বেশ্যাকন্যা

পর্ব ৪২

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৪, ২০১৮

রুপালি চা আনতে বাইরে গেল। আমি এবার অনেকটাই শ্রান্ত মনে বিছানায় শুয়ে থেকে ভাবছি বিভিন্ন কথা। ঘরের মধ্যে এক মন মাতানো গন্ধ মৌ মৌ করছে। গন্ধটা নিশ্চয় গোলাপের হবে। এয়ার ফ্রেসনারটি স্প্রে করার পর রুপালি ডেসিনটেবিলের উপরই রেখে দিয়েছে। এই ঘরগুলো দিনের পর দিন ধরে বহু মানুষের স্মৃতি বহন করে নিয়ে এগিয়ে চলছে। ঘরের মধ্যে রাখা ড্রেসিং টেবিলের স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে চোখ পড়তেই নিজের চেহারাটা চকচক করে উঠল। দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে ওঠে নিজের সকল কর্মের প্রতিচ্ছবি। আমরা বাইরে যতই ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করি না কেন, ভিতরটা পুরুটাই ফাঁকা এবং অসংখ্য চাঁদের কালিমাযুক্ত ধু-ধু বালুকাময়।

সাগরের বাড়িতে ঢুকতে হাতের ডান পাশের দ্বিতীয় ঘরে থাকে সাগরের বড় বোন। পরের ঘরটিতে থাকে সাগর নিজেই। বাড়ির মাঝখানে লম্বা সরু গলি। গলির বাম পাশের প্রথম ঘরেই থাকে সাগরের মা। তারপরের ঘরে থাকে অন্য একটি মেয়ে এবং তার পাশেই রয়েছে রান্নাঘর। ভাবনার করিডোরে টং করে শব্দ হতেই আমার দৃষ্টি গেল রুপালির দিকে।
সে বলল, ভাই, চা কি এখানেই দিব?
খালা আসছে?
মা এখনো আসেনি। খবর দেয়া হয়েছে। এক্ষুনি চলে আসবে। আমার মনে হয়, আপনে এখানে বসেই চা খেয়ে নেন।
আচ্ছা দাও।

রুপালির হাতে দুধের খালি কৌটাতে চা ও কয়েকটি চায়ের কাপ। একটা কাপে চা ঢেলে নিয়ে আমি চা খেতে থাকলাম। আমার চায়ের প্রতি দুর্বলতা প্রচুর। দিনে কি পরিমান চা পান করি তা ভেবেও পাই না। চা খেতে খেতে আমি রুপালির দিকে তাকালাম। সে মিটিমিটি হাসছে। মুখের হাসিটা তার প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী বলেই মনে হয়।
কি? হাসছো কেন?
না না, আমি হাসছি না তো। আমার চেহারা দেখতে এরকমই।
তাই নাকি? মুখের ভিতর শাড়ির আঁচলের কোণাটুকু ঢুকিয়ে রেখেছো কেন?
কেন? আপনার সমস্যা হচ্ছে?
সমস্যা হবে না? তুমি যেভাবে মুখে কাপড় দিয়ে খেতে শুরু করেছো, তাতে তো দেখা যাবে, একটা সময় তোমার শরীরে শাড়ির কোনও কাপড়ই অবশিষ্ট থাকবে না। তখন আমাকে লজ্জায় পড়তে হবে না?
হা হা হা... লজ্জা পাবেন কেন? মজা পাওয়ার কথা।
না না না, তোমার বাবুর মজা আমি নিতে চাই না। তোমার বাবু ধরে আমাকে মারবে।
হা হা হা... মারবে না। তার নিজের চাহিদার বাইরে কোনও অভিযোগ করে না। আপনার ভয় নাই।
আমার দরকার নেই। আচ্ছা, তুমি এত কম বয়সে বাচ্চা নিলে কেন?
কি আর করব? বাবুর চাহিদা, তার বয়স হয়ে যাচ্ছে, তার আগের ঘরের কোনও ছেলে সন্তান নেই। তাই ছেলের আশায় আমাকে বারবার চাপ দিয়ে সন্তান নিয়েছে। সে তার সন্তানকে খুব ভালোবাসে। এখানে আসার পর থেকে সে সারাক্ষণ তার ছেলেকে নিয়েই থাকে। খুব শিঘ্রই সে তার সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাবে।
জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার? তুমি চা খাবে না?
হ্যাঁ খাবো। ঠাণ্ডা করে খাবো।
এটা কি ধরনের কথা বললে? সবাই তো গরম চা খায়।
না না, আমার গরমটা পছন্দ নয়।
তোমার বাবু গরম না ঠাণ্ডা চা খায়?
সে গরম খায়।
তাহলে তোমাদের সমস্যা হয় না? তুমি ঠাণ্ডা, তোমার বাবু গরম?
সমস্যা হবে কেন? তারটা সে খাবে, আমারটা আমি খাবো।
কোনও সমস্যা নেই। তারপরও কথা আছে না... তোমার যখন ঠাণ্ডা, বাবুর তখন গরম!
ভাই? বিষয়টা কি চায়ের কাপের বাইরে চলে যাচ্ছে না?
নাহ! তা হবে কেন? আমরা তো চায়ের মধ্যেই আছি। এইতো আমি চা খাচ্ছি, তুমি চা খাবে। আমরা খাওয়া ছাড়া অন্য কিছু করছি?
হা হা হা... আপনে কিন্তু অনেক মজা নিচ্ছেন।
কিভাবে মজা নিলাম? আমি শুধু চা খাচ্ছি, তাও আবার রং চা।
ভাই, আপনে রং চা খাচ্ছেন না, দুধ-চা খাচ্ছেন।
বলো কি? তুমি বলবে না? আমি তো ভেবেছি রং চা খাচ্ছি।
মসকরা করেন? কোনটা দুধ-চা আর কোনটা রং চা আপনে বোঝেন না?
বুঝি তো।
তাহলে?
কনফার্ম হলাম।
মানে?
তোমার দিকে তাকায়ে চা খাচ্ছিলাম তো, তাই বুঝতে পারছিলাম না।
হা হা হা... আমার দিকে তাকায়ে খাইলে দুধ-চা কি রং চা হয়ে যায়?
তা বলতে পারি না। তবে মনের অনুভূতি কিছুটা লোপ পায় বলে মনে হয়।
আপনে কি সত্যি সত্যিই দুধ-চাকে রং চা ভেবেই খাচ্ছিলেন?
না তো। আমি দুধ-চাকে দুধ-চা ভেবেই খাচ্ছিলাম।
কি বলেন? আপনেই না বললেন, রং চাকে দুধ-চা ভেবে খাচ্ছেন?
আমি তো দুধ-চাই খাচ্ছিলাম। কিন্তু তোমার সৌন্দর্যের সামনে কেন জানি দুধ-চা কে রং চা বলে মনে হচ্ছিল।
হা হা হা... আপনে যা কথা বলতে পারেন!

চলবে