আবু তাহের সরফরাজের বাছাই ২৫ কবিতা

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৪, ২০২৪

এ পর্যন্ত যতগুলো কবিতা লিখেছি, তার সবই কি শিল্প হয়ে উঠতে পেরেছে? আমি তা জানি না। কী কী শর্ত পূরণ হলে কবিতা শিল্প হয়ে ওঠে, তাও জানি না। তবে জীবনযাপনের বিশেষ কোনো মুহূর্তে ঘোরের ভেতর থেকে লিখে ফেলেছি অনেকগুলো কবিতা। সেখান থেকে বাছাই করে পঁচিশটা বের করা বেশ মুশকিল। তবু চেষ্টা করেছি। পাঠকের ভালো লাগলে আমি খুশি। আ. তা. স.

দুই পথিক

দুই পথিক চলেছেন রাস্তা দিয়ে, খা খা দুপুর
ঝলমলে রোদ আর ছায়ার মধ্যে দিয়ে চলে গেছে রাস্তা, যেন
তারা হাঁটছেন আর তাদের পায়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছে রাস্তা
আর দুই পথিক হারিয়ে ফেলছেন পেছনের পথ

যেন তারা পর্যটক
তাদের ঝুলি ভরে ওঠে জগতের টুকিটাকি দিয়ে
যেতে যেতে তারা ক্লান্ত হয়, বসে
গোধূলি-নদীর তীরে

তারপর তাদের ঘুম পায়, তবে তারা উঠে পড়ে নদী পেরোবে বলে
দুই পথিক সাঁতরে নদী পেরোতে থাকে
তবে একজন ডুবতে থাকে
তার ঝুলিতে জগতের এত ভার যে, সে ডুবতে থাকে
আরেক পথিক দিব্যি সাঁতরে যেতে থাকে, কেননা

পৃথিবীর কিছুই সে জমা করেনি, তার
অস্তিত্বের অনুভূতি ছাড়া।

প্রতিটি জ্ঞানই এক একটি বিভ্রান্তি

প্রতিটি জ্ঞানই এক একটি বিভ্রান্তি
কেননা তা জগৎ ও মানুষের নিজের বিষয়ে
অনেক মত আর চোরাগোপ্তা নানা পথ তৈরি করে
তারমানে, যত জ্ঞান তত গোলোকধাঁধা  
আজ পর্যন্ত বিশেষ কোনো মতে একপথে পৃথিবীর সব মানুষ হাঁটেনি
হাঁটলে পৃথিবীর আরেকদিক হেলে পড়ত
আর তাই
জগতে চূড়ান্ত কথা কিছু নেই
জ্ঞান মানুষকে গোলোকধাঁধায় ঘুরিয়ে শেষপর্যন্ত
এই একই সত্য প্রকাশ করে, যেন সাইনবোর্ড
‘প্রতিটি জ্ঞানই এক একটি বিভ্রান্তি’

জীবন ও জগতের দিকে সহজ চোখে তাকাও
যা দেখছ, তা এমনই
যা দেখছ না, তা তুমি
তোমার ভেতরই অদৃশ্য সেই দৃশ্যের জগৎ

অদৃশ্য এ জগৎ জগতের সব মানুষের ভেতরই আছে
তবে আলাদা আলাদা, কেননা
জগতে যত মানুষ তত চিন্তা

সুতরাং জীবন সহজ
জীবনের দিকে সহজ চোখে তাকাও।

চলো, মানুষের মতো খেলাধুলা করি

পাথর ভেঙে গড়িয়ে দিচ্ছ
ওপর থেকে নিচে গড়িয়ে পড়ছে পাথর
তুমিই আবার নিচের থেকে গড়িয়ে দিচ্ছ
নিচের থেকে গড়িয়ে পড়ছে পাথর

তুলে নিচ্ছি আমি। তুমি হাসছ আর গড়িয়ে দিচ্ছ পাথর...
এই খেলা জনে জনে রটে গেল ভবে
ফলে মানুষ শিখে গেল আমাদের কৃৎকৌশল
তারা এখন পাথর গড়িয়ে দিচ্ছে
তারা এখন পাথর কুড়িয়ে নিচ্ছে
তারা শুধু জানলো না হাসির রহস্য, চলো

আমরা এবার পাথরভাঙার কাজ করি
দু’চারটে পাহাড় ভাঙি, এরপর  
সিসিফাসের সাথে এসো লেগে যাই অর্থহীন কাজে
এদিকের পাথর ঠেলতে ঠেলতে ওদিকে নেই
ওদিকের পাথর ঠেলতে ঠেলতে এদিকে নেই

এই খেলাও বেশ প্রাচীন
হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ খেলে আসছে
ব্যক্তিজীবন খেলছে সমাজজীবনে
সমাজজীবন খেলছে রাষ্ট্রীয় জীবনে

চলো, মানুষের মতো তাই আমরাও খেলাধুলা করি।

ঘটনা

বিদ্যুচ্চমকের মতো ঘটে গেল ঘটনা

বিদ্যুৎ একপ্রকার শক্তি
ঘটনাও একপ্রকার শক্তি
ঘটে শক্তির বিস্ফোরণ

সুতরাং ঘটনা যে বহন করে
সে আর
আগের মানুষ থাকে না

প্রতিটি ঘটনা একই মানুষকে
বারবার হত্যা করে
বারবার জীবিত করে।

পৃথিবীর সংসারে

পৃথিবীর সংসারে বেঁচে থাকার জন্য এক প্রাণী আরেক প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল
কেননা, খাবার ছাড়া কোনো প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না
                     তাই এক প্রাণী আরেক প্রাণীর খাবার

আবার, এক প্রাণী আরেক প্রাণীর প্রাণ সংহার করে খাবারের উদ্দেশ্য ছাড়াই
কারণ, তার আশঙ্কা রয়েছে আক্রমণ সে না করলেও ওই প্রাণী
                                            তাকে আক্রমণ করবে
একটি সাপ যদি একটি মানুষকে আক্রমণ না করে তবে
মানুষ সাপটাকে আক্রমণ করবে

পৃথিবীর সংসারে মানুষ মানুষকে খুন করে
এরকম অনেক প্রাণী করে
বেঁচে থাকার জন্য খাবারের মতো জীবনের কোনো না কোনো
চাহিদা পূরণের জন্য তা করে
                     মানুষের সংসারে যেরকম,
স্বামী হত্যা করে স্ত্রীকে                 স্ত্রী হত্যা করে স্বামীকে
বাবা হত্যা করে ছেলেকে              ভাই হত্যা করে ভাইকে।

মানুষ আসলে কে কাকে বোঝে

শোন, শোন ছায়াবীথি, কী এক পাখি ডাকছে। কী যেন বলছে, নারে?
মাথা নেড়ে ছায়াবীথি বলল, আমি যে বুঝি না বাবা। কী বলে ওরা?
থমকে যাই। ভাবি। সত্যিই তো, ছায়াবীথি বলবে কী করে তা
আর আমিও কী তা জানি?
ভাবলাম। এরপর ওকে বললাম, এই যে পৃথিবী
                                     একটি সংসার
যেরকম আমি তুমি আর তোমার আম্মু একটা সংসার
এই রকম, পৃথিবীর সংসারে কত কত প্রাণী
এই যে পাখি এই যে কুকুর এই যে বেড়াল
একই সংসারে থেকে এক প্রাণী আরেক প্রাণীর ভাষা বুঝতে পারে না
পাখির ভাষা তুমি বোঝো না, আমিও বুঝি না
কুকুর ডেকে ওঠে, সেই ডাক, তাও বুঝি না
মিঁউ মিঁউ বেড়াল ডেকে ওঠে
কী বলতে চায়, বুঝি না
পৃথিবীর সব মানুষের ভাষাই যে মানুষ বুঝতে পারে, তাও না

কত কত ভাষা
কত কত ভাষা আবার বিলুপ্ত হয়ে গেছে
এক ভাষার মানুষ আরেক ভাষার মানুষের কথা বুঝতে পারে না
যেরকম মানুষ বুঝতে পারে না বেড়ালের ডাক

ছায়াবীথি চেয়ে রইল আমার মুখের দিকে। বুঝতে পারলাম, আমি যা বলছি
আমার ছোট্ট মেয়ে তা বুঝতে পারছে না
আমার ভাষা ছায়াবীথি বোঝে না

মানুষ আসলে কে কাকে বোঝে?

নেগেটিভ পজেটিভ

বৈদ্যুতিক তারের দুটো শক্তিপ্রবাহ
একটি নেগেটিভ
আরেকটি পজেটিভ
পৃথিবীতে প্রতিটি বস্তুরই এরকম দুটো শক্তিপ্রবাহ
মানুষেরও
একটি শক্তি দুঃখ থেকে প্রবাহিত
আরেকটি আনন্দ থেকে

দুঃখ থেকে পরিত্রাণ পেতে কেউ কেউ
আত্মাকে সংযমী করে তোলে
নিষ্কাম সাধনার গূঢ়মন্ত্রে সে দীক্ষিত
পরমের সন্ধানে আনন্দ খোঁজে, যা অজ্ঞেয়
অথচ মানুষের জীবন সুখ আর দুঃখ দুটো শক্তির আয়োজন
কেউ কি এরকম আছে যে, তীব্র আনন্দের মুহূর্তে
তীব্র দুঃখ খোঁজে আনন্দ থেকে পরিত্রাণ পেতে?

পৃথিবীতে জীবনের মানে হচ্ছে,
হাসতে হাসতে রক্তাক্ত হও
রক্তাক্ত হতে হতে হাসতো থাকো।

ইসকুল

পৃথিবী একটি ইসকুল
খোলা মন নিয়ে চুপচাপ এসে বোস তো ছায়াবীথি, ধর
তুই ইসকুলে পড়তে গেছিস
তোর সহপাঠী কোনও মানুষ নেই
তাই বিভ্রান্তিও নেই

তোর চারপাশে ঘাসফুল লতাপাতা পাখি
নদী, আর তার ওপর গোধূলিরাঙা বাঁশের সাঁকো

যেহেতু বিভ্রান্তি নেই
সেহেতু তুই কাগজের শাদা পাতা
প্রকৃতি তার ওপর লিখে দিচ্ছে তার পাঠ

এইভাবে যে জ্ঞান তুই পাবি
তা প্রাকৃতিক জ্ঞান
এ জ্ঞানই পরম।

বেগ

হাগু পেলে মানুষ চটপট তা সেরে নেয়
বেশিক্ষণ চেপে রাখতে পারে না
আর যদি চেপে সে রাখে তবে তার মলাশয় বিস্ফোরিত হবে
তাই বেঁচে থাকতে গেলে মানুষকে হাগতেই হয়

প্রতিমুহূর্তে মানুষের বোধের জগতে কত কত রঙছবি কত কলস্বর
স্মৃতির কুয়াশার মতো জড়িয়ে যাচ্ছে
স্মৃতি-বিস্মৃতির এইসব ছবি আর অচেনা গ্রহ থেকে
ভেসে আসা অস্ফুট স্বর
কেঁপে ওঠে থরো থর...

তারা প্রকাশ চায়
বেরিয়ে আসতে চায় ইথারলোকে
অনন্তে মিশে যেতে চায় মানুষের জগৎ দেখার অনুভূতি
বেগ তৈরি হয় বোধের জগতে, আর মানুষ
বাধ্য হয় বোধের প্রকাশ ঘটাতে
প্রকাশ ঘটে গেলে মানুষ আরাম পায়
নির্ভার লাগে নিজেকে তখন তার

মানুষের বোধ যা হেগে দেয় জগৎ-সংসারে তা শিল্প
জগতে শিল্পের প্রতিষ্ঠান আছে, আছেন অধ্যাপক
আছে সুবিধেবাদী সামাজিক মানুষ
বোধের গু নিয়ে তারা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে
নানা কথাটথাও বলে মোটা মোটা বইতে
আলোচনা সভায়

এদিকে হেগেটেগে আমাদের শিল্পীবাবু
একা একা হাসছেন জগতের দিকে চেয়ে।

কলম

সৃষ্টিজগতের প্রথম সৃষ্টি কলম
কার্যত সে ছিল নিঃসঙ্গ, আর তাই
একা একা অনন্তের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি শুনে যেত

হঠাৎ নির্দেশ এলো, লেখো
সাড়া এলো কলমের দেহে
সে তবে নিরালম্ব নয়, আরও কেউ আছে
সে শুধু প্রকাশের বাহন
আর তাই কলম লিখতে শুরু করল

যা লেখে, তা আত্মলিপি
কিন্তু কার?
কলম তা জানে না
তবে সে লিখতে থাকে
যেন সে, সে নয়, আর কেউ

লিখতে লিখতে কলম দ্যাখে,
সে যেখান থেকে শুরু করেছিল
আবার সেখানেই ফিরে এসেছে
কলম আবারো একা হয়ে গেল
আর নিঃসঙ্গ, অনন্ত শূন্যতায় একা থেকে আরো একা

তারপর সৃষ্টি হলো প্রাণ
তারপর আর আর সব
বস্তুত সৃষ্টিজগৎ আদি-অনন্ত বিস্তৃত নাট্যমঞ্চ
যার প্রতিটি চরিত্র আগে থেকেই লিখিত।

দুই মানুষ

দুই মানুষের হাঁটাচলা
আগুন এবং শিল্পকলা
দুই মানুষের ঘর
কাঁপতেছে থত্থর।

এক মানুষের ইচ্ছেগুলো
পথের বারুদ পথের ধুলো
আরেক কণ্ঠস্বর
তবু, মাথার ওপর ঝড়।

আরেক মানুষ শস্যমোদির
গেরস্ত সে, হয় না অধীর
তৈরি করে ঘর
তবু, ভাঙে তাহার পর।

দুই মানুষের পরম্পরা
শরীর ভেঙে শরীর গড়া
শিল্পিত সুন্দর
তবু, দ্বন্দ্ব পরস্পর।

দম্পতি

আহত ব্যাকুল নক্ষত্রেরা
ঘুম ছড়িয়ে দিচ্ছে
টগর-নোলক দম্পতি এক
তাই কুড়িয়ে নিচ্ছে।

ঘুম কুড়ানো মহৎ রীতি
ঘুমেই তো আশ্রয়
একজীবনে বয়েস কিছু
হয় যদি সাশ্রয়।

জঙ্ঘমে আর ঘামের দেহে
দাঁড়াচ্ছে ওই নারী
খুলতে হবে খেতের বেড়া
ফসল তোলা গাড়ি।

ঘরের ভেতর উঁইয়ের ঢিবি
খেতে এবার খরা
নারী হচ্ছে প্রশ্নবোধক
যায় না তাকে পড়া।

ঘুম ছড়ানো মাঠের ওপর
ঘুমোচ্ছে দম্পতি
শরীর জেগে আছে তবু
নেই কারও সঙ্গতি।

ঘর ভাঙে না, মানুষ ভাঙে
ভাঙাই সহজ রীতি
ঘুম কুড়োতে মাঠে এসে
কুড়োয় তারা স্মৃতি।

নীলিমা খাতুন

এক.
নীলিমা খাতুন ছুরি শানাচ্ছে              খুন হতে হবে এবার
রক্তের কোষে মেধা আর বোধে          ঢেউ তুলবে না সে আর।
খড়কুটো কিছু ঠোঁটে তুলে এনে          তৈরি করেছি ঘর
শানিত ছুরির অগ্নিচ্ছটায়                  পুড়তেছে সেই খড়।
নীলিমা খাতুন আদিমতা বোঝে          নীলিমা খাতুন ভালো
আড়াল থাকে না খুনের দৃশ্যে            পরদা হলেও কালো।

নীলিমা খাতুন বস্তুত বিবি হাওয়া
          গন্ধম তার শেষ হয়ে গেছে খাওয়া
                    আদমের প্রাণ তাই তার হাতে
                              থত্থর কাঁপে কুয়াশার রাতে...
                                             নীলিমা খাতুন কুয়াশার নিচে
                    ছুরিতে দিচ্ছে শান
          আর আমি ভয়ে, আর শীৎকারে
ডেকে উঠি, বিবিজান।

দুই.
নীলিমা খাতুন কে, বলতেছি শোনো
         আসলে তাহার রূপে দেহ নেই কোনো।
                  এই কথা লিখলাম, এরপর দেখি,
                            কহলিল জিবরান হাসতেছে, একি!
                                      বলতেছে বিড়বিড়, শোনো হে প্রেমিক
                                      কিছুই নও তুমি বোধের অধিক।
                            পুরুষের বোধে থাকে তার দুই প্রেমিকা
                   এক তার কল্পনা, আর শ্রী রাধিকা।
        রাধিকা আছেন কোনো অচেনা জগতে
এই ভবে তাকে আর পাবে কী নগদে!

নিষিদ্ধ ফল

সুন্দর নাকি আদিপাপ প্রভু?                বহন করে যা দেহ
গন্ধম ফল কার্যত জ্ঞান            শুরু হলো সন্দেহ।
দেহে দেহে তাই কাঁপুনি ছড়ায়      বস্তুত বিদ্যুৎ
সুন্দর যেন দেহের তন্তু                      কেঁপে ওঠে অদ্ভুত।
ধকধক করে হৃদের পিণ্ড                      কাঁপে দেহ জলাশয়
গন্ধম খেয়ে ফেলেছিস বলে      জীবদেহ পরিচয়।
তাড়না তো কাঁপে গন্ধম খাবে      রজঃনিসৃত খুন
শীৎকারে তাই চেটে চেটে খায়      মন্থনজাত নুন।
দুধে আলতায় দেহ খোলতায়      ভেতরে মুগ্ধ নদী
তীব্র জোয়ারে ভেঙে পড়ে ঢেউ      জৈব তাড়নার গতি।
আবার ভাটায় ঢেউ নেমে যায়      দেহে আসে স্থিতি
ঢেউহীন নদী বয়ে যেত যদি      তবে কারে কিস দিতি?
নদী যা শেখায় আদি সেই ভাষা      বিলুপ্ত আজ ভবে
পৃথিবীর নদী ভাষাহীন তাই       দেহ আজ ভাষা হবে।
      দেহ নিয়ে নদী
      নদী নিয়ে দেহ
      বারবার তবু
          কেন সন্দেহ?
নুনের পুতুল গলে যায় দেহে      লীন হয় শূককীট
সুন্দর যদি পাপ তবে প্রভু      দেহে কেন দিলে লিক?
      দণ্ড লইয়া দণ্ডিত কেন আদম?     
      গ্রহ থেকে গ্রহে শুনতেছি তাই মাতম
সুন্দর যা যা ইবলিস তা তা      সাজিয়ে-গুছিয়ে আরও
সুন্দর করে আদমের চোখে      কেন তা বলতে পারো?
ঘটনা তো আদি এবং অনাদি      বিভাজিত দুই কোষ
নিউট্রন আর প্রোটন মিলিলে        আর কারে দিই দোষ!

নীলিমার নাম কেন ফুল হয়ে ফোটে

বিষণ্ণ এই আমাদের নদী
     নামতেছে তাই সন্ধে
          গোধূলির মুখে বসেও বালিকা
               দুলতেছে এক দ্বন্দ্বে।
               চুম্বনে তার স্মৃতিরা উধাও
          কীরূপে এখন বাঁচে?
     রূপ তবু নেই প্রভু,
দেহ তো আছে!

দেহরূপে তাকে পেয়ে দুপুরের মাঠে
     মনরূপী নীলিমা একা একা হাঁটে।
          একা একা যায় সে, কই যায় রে?
               নদীতীরে সন্ধে, ঘুম নাইরে।
                    যেতে যেতে ঘরবাড়ি সবুজের গ্রাম
                         মুছে যায় সবকিছু, নীলিমার নাম
                    বিবিজান বিবিজান... ডেকে মওলানা
                    জালালউদ্দিন রুমি দেন রওয়ানা।

কোনো এক পাহাড়ের চুড়োয় উঠে
     নীলিমার নাম কেন ফুল হয়ে ফোটে?
          নামে ঘুম নাই বলে মওলানা নাচে
               আর বলে, সুন্দর এভাবেই বাঁচে।

হে ভণ্ড রে ভণ্ড

হে ভণ্ড রে ভণ্ড আমারই অণ্ডকোষ
আমারই অচেনা লাগে, তোমার কী আর দোষ!

তুমি তো ভবের মাঠে আমারই হে সাথে
চোখে চোখ রেখে হাত রেখেছিলে হাতে
কেঁপেছিল কাতরতা, বলেছিলে তুমি
পেরিয়ে এলাম নদী, আর নিম্নভূমি।

এরপর বলেছিলে হে ভণ্ড মোর,
আমি তো বসেই আছি
ফুটুক এবার ভোর।

ভোর হলো দোর খুলে এলে তাই তুমি
তোমাতেই লীন হয়ে চুমু খেলো রুমি।
রুমিকে চেনো তো হে, কবি মওলানা
চুপচাপ বসে কেন? কিছু কইলা না।

শেষমেষ কইলা দু’ করতল তুলে
মোনাজাত যেন তা, এই ভবকূলে।
সর্বসত্ত্ব দেহে সংরক্ষিত
থত্থর কেঁপে ওঠা ওম শান্তি তো।

হে ভণ্ড রে ভণ্ড কেন তবে আর
আরেক প্রেমিককে ভাগ দিস তার?
সে কী তোকে নদীতীরে
চুমু খেলো ধীরে ধীরে?

এই নদী ছিল তোর, আর শুধু আমার
গোধূলির রঙে আঁকা যৌথ খামার।

হে ভণ্ড রে ভণ্ড আমারই অণ্ডকোষ
সুন্দরে নত, এটি আমারই মুদ্রাদোষ।

প্রলুব্ধমোহন বাগচি

প্রলুব্ধমোহন বাগচি
আমি, তোমার ছবিই আঁকছি
জলরঙে ঝিমধরা আঁকছি দুপুর
মাঠ পাড়ি দিয়ে আমি গিয়েছি সুদূর

সুদূরের নীলরঙে নীলিমার দেহ
ছবি হয়ে দুলতেছে, তবু সন্দেহ
দেহ চিরে ভাগ করে, তবু হে আমি
চিরে যেতে চাই ওগো অন্তর্যামী।

চিরে যেতে, যেতে যেতে
কিছু তাকে বুঝে পেতে
ডেকে উঠি, ‘নীলিমা
চাঁদ কেন ওঠে রোজ
নেই তার কোনো খোঁজ
কত দূর দ্রাঘিমা?

কত দূর ছড়ানো তোমার মোহন?
টের কি পায় কেউ তোমার গহন?’
চোখে চোখ টেনে নেয়, মুগ্ধতা তবু
আমারেই কেন দিলে জগতের প্রভু?

চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন
নীলিমা খাতুন তবু কেন ডাকলেন?
আমি যে তাহার ডাকে ভ্যাবাচ্যাকা খাই
দেহ থেকে ছায়া খুলে ঘুরিয়া বেড়াই।

আমি যে ছায়ার মানুষ, সে তবে কার?
এই ভেদ বলো কেন বোঝা দরকার?

জানেমান

জানেমান জানেমান
শীতরাত কেঁপে ওঠে
কুয়াশার ভেজা ঠোঁটে
তাই দেখে থত্থর
কাঁপতেছে প্রাণ

জানেমান জানেমান
কুয়াশার ভাঁজে ভাঁজে
দেহ রেখে মাঝে মাঝে
বুক ভরে টেনে নিই
কুয়াশার ঘ্রাণ  

জানেমান জানেমান
দেহ থেকে উত্তাপ
ছড়াতেছে সন্তাপ
এইবার খোলো তবে
দেহের দোকান

জানেমান জানেমান
চাঁদ নাকি ঝলসানো?
খেতে চাই, নুন আনো
নুন দেখি দ্রবীভূত
কেন তা লোকান?

জানেমান জানেমান
ঘুম নেই, দেখে যান।

এই গান গান নয়

এই গান গান নয়, কান্না
এই কান শুনতে তা চান না।

এই সুর নীলিমার ঝরনা
এই ভূমি আমাদের ঘর না।

এই ছবি সূর্যের ক্যানভাস
মাঠঘাট পেরিয়ে কই যাস?

এই রঙ ভাষা পায়, তাই কি
ভাসা ভাসা ছবি আঁকে শিল্পী।

আমি তার নাম ধরে ডাকি
সে আমার বিবিজান নাকি?

এই তাই সন্দেহ ভবে
দেহ নিয়ে আর কী হবে!

এই দেহ দেহ নয়
বারুদের অগ্নি
আমি তার ভ্রাত হে
সে আমার ভগ্নি।

দেহ থেকে হাড় খুলে
কে বাজাও বাঁশি?
কোনো এক দূর গ্রহে
আমি বেঁচে আছি।

সেই সুর হৃদয়ের কান্না
যে শোনে, সে আমার কান না।

ফাঁদ

আকুলতাগুলি দিয়ে নির্মিত আমাদের এই সাঁকো
কাঁপতেছে খুব
               ভেঙে যেতে পারে
                                  তুমি ওপারেই থাকো।
হঠাৎ হাওয়া শিস দিয়ে ওঠে নিশ্বাসে কাঁপে বুক
শরীরে শরীর
              বুনোলতা যেন
                             যে যার মতো বাঁচুক।
এই সাঁকো দিয়ে চলে গেছে কেউ ফিরেও এসেছে আগে
ফিরে এলে বোঝে
                   চলে যেতে নেই
                                    ভালোবাসা কিছু লাগে।
আমাদের দুই শরীর গিয়েছে আলাদা আলাদা পথে
হারিয়ে ফেলেছি
                 শরীরের আলো
                                  যৌন আচার মতে।
আমাদের দুই প্রান্তে দুজন মাঝামাঝি এক সাঁকো
কাঁপতেছে আর
                আমরা কেবল
                               বলতেছি, দূরে থাকো।

ঠোঁট

ঠোঁটের দিকেই ঝোঁক
কাঁপতেছিল গভীরতর
অনূভূতির লোক।

ঠোঁটের নিচেই নদী
সাঁতার দিলে কার কী এমন
হতো বিশেষ ক্ষতি?

ঠোঁটের মাংস লাল
ডুব দিয়েছি দূর অতীতে
খ্রিস্টপূর্ব সাল।

টাটকা তবু স্মৃতি
শিউরে ওঠে অনুভূতি
দেহের যেমন রীতি।

ঠোঁটের লালায় ঠোঁট
ভিজতেছিল, আর তখনই
বুজতেছিলে চোখ।

আমারও চোখ বোজা
কী যেন এক সৌন্দর্যে
জীবন খুবই সোজা।

ভাবতেছি, আর ঠিক তখনই
ডাকলে কেন সাঁই?
ঠোঁটের ভেতর ঠোঁট রেখেছি
সুন্দর সে, তাই।

ধ্বংসের গান

লাল মোরগের কণ্ঠ চিরে           ফুটতেছে লাল ভোর
ডেকে হয়রান বধু হে পরাণ         রাত কেন ঘনঘোর?
জ্যোছনা গলে হতেছে তরল          দ্রবীভূত শীতরাত
হিমে ভিজে যায় সাপিনীর দেহ        প্রেমিকের দুই কাঁধ।
দুই কাঁধে দুই দেবদূত খাঁড়া          ঘুম তো আসে না ভবে
সাপিনীর দেহ চকচকে আর          পিচ্ছিল কেন হবে?
বিস্ময়ে দেখি, লাল বিছানায়         সাপিনীর গড়াগড়ি
শীতের শীৎকার শুনে আমি তার      বক্ষ চাপিয়া ধরি।
মুখ ঘষি তার শীতল ফণায়           চুমু খাই তার ঠোঁটে
বিড়বিড় করে বলি খুব প্রেমে,         গোলাপ কেন গো ফোটে?
আমাকে তুই গিলে ফ্যাল সখা          আরো লাল দে আমাকে
যত লাল আছে এই ভবদহে           সাঁইজি বাড়ির তামাকে।
জ্যোছনার রঙ হতেছে তরল           মাতাল তরণী বেয়ে
আসতেছে র‌্যাঁবো, সাপিনীর ফণা       ফোঁস ফোঁস আসে ধেয়ে।
রাতের পোশাক খুলে ফেলো হে          ন্যাংটো রাত্রি দেখি
লাল শরাবের নেশায় চড়ে             ধ্বংসের গান লেখি।
                শরাব দাও গো সাকি
                রাতের এখনো বাকি...

আমাকে তুই খেয়ে ফ্যাল

আমাকে তুই খেয়ে ফ্যাল রিপা     হজম করে নে পেটে
ভবে দিগদারি আলাঝালা লাগে     কী হবে হৃদয় ঘেটে?
হৃদয়ের খুব ভেতরে গোলাপ       ফুটে আছে নিশ্চুপ
দৃশ্যত সে অদৃশ্য আর            টকটকে লাল খুব।
আমি তো ফুলের ভেতর জন্ম      নিতে চাই এই ভবে
এই ফুল দিয়া প্রেমিক তোমার      নিকটবর্তী হবে।
রক্তকোরক হৃদয় ক্ষরিত          অন্তর্গত খুন
অস্ফুট স্বরে প্রার্থনা করো,        ইন্না... হি... রাজেউন!
আমি তো দেখে ফেলেছি সে লাল    মুগ্ধতা তাই ভবে
গোধূলিরাঙা নদীর তীরে          আমাদের দ্যাখা হবে।
আমাকে তুই মশলা মাখিয়ে        সুস্বাদু কর দেখি
এই রন্ধন শিল্পকাহিনি            পদ্য আকারে লেখি।
যত স্বাদ তোর জিহ্বায় আছে       চেখে দ্যাখ ভবে দেহ
কাঁটা চামচের কাঁটায় গেঁথে        খেতে থাক সন্দেহ।
আমার হাড়ের ভেতর দিয়া        প্রবাহিত মজ্জা
খেতে থাক বধু, কৃষ্ণপক্ষে         ঢাকা থাক লজ্জা।
কবরখানায় মাঝরাতে একা        জেগে ওঠে ছায়ানারী
হাতে তার হাড়, শিঙার মতো     ফুৎকার ওঠে তারই।
খুঁজে আনে সে নাভির অস্থি       চিতা যা করেনি দাহ
প্রাণের কেন্দ্র ভর করে বায়ু       অথচ তা হিমবাহ।
এই আস্বাদে রক্ত ফেনায়          ধোঁয়া কেন ওঠে বধু?
হাড়ের ভেতর মজ্জার স্রোত        চেটে দ্যাখ, পাবি মধু।
আমাকে তুই ভেজে ফ্যাল সখা     গরম তেলের কড়াইয়ে
তোর চোখে চোখ, চেয়ে আছি দ্যাখ  তেলের ভেতর গড়ায়ে।
আমাকে তুই এইভাবে বধু         রেঁধে ফ্যাল তাড়াতাড়ি
নীলিমা খাতুন হাসতেছে আর      পরতেছে শাদা শাড়ি।
শাড়ির ভেতর লুকনো অস্ত্র        বিষ মাখানো তাতে
এসব জেনেও ভয়ে শীৎকারে       হাত রাখি তার হাতে।
আমার হাতের নিচ দিয়া নদী      বয়ে যায়, আর দ্যাখো তুমি যদি
আমাকে তবে মশলা মাখিয়ে        খেয়ে ফ্যাল প্রিয়তমা
আমি তো শূন্য হৃদয় নিয়া         চাইতেছি ভবে ক্ষমা।
শূন্য হৃদয় মন্দিরে               মানুষ কেন বন্দি রে...!
মৃত্যুর মতো সত্যি      

মৃত্যু আমাকে ডেকে নেবে ভবে          অনিবার্য সে, তাই
তুমিও আমাকে ডাক দেবে ভেবে         কিছু আনন্দ পাই।
এই যে সত্যি নিয়া জীবপ্রাণ             ভবে ঘুরতেছে আবছায়া ম্লান
নানা রঙছবি এঁকে তুমি তার           এঁকে দাও তো, কিছু হাহাকার!

তুমি আর আমি পৃথিবীর ছাদে          গন্ধম খেয়ে পা দেব ফাঁদে
বিতাড়িত হবো গ্রহ থেকে গ্রহে          এইসব ছবি রেখো সংগ্রহে।
আমাকে বলো তো, তুমিও আমাকে      মৃত্যুর মতো ডাকবে
গাঢ় বেদনায় ফুটিবে হে ফল            জ্ঞানযোগ তাতে থাকবে।

ডাকবেই তুমি, নির্ধারিত হে            মৃত্যুর মতো সত্যি
অনিবার্য এই নিয়তির খাতা            শূন্যতা দিয়ে ভর্তি।
বলো তো নীলিমা, পৃথিবীর সীমা        কোথায় গিয়েছে ঠেকে?
তারও ওইপারে জগতের ছবি           দ্যাখাও তো কিছু এঁকে।

সংশয় নয়, শূন্যতা ভেঙে             ডেকে নাও বিবিজান
মৃত্যু যেমন ডাকবে হঠাৎ             দেহ ছেড়ে যাবে প্রাণ।
মৃত্যু যদিও অমোঘ রাত্রি              অসীমের গহ্বর
তবু তা সত্যি, তুমিও এমন           ডাকো তো জাতিস্মর।

ঘোর ঘোর চাঁদ, আর নিচে তুমি        অন্ধকারে একা
বলো তো নীলিমা, এই অনুভূতি        কার কলমের লেখা?
আমাকে বলো তো, আয়নার দেশে       আছেন কে জাদুকর
প্রতিদিন তার সাথে দ্যাখা হয়          পাশাপাশি কার ঘর?

সুন্দর থাকে গোপন গুহায়            সব মানুষের দেহে
যদি চিনে থাকো, অনিবার্য তা        বাধা দেবে আর কে হে?

মৃত্যু আমাকে ডেকে নেবে বুকে        তুমিও এমন হও
নিশ্চিত থাকি, তুমি ও মৃত্যু         আলাদা কিছুই নও।
আমি তোর ঘ্রাণে উন্মাদ হবো         হেঁটেই বেড়াবো ভবে
ডাক দিবি তুই, কথা দে, নইলে       উলটপালট হবে।

নিশ্চিত জানি, সাঁকোটা দুলছে       ওইপারে তুমি একা
সন্ধের ছায়া ঘনিয়ে এসেছে          আমাদের হলো দেখা।
ডেকেছি তো আমি চিৎকার করে     রক্তের ঢেউ তুলে
তুমি ডাকবে না? এই পৃথিবীর      দৃশ্যসকল ভুলে?

কেননা মৃত্যু অমোঘ সত্যি          এরপর সবই ধারণা
আমাকে তুমি ডেকে নাও প্রিয়,      ডাকতে কেন হে পারো না?
দুই হৃদয়ের মাঝখানে সাঁকো        পারাপার খুব সোজা
তবুও দুজন দুই পরপারে           বইছি দেহের বোঝা।

পেরিয়ে এসো তো সন্ধের নদী       রক্তগোধূলি রাঙা
তুমি আর আমি বস্তুত জল,       ছেড়ে দেব ভবে ডাঙা।

দুই.
আমাকে তুই ডেকেছিস কেন?      কিছু কি বলবি, যেন আর তেন?
এই যে যেমন, পাখিটার ঠোঁটে      কী ভাষায় তার যন্ত্রণা ফোটে।
কী কথা বাতাসে ছড়াতেছে প্রাণ    তুমি কি পাচ্ছ কথাদের ঘ্রাণ?
কথার পাহাড়ে জাদুকর থাকে      তার সাগরেদ পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে
ডানা ঝাপটায়, এইসব ছবি       লিখতেছি রে, খুবই আজগুবি
ছবির ধরণ, দুপুরের রোদ        হেঁটে হেঁটে এলো। এরকম বোধ
বলবি তো? নাকি দৃশ্যের গাঁয়ে     ঘরবাড়ি বেঁধে আর তরুছায়ে  
বাস করে যাবি, বল তো নীলিমা   বিকেলের রোদ কেন শ্যামলিমা?
আমাকে তুই ডেকেছিস কেন?      কিছু কি বলবি? সঙ্কেত যেন
তোকে ঘিরে থাকা দেহের ভাষা     এত প্রাঞ্জল কেন ভালোবাসা?

মানুষ বেঁচে থাকে

গোলগাল চাঁদ সাঁকোটা দুলছে তিরতির কাঁপে দেহ
দুই পারে দুই মানুষের ছায়া, দুলতেছে সন্দেহ।
ভেঙে যায় ছায়া দেহ খুলে তাই বেরিয়ে এসো হে প্রাণ
ধরো, চিৎকারে আর চিৎ করে নিতেছো চাঁদের ঘ্রাণ।

চাঁদের গর্ভে ফুটে থাকা ফুলবাগানের কাছাকাছি
আমাদের দেহ আর হৃদয়ের উত্তাপে বেঁচে আছি।
বেঁচে তো রয়েছি শ্বাস নেব বলে শাসিত দেহের বাইরে
গর্ভকেশর ছড়াতেছে রেণু প্রাণের ওপর তাইরে।

বেঁচে থাকা মানে স্মৃতি-বিস্মৃতি এক জীবনের ঘোর
পেরিয়ে এসেছি মৃত্যুর মতো দেহ গহ্বর তোর।
দেহের ভেতরে রাজহাঁস ডাকে উটের মতো গ্রীবা
বাড়িয়ে সে ডাকে, ‘গোধূলির নদী পেরিয়ে এসো হে রিপা।’

মুগ্ধতা নয়, আরও প্রগাঢ় প্রেমিকের অনুভূতি
ভেঙে পড়ে চাঁদ, থত্থর কাঁপে সাঁকোটার বাঁশখুঁটি।
দুই তীরে দুই দেহ নিয়ে কেন দাঁড়িয়েই আছি আমরা?
আমাদের খুব ভেতরে কাঁপুনি টানটান তবু চামড়া।
 
গোলগাল চাঁদ সাঁকোটা দুলছে, পেরোবে কীনা তা বলো
দুই হৃদয়ের মাঝে শূন্যতা ভরাট করি হে চলো।
কী কী সব যেন মায়া রহিয়াছে এই ভবদহে হায়
আমি তো আউট সাইডার হয়ে সাইডেই থেকে যাই।

অথচ আপাত দৃশ্যে মানুষ বেঁচে তো থাকেই ভবে
দেহ আর ছায়া একাকার হোক, কবে যেন তা হবে?

আমার মৃত্যু

রাত্রি তোমার নিকষ কালো অন্ধকারের থাবা
ভয় করি না, আমার বুকে সুরক্ষিত কাবা।

ইটের ওপর ইট সাজানো ইট মানে ঈমান
বিশ্বাসে তার দৃঢ়তা আর চরিত্রে ধীমান।

সমাজ এবং মানুষ নিয়ে আবার সামাজিক
এক মানুষের ভাঙাগড়া, এই তো নানাদিক।

রাত্রি আমি নতজানু বিনয় এবং ধ্যানে
হঠাৎ হঠাৎ ভাঙে সে ধ্যান, হঠাৎ পাওয়া জ্ঞানে।

জ্ঞান তো আছে নানারকম, বিভিন্ন তার মানে
সকল জ্ঞানের দাড়িপাল্লা সব মানুষই জানে।

রাত্রি আমার বুক পকেটে ভোরের সুর্যোদয়
দূর নীলিমার বুকেই যেন আমার মৃত্যু হয়।