
রূপনির রূপকথা
উপন্যাস ২৫
সাজ্জাদ হায়দারপ্রকাশিত : জুন ১৬, ২০১৯
২৬.
সাতদিন পর রূপনিদের বাসায় এসেছে আনা আর ঈশান। এই বাড়িটা এখন একটা প্রেতপুরী। রূপনির মায়ের বেডরুম ছাড়া অন্যকোনো রুমে তেমন আলো জ্বলে না। বুয়ারা ফিসফাস কথা বলে। রূপনি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। বিছানায় শুয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। বিছানা থেকে কখনো নামতে চায় না। এ কয়েকদিন আনা আর ঈশান প্রতিদিনই এ বাড়িতে এসেছে। ওরা আসলে রূপা বেগম মনের জোর ফিরে পান। ভবিষ্যতের কথা ভাবেন। ওদের দেখলে রূপনির ফ্যাকাশে চেহারা কেমন উজ্জ্বল হয়ে যায়।
ওরা দুজন বেডরুমে ঢুকে দেখলো, রূপনি সোফায় বসে আছে। টেলিভিশনের রিমোট কন্টোল হাতে নিয়ে বিভিন্ন চ্যানেল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে। ওদের দেখে রূপনি ম্লান হাসলো। হোক ম্লান, তারপরও রূপনির এই হাসি অনেকদিন পর ঈশান দেখল। ঈশানের খুব ভাল লাগল, মেয়েটার স্বাভাবিক হওয়ার লক্ষণ।
হাই ঈশান, আনা আপু তোমরা কেমন আছ? একেবারে স্বাভাবিক গলায় রূপনি বলল।
তুই খুব লক্ষ্মি মেয়েরে, রূপনিকে আদর করে জড়িয়ে ধরে আনা বলল।
তুমিও অনেক কিউট। রূপনি আনার গালে নিজের গাল লাগিয়ে বলে। ঈশানের মনে হলো রূপনিদের ওপর ভেসে থাকা কালো মেঘটা যেন সরে যাচ্ছে।
আচ্ছা ঈশান, তুই আমার খুব অল্পদিনের বন্ধু। অথচ তুই রোজ এখানে আসিসম কিন্তু আমার অন্য বন্ধুরা, রোশনি, নোভা, নিউটন, রুমকি ওরা তো এলো না? রূপনি ধরা গলায় বলে। রূপনি কবে যেন ঈশানকে তুমি থেকে তুই ডাকতে শুরু করেছে!
ওরা হয়ত ঢাকায় নেই। তুই চিন্তা করিস না রূপনি, আমি ওদের নিয়ে আসবো। আনা প্রসঙ্গটা এড়াতে তাড়াতাড়ি বলল।
তুমি জান না আপু, ওরা কেন আসে না! আমি জানি, আমার পাপা একজন কিলার, গংস্টার। কিলারের মেয়েরা কাছে কে আসে বলো! কেউ আসে না, কেউ না। এরপর রূপনি আর কথা বলতে পারে না। আনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। আনা আর ঈশান অনেক কষ্ট করে রূপনিকে শান্ত করে।
আনা আপু, তুমি জান না, জকি আমার সাথে সর্ম্পকটা ব্রেক করেছে।
কী ভয়ানক স্বার্থপর ছেলেটা! জকির ওপর ভীষণ রাগ হলো। কিছুদিন আগেও জকিকে রূপনির পেছনে আঁঠার মতো লেগে থাকতে দেখেছে। এই রিলেশনশীপের কথা সবাই জানত। রূপনি নিশ্চয়ই অনেক স্বপ্ন দেখেছে। এই সময় ছেলেটা রূপনির পাশে থাকলে ও খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠত। স্বার্থপর ছেলেটা সম্পর্ক ব্রেক করে রূপনিকে মানুষিকভাবে খুন করার ষোলকলা পূর্ণ করেছে।
তুই বেশি ভাবিস না তো রূপনি, সব ঠিক হয়ে যাবে। আনা বলল।
কিছুই ঠিক হবে না আনা আপু। ভার্সিটি থেকে আমাকে এক্সপেল করা হয়েছে।
আনা আর ঈশান পরস্পরের দিকে তাকালো। এই ব্যাপারটা রূপনির কাছে গোপন রাখা হয়েছিল। রূপনি জানলো কি ভাবে!
আমার কাছে গোপন রেখেছিলে, পারলে না তো। ভাবছ আমি জেনেছি কি ভাবে! সহজ, মা ভিসির সাথে খুব চেঁচিয়ে ফোনে কথা বলছিল। তখন আমি লুকিয়ে শুনেছি। এটা খুনির মেয়েকে ভার্সিটি রাখবে কেন?
রূপনি এ নিয়ে তুমি একটুও ভাববে না। ভার্সিটি এটা উইদ্ড্র করবে। ঈশান বলল।
কি ভাবে, তোমরা কি আবার মিছিল মিটিং করতে চাও নাকি! রূপনি হালকা গলায় বলল।
প্রয়োজনে আরও অনেক কিছু করবো, দরকার হলে কোর্টে যাব। দৃঢ় গলায় ঈশান বলল।
আমি চাই না, আমি চাই না, এ বাড়ির বাইরে আমি যেতে চাই না। বলে রূপনি চীৎকার করে উঠল। রূপনির মা পাশেই ছিলেন, তিনি এগিয়ে এলেন। চিৎকার করতে করতে রূপনি সোফার ওপর নেতিয়ে পড়ল। চলবে