
স্ত্রী এবং রক্ষিতা
পর্ব-৬
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : অক্টোবর ২৭, ২০১৮
তৃতীয় দিনের মতো বাদল মাসির বাড়িতে গিয়ে হাজির। তিনদিনে বাদল কেমন জানি হয়ে গেছে। ঘরে স্ত্রী-সন্তান রয়েছে, তবু বাদলের ছুটে আসা এ বাড়িতে। মাসির বাড়িতে অনেকগুলো মেয়ে অনৈতিক কাজে নিয়োজিত থাকলেও তাদের কারও প্রতি বাদলের কোনো টান নেই। ছিল যে না, তেমনটাও বলা যায় না।
স্মৃতির ডাইরিতে যা লেখা তাতে মেয়েটির বয়স ছিল আনুমানিক ১৫ বছর, বাদলের প্রায় ৩৫ বছর। বাদল অনেকটা ছোট বয়সেই প্রেম করে বিয়ে করে মিতালীকে। ওটাকে অনেকটা বাল্যপ্রেমে, বাল্যবিবাহ বলা যেতে পারে। আজকে বাদল অনেকটা নিঃশব্দে মেয়েটির ঘরে ঢুকেছে। নীরবে শরীরের সাথে শরীরে, লেগে থাকা কাঠের দরজার পুরুনো পাল্লার, সিটকানি খোলা নীরব পরিবেশে বাদলের ঘরে ঢুকতে তেমন বেগ পেতে হয়নি।
বাদল আস্তে-ধীরে ঘরের ভিতর রাখা সেই ছোট্ট খাটটির উপর গিয়ে বসে। বসতে গিয়ে পুরুনো কাঠের নড়বড়ে খাটের ক্যাচ করে হালকা শব্দে ঘরের শুনশান নীরবতার কিঞ্চিত ব্যাঘাত ঘটে। মেয়েটি অনেকটা ভয় পেয়ে বাদলের দিকে ফিরে তাকায়। মেয়েটি আজকে ঘরের জানালার সিক ধরে, আবদ্ধ আকাশকে নিবিরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল। জীবনের ১৫টি বছর খেলতে খেলতেই পার হয়ে গেছে, প্রচুর সুযোগ থাকার পরও সে কখনও উন্মুক্ত আকাশ দেখার চেষ্টা করেনি। আজকে অনেকটা নিরুপায় হয়ে আকাশের সাদা রংয়ের মিষ্টি গন্ধ শরীরের মাখিয়ে নেবার ইচ্ছায় মগ্ন ছিল কিন্তু বাদলের ঘরে ঢোকায় তার ব্যাঘাত ঘটলো।
মেয়েটি ভয়ে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তিনদিন আগে তার উপর বাদল যে শারীরিক নির্যাতন করছে তাতে ভয় পাওয়াটায় স্বাভাবিক। বনের ভিতর সবুজ ঘাসের উপর এদিক সেদিক আনন্দে ছুটে বেড়ানো খরগোসের উপর হিংস্র হায়েনার নির্দয়ভাবে ঝাপিয়ে পড়া। আজকেও কি বাদল মেয়েটির নরম শরীরের উপর ক্ষুধার্ত হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়বে!
মেয়েটির মনের ভিতর অনেকটা ভয়...সংশয়। বাদলের দিকে এক পলক তাকিয়েই দৃষ্টি নিচের দিকে নামিয়ে নেয়। চোখ দুটি ইষৎ বন্ধ করে, দুটি ঠোঁটকে শক্তকরে চেপে রেখে, দ্রুত নিঃশ্বাস নেবার চেষ্টা করছে। নিজের অস্থির চিন্তাজগতকে দমিয়ে রাখার জন্য বাম পায়ের উপর ডান পায়ের বুড়ো আঙুল ঘষে চলেছে অনবরত। বাদল তাকিয়ে রয়েছে মেয়েটির দিকে। ঘরে দুটি মানুষের দ্রুত নিঃশ্বাসের বাতাসের শব্দ খেলা করছে।
মেয়েটি বাদলের দিকে না তাকিয়েই নিজের বুকের উপর আলগা করে পড়ে থাকা ওড়নাটি দিয়ে নিজের নতুন প্রস্ফুটিত গোলাপ ফুলটি ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে।
কি, কি করছো? বাদলের মুখের এমন প্রশ্ন শুনে মেয়েটি কি বলবে তা ভেবে পাচ্ছে না। এদিকে আসো, আমার পাশে এসে বসো...
মেয়েটি এখন কি করবে? বাদলের পাশে গিয়ে বসবে? বাদল যদি তার উপর এই সাতসকালে ঝাপিয়ে পড়ে!
কি, কী ভাবছ? ভয় করছে?
মেয়েটি চুপ। একটি মাটির পুতুল ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে। উপরঅলা সেই পুতুলের গায়ে তুলির আঁচরে অবিশ্বাস্য সুন্দর নমুনা রাখতে কোনো কৃপণতা করেননি।
আমাকে ভয় পেও না। আমার কাছে আসো। ওই দিনের ঘটনার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি সেদিন তোমাকে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আমি তোমাকে আর কষ্ট দেব না। কাছে আসো...
মেয়েটি অবাক। লোকটি কী বলছে! এই লোকটিই সেদিন তার ছোট্ট নরম শরীরটা ছিড়ে ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছিল। আউ ইস, সেদিনের ব্যথাটা এখনো মাথা চেড়ে ওঠে। নারীদের নরম শরীর পেলে পুরুষেরা ক্ষুধার্ত বাঘের মতো আচরণ করে তা টের পেয়েছিল সেদিন। আজকে কী সে নিজ ইচ্ছায় ক্ষুধার্ত নেকড়ের খাবার হয়ে ধরা দেবে? মেয়েটি বাদলের দিকে এগুতে গিয়েও হঠাৎ থেমে যায়।
চলবে