বেশ্যাকন্যা

পর্ব ৪৩

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৫, ২০১৮

বেশ ভালো লাগা নিয়ে আমি রুপালির ঘর থেকে বের হয়ে এলাম। এর মধ্যে খালা চলে এসেছেন। তিনি আমাকে দেখে খুবই খুশি। তিনি আমাকে বসতে বললেন। সাগরকে একটা চেয়ার দিতে বললেন। আমি চেয়ার দিতে নিষেধ করলাম। আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ঘরের সামনে শানবান্ধা উঁচু ধাপে বসে পড়লাম।

খালা বললেন, একি করলে বাবা, তোমার জন্য চেয়ার আনতিছে। সাগর, চেয়ার দে তোর ভাইরে।
না না খালা, চেয়ার লাগবে না। চেয়ারে বসলে দূরের মানুষ বলে মনে হয়। একটু কাছের মানুষ হবার চেষ্টা করছি।
বাবারে, জীবনে মানুষ তো দেখলাম বহুত। কিন্তু ভালো মানুষ দেখলাম খুবই কম। কি খাবে বলো?
না খালা, এর মধ্যে আমি চা-বিষ্কুট খেয়ে ফেলেছি। আর কিছু খেতে চাই না। আপনার সাথে কথা বলি, তাতেই ভালো লাগবে।
আমাদের কথা আর কি শুনবা? আমরা খারাপ মানুষ। সবাই আমাগো বেশ্যা কয়। আমাদের নিয়ে ভালো কিছু ভাবার সময় কোথায় সভ্য সমাজের? আমাদের নিয়ে সবাই ব্যবসা করতে চায়। টাকা উপার্জন করতে চায়। অনেক কঠিন একটা পৃথিবী। আমার মেয়ে আমার সামনেই খদ্দের নিয়ে ঘরে ঢুকছে। ছেলেও এই পেশার সাথে কোনও না কোনোভাবে জড়ায়ে পড়ছে। আমি সন্তানদের সামনে খদ্দের নিচ্ছি। এটা কি মানুষের জীবন? এই সমস্ত কাজ করা কিভাবে সম্ভব? আমাদের সমস্ত জীবনই নোংরা আবর্জনায় সিক্ত। ধর্মকর্ম করবো কখন? আমরা কার দিকে দু’হাত তুলে ফরিয়াদ করব? আজকে কয়েক পুরুষ ধরেই আমি এখানে বাস করছি। আমি আমার মাকে এই কাজ করতে দেখছি। আমি করেছি। আমার মেয়েকে এই কাজ করতে দেখছি। আমরা ভালো হতে চাই না, তা নয়। আমরা ভালো হতে চেয়েছি। কিন্তু ভালো হতে পারি না। সবাই কেন জানি আমাদের মুখ-চোখ চেপে ধরে বসিয়ে রাখে দিনের পর দিন। যুগের পর যুগ। আমরা পারছি না এখান থেকে বের হতে। আমার মেয়েটিকে কি সভ্য সমাজ ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য কি জায়গা করে দিতে পারবে? তোমরা আমাদের সঠিকভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করে দিবা না। আমাদের উপর খারাপ মানুষদের কালো থাবা থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবে না। তাহলে কিভাবে হবে?

খালা তার ঘরের ভিতর থাকা বড় মেয়েটিকে ডেকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। উনি সবে মেকাপ করছিলেন। আমার সঙ্গে দু’একটা কথা বলেই ঘরের ভিতর চলে গেলেন। মেয়েটি বেশ মুডি। বয়স ২৫-৩০ বছর হবে। দেখতে সুন্দরী। কিছুক্ষণ পর বেশ পরিপাটি হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন। মেকাপের পর অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে ওনাকে। খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়েছেন। মুখের মেকাপও বেশ পরিমিত। শাড়ির ভাঁজে ভাজে যেন তার সৌন্দর্যের আলোকছটা ফিনকি দিয়ে বের হয়ে আসছে। তিনি খালার সাথে দু’একটা কথা বলেই মেইন গলিতে দাঁড়ানোর জন্য বাড়ির বাইরে পা বাড়ালেন। আমরা যে যার মতো কথা বলছি। সাগরের ঘরে একটি মেয়ে থাকে। তাকে সাগর খুব পছন্দ করে। সাগরের মা তাকে ছেলের বউ হিসেবেই ভেবে রেখেছে। মেয়েটি আমার সামনে এসে পরিচিত হলো। সে কোনও প্রকার খদ্দের নেয় না এবং সাগরও চায় না সে খদ্দের ধরুক। সাগর রাজবাড়ির একটা কলেজে পড়াশুনা করছে। সে একটা বাসের সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছে বহুদিন ধরে। দৌলতদিয়া ঘাট বাসস্টান্ডে তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। সাগরের মা এ পল্লীর একজন প্রভাবশালী বাড়িওয়ালি। বহু বছরের চলাচল এই পল্লীতে। এ পল্লীর অনেক কিছুই ঘটেছে তার চোখের সামনে। সাগরের মার সাথে বহুক্ষণ ধরে গল্প করলাম। উনি দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য বেশ পিড়াপিড়ি করতে লাগলেন। আমি অনেকটা অনুরোধ করে তাকে সংযত করলাম। এর মধ্যে রশিদ ভাই আমার ফোন পেয়ে তার অফিসের কাজ শেষ করে সাগরের বাসায় চলে আসলেন। আমরা খালার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শিউলির বাসার দিকে রওনা দিলাম।

চলবে