অস্থায়ী রেখাই হচ্ছে ইজরায়েলের স্থায়ী সীমানা
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : অক্টোবর ২৮, ২০২৫
যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গাজায় যতটুকু সীমানার মধ্যে ইজরায়েলি বাহিনীর থাকার কথা তারচেয়ে বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছে ইজরায়েল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তির প্রথম ধাপে ইজরায়েল গাজার উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে চলে যাওয়া একটি নির্ধারিত সীমানার মধ্যে সরে যেতে রাজি হয়েছিল।
বিবিসির প্রতিবেদনে প্রকাশিত নতুন ভিডিও এবং স্যাটেলাইটে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইজরায়েল হলুদ লাইন থেকে গাজার আরও ৫২০ মিটার ভেতর পর্যন্ত সীমানা চিহ্নিতকারী হলুদ কংক্রিট ব্লক বসাচ্ছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল নির্ধারণের জন্য তারা এ কাজ করছে।
ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর প্রকাশিত মানচিত্রে আলাদা করা সীমানাকে হলুদ লাইন চিয়ে চিহ্নিত করায় লাইনটি হলুদ লাইন নামেই পরিচিতি পায়। এ বিষয়ে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভাষ্য, হলুদ লাইন চিহ্নিত করতেই হলুদ রঙের পিলার বসিয়ে কংক্রিট ব্লক বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে প্রস্তাবিত এলাকার চেয়ে বেশি এলাকাজুড়ে ইজরায়েলের হলুদ লাইন চিহ্নিতের কর্মকাণ্ডে এই অস্থায়ী রেখাটাই এখন নতুন স্থায়ী সীমানা হয়ে ওঠার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, যা ফিলিস্তিনের ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।
হলুদ লাইন চিহ্নিত করতে হলুদ কংক্রিট ব্লক বসানোর নির্দেশদাতা ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সতর্ক করে বলেছেন, ‘“এই লাইন কেউ পার হলেই গুলি করা হবে।”
দ্য গার্ডিয়ান প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হলুদ লাইন কার্যত গাজাকে ২ ভাগে ভাগ করেছে। পশ্চিমাংশে হামাস তার আধিপত্য নতুন করে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। অপরদিকে, গাজার পূর্বাংশ এবং উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্তজুড়ে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ নতুন সামরিক পোস্ট গড়ে তুলছে এবং রেখার কাছে যে কেউ এগোলে গুলি চালাচ্ছে, সেখানে হলুদ চিহ্ন থাকুক বা না থাকুক।
খান ইউনিসের উত্তরে আল কারারার বাসিন্দা মোহাম্মদ খালেদ আবু আল হুসেইন বলেন, “আমাদের এলাকায় এই হলুদ রেখাগুলো স্পষ্ট নয়। কোথা থেকে শুরু, কোথায় শেষ, আমরা জানি না। বাড়ির কাছে গেলেই চারদিক থেকে গুলি শুরু হয়, মাথার ওপরে ড্রোন ঘুরে বেড়ায়।”
তিনি আরও বলেন, “একদিন বন্ধুর সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ গুলি শুরু হলো। আমরা মাটিতে পড়ে থাকলাম। বাড়ি পৌঁছাতে পারিনি। মনে হয় যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। এমন যুদ্ধবিরতির কি মানে যদি আমরা নিরাপদে ঘরেই না ফিরতে পারি?”
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মন্ত্রীদের বলেন, “গাজার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতেই রাখব। কোথায় ও কখন শত্রুদের ওপর হামলা চালানো হবে এবং কোন দেশ যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে সেনা পাঠাতে পারবে, তা ইজরায়েল নির্ধারণ করবে।”
নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভায় আরও বলেন, “ইজরায়েল স্বাধীন রাষ্ট্র। আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করব এবং নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেব। এজন্য কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই।”
যুদ্ধবিরতির ২ সপ্তাহ পেরোলেও প্রতিদিনই ২০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছে। বেশির ভাগ এই হলুদ রেখার কাছে। ফলে খুব কম বাস্তুচ্যুত মানুষই ফিরে যেতে পারছে আইডিএফ নিয়ন্ত্রিত ওই অঞ্চলে। এ পরিস্থিতিতে হলুদ রেখাটি ক্রমেই স্থায়ী সীমান্তে রূপ নিচ্ছে। এমনকি ইজরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো একে ‘নতুন সীমান্ত’ বলেই উল্লেখ করতে শুরু করেছে।
ইজরায়েলি দৈনিক ইয়েদিওত আহরোনথ-এর সামরিক প্রতিবেদক ইয়োয়াভ জিতুন লিখেছেন, “এই রেখা ভবিষ্যতে উচ্চ ও উন্নত প্রতিরোধ প্রাচীরে পরিণত হতে পারে, যা গাজাকে আরও ছোট করে ফেলবে, পশ্চিম নেগেভ মরুভূমিকে বড় করবে এবং সেখানে নতুন ইজরায়েলি বসতি গড়ে তোলার সুযোগ দেবে।”
শরণার্থী সংস্থা রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনানের প্রেসিডেন্ট জেরেমি কনিন্ডাইক বলেন, “এটা আসলে ধীরে ধীরে গাজা দখলের প্রক্রিয়া।” সূত্র: বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান






















