আদিম

রহস্যকাহিনি ২

প্রাচ্য তাহের

প্রকাশিত : মে ১৭, ২০১৮

সার, আমি তাহলে উঠি। যে কোনও সময়ে যে কোনও দরকারে কল করলেই চলে আসবো।
আচ্ছা যাও।
অবিনাশ বেরিয়ে গেল।
অবিনাশ বেরিয়ে যাবার কিছুক্ষণ পরই আমজাদ হোসেন উঠে এলেন স্টোর রুমে। প্লাস্টিকের একটা বাকসো থেকে বের করলেন রক্ত মাখা কালো রঙের একটা স্যুট। স্যুটটা হাতে নিয়ে কার্পেটের ওপর উঁবু হয়ে বসে অনেকক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন। কি যেন ভাবলেন আপনমনে। হঠাৎ তার ঠোঁটের কোণে সকাল বেলার প্রথম সূর্যের মতো হাসির ঝিলিক মিলিয়ে গেল। উঠে থানায় ডায়াল করলেন তিনি।
হ্যালো?
হ্যালো, ওসি মজিবর রহমান...
হ্যাঁ ওসি সাহেব, গোয়েন্দা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলছি। ও সার, বলুন কি ব্যাপার।
আপনি কি ইউনুস মোল্লার অন্দরমহলের কোনও হদিস দিতে পারেন।
কি হদিস চান বলেন।
এই মানে ওর স্ত্রীর ব্যাপারটাই ধরেন।
এক কাজ করেন সার, থানায় চলে আসেন। টেলিফোনে এসব কথা না হওয়ায় ভালো।
আজকে আর বেরতে চাইছিলাম না। ঠিকাছে, আসছি আমি।

রিসিভার নামিয়ে রাখলেন আমজাদ হোসেন। এক ধরনের উত্তেজনা ভেতরে ভেতরে টের পাচ্ছিলেন তিনি। ইউনুস মোল্লার খুনের একটা ক্লু হয়তো পেয়ে গেছেন তিনি। রহস্যের জঁট খুলতে এখন বেশি দিন লাগবে না। শিগগিরই পৌঁছে যাবেন ডাঙায়। খুনির চোখ-মুখের আতঙ্কের ছাপ পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন যেন এই মুহূর্তে। ধরা পড়বার পর এদেশের মার্ডারারের আতঙ্ক দেখবার মতো একটা বিষয়। কেমন যেন বোকা বোকা হযে যায় চেহারা। হড়বড়িয়ে কথা বলে। কিছু কিছু কাজও এমন করে যে নিরেট বোকারা ছাড়া কেউ যা করে না।

চা খেলেন এক কাপ। তারপর সিগারেট ধরিয়ে বাথরুমে গিয়ে চোখমুখে পানির ছিটা দিলেন। বিস্বাদ লাগছিল সিগারেট। কমোডে সেটা ছুড়ে ফেলে ফ্লাস টেনে দিলেন। বাইরে বেরনোর কাপড় পরে নিচে নেমে এলেন। গাড়িতে উঠে বসে স্টার্ট দিয়ে মুহূর্তে বেরিয়ে এলেন পাকা রাস্তায়। গাড়ি চলছে হু হু করে। চারদিকের ঘরবড়ি, দোকানপাট, মানুষজন পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে বাঘা গোয়েন্দা অফিসার আমজাদ হোসেনের নীলরঙা টয়োটা। একটা হাত তার অলসভাবে এলিয়ে রয়েছে জানলায়। ইউনুস মোল্লা আর নেই, ভাবাই যায় না। বেশ হাসিখুশি ছিলেন ভদ্রলোক। সব সময় একটা মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে থাকত ওর চুরুট খাওয়া তামাটে ঠোঁটে। এ শহরের যে কজন বড় ব্যবসায়ীর নাম করতে হয় ইউনুস মোল্লা ছিলেন তাদের একজন। আমজাদ হোসেনের জানা মতে মানুষটার কোনও শত্রু ছিল না। ব্যবসা করতে এসে কারো সঙ্গে কোনও রকম ঝামেলায় জড়াননি নিজেকে। ব্যক্তিগত কিছু গাইগুই ছিল লোকটার। বেপথে পয়সা বানাতে চাননি। এক পার্টিতে মাল খেতে খেতে তাকে বলেছিলেন মানুষটা, ক’পয়সায় আর বানাবো বলুন। ওপরে যে শেঠ বসে আছেন, তিনি তো সবই দেখছেন। ওর চোখ তো আর ফাঁকি দিতে পারব না। সে রকম সাহসও আমার নেই।

কালরাতের ঘটনাটা তার চোখের সামনে খোলা একটা বইয়ের মতো এখনো ভাসছে। ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। টেলিফোনের শব্দ পেয়ে ঘুম ভাঙল। হাত বাড়িয়ে রিসিভার তুলে ঘুম জড়ানো গলায় বললেন, হ্যালো, আমজাদ হোসেন স্পিকিং।
ওসি মজিবর বলছি সার।
কি ব্যাপার, এত রাতে?
একটু ঢুলে উঠলেন আমজাদ হোসেন। ঘুম জড়ানো ভাবটা এখনো তার চোখের পাতায় লেগে আছে। ঘুমটা বেশ জমেছিল। একটা সাংঘাতিক স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তিনি এতক্ষণ। বিরক্ত তো স্বাভাবিকভাবে হবেনই। কোনও অপরূপ রাজকন্যার সঙ্গে সমুদ্রে দৌড়ঝাপ করতে করতে মাঝপথে হঠাৎ করেই যদি কেউ এসে বাগড়া দেয়, কারই না ব্রক্ষ্মতালু গরম হয়ে ওঠে!

ওসি হড়বড়িয়ে বলতে লাগলেন, কিছুক্ষণ আগে শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইউনুস মোল্লা খুন হয়েছেন তার নিজের বাড়িতে। আপনাকে যে এখুনি একবার আসতে হয় সার।
আপনি কোথায়?
স্পটেই আছি।
ওকে, আসছি।

আজকাল খুনটুনের কেসগুলোতে তিনি তেমন একটা উৎসাহ বোধ করেন না। এখানে খুনিদের বেশির ভাগই ক্ষেত-খামার থেকে উঠে আসে। কেউ কেউ আবার বড়লোকের বখে যাওয়া পুতুপুতু টাইপের ক্রিমিনাল। এরা সকলেই কাঁচা মাথার। যথেষ্ট বিচারবুদ্ধি এদের কারোরই নেই। হাজারটা প্রমাণ রেখে মার্ডার করে। দু’চারটে শার্লক হোমস আওড়ালেই এদের নাগাল পাওয়া পানির মতো ব্যাপার। জটিল কোনও কেস এদেশে পাওয়া যায় না। জটিল কিছু না হলে গোয়েন্দাদের আবার কিসের মজা। মাথা খাটানোর ভেতরই তো সব আনন্দ।

চলবে