
আদিম
রহস্যকাহিনি ১
প্রাচ্য তাহেরপ্রকাশিত : মে ১৬, ২০১৮
আমজাদ হোসেন এতক্ষণ চেয়ারে বসে ঝিমোতে ঝিমোতে পা নাচাচ্ছিলেন। এবার মাথাটা সোজা করে বার কয়েক কাঁশলেন। তারপর চোখ পিটপিট করে তাকালেন অবিনাশের দিকে। বুঝলে অবিনাশ, ভদ্রলোকের স্ত্রীকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
তাই না কী! উৎফুল্ল হয়ে উঠলো অবিনাশ। তাহলে কি আপনি সন্দেহ করছেন সার ভদ্রমহিলার এই পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে ওর স্বামীর খুনের সম্পর্ক আছে?
দ্যাখো অবিনাশ, তুমি বড্ড ছেলেমানুষ। আমজাদ হোসেনের গলায় এক ধরনের চাপা উত্তেজনা টের পাওয়া যায়। একটু বিরক্তও যেন। এত হালকাভাবে এ লাইনে কোনও কিছুকে গ্রহণ করতে নেই। আগে দ্যাখো পুলিশের রিপোর্টে কি বলে। এরপরে আমাদের ভাবনা-চিন্তার দরকার হবে। কোনও সূত্রই তো আমাদের হাতে আপাতত নেই। অনুমানের ওপর তুমি কত দূর কি কাজ করতে পারবে?
তাহলে আমাদের এখন বসে থাকতে হবে ব্যাপারটার জন্যে?
এ ছাড়া তো আর উপায়ও নেই, তাই না।
কিন্তু সার, প্রায়ই ক্ষেত্রে তো খুনের কোনও ক্লুই পাওয়া যায় না। অনুমানের ওপর ডিপেন্ড করে এগোতে হয়। অবিনাশের চোখদুটো স্পষ্ট চকচক করে ওঠে। উঁচু পদে অধিষ্ঠিত সরকারি একজন গোয়েন্দা অফিসারের যুক্তির পাল্টা যুক্তি দিতে পারায় ভেতরে ভেতরে একটু গর্ব হয় ওর।
অবিনাশের কথা আমজাদ হোসেন যেন শুনতেই পাননি এমন ভঙ্গিতে বললেন, চা খাবে অবিনাশ? চা দিতে বলি তোমাকে।
মাত্র কিছুক্ষণ আগেই একপর্ব চা হয়ে গেছে। এখন আবার তাকে চা খাওয়াতে চাচ্ছেন কেন বুঝতে পারল অবিনাশ। প্রসঙ্গ বদলে ফেলতে চাইছেন তিনি। অবিনাশও সায় দিল, খাওয়া যায় সার।
আমজাদ হোসেন চায়ের কথা বললেন চাকরটাকে ডেকে। এরপর দুজনেই চুপচাপ। অবিনাশ পা ঠুকতে থাকে মেঝেতে। এটা ওর বদঅভ্যেস। জুতোর গোড়ালি দিয়ে অনবরত মেঝে ঠুকে চলেছে। ছটফটে স্বভাব তার। বয়েসও কম। সবে এম,এ দিয়েছে। তার পরপরই এই চাকরিপ্রাপ্তি। বছরও শেষ হয়নি চাকরির বয়েস। তবে সে খুব দ্রুত বুঝে নিতে চাইছে এ লাইনটা। অন্ধকার গলিঘুঁজিসহ। এক সময় পা ঠোকা থামিয়ে জিগেশ করলো, ইয়াসিন মোল্লার যে স্যুট-টাই এনে রেখেছেন সেগুলো দিয়ে কি করবেন এখন?
বিরক্ত হলেন আমজাদ হোসেন। এমন ছটফটে সহকর্মী নিয়ে কাজ করার বিস্তর ঝামেলা। গম্ভীর গলায় তিনি বললেন, এনেছি যখন একটা কিছু তো করতেই হবে।
চা এলো।
নিচু গলায় আমজাদ হোসেন বললেন, চা ন্যাও অবিনাশ। চা খাও।
চা এসেছে এক কাপ। অবিনাশ জিগেশ করলো, আপনি খাবেন না সার?
না। এখন আর চা-টা খাব না। তুমিই ন্যাও।
চা শেষ হলে আমাজাদ হোসেন বললেন, এখন বাড়ি যাও অবিনাশ। গোসল-টোসল করে ফ্রেস একটা ঘুম দ্যাও গে, যাও।
আপনি কি করবেন সার? জানতে চাইল অবিনাশ তার ভরাট চোখ তুলে চেয়ে। সোনালি ফ্রেমের চশমাটা ঝুঁকে পড়েছে নাকের ডগায়। ফর্সা মুখখানায় বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে সিনিয়রকে।
আমি ব্যাচেলর মানুষ। আমার কি আর নিয়ম-কানুন আছে। কি করি, কোথায় থাকি সব কিছু আগবাড়িয়ে বলা মুশকিল। তুমি যাও। শশী নিশ্চয়ই... আমজাদ হোসেনের চোখমুখে স্পষ্ট বিরক্তি খেলা করে।
না সার, শশীকে নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। ও জানে আমি আপনার এখানে। আমি বলে এসছি দুদিন ফিরব না।
কেন, দুদিন ফিরবে না কেন?
আমজাদ হোসেন এবার সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজলেন। দুলতে লাগলেন।
এত বড় একজন ব্যবসায়ী খুন হলেন, আপনি একা একা দৌড়ঝাপ করছেন আর আমি বউয়ের কাছে থাকব এটা ভেবে বলেছি সার।
সমস্যা নাই, তুমি যাও। সময় হলে আমি কল দেব। নতুন বউকে সময় দিতে হয়। বিয়েটিয়ে হয়তো করিনি কিন্তু এসব তো ফিল করতে পারি।
লজ্জা পেল মনে হলো অবিনাশ। চোখ নামিয়ে ফেলল।
হাসলেন মনে মনে আমজাদ হোসেন। নতুন বিয়ে করেছে বেচারা। নতুন বউ নিশ্চয়ই স্বামী রত্নটিকে কাছে পেতে চাইবে। নতুন বউ আর কি কি চায় সে বিষয়ে যদিও তার তেমন ধারণা নেই। এসব খুনটুনের মতো সামান্য তদন্তে ওকে জড়ানো কেন। বাড়ি গিয়ে বউয়ের সঙ্গে মজা লুটুক। এ দিকটা তিনি একাই সামলে দিতে পারবেন। কেবল চূড়ান্ত সময়ে ওকে ডাকলেই হবে। তাকে চমকে দেয়াও যাবে। এই বয়েসের ছেলেমেয়েরা চমকাতে বেশ পছন্দ করে।
চলবে