কোনও ইটের সিঁড়ি নেই। আছে সিঁড়ির বিকল্প হিসেবে কাঠ বা বাশের মই সদৃশ সিঁড়ি। যা বেয়ে উপরে ওঠাও এক ধরনের অভিজ্ঞতা।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা রুপালি, তুমি যুবক বয়সের কোনও বাবু না ধরে বয়স্ক বাবু ধরলে কেন?
হা হা হা... বয়স্ক মানুষেরা ধীর-স্থির প্রকৃতির হয়। যুবকরা হয় অতি চঞ্চল ও চতুর প্রকৃতির।
তুমি কি বলছো, ছেলেদের তুলনায় বয়স্ক ব্যক্তিরাই তোমার কাছে বেশি ভালো?
অবশ্যই। আমার বাবু বয়স্ক বলেই আমাকে বেশি ভালোবাসে। আমার প্রতি বেশি খেয়াল রাখে। ছেলের খোঁজ নেয়। অল্প বয়সের যুবক হলে সে শুধুই আমার সাথে বসার চিন্তা করত। কোনও কিছু ভাবার সময় করত না।
যুবকদের ভালোবাসা এবং বয়স্কদের ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য কি তোমার কাছে?
ভালোবাসার কোনও বয়স আছে নাকি? কে কত ভালোবাসে বা ভালোবাসলো তা বয়সের ওপর নির্ভর করে না। অল্প বয়সের বাবুরা কখন কি বলে ঠিক নাই, আবার যে কোনও সময় আমাদেরকে ত্যাগ করে অন্য মেয়েকে সময় দিতে শুরু করে। সেই দিক থেকে আমার কাছে বয়স্ক লোকদেরই পছন্দ বেশি।
হায় হায়, পোড়া কপাল আমার! এখন আমার কি হবে?
কি হবে মানে?
মানে, আমার বয়স তো কম। তাই বলে কি আমি তোমার ভালোবাসা পেতে পারি না?
হা হা হা... কী যে বলেন না!
তোমার এই সৌন্দর্য় বয়স্কের দিয়ে দিলে যুবকদের কি হবে?
কি আর হবে? এখানে মেয়েদের অভাব? অন্য মেয়ে ধরে নিবে।
সেইটা কি সবাই চাইবে?
সেইটা চাওয়া না চাওয়ার কোনও কারণ নেই। আমাদেরও চাওয়ার দাম দিতে হবে না?
তা না হয় দিলাম, সুন্দর নাভি দেখে কেউ কি তোমার ভালোবাসা পাওয়া দেখে দূরে থাকবে?
মানে! ও অ... এর মধ্যেই আপনে আমার নাভির দিকে নজর দিয়ে ফেলছেন?
না তো! আমি তোমার নাভির দিকে নজর দেয়নি। বরং তোমার নাভিই আমার দিকে আগ-বাড়ায়ে নজর দিয়েছে।
হা হা হা... মেহেদী ভাই, আপনি যা বলেন না। শাড়ি পড়লে তো একটু নাভি বের হবেই। তাছাড়া খদ্দের ধরতে কিছু দেখাতে হবে না?
চোখ থাকলে তো একটু নজর যাবেই... হা হা হা...
হা হা হা... আমার নাভিটা কি সুন্দর?
ওরে বাব্বা, এমন প্রশ্নের উত্তর দিব কিভাবে?
কেন? যেভাবে দেখেছেন সেইভাবেই দিবেন।
তোমার বাবু নিশ্চিয় তোমার নাভি দেখতে খুব পছন্দ করে?
শুধু নাভি কেন? সব কিছুই পছন্দ করে।
হা হা হা... আরো কিছু আছে নাকি?
কেন? জানেন না?
আসলেই পৃথিবীটা অনেক বড়। অনেক কিছুই দেখার বুঝার বাকি আছে এখনও। তুমি কি চা আনাবে? নাকি আমি আনাব?
এ কি বলেন, আপনে চা আনাবেন কেন? আমি চা আনাচ্ছি... সাথে আর কি খাবেন?
না না... অন্য কিছু খাব না। একটু চা হলেই হবে।
আপনে রেস্ট নেন। আমি চা নিয়ে আসি।

চলবে