
রূপনির রূপকথা
উপন্যাস ১
সাজ্জাদ হায়দারপ্রকাশিত : মে ১৪, ২০১৯
রূপনির কোনো সমস্যা নেই, এটাই ওর সমস্যা। বন্ধুরা নানা রকম সমস্যার কথা বলে। সমস্যা নিয়ে অদ্ভুত সব সমাধানের কথা বলে। ওসব শুনে রুপনি শুধু হাসে। প্রতি রাতে শোবার আগে রুপনি নানা রকম সমস্যার কথা ভাবে। অথচ কোনোটাই ওর জন্য সমস্যা না। রুপনির কাছে সবচেয়ে প্রিয় হলো, ওর শোবার ঘর। শোবার ঘরটা রুপনি নিজের মতো করে সাজিয়েছে। নিজ হাতে পেইন্ট করেছে দেয়ালগুলো। কার্টুনের ফরমেটে এঁকেছে ওর প্রিয় চরিত্রগুলো। ছেলেবেলায় ওর প্রিয় ছিল ফ্যান্টম কমিক, এ কারণে দেয়ালজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে ফ্যান্টম। এখন অবশ্য দেয়ালগুলো দেখলে হাসি পায়। শিশুকালে কত ছেলেমানুষিই না রূপনি করেছে! এখন এই দেয়ালগুলো পাল্টে ফেলার সময় এসেছে। এই জন্মদিনের আগেই রূপনি ওর ঘরের দেয়ালগুলো পাল্টে ফেলবে। ছেলেমানুষি ফার্নিচারগুলো পাল্টে ফেলবে।
একফাঁকে সময় করে রূপনি ফার্নিচারের দোকান, কোনো ব্রান্ড শপে গিয়ে পছন্দসই ফার্নিচারের অর্ডার দিয়ে আসবে। পাপাকে বললেই পাপা লোক দিয়ে ফার্নিচারগুলো বাসায় পাঠিয়ে দেবে। জন্মদিনের আগেই ওর ঘরটা ‘এডাল্ট’ হয়ে উঠবে। ভাবতে বেশ লাগে, রূপনি এখন এডাল্ট। বয়স সতের পেরিয়ে হচ্ছে আঠার। প্রিয় বেডরুমে রাতে রুপনি শোবার ঘরের তাপমাত্রা কমিয়ে শীত নামিয়ে আনে। শীত কি গরম সারা বছরই রুপনি কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমায়। গরম ভীষণ অপছন্দ রুপনির। কেন যে বাংলাদেশটা শীতের দেশ হলো না! দেশটার উত্তরে যদি হিমালয় পর্বতমালা না থাকত তবে নিঃশ্চয়ই বাংলাদেশটা সাদা সাদা বরফে ছেয়ে থাকত! ঝিরঝির করে তুষারপাত হতো। পাতাঝরা গাছের শাখায় পেজাপেজা ধবল বরফ লেগে থাকতো। যেন বরফের ফুল! রূপনি স্কি করে সবেগে বরফের ওপর দিয়ে ছুটে যেত।
তুষার ঝড়ের আগে পৌছে যেত কোনো ক্যাফেতে। গা-গরম করার জন্য ধুঁয়া উঠা কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বরফ পড়া দেখতে থাকত। কি অদ্ভুত সুন্দরই হতো দেশটা! ঠিক ইউরোপের মতো। বেশ কয়েক বছর আগে রুপনি, ওদের স্কুলে কুইজ কম্পিটিশনে চ্যাম্পিয়ান হয়ে প্যারিসে গিয়েছিল। ঘুরে বেড়িয়েছিল প্যারিসের এ মাথা থেকে ওমাথা— ল্যুভ মিউজিয়াম, আইফেল টাওয়ার, প্যারিস গেট, নতোরদ্যাম গীর্জা, লেডি ডায়ানার মৃত্যু স্থান কোথায় না! হিম শীতল প্যারিসের রাস্তার ধারের ক্যাফে শপগুলোতে বসে কফি খেতে কি মজাই না লাগে! প্যারিসের কফির টেস্টই যেন ভিন্ন! এ লেভেল শেষে এ বছরই রুপনি সবে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। চার বছর পর ফাইনাল শেষে রুপনি পাড়ি জমাবে ইউরোপে। ঘুড়ে বেড়াবে ইউরোপের একদেশ থেকে আরেক দেশে। প্লেন বাস-ট্রেনে কখনো হিচ হাইকিং করে।
এক সময় চলে যাবে শীতলতম সাইবেরিয়ায়। রূপনি বিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম দেশে বসবাসের অভিজ্ঞতা নিতে চায়। রাতের ইউরোপে হেভি মেটাল মূর্ছনায় নাচবে-গাইবে, ভেসে যাবে রাত, মধ্যরাত। মিউজিক শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যাবে। মিউজিকের কথা মনে আসতেই রূপনি ওর মিউজিক সিস্টেমে সিডি ঢুকিয়ে প্রিয় গানটা চালিয়ে দেয়। মিউজিকের শব্দে যেন কেঁপে ওঠে রুমটা। যদিও বেশ পুরানো দিনের একটা ব্যান্ডের গান এটা, তারপরও রুপনির বেশ লাগে গানটা। ওর বয়সি রাজকন্যার মতো একটা মেয়ে যেন বাতাসে ভেসে ভেসে গানই গাচ্ছে। নিজেকে ঐ বাতাসে ভেসে বেড়ানো মেয়েটার মতই লাগে। রুপনি এখন চায় বছরগুলো যেন তাড়াতাড়ি শেষ শেষ হয়ে যায়। বয়স আরেকটু না হলে ও পৃথবী দেখবে কি ভাবে? আগামী মাসেই রুপনির জন্ম দিন। সতের পেরিয়ে আঠার-ড্যান্সিং কুইন হওয়ার বয়স।
রুপনি ওর জন্মদিনের উৎসব নিয়ে যেমন ভাবছে, তেমনি ভাবছে ওর বন্ধুরা। সবাই ওকে কোনো না কোনো সারপ্রাইজ দিতে চেষ্টা করবে। জন্মদিনের দিন সকাল থেকেই রুপনির সাথে থাকবে রুশনি, রুমকি, নোভা, নীলম, নিটল, নিউটন, দ্যুতি আরও অনেকে। আর জকি হলো স্পেশাল। জকি ওদের ভার্সিটির কেউ না। শপিং মলে পরিচয়। ভীষণ ম্যানলি আর পলাইট। ছেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালো লাগলেও রুপনি এ পর্যন্ত কারও সাথে ইনগেইজড হয়নি। হয়তো এই ছেলেটার জন্যই অপেক্ষা করেছে। তবে রুপনি এখনো নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। ছেলেটাও বেশি আগায়নি। তবে রূপনিকে যে ওর ভালো লাগে সেটা গোপন করেনি। জকি পাশে এলে রূপনির ভেতরটা কেমন যেন হয়ে যায়। এ অনুভূতিটা একেবারেই নতুন। এটা বোধ হয় যাকে বলে অফ্যেয়ার বাংলায় ভালবাসা, ভাবে মনে হচ্ছে জকি জন্মদিনের দিন ওকে প্রপোজ করে বসবে।
চলবে