আজ রোববার শহিদ মিনারে এনসিপির সমাবেশ

আজ রোববার শহিদ মিনারে এনসিপির সমাবেশ

সাদ রহমানের গদ্য ‘এনসিপির দুর্দশা’

প্রকাশিত : আগস্ট ০৩, ২০২৫

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে আজ রোববার ক্যানো লোক হয় নাই, এইটা নিয়া অনেক রকম বক্তব্য দেখতেছি। সমন্বয়হীনতা, কোরামবাজি, পার্টি ম্যাকানিজম ফেইলিওর ইত্যাদি নানান কিছু। কিন্তু এইসবের কোনোটাই এনসিপির আসল সমস্যাকে লোকেট করতে পারতেছে না।

আমি এনসিপির দুর্দশা নিয়া আমার ভিডিওগুলাতে আলাপ করছি। আমার মতে, এনসিপির প্রধান সমস্যা হইলো তারা মেইনস্ট্রিমের রাজনীতিতে প্রবেশ করতে পারে নাই, মেইনস্ট্রিমের ভাষা তারা বুঝতে সক্ষম হয় নাই। বরং মেইন স্ট্রিমের বিরুদ্ধে তারা এক ধরনের ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে হাজির হইছে।

যেইটা যতখানি রেডিক্যাল ইঙ্গিত, ততখানি এই জাতি, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রতি সাবমিশন নয়। এইটা এনসিপিকে প্রতিনিয়ত গণবিরোধী কইরা তুলতেছে। এনসিপি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ব্যাখ্যা করছে এইটাকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পতন হিসেবে, এবং ইসলামি জাতীয়তাবাদের উত্থান হিসেবে।

ফলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা থেকে প্রতিনিয়ত নারীর প্রশ্ন, মধ্যবিত্তের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রশ্ন, নিউ জেনারেশনের স্বাধীন জীবনধারণের প্রশ্ন— এইগুলা হারাইয়া গেছে। নারীরা জুলাইকে তার জন্য অনুকূল ঘটনা বইলা আর ভাবতে পারতেছে না। এইসবের সঙ্গে-সঙ্গে এনসিপিও মধ্যবিত্তের ভরসার জায়গা থেকে বিদায় হইতেছে।

`ইসলাম প্রশ্ন` এই দেশে একটা মাইনর প্রশ্ন, মেইন স্ট্রিমের প্রশ্ন এইটা নয়। হাসিনার আমলে `ইসলাম প্রশ্ন` প্রকাণ্ড হইয়া ধরা দিছিলো। হাসিনার পতনের পরে আস্তে-আস্তে এইটা তার আসল অবস্থায় ফেরত গেছে। ফলে এই `ইসলাম প্রশ্নে`র পেট থেকে যেই বিপ্লবীরা বাইর হইছে, তারা নতুন বাস্তবতায় একটা জনবিচ্ছিন্ন এনটিটি।

যেই জামায়াতে ইসলাম এই দেশে কখনোই ভোটের রাজনীতি কইরা উঠতে পারে নাই, এনসিপি এখন সেই জামায়াতের বাইপ্রোডাক্ট পার্টি হইয়া গেছে। আমি দাবি করছি, এনসিপি ও জুলাইয়ের নেতারা যে এইরকম মেইন স্ট্রিম-বিরোধী ক্ষমতার প্রতীকে পরিণত হইলো, সেইটা আসলে সম্পূর্ণ তাদের নিজেদের ইচ্ছায় নয়।

তাদের পিছনে একদল অ্যাম্বিশাস লোক তাদেরকে এইরকম ক্ষমতার প্রতীকে পরিণত কইরা এই দেশের টোটাল রাজনৈতিক ও সামাজিক সেটেলমেন্টকে বদলাইয়া দিতে তৎপর হইছে। স্বল্পবুদ্ধির জুলাই নেতারা তা বুঝতে সক্ষম হইতেছে না, এবং খুব শীঘ্রই বুঝবে বইলাও মনে হইতেছে না।

কিন্তু বাস্তবতা ওইটাই, মেইন স্ট্রিমের বিরুদ্ধে গিয়া মেইনস্ট্রিমের রাজনীতি আপনি করতে পারবেন না। কেবল ব্যবহৃত হইতে থাকবেন। আপনাদের দরকার রিয়েলাইজেশন। রিয়েল ট্রুথের আবিষ্কার। ট্রুথফুলনেস। মানুষ ট্রুলি যেই জীবনের মধ্যে বসবাস করে, আপনাদেরকে সেই জীবনের দ্বন্দ্বগুলা জানতে হবে। এবং সেইখানে নিজেদের রাজনৈতিক উচ্চাশাকে সাবমিট করতে হবে। বড় নেতা আপনারা হইতে পারবেন, কিন্তু মেইন স্ট্রিমকে নিয়া, বাদ দিয়া না।

লেখক: কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক