আশিক আকবরের আটটি প্রতিবাদী কবিতা

প্রকাশিত : জুলাই ২৭, ২০২০

এখানে

এখানে ভাত নাই, ভাত নাই বলে সকাল আসে।
এখানে আগামী কাল কি হবে?
কি হবে বলে সন্ধ্যা নামে।
রাতগুলোয় কর্মহীন মানুষেরা
নারীর কাছে খোঁজে আশ্রয়।
নারীরা বিশাল বিশাল ব্যাংক ব্যালেন্সের
দিবাস্বপ্নে নিদ্রা যায়।
সব সম্পর্ক ভেঙে যায়।
সব সম্পর্কেই আসে আর্থিক আছর।
তুমুল বর্ষাকাল জুড়ে বৃষ্টিতে থাকে মানুষের কান্না।
বঞ্চনার গোপন আর্তনাদে ডাকে
আকাশের মেঘ।
পড়শীর প্রস্রাবে বন্যা আসে।
জলে আটকা শহর ও গ্রামে অভাবের বাজপাখি তোলে ডানা।
পৃথিবী বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ, পূর্ববাংলা।
অর্থের জৌলুসে বৈদেশ উড়ে যায়।
বৈদেশিক ঘামে ঘামে ধীরে আসে তার খুঁটি।

এখানে পাখির ডাকে ভোর হয়।
এখানে পাখির ডাকে সন্ধ্যা নামে।

শুভ্র, শাহবাগের একজন

মৃত্যু এমন এক যাদুকর,
বহুকাল বেখবর মানুষের শেষের খবর দিয়ে যায়।
খুলে দিয়ে যায় স্মৃতির খাতার অনেক অনেক পাতা।

তিনি কবিতা লিখতেন, কখনো বলেননি।
তিনি আর্মস ক্যারি করতেন, তাও বলেননি।
তার সাথে বসে এক কাপ চা পান করেছি কিনা, মনে পড়ছে না।
এমন কি তার নাম যে শুভ্র, তাও স্মরণেই ছিল না।

সুদীর্ঘ সোনালি এক তালগাছ।
ক্যাপ পরেন।
কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হাঁটেন।
উপর দিকে তাকিয়ে তার মুখ দেখতে গেলে,
চাঁদ দেখা হয়ে যায়।

এই চাঁদ লিখতে যেয়ে,
দুই কান দিয়ে আসা অনাহুত আর্তনাদ,
এই চাঁদ কে হত্যা করেছে
আমাকে লিখতে দেয়নি তার শাহবাগে বই কেনার খবর।

হয়তো কোনো জ্যোস্না বিধৌত নিশিতে,
গভীর ঘুমের কোনো স্বপ্নে,
তার পকেটের পিস্তল নিয়ে গুলি করতে করতে,
অনেক অনেক লেনদেন বুঝে নিতে হবে আমাদের।

ইচ্ছে

শাদা ঘোড়ার পিঠে চড়ে তিনি আসছেন,
আমাকে কাফন পরাবেন।
কবরের মাটিতে শুইয়ে দেবেন।
তিন দিকে মাটি,
উপর দিকে বাঁশের উপরেও মাটি।
কেমন লাগবে ওই হাওয়া চলাচলহীন মাটির কবরে?
তা না জেনেও,
এখানে থাকতে ভালোই লাগছে না আর।
এই খাটের বিছানা, বালিশ তোষক মশারি, ফ্যানের বাতাস।
দরোজা জানালা খোলা ও বন্ধ ঘর অসহ্য লাগছে,
অসহ্য লাগছে।
কোনো ফুটপাতে, কোনো রেল স্টেশনে, কোনো জাহাজ ঘাটের ডকে...
শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে, ইচ্ছে করছে।

সরল গণিত

যে চলে যায়
ফেলে যায়
সে নিজে ফেরত না আসলে
তাকে ডেকে এনে
আরো প্রিয় করে তোলার ইচ্ছা করা যায়
তবে তা আরো কষ্টই বাড়ায়

ছেঁড়া দড়ি
গিঁট দিয়ে জোড়া দিলে
তা আবারও ছিঁড়েই যায়

মানুষের কাছে চিঠি

এই সময়ে একজন কমিউনিস্ট লেখক,
তিন তিন বার নক করেছেন।
তার দাবি,
আশিক ভাই কিছু একটা করেন,
একটা শ্রমিক পরিবার কারখানা বন্ধ থাকাতে,
তার কণ্ঠ রুদ্ধ হৈআ আসে।
শুধু শ্রমিক না,
তার জন্যেও ন্যূনতম কিছু একটা করা দরকার।

একজন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক,
এমপিও ভুক্ত নন,
সরকারি বেতনের আওতায় আসেন নি।
কবিতা গল্প লেখেন,
মাওবাদী রাজনীতিতে আন্তরিক ছিলেন।
তার কবিতায় মানুষ আসে।
ফিউজ হওয়া বাল্পের মতো তিনি বললেন,
আশিক ভাই,
সিলেট চলে যাই,
ওখানে যেয়ে সিএনজি টিএনজি চালাই।

হা হা করে হেসে কান্না লুকাই।

উচ্চ মাধ্যমিকের আর্ট টিচার মনে আসে।
তার স্কুল,
গৃহে আসা ছাত্রদের আঁকাআকি সব তো বন্ধ।
সে আছে কেমন?
লালরঙ কেনার পয়সা কি মিলতেছে তার?

একজন কমরেড,
গোপন কবিও বটে।
জনগণের নির্ভরে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইল চলেন।
এই কোভিড কালে বন্দি কচ্ছপ হৈআ কিভাবে চলছে তার?
তার হাতের থাবায় নাচতে থাকা দেশ বাঁচাতে,
সে কি বাঁচতে পারতেছে?
কে তার পাতে তুলে দিচ্ছে কমিউনিজম আনা লক্ষ্যের ভাত?

মাওবাদীদের সহানুভূতিশীল,
দুই হাত খুলে মাওবাদীদের করে আপ্যায়ন,
চার হাতে দেয় চাঁদা।
কোভিড তার খামার খেয়েছে,
রসুন পেঁয়াজ তরমুজ শশা ভেড়া জাম্বুরা সুপাড়ির চারা করেছে নাশ।
তার কুকুরটারও ভেঙেছে কোমর।
থাকার মধ্যে আছে চার চাকার গাড়িটিই।

ফোনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ বলে,
আশিক,
জীবন ব্যর্থ।
চার চাকা বেচে দেই। ঋণফিন শেষ করি। আপনার মতো কবি হয়ে যাই।
ঘুরা আর লেখা।
আর সব ফুঁ...
ফুঁয়ের জীবনের ফাঁকা শোক কে বলবে তাকে?

মাওবাদী, মাও ঘেঁষা বন্ধুদের কাছে চিরকুট পাঠাই,
মাও পাখি রক্ষায় আকাশ কি খুলেছে দরোজা?
চাঁদ কি চাঁদে পাওয়াদের দিচ্ছে কোনো আশ্রয়?
শতকরা পঁচানব্বই জনা ধরেছে মৌনতার রক্ষা কবচ।
পাঁচজন জানিয়েছে আকাশ খোলা আশ্রয় আছে বেখবর।
আর অন্যরা?

চীনানডিআ যুদ্ধাভাসে খুব ব্যস্ত,
আম্রিকার সিয়াটল কমিউন খবরে খুব উদগ্রীব।
মাওবাদী লেখক কবিরা মরলেই কিবা আসে যায়!
কাজী নজরুল থেকে আজকের আ. আ. নাগাদ ওরা এসেছে।
ব্যক্তিজীবনের ভোগ লালসায় চলেও গেছে।
আমরা বাসিটাকে ছুঁড়ে ফেলি, টাটকাকে আকড়ে ধরি।
মাওয়ের এমন নীতির সুপ্রয়োগ পৃথিবীতে হয়নি আর।

এমন ব্যর্থতা জেনেও বুক বাঁধি,
মাও সে তুং এর বাগানের কবিদের বাঁচাতে কবিতাতেই আসি।
কবিতাই বাঁচাবে কবিদের।

ও বিপ্লবী,
কবির চোখে দেখো পৃথিবীকে।
পৃথিবী পাল্টাবার লড়াইয়ের কবিই প্রথম কমিউনিস্ট।
তাকে তুলে তুলে খাইয়ে শোনো তার গান

পূর্ববাংলার কবিতা

দইঅলা আসতো
আসতো চিনি মিঠায়ের মণ্ডা চমচমঅলা
জিলাপিঅলাও আসতো
পাটের বিনিময়ে চলতো শাদা ও লাল জিলাপির লেনদেন
ধান করে কুমারের সাথে মাটির হাঁড়ি কলসির বেচাকেনা হতো বেশ
তার কাছে পোড়ামাটির পুতুলও থাকতো
ঘোড়াও থাকতো

ঘোড়ায় চড়ে আসতো নুলো ভিখারি
বেদেনিদের ঝাঁকায় থাকতো কাচের চুড়ি
স্নো পাউডার বাসন কোসন
আসতো সাপুড়ে
আসতো গণক
আসতো সাত কলসি পানিতে বিবাহ দেনেঅলা
সার সার দাঁড় করানো বিবাহ দায়ের কুমারীদের গোসল
এই সেদিনও দেখেছি
আসতো সুর্মা আংটি পাথর ও আবে জমজমের পানিঅলা
আসতো আবদাল
পাঁঠা ও ষাঁড়ের বিচি কাটনেঅলা
আসতো হাজাম
ছেলেদের মুসলমান বানানোর আদিম সার্জেন
ওওও ডাক তুলে আসতো গোয়াল
যেনবা আকাশ থেকে ধুতি পরে নেমে এলো কেউ
তার লোহার পোড়া শিকে গরুর মাজায় পড়তো দাগ
জিহ্বায় আসতো নির্মম চাচনি
দাঁড়িয়ে যেত আধমরা গরুটিও
আসতো সোনা রূপা খুঁজনেঅলা
পুকুর ঘাটে হারিয়ে গেছে কার নাকফুল

আসছে ঈদুল আযহা
ফেরিঅলার হাঁকের খবরে জেনেছি
এসেছে জুতাঅলা
ফেরির মাঠে তার নতুন প্রবেশ
সে এনেছে রাবারের জুতা
এই সময়ে জুতো হাতে নেয়া বোধহয় খুব জরুরি

ঘরে ঘরে আসা
খালি পায়ে হাঁটা মানুষের জীবিকা শেষ হবার আগেই

রাষ্ট্রবিরোধী কবিতা

আমাকে পাখির নামে
নাম দাও।
উড়ি,
আকাশে উড়ি;
বিমান বাহিনীর অনুমতিহীন।

একটি পরিবেশবাদ বিরোধী কবিতা

কল কিনবো
বন্দুক আনবো
কাঠবিড়ালীদের মারবো

ওরা সুপাড়ির ফুল ফেলে দেয়
নারকেল কুঁড়ি কামড়ায়
পেয়ারা কুটকুট কাটে

এ গাছে সে গাছে লাফায়
পুরা বরই সিজন ওই গাছ ছাড়েই না
পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে

তেঁতুলের ফুলে
কালো জাম গাছে
মিষ্টি মিষ্টি পাকা কামরাঙায়
এমন কি ডেফলের গাছেও সে দৌড়ায়

জাম্বুরা বা বাতাবি লেবুর গাছেও
তাদের ইচিং বিচিং কম না
কলাগাছও তার থেকে পায় না রেহাই

আর বাঁশবন?
ওদের মৃগয়া ক্ষেত্র।
আম কাঁঠালের গাছ যেন ঘরবাড়ি।

অনেক সহ্য করেছি,
পড়ে থাকা সুপারির কুঁড়ি,
নারকেলের কড়া, আধ খাওয়া আম...
অনেক অনেক দেখেছি
আর না
এবার যুদ্ধে যাব

কল কিনবো
বন্দুক আনবো
অনিষ্টকারী কাঠবিড়ালীদের হত্যা করবো