‘আমাদের লক্ষ্য ইসলামি সমাজ, মানব রচিত বিধান নয়’

প্রকাশিত : আগস্ট ২৫, ২০২০

মিশরীয় ইসলামি চিন্তাবিদ ও রাজনৈতিক সংগঠক সাইয়েদ কুতুব শহিদের আজ মৃত্যুদিন। ১৯৬৬ সালের আগস্টে দুই সাথিসহ তাকে সামরিক ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ শুনানো হয়। ১৯৬৬ সালের ২৫ আগস্ট দণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। সাইয়েদ কুতুবকে গোয়েন্দা বিভাগের তদন্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়। ১৯৬৫ সালের ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬.১০ মিনিট থেকে রাত ১০.৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং পরের দিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ চলে। ২১ ডিসেম্বর দুপুর ১টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ চলে। সাইয়েদ কুতুবকে জিজ্ঞাসাবাদে যেসব প্রশ্ন করা হয় তিনি বলিষ্ঠতার সাথে স্পষ্ট ভাষায় সেসব প্রশ্নের জবাব দেন তা নিচে দেয়া হলো:

প্রশ্ন: আপনার নাম, ঠিকানা, পেশা ও বয়স বলুন।
জবাব: নাম সাইয়েদ, পিতা ইবরাহীম। উসয়ূত জেলার মুশা গ্রামে জন্ম। বর্তমানে হালওয়ানের ৪৪ হায়দার রোডে বাস করছি। পেশায় একজন লেখক, বয়স ৬০।

প্রশ্ন: আপনি কি কারাগারের ভিতরে লেখালেখি করছেন ?
জবাব: হ্যাঁ, আমি আমার আকিদা-বিশ্বাস ও চিন্তাধারা তুলে ধরে কিছু বই লিখেছি। ইসলামী জীবন দর্শন নিয়ে লিখেছি।

প্রশ্ন: এ সম্পর্কে হাসান হুদাইবী কি অবগত আছেন?
জবাব: আমার ধারণা তিনি অবহিত আছেন।

প্রশ্ন: এর আগে কারাগার থেকে বের হবার পর আপনি কি হাসান হুদাইবীর মুখোমুখি হয়েছেন?
জবাব: হ্যাঁ, আমার ঘরে তাঁর সাথে তিনবার সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি এবং আমি ছাড়া তখন কেউ উপস্থিত ছিল না।

প্রশ্ন: আপনাদের সংগঠনের অর্থ বিদেশ থেকে অর্থাৎ সাউদি আরব ও অন্যান্য দেশ থেকে আসে, তাই না?
জবাব: হ্যাঁ, আমাদের আকীদা ও চিন্তাধারায় যারা বিশ্বাসী পৃথিবীর যেকোন দেশেই থাকুক না কেন, তাঁরা আমাদের ভাই। তাঁদের সাথে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু কোন দেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক নেই।

প্রশ্ন: আপনি যে সম্পর্কের কথা বলেছেন তা ইখওয়ানের সাংগঠনিক দৃষ্টিতে, ইসলামের দৃষ্টিতে নয়, তাই না?
জবাব: ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিই ইখওয়ান গ্রহণ করেছে।

প্রশ্ন: আপনার দৃষ্টিতে যেসব মুসলিম ইখওয়ানের সাথে সম্পৃক্ত এবং যারা সম্পৃক্ত নয় তাদের মাঝে পার্থক্য কি?
জবাব: ইসলাম বাস্তবায়নে ইখওয়ান কর্মীদের কাছে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী রয়েছে। আর অন্যদের নেই। আমার দৃষ্টিতে তারাই উত্তম, ইসলাম প্রতিষ্ঠায় যাদের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি আছে।

প্রশ্ন: আপনি কি বিশ্বাস করেন, যারা ইখওয়ানের সাথে সম্পৃক্ত তারা ‘ফী সাবিলিল্লাহ্’র কাজ করছে?
জবাব: এটা নির্ভর করছে যারা ইখওয়ানের সাথে জড়িত তাদের নিয়ত ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর।

প্রশ্ন: সাঈদ রমদান সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি ইসলামের নামে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে মানুষদের সংগঠিত করছেন।
জবাব: আমি এ প্রশ্নের জবাব দান থেকে ক্ষমা চাই।

প্রশ্ন: আপনার চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের পথ কি?
জবাব: আমাদের লক্ষ্য ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা, মানব রচিত বিধান নয়। এ কারণে লোক তৈরির জন্যে ইসলামী প্রশিক্ষণের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে।

প্রশ্ন: আপনার সংগঠন কি গোপনে না প্রকাশ্যে তৎপরতা চালাচ্ছে?
জবাব: গোপনে।

প্রশ্ন: যখন দ্বীনি চরিত্র গঠনই আপনাদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্য, তাহলে গোপনে তৎপরতার হেতু কি?
জবাব: প্রকাশ্য তৎপরতা ও প্রশিক্ষণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।

প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন উম্মতে মুসলিমা দীর্ঘদিন ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন?
জবাব: এ প্রশ্নের জবাব বিস্তারিত ব্যাখ্যার দাবি রাখে। তবে তারাই উম্মতে মুসলিমার অন্তর্ভুক্ত যারা ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনেতিক অর্থাৎ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ্র বিধান মেনে চলে।

প্রশ্ন: বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচলিত বিধানকে কি জাহেলী বিধান মনে করেন?
জবাব: আমি মনে করি এটা গায়রে ইসলামী বিধান।

প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন এটা জাহেলী সমাজ ও গায়রে ইসলামী সমাজ?
জবাব: এখানে জাহেলী সমাজের সংমিশ্রণ রয়েছে।

প্রশ্ন: আপনার এই দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে মিসরের বর্তমান শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?
জবাব: আমি এটাকে জাহেলী ব্যবস্থা মনে করি।

প্রশ্ন: এর অর্থ কি এটা যে, আপনি বর্তমান প্রচলিত শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন মনে করেন?
জবাব: আমি মনে করি, ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উপাদানসমূহ পরিবর্তন হবে।

প্রশ্ন: আপনার মতে ‘তাগুত’ অর্থ কি?
জবাব: আমার মতে ‘তাগুত’ মানে আল্লাহ্র শরীয়তের বিপরীত অন্য সকল ব্যবস্থা।

প্রশ্ন: ‘আল হা-কিমাতু লিল্লাহ্’ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি?
জবাব: আল্লাহ্ প্রদত্ত শরীয়তকে জীবন যাপনের বিধান হিসাবে গ্রহণ করা।

প্রশ্ন: আপনি এটা কিভাবে বুঝলেন?
জবাব: ইসলামের উপর অধ্যয়নের ফলে।

প্রশ্ন: আপনি কি জানেন, প্রাচীন যুগে খারেজীরা এ পরিভাষা বলতো।
জবাব: ঐতিহাসিক এ তথ্য আমার জানা নেই। এ পরিভাষা যখন তারা ব্যবহার করতো আমি যা বুঝি তা হচ্ছে আল্লাহ্ প্রদত্ত শরীয়তই হবে জীবন বিধান। কেননা, আল্লাহ্ নিজে হুকুম দেওয়ার জন্যে আসেন না। তিনি শরীয়াত নাযিল করেছেন, যেন তার ভিত্তিতে সকল কিছু পরিচালনা করা হয়। তাই ‘হা-কিমাতু লিল্লাহ্’ বলতে বুঝায় আল্লাহ্ প্রদত্ত বিধান
বাস্তবায়ন। আর এটা কুরআন দ্বারা প্রমাণিত।

প্রশ্ন: আপনি কি আপনার এ চিন্তাধারা মাওলানা মওদূদীর সাহিত্য থেকে নকল করেছেন?
জবাব: আমি ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা করা কালীন মাওলানা মওদূদীর গ্রন্থ এবং অন্যদের গ্রন্থ দ্বারা উপকৃত হয়েছি।

প্রশ্ন: সংগঠনে সামরিক কায়দায় অস্ত্র-প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কি?
জবাব: শত্রুতা ও বাড়াবাড়ি প্রতিরোধের জন্য, যখন কারো বাড়াবাড়ির সম্মুখীন হতে হয়। আমার দৃষ্টিতে বাড়াবাড়ির ধরন হচ্ছে কারা নির্যাতন, হত্যা, বিচারপূর্ব নানা ধরনের দমন-পীড়ন, যেমন ১৯৫৪ সালে করা হয়েছিল।

প্রশ্ন: এটার দ্বারা বুঝা যায় আপনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, আপনাদের সংগঠন সালতানাতের মোকাবেলা করতে সক্ষম?
জবাব: যে শক্তিকে আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, তা সরকারের শক্তি হিসেবে পরিগণিত নয়। আর এর বিরোধিতা করা সরকারের বিরোধিতার অন্তর্ভুক্ত নয়।

প্রশ্ন: আপনি কি জানেন এ ধরনের সংগঠন করা আইন পরিপন্থী?
জবাব: আমি জানি এটা আইন পরিপন্থী। কিন্তু আমি এটা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। যদিও এটা প্রচলিত আইন পরিপন্থী, কিন্তু সফলভাবে ইসলামী তারবিয়্যাত দেওয়ার জন্য এর বিকল্প ছিল না।

প্রশ্ন: তারবিয়্যাতের জন্য প্রচলিত আইনের বিরোধিতা কিভাবে করছেন? ইসলামী শরীয়ত কি এটা অনুমোদন করে? অথচ দেশের রাষ্ট্রীয় ধর্ম হচ্ছে ইসলাম।
জবাব: প্রচলিত আইন একজন মুসলিমকে ‘মুসলিম’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বাধা প্রদান করে, স্বয়ং প্রচলিত আইনের এটা ত্র“টি ছাড়া কিছুই নয়।

প্রশ্ন: কিভাবে দেখলেন প্রচলিত আইন একজন মুসলিমকে ‘মুসলিম’ হিসেবে বাধা প্রদান করছে?
জবাব: ইখওয়ানুল মুসলিমুনের প্রকাশ্য তৎপরতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ ইখওয়ান দ্বীনি দায়িত্ব পালনেরই চেষ্টা করছে।

প্রশ্ন: ‘ইখওয়ানুল মুসলিমুন’ নিষিদ্ধ করার কারণ কি দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের জন্যই?
জবাব: হ্যাঁ, আমি এ কারণকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

প্রশ্ন: সংগঠন নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষাপট কি জানেন?
জবাব: আমি জানি সরকারি সিদ্ধান্তেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকার কি কারণে করেছে, তা আমার জানা নেই। আমি বিশ্বাস করি, ইখওয়ানের দ্বীনি তৎপরতার কারণেই একে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেননা, এটি একটি ইসলামী আন্দোলন। ইসলাম বিরোধীদের মোকাবেলায় এটা এক বিপ্লবী শক্তি।

প্রশ্ন: কিন্তু ইখওয়ান নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার গোপন সংগঠনের ধ্বংসাত্মক তৎপরতার কারণে!
জবাব: আমি যা জানি তা হচ্ছে ইখওয়ানের গোপন সংগঠন রয়েছে। আমি এটাও জানি যে, সংগঠন নিষিদ্ধের এটা কোন প্রত্যক্ষ কারণ নয়। বরং মূল কারণ হচ্ছে বাইরের চক্রান্ত। স্বাভাবিকভাবে রাষ্ট্র এটা মেনে নিতে পারে না, কিন্তু আপসে এ ধরনের গোপন সংগঠন নিষিদ্ধ করা সম্ভব। ইখওয়ানকে প্রকাশ্য তৎপরতার সুযোগ দিলেই তা সম্ভব হত।

প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন একমাত্র ইখওয়ানই দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ করছে?
জবাব: আমি মনে করি ‘ইখওয়ানুল মুসলিমূন’ অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অধিকতর সফলতার সাথে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত। এর মধ্যে যে সকল ত্র“টি আছে তা আমি নিঃসন্দেহে স্বীকার করি। কিন্তু ইখওয়ান দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যই চূড়ান্তভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

প্রশ্ন: সংগঠনের নেতৃবৃন্দ স্বীকার করেছেন যে, আপনি তাদের বুঝিয়েছেন বর্তমান জাহেলী সমাজের মধ্যে তারাই প্রকৃত মুমিন। তাঁরা দেশ, সমাজ ও প্রচলিত বিধানের সাথে কোন ধরনের সম্পর্কই রাখছে না। তাঁরা এমন মুসলিম হিসেবে নিজেদের মনে করে যে, তাঁরা রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধাবস্থায়ই রয়েছে। আপনি তাঁদের কাছে দেশকে অভিহিত করেছেন ‘দারুল হরব’ হিসেবে। এটা কি ‘ইসলামী ইসতেলাহ।’ আর এরই ভিত্তিতে যে কোন ধরনের হত্যাযজ্ঞকে ক্ষতিকর ও শাস্তিমূলক মনে করা না হয় বরং উল্টো পুণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়?
জবাব: এ ধরনের মনে করা ভুল। মুমিন সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি সবার নিকট সুস্পষ্ট। দারুল হরব ও দারুল ইসলামের সাথে উম্মতে মুসলিমার সম্পর্ক আছে। এ প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য ছিল দার্শনিক দৃষ্টিতে বিধান বর্ণনা করার জন্য, বর্তমান সময়ে একথা চালিয়ে দেয়ার জন্য নয়। আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে, তাঁরা আমার কথা ভুল বুঝেছে।

প্রশ্ন: কিভাবে তারা বুঝার ক্ষেত্রে ভ্রান্তিতে আছে? বিশেষত তাদের একজন- যার নাম ‘আলী ওসমানী’ স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, আপনার সাথে মুসলিমদের হত্যার সম্পর্কে আলোচনা করা এই যে, যে ব্যক্তি ‘লা-ইলাহ ইল্লাল্লাহ্্’ বলবে তাঁকে হত্যা করা হারাম। এতদসত্ত্বেও আপনি মুসলমানদের হত্যার ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন?
জবাব: এ ধরনের আলোচনার কথা আমি স্মরণ করতে পারছি না। এটা ঠিক যে, আত্মরক্ষার অধিকার সকলের রয়েছে।

প্রশ্ন: আপনারা যে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তার সাথে বর্তমান প্রচলিত ব্যবস্থার বিরোধ কি?
জবাব: প্রচলিত মানব রচিত বিধানে আল্লাহ্র শরীয়ত নেই। আমাদের দাবি হচ্ছে আল্লাহ্র শরীয়তই হবে জীবন বিধান। আমার মতে এটাই প্রধান বিরোধ। এ কারণেই ছোট-খাট আরো অনেক বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রশ্ন: মুহাম্মদ কুতুব কি আপনার এই গোপন সংগঠন সম্পর্কে অবহিত?
জবাব: না।

প্রশ্ন: কেন তাঁকে এ সম্পর্কে অবহিত করেননি অথচ তিনি তাঁর রচিত পুস্তকে আপনার চিন্তাধারাই প্রকাশ করছেন?
জবাব: আমি মুহাম্মদ কুতুবের অবস্থা জানি। কোন সংগঠনের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে সে অনাগ্রহী। অপর দিকে আমি চেয়েছিলাম, অন্য কেউ এ সংগঠন সম্পর্কে না জানুক। যদিও সে আমার নিকটজন।

এভাবেই সাইয়েদ কুতুবকে আরো কিছু প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু তিনি সাহসিকতা ও বলিষ্ঠতার সাথে সুস্পষ্টভাবে সকল প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি যা বিশ্বাস করতেন তাই প্রকাশ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিচারের প্রহসন শুরু: ১৯৬৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সাইয়েদ কুতুব ও তাঁর সঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়। ১৯৬৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক সম্মেলনে মিসরের আইনমন্ত্রী ৪৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। তাদের মধ্যে ৩৮ জন ছিলেন কারাগারে। তিনজন ছিলেন পলাতক এবং দুজন ছিলেন মহিলা। একজন যয়নাব আল গাযালী আরেক জন হামিদা কুতুব। বিচার প্রহসন শুরু হল। অভিযুক্তদের কোন কৌশলী নেই। আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ নেই। সুদান, মরক্কোসহ কয়েকটি আরব দেশের আইনজীবীরা সেদেশে এসেছিলেন সাইয়েদ কুতুব ও তাঁর সাথীদের মামলা পরিচালনার জন্য। তাদের সবাইকে কায়রো বিমান বন্দর থেকেই ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। ফরাসী বার এসোসিয়েশনের সভাপতি ‘উইলিয়াম থরপ’ মামলার কাজে কায়রো আসার অনুমতি পাননি। পর্যবেক্ষক পাঠাতে চেয়েও সফল হননি। বিচারকক্ষে কোন সাংবাদিক, বিদেশী নাগরিক, জনপ্রতিনিধি এমনকি সাধারণ মানুষকেও ঢুকতে দেয়া হয়নি। টেলিভিশনে এই বিচার অনুষ্ঠান দেখানোর কথা থাকলেও অভিযুক্তরা অভিযোগ অস্বীকার করে কারা নির্যাতনের বর্ণনা দিতে শুরু করলে সম্প্রচারের সিদ্ধান্তই বাতিল করা হয়। সাইয়েদ কিছু বলতে চাইলেও তাঁকে কিছু বলতে দেয়া হল না। এমনি অবস্থায় ১৮ মে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত আদালতে বিচার প্রহসন নাটক মঞ্চস্থ হয়।

রায়ের অপেক্ষায় সাইয়েদ কুতুব: ১৮ মে ১৯৬৬ জেরা সমাপ্ত হয়। চার মাস অতিবাহিত হল। সাইয়েদ রায়ের অপেক্ষা করছেন। রায় কি হবে তা আগেই জানা। তাই মৃত্যুদণ্ডের প্রহর গুণছেন। এ সময় আহমদ রায়েফের সাথে জেলখানায় তাঁর দেখা হয়। তিনি জানতে চাইলেন, আপনি কিসের জন্য অপেক্ষা করছেন? সাইয়েদ কুতুব প্রসন্ন চিত্তে বললেন, আমি আমার প্রতিপালকের সাথে মিলিত হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করছি।