অরিজিৎ কুণ্ডুর কবিতা ‘এক মহিলার পোর্ট্রেট’

প্রকাশিত : মে ২২, ২০২১

T.S. Elliot এর Portrait of a lady কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত

সে বলে, `আমার জানলা দিয়ে একচিলতে আকাশ
তার ফাঁকে গ্রিলের বেড়া
চায়ের কাপে মুক্তির আস্বাদ নেই।`

পাশের বাড়ির বুড়োটাকে দেখি,
একজায়গায় সারাদিন যে বসে থেকে
ফ্যালফ্যাল করে তাকায় কিছু একটার দিকে
জানতে পারি জুটমিলের ছাঁটাই শ্রমিক সে।

সে বলে, `পাখির মতো যদি উড়ি
হয়তো এই বিষাদগ্রস্ত শহর থেকে মুক্তি পাব।`

আমি তখন স্বপ্নে ডানা মেলি
আর বারবার আকাশ থেকে মাটিতে পড়ার ভয়ে
শঙ্কিত হই
বুঝতে পারি,
পাখিরাও স্বাধীন নয়।

কাপে চা ঢালতে ঢালতে সে বলে,
`বন্ধুবিনা কীভাবে আমি পাখির মতো উড়ি
বন্ধুবিনা জীবন আমার সুতোকাটা ঘুড়ি।`
আর আমি তার ফ্যাকাশে মলিন মুখের
দিকে চেয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিই,

তার কর্মব্যস্ত দিনগুলোর গল্প শুনতে শুনতে
নিজের মনে অলক্ষ্যে হেসে উঠি
আর তার সমস্তটাকে `আইরনি` মনে হতে থাকে।

সে বলে, `আর একটু চেষ্টা করো
সকলে তোমাকে চিনবে
অনেক নাম হবে
দেশে-বিদেশে যাবে
ই-মেল করবে তো?`

আমি তার ছলছল চোখদুটোর পানে চেয়ে থাকি
তার বানানো চা ঠাণ্ডা হয়ে যায়
তার গায়ে হাত দিয়ে দেখি, হিম শীতল
বুঝতে পারি, জ্বর নয়
বেঁচে থাকার উদগ্র ভারই তার অসুখ।

আমার পানে চেয়ে স্মিত হেসে সে বলে, `কি ভাবছো?
সব বুঝে গেছ আমার?
করুণা হচ্ছে?
এতটা স্পর্ধা?`

আমি কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়ে
তার ঝুলঝাড়া দেয়ালের দিকে দেখি
জানলার বাইরে হ্যালোজেনের দিকে তাকাই
যাতে চোখে চোখ না পড়ে
আর সে বলে, `ভয় পাচ্ছ?
ভাবছো আমি মনের কথা পড়ে নেব?
ভেবেছিলে নিজের আর সবার জন্য
যন্ত্রণা কেবল তুমিই পেয়েছো...`

বলে হেসে সে তার গাউনখানা খুলে ফ্যালে
আর তার সারা শরীরজুড়ে ক্ষত।
আমি কাছে গিয়ে ক্ষত ছুঁতে গেলে
সে অট্টহাসি হেসে পিছোতে থাকে
শরীর থেকে তার বাকি আচ্ছাদনও খুলে যায়
অন্ধকারে উলঙ্গ সেই অচেনা বান্ধবীকে
আমার ঈডেনের বাগানের
সর্পিণীর মতো মনে হয়
আর তারপর কতকাল কেটে গেছে
কত চায়ের কাপে কতজনের লিপস্টিক,
তবু সেই হারানো সর্পিণীর সাথে চা খাওয়া হয়নি
শুধু আমার স্মৃতিতে এক দগদগে ক্ষত।