আবু তাহের সরফরাজের প্রবন্ধ ‘জীবদেহের তাপমাত্রা’

প্রকাশিত : মার্চ ০৭, ২০২৪

বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার কমবেশির সাথে জীবদেহের তাপামাত্রা কমবেশি হয়। এই পরিবর্তন অনুযায়ী জীবদেরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এক শ্রেণির জীবের শারীরিক তাপমাত্রা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হয় না। সবসময়ই তাদের শারীরিক তাপমাত্রা সমান থাকে। এদেরকে উষ্ণ রক্তের জীব বলে। মানুষ, পাখি ও চার পেয়ে জন্তুসহ সকল মেরুদণ্ডী জীব এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। আরেক শ্রেণির জীবের শারীরিক তাপমাত্রা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হয়। মাছ ও অমেরুদণ্ডী জীব এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এদেরকে শীতল রক্তের জীব বলে। এক শ্রেণির জীবের রক্ত উষ্ণ আরেক শ্রেণির জীবের রক্ত শীতল, বিষয়টি কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত নয়। দুই শ্রেণির জীবের মধ্যে কেবলমাত্র পার্থক্য করতেই এই ভাগ করা হয়েছে। উষ্ণ রক্তের জীবদের শারীরিক তাপমাত্রা কী গ্রীষ্ম কী শীত, সব ঋতুতেই এবং কী শীত প্রধান মেরু প্রদেশ কী গ্রীষ্ম প্রধান আফ্রিকা— সবখানেই একই রকম থাকে। কিন্তু শীতল রক্তের জীবদের শারীরিক তাপমাত্রা শীতকালে কমে যায় এবং গ্রীষ্মকালে বেড়ে যায়। উষ্ণ তাপমাত্রার জীবদের শারীরিক তাপমাত্রা একেক অবস্থায় একেক রকম হয়। কিন্তু এই পার্থক্যের পরিমাণ খুবই কম। বয়স কিংবা সুস্থতা ও অসুস্থতা অনুযায়ী শারীরিক তাপমাত্রা কমবেশি হয়। যৌবনের শারীরিক তাপমাত্রা শৈশব ও বুড়ো বয়সের তাপমাত্রা থেকে বেশি হয়ে থাকে। খাবরের কারণেও শারীরিক তাপমাত্রা কমবেশি হয়। ডিম ও মাংস জাতীয় তাপসম্পন্ন খাবার খায় তাদের শারীরিক তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে সানাম্য বেশি হয়। শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমে কিংবা কোনো কারণে পেশী সঙ্কুচিত হলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়।

সুস্থ অবস্থায় মানুষের দেহের সাধারণ তাপমাত্রা ৯৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জীবিত মানুষের দেহের তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কম কিংবা ১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হতে পারে না। এ কারণে ডাক্তারি থার্মোমিটার দিয়ে মানবদেহের সুস্থ ও অসুস্থ অবস্থা পরিমাপ করা যায় সহজেই। কলেরা রোগীর শারীরিক তাপমাত্রা স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে কম। জ্বরে শারীরিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়। মানুষের শরীরে এমন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হয় যে, ভাবলে অবাক হয়ে যেতে হয়। শরীরের সকল স্থানে সকল সময়ে উপযুক্ত পরিমাণে তাপ সঞ্চালিত হচ্ছে। শরীরের যেসব স্থানে বেশি তাপ খরচ হচ্ছে সেসব স্থানে বেশি পরিমাণে তাপ সঞ্চালিত হচ্ছে। আবার, শরীরের যেসব স্থানে কম তাপ খরচ হচ্ছে সেসব স্থানে কম পরিমাণে তাপ সঞ্চালিত হচ্ছে। এ কারণে উষ্ণ রক্তের জীবেরা যে কোনো সময়ে যে কোনো স্থানে যেতে-আসতে পারে। তবে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা খুব বেশি পরিবর্তন হলে বেঁচে থাকা খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে। তাপমাত্রা সঞ্চরণ প্রণালির কোনো ব্যতিক্রম হলে শারীরিক তাপ সমানভাবে থাকে না। কাজেই তখন হাজার চেষ্টা করলেও তাপের কমবেশি সমস্যা দূর করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। শরীরের অভ্যন্তরে রাসায়নিক ও যান্ত্রিক ক্রিয়াই আমাদের শারীরিক তাপ উৎপন্ন করে। যে খাবারে তাপ বেশি সে খাবার খেলে শরীরে তাপ উৎপন্ন হয়।

মানুষসহ যে কোনো জীবদেহের পুষ্টি ও বেড়ে ওঠার জন্য দরকার খাদ্যের। খাদ্য খাওয়ার মূল উদ্দেশ্য কার্বন সংগ্রহ করা। মানুষ খাদ্য পায় কোথা থেকে? গাছপালা থেকে। গাছপালা শেকড় দিয়ে মাটি থেকে পানি, সূর্য থেকে তাপ এবং বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিয়ে নিজের জন্য খাবার তৈরি করে। পাতা হচ্ছে গাছের রান্নাঘর। এ খাবার খেয়েই বেড়ে ওঠে গাছপালা। তার দেহের পুষ্টি হয়। গাছপালা থেকে পাওয়া ফলমূল ও লতাপাতা খেয়ে মানুষ ও আরসব প্রাণী জীবনধারণ করে। আবার, এক প্রাণী আরেক প্রাণীর খাবার। আমরা জানি, দুধ খুবই পুষ্টিকর খাবার। মানুষের দেহ গঠনে যাকিছু দরকার, তার সব পুষ্টিগুণ দুধে রয়েছে। গরু-ছাগল থেকে আমরা দুধ ছাড়াও মাংস পাই। গরু-ছাগল ঘাস ও লতাপাতা খেয়ে জীবনধারণ করে। প্রাণীর মৃতদেহ খেয়ে আবার এক শ্রেণির ক্ষুদ্র উদ্ভিদ জীবনধারণ করে। এদেরকে মৃতভোজি ছত্রাক বলে। প্রাণীর মৃতদেহ মাটিতে পচে তৈরি হয় নানা রকম জৈব পদার্থ। এ পদার্থ খেয়ে জীবনধারণ করে কেঁচো। গাছের মৃতদেহ কাঠ খেয়ে জীবনধারণ করে ঘুণপোকা। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য যে কার্বনের প্রয়োজন তা খাদ্যের মাধ্যমে সূর্য থেকে গাছপালায় এবং গাছপালা থেকে প্রাণীর ভেতর বয়ে যাচ্ছে।

মানুষ গরু-ছাগল থেকে মাংস ও দুধ খাচ্ছে, গরু-ছাগল ঘাস ও লতাপাতা খাচ্ছে, আর ঘাস ও আরসব গাছপালা পানি, সূর্যের তাপ ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড একসঙ্গে করে খাবার তৈরি করে খাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, জীবজগতের খাবার তৈরির একেবারে শেষধাপে রয়েছে তিনটি পদার্থ। পানি, সূর্যের তাপ ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড। দুটো হাইড্রোজেন পরমাণু ও একটি অক্সিজেন পরমাণু একসঙ্গে মিলিত হয়ে তৈরি হয় পানির একটি অণু। আর, একটি কার্বন পরমাণু ও দুটো অক্সিজেন পরমাণু একসঙ্গে মিলিত হয়ে তৈরি হয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড। একইভাবে, সূর্যের তাপও কতগুলো মৌলিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। দেখা যাচ্ছে, খাদ্যচক্র আসলে সবসময় মানুষের শরীরে দরকারি তাপ সঞ্চালিত করছে। এই তাপ রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন স্থানে সবসময় পরিমাণ মতো সঞ্চালিত হচ্ছে। শরীরের সকল গ্রন্থি নিজ নিজ কাজ করার সময় তাপ উৎপাদন করে থাকে। মাংষপেশীর সঙ্কোচনেও তাপ উৎপাদন হয়। যকৃতে রাসায়নিক যে ক্রিয়া সংঘটিত হয় তাতে সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপন্ন হয়। নাড়ির ভেতর দিয়ে যখন রক্ত প্রবাহিত হয় তখন রক্ত ও নাড়ির ঘর্ষণেও সামান্য তাপ উৎপাদিত হয়।

ফরাসি রসায়নবিদ অঁতোয়ান লাভোয়াজিয়ে বলেছেন, শারীরিক তাপ উৎপত্তি হয় ফুসফুস থেকে। তার এ কথার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। আসলে যকৃতই হচ্ছে মানবদেহের রসায়নের গবেষণাগার। যকৃত অক্সিজেন শোষণ করে। আবার, এই যকৃতের রাসায়নিক ক্রিয়াতে শোষিত অক্সিজেন খাবারের সংস্পর্শে এসে খরচ হয়। এসময় যকৃত অক্সিজেনকে মর্দন করে। যকৃত থেকে পিত্তরস নিঃসৃত হয়, যা খাদ্য পরিমাপের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এছাড়া যকৃতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়।

নির্দিষ্ট কোনো স্থান থেকে উৎপন্ন হলেও শারীরিক তাপ সমস্ত শরীরে সবসময়েই সঞ্চালিত হয়ে থাকে। কোনো কারণে শরীরের কোনো স্থানের তাপ দ্রুত খরচ হয়ে গেলে আরেক স্থান থেকে তাপ এসে সেখানে সঞ্চালিত হয়। শীতপ্রধান দেশে যারা বাস করে তাদের শারীরিক তাপ বিকিরণ ও পরিচলনে বেশি পরিমাণে ব্যয় হয়। কারণ, চারপাশের বায়ুর তাপের পরিমাণ শারীরিক তাপের চেয়ে খুবই কম। যে পদ্ধতিতে তাপ তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের আকারে উষ্ণ বস্তু থেকে শীতল বস্তুতে সঞ্চালিত হয় সেই পদ্ধতিতে বিকিরণ বলে। আবার, যে পদ্ধতিতে তাপ কোনো পদার্থের অণুগুলোর চলাচলের দ্বারা উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে সঞ্চালিত হয় সেই পদ্ধতিকে পরিচলন বলে। সুতরাং, যেসব খাবারে বেশি তাপ রয়েছে সেসব খাবার প্রচুর পরিমাণে খেতে হয় শীতপ্রধান দেশের লোকজনকে। যেমন: চর্বি, তেল ও ঘি। তাদের পক্ষে ব্যায়াম খুবই জরুরি।

নানা উপায়ে শরীরের তাপ কমতে পারে। শারীরিক তাপের কিছু অংশ শরীরের ভেতরকার বায়ু ও খাওয়া খাবারকে উত্তপ্ত রাখতে খরচ হয়। আবার কিছু অংশ খরচ হয় রক্ত সঞ্চালনসহ নানা রকম শারীরিক ক্রিয়া সম্পাদন করতে। এছাড়া বিকিরণ, সঞ্চালন, বহন ও বাষ্পীকরণে শারীরিক তাপের কিছু অংশ খরচ হয়। যেসব শীতল খাদ্য ও পানীয় আমরা খাই সেসব খাবারকে উত্তপ্ত করতে তাপের দরকার হয়। গ্রন্থিগুলো থেকে জল নিঃসৃত হয়ে থাকে। এই জলকে বাষ্পে রূপান্তরিত করতে প্রচুর পরিমাপে তাপ খরচ হয়। নিশ্বাসের সাথে আমরা যে শীতল বায়ু গ্রহণ করি সেই বায়ুকে উত্তপ্ত করতেও তাপের দরকার হয়। ফুসফুস থেকে যে জল বাষ্প আকারে প্রশ্বাসের সাথে বের হয়ে যায় সেই জলকে উত্তপ্ত করতে সবচেয়ে বেশি তাপ খরচ হয়। খালি গায়ে থাকলে অপেক্ষাকৃত শীতল বায়ুর স্পর্শে গায়ের চামড়া শীতল হয়। কিন্তু শীতল হওয়ার আগেই শরীরের নানা স্থান থেকে তাপ এসে গায়ের চামড়ায় সঞ্চালিত হয়। মলমূত্রের সাথে কিছুটা তাপ জীবের শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

শারীরিক তাপ বেড়ে গেলে গায়ের চামড়ার কৈশিকনালিগুলো শীতল হয়ে পড়ে। ফসে চামড়ায় রক্ত সঞ্চালন বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। সঞ্চালিত এই রক্তপ্রবাহ উষ্ণ। গায়ের চামড়ার তুলনামূলক শীতল অংশে সঞ্চালিত হয়ে উষ্ণ রক্ত শীতল হয়। এইভাবে শারীরিক তাপের বেশিরভাগই প্রতিমুহূর্তে খরচ হয়ে যাচ্ছে। আবার, শারীরিক তাপ বাড়ার সময় শরীরের ভেতর তাপ উৎপাদন কিছুর দরকার হয় না। কারণ, সে সময় খিদে পেলেও কোনো কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। শারীরিক তাপ বেড়ে গেলে শ্বাস-প্রশ্বাস অত্যন্ত দ্রুত হয়, এবং ফুসফুসে বেশি পরিমাণে শীতল বায়ু ঢুকে শারীরিক তাপের বেশিরভাগ শোষণ করে তাপ কমিয়ে ফেলে। রক্তের জলভাগকে বাষ্পে পরিণত করতে তাপের বেশ খানিকটা অংশ খরচ হয়। শারীরিক তাপ কমে গেলে চামড়ার ভেতর থাকা কৈশিকনালি সঙ্কুচিত হয়ে যায়। এজন্য রক্তের প্রবাহ কমে যায়। শারীরিক তাপ খুব বেশি পরিমাণে বিকিরিত হতে পারে না। এ অবস্থায় খুব বেশি খিদে পায়। আর বেশি খাবারের দরকার হয়। পাকস্থলিতে পৌঁছে খাবার রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত হয়। একটা পর্যায়ে এই রাসায়নিক শক্তি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সুতরাং, শারীরিক তাপ আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে।

এসব ক্রিয়া জীবদেহের ভেতর সবসময়ই কার্যকর রয়েছে। এটা ছাড়াও আরেক উপায়ে শারীরিক তাপ স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা যায়। শীতকালে আমারা মোটা পোশাক পরি। আবার, গ্রীষ্মকালে পাতলা পোশাক পরি। এসব পোশাক শারীরিক তাপ বিকিরণ ও রক্ষণে সহায়তা করে। শীতকালে আমরা মোটা ও পুরু পোশাক পরি। এর ফলে শারীরিক তাপ বাইরে নির্গত হতে পারে না। আবার বাইরের মানে সূর্যের তাপ গায়ের পোশাক শোষণ করে আমাদের গায়ের চামড়া উত্তপ্ত করে। শীতকালে আমরা যেসব পোশাক পরি তার বেশিরভাগই সাধারণত কালো বর্ণের হয়ে থাকে। কারণ, কালো বর্ণের পদার্থের ওপর যে তাপরশ্মি পতিত হয় সেই তাপ প্রতিফলিত না হয়ে তার বেশিরভাগই পোশাকের কালোবর্ণ দ্বারা শোষিত হয়। আবার, গ্রীষ্মকালে আমরা যেসব পোশাক পরি সেসব পোশাক সাধারণত পাতলা ও শাদা বর্ণের। শাদা বর্ণের পোশাক থেকে বাইরের মানে সূর্যের তাপ বেশিরভাগই প্রতিফলিত হয়ে যায়। কারণ, সূর্যের খুবই কম তাপ শাদা বর্ণ শোষণ করে। অল্প পরিমাণে যে তাপ শাদা বর্ণ শোষণ করে তার বেশিরভাগই আবার বিকিরণ ও পরিবহনের মাধ্যমে খরচ হয়ে যায়।

শারীরিক তাপ স্বাভাবিক রাখতে আহার ও অঙ্গ সঞ্চালন প্রধান উপায়। যেসব খাবার আমরা খাই সেসব খাবারের তাপশক্তি রক্তের অক্সিজেনের মিলনে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। শারীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়ায় সেই রাসায়নিক শক্তি আবার তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই তাপ শরীরের নানা স্থানে সঞ্চালিত হয়। কোনো কারণে শরীরের কোনো স্থানের তাপ বেশি খরচ হয়ে গেলে খুব দ্রুত শরীরের আরেক স্থান থেকে সেই স্থানে তাপ সঞ্চালিত হয়ে ঘাটতি পূরণ করে দেয়। এইভাবে জীবের শারীরিক তাপের স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় থাকে।

লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক ও বিজ্ঞান লেখক