
আলোকচিত্রী: রিফাত বিন সালাম
আমার শান্তিনিকেতন
পর্ব ১
রিফাত বিন সালামপ্রকাশিত : জানুয়ারি ২৬, ২০১৮
জন্মের পর থেকে যে আর্থ-সামাজিক-রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মধ্যে বেড়ে উঠেছি, সেখানে সাহিত্যে শুধু কাজী নজরুল ইসলাম আর মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছাড়া আর কাউকে এত আপন মনে হয়নি। পছন্দের অনেক কবি ও লেখক আছেন, মানুষ আছেন, কিন্তু নজরুল ছিলেন একটা স্টেট। উনি নিজেই যেন একটা রাষ্ট্র।
নজরুলের স্টেটে বাস করলেও রবীন্দ্রনাথ স্টেটকে অস্বীকার করার কথা কল্পনাতেও সম্ভব নয়। তাই শান্তিনিকেতন (বিশ্বভারতী) ছিল আমার কল্পনাজুড়েই। ফ্যান্টাসিও বলা চলে... শান্তিনিকেতনকে একটা কাল্পনিক রাষ্ট্র হিসেবেই দেখেছি আগে। এখনো দেখি, তবে এখন সেটার মধ্যেই আমার বাস। তাই নিজের মতো করেই নিজের শান্তিনিকেতনকে দেখি। অন্যের মুখে শোনা শান্তিনিকেতন আর আমার দেখা শান্তিনিকেতন ভিন্ন না হলেও হয়ত কিছুটা ভিন্ন।
আগেই বলেছি, নজরুল আমার প্রিয় মানুষ। নজরুলের জীবনী থেকেই প্রথম শান্তিনিকেতন সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছিলাম। তাই সেখান থেকেই শুরু করি। চলতে থাকবে এই ভ্রমণকথা...
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নজরুলের সরাসরি দেখা হয় ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসে, শান্তিনিকেতনে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন নজরুলের বয়স মাত্র ২২, রবীন্দ্রনাথের ৬০। বয়সের ব্যবধান ছিল ৩৮।
নজরুল আবৃত্তি করেছিলেন সাথে রবীন্দ্র সঙ্গীতও গেয়েছিলেন। ১৯২১`র ডিসেম্বর মাসে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনা করে নজরুল ঠাকুরবাড়িতে প্রবেশ করে রবীন্দ্রনাথকে বলেন, ‘গুরুদেব, আমি আপনাকে খুন করবো।’
রবীন্দ্রনাথ ‘বিদ্রোহী’ শুনে বলেছিলেন, ‘সত্যিই তুই আমাকে খুন করেছিস...’। আরও অনেক গল্প-আলোচনা আছে। এরপরও ‘কে মহান’ এ নিয়ে হাজার আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে এই দুই স্টেটের মালিকদের নিয়ে।
এই দুই মহান মানুষের সাথে শান্তিনিকেতনের একটা সম্পর্ক আছে। আর সেটা হলো, দুই আলাদা চিন্তার ফসল। নজরুল প্রেমীরা অনেকেই রবীন্দ্রনাথকে খারিজ করেছেন, একইসাথে রবীন্দ্র প্রেমীরা অনেকেই নজরুলকে খারিজ করেছেন ধর্ম-দর্শন-জাত-সাহিত্য মানের দোহায় দিয়ে। আমার বিরোধিতা সেখানেই।
নজরুল প্রেমীরা, যারা রবীন্দ্রনাথকে অরাজনৈতিক বলে উড়িয়ে দেন, তারা অনেকটা সঠিক, কিন্তু ঠিক ততটায় ভুল। তবে হ্যাঁ, নজরুল আর রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক চিন্তার ফারাক ছিল... শান্তিনিকেতন সেটারই একটা প্রতিফলন...
চলবে...