অতুলপ্রসাদ সেনের ৬ গান
প্রকাশিত : আগস্ট ২৬, ২০২০
সঙ্গীতজ্ঞ অতুলপ্রসাদ সেনের আজ মৃত্যুদিন। ২৬ আগস্ট, ১৯৩৪ সালের ২৬ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৮৭১ সালে ২০ অক্টোবর তার জন্ম ঢাকায় তার নানাবাড়িতে। তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে তার রচিত ছয়টি গান পুনর্মুদ্রণ করা হলো:
মোদের গরব, মোদের আশা
মোদের গরব, মোদের আশা,
আ-মরি বাংলা ভাষা!
তোমার কোলে,
তোমার বোলে,
কতই শান্তি ভালোবাসা!
কি যাদু বাংলা গানে!
গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে,
গেয়ে গান নাচে বাউল,
গান গেয়ে ধান কাটে চাষা!
বিদ্যাপতি, চণ্ডী, গোবিন্,
হেম, মধু, বঙ্কিম, নবীন-
ঐ ফুলেরই মধুর রসে,
বাঁধলো সুখে মধুর বাসা!
বাজিয়ে রবি তোমার বীণে,
আনলো মালা জগৎ জিনে!
তোমার চরণ-তীর্থে আজি,
জগৎ করে যাওয়া-আসা!
ঐ ভাষাতেই নিতাই গোরা,
আনল দেশে ভক্তি-ধারা,
আছে কৈ এমন ভাষা,
এমন দুঃখ-শ্রান্তি-নাশা?
ঐ ভাষাতেই প্রথম বোলে,
ডাকনু মায়ে ‘মা, মা’ বলে;
ঐ ভাষাতেই বলবো হরি,
সাঙ্গ হলে কাঁদা হাসা!
মোদের গরব, মোদের আশা,
আ-মরি বাংলা ভাষা!
সবারে বাস রে ভালো
সবারে বাস রে ভালো,
নইলে মনের কালো ঘুচবে নারে।
আছে তোর যাহা ভালো।।
ফুলের মতো দে সবারে।
নইলে মনের কালো ঘুচবে নারে।
করি তুই আপন আপন
হারালি যা ছিল আপন।।
এবার তোর ভরা আপন;
বিলিয়ে দে তুই যারে তারে।
নইলে মনের কালো ঘুচবে নারে।
যারে তুই ভাবিস ফণী
তারও মাথায় আছে মণি।।
বাজা তোর
বাজা তোর প্রেমের বাঁশি
ভবের বনে ভয় বা কারে।
সবাই যে তোর মায়ের ছেলে,
রাখবি কারে, কারে ফেলে।।
একই নায়ে সকল ভাইয়ে…
যেতে হবে রে ওপারে।
নইলে মনের কালো ঘুচবে নারে।
সবারে বাস রে ভালো,
নইলে মনের কালো ঘুচবে নারে।
আইল শীত ঋতু হেমন্তের পরে
আইল শীত ঋতু হেমন্তের পরে,
শীতল ধরণী এবে চাহে দিবাকরে।।
কুন্দ শেফালিকা ফুলে
নীহারবিন্দু উছলে;
কুসুম কানন মূলে
শ্রীরাগ বিহার করে।।
রাগিনী নবরঙ্গিনী
শ্রীরাগ অনুসঙ্গিনী।
নাচিছে লাসভঙ্গিনী
গাহিছে মোহন স্বরে।।
আর কতকাল থাকব বসে দুয়ার খুলে বধূ আমার
আর কতকাল থাকব বসে দুয়ার খুলে, বধূ আমার!
তোমার বিশ্বকাজে আমারে কি রইলে ভুলে, বধূ আমার।
বাহিরে উষ্ণ বায়ে মালা যে যায় শুকায়ে,
নয়নের জল, বুঝি তাও, বধূ মোর, যায় ফুরায়ে।
শুধু ডোরখানি হায় কোন পরাণে তোমার গলায় দিব তুলে, বধূ আমার।
হৃদয়ের শব্দ শুনে চমকি ভাবি মনে,
ঐ বুঝি এল বধূ ধীরে মৃদুল চরণে;
পরাণে লাগলে ব্যথা ভাবি বুঝি আমায় ছুঁলে, বধূ আমার।
বিরহে দিন কাটিল, কত যে কথা ছিল,
কত যে মনের আশা মন-মাঝে রহিল;
কী লয়ে থাকব বলো তুমি যদি রইলে ভুলে, বধূ আমার।।
কে তুমি বসি নদীকূলে একেলা
কে তুমি বসি নদীকূলে একেলা।
কার লাগি এত উতলা।।
কে তরী বাহি আসিবে গাহি।
খেলিবে তার সনে কী খেলা।।
সারা বেলা গাঁথ মালা
ঘরের কাজে এ কী হেলা?
ছলনা করি আন গাগরি
কার লাগি বলো অবেলা।।
ওগো নিঠুর দরদী
ওগো নিঠুর দরদী, ও কি খেলছ অনুক্ষণ।
তোমার কাঁটায় ভরা বন, তোমার প্রেমে ভরা মন,
মিছে খাও কাঁটার ব্যথা, সহিতে না পার তা আমার আঁখিজল,
ওগো আমার আঁখিজল তোমায় করেগো চঞ্চল
তাই নাই বুঝি বিফল আমার অশ্রু বরিশন।
ওগো নিঠুর দরদী।
ডাকিলে কও না কথা, কি নিঠুর নীরবতা।
আবার ফিরে চাও, তুমি আবার ফিরে চাও,
বল ওগো শুনে যাও
তোমার সাথে আছে আমার অনেক কথন।
এ কি খেলছ অনুক্ষণ,
ওগো নিঠুর দরদী।
























