আশিক আকবর

আশিক আকবর

আশিক আকবরের ৫ কবিতা

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২

পোশাক

পোশাক কতটা যন্ত্রণা জর্জর হলে
ছুঁড়ে ফেলা যায়, পুড়ে ফেলা যায়,
ইরানি নারীরা খোলা রাস্তায় তা দেখাচ্ছেন।
রেড স্যালুট তাদের।
যদিও ইরানের মাওবাদী সারবেদারান পার্টির সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।

উন্মুক্ত স্তন যে পোস্টার হতে পারে
তা আমরা ইরানে দেখলাম।
কাটা চুল যে পোস্টার হতে পারে
তা আমরা ইরানে দেখলাম।
আমরা দেখলাম, কাঠির আগায় উড়ানো হিজাবের পতাকা।
দেখলাম, কর্তিত কালো চুলের পতাকা।

আমি বলেছি,
কালো চশমা তুমি পরো।
তোমার হরিণ চঞ্চল চোখ আমাকে দেখিও না। না।

ঢেকে রাখা তোমার পা, তোমার হাত,
তোমার মাথা ও মুখমণ্ডল,
আমি মেনে নিয়েছি, মানতেছি,
কিন্তু তোমার খোলা চোখ আমি মানবো না।
যেহেতু আমার চোখে চোখ রেখে তুমি সঙ্গম করে চলে যেতে পারো।

ব্যক্তিগত সঙ্গম থাক।
আমি এখন স্বাধীনতার সাথে নারীদের সঙ্গম দেখতেছি।
কামনা করতেছি নারীদের মুখ ও চুল খোলার পূর্ণতা।

আকাশ খুলে যাক

শ্রী মিত্তুন চন্দ্র দেবনাথ ধরফরাইয়া
ধরফরাইয়া মইরা গেল।
ট্রাকের ধাক্কায়,
গ্রামের রাস্তায়
বাইসাইকেলে ছিল সে।

তার মায়ের কান্না শুনলাম।
বৌয়ের কান্না শুনলাম।
তার প্রতিবন্ধী মেয়ে
হাফপ্যান্ট মাঝে মাঝে না পরা ছোটো ছেলেটি,
এখনো বোধহয় ব্যাপারটি বুঝে উঠতে পারেনি।

আহারে, ও আমার কলসিতে পানি ভরে দিত,
বলতে বলতে কাঁদলেন আমার মা।
মানুষের ঢল নামলো ওদের বাড়িতে
ভ্যান এলো,
রিকশা এলো,
মটরসাইকেল এলো,
এবং গভীর রাতে এলো শ্রী মিত্তুন চন্দ্রের লাশ।
লাইন লাইন ধরে মানুষ আসায় অবাক,
অবাক হলাম আমি।

মৃত মানুষের লাশ এক নজর দেখার মধ্যে
কোনো এক রহস্য রয়েছে
তা অনেক অনেক ভেবেও ধরতে পারছি না আমি।

ধরতে পারছি না এই যুবকের অপমৃত্যু
ওর বৌয়ের বিধবা হওন,
এবং ওর বাচ্চাদের এতিমকরণে,
হিন্দু মিত্তুনদের ভগবানের কী ক্ষতি, কী লাভ!
এই লাভক্ষতি বুঝতে না পারাকে আজকাল মোক্ষ বলে মানছি।
অবুঝ হচ্ছি।

অবুঝের জন্য অনেক অনেক আকাশ খুলে যাক।

খাবার

ওড়ে কালো ফিঙে পাখি এক
শরৎ কালের সবুজ ধানের ক্ষেত্রটির ওপর ওপর
এখন বিকেল, এখন কি ফড়িং খাবার সঠিক সময়?

চা সিঙ্গারা বড়া পুরি... বিকেলে অনেকে খায়
খেতে পারে
অনেকে গৃহেই নিজেই বানায়

খাবার এ এক বাধ্যচক্র সকল জীবের
এখানেই সুখ ও অসুখ শুরু করে তার স্পষ্ট পদক্ষেপ

অকহতব্য

তোমার সাথে কথা ছিল
বলা হয় নাই
উল্টানো কচ্ছপের খুলে চাঁদ দেখতেছি
মদ খাওয়া হয় নাই
বাড়ি যাওয়া হয় নাই
তিন রাস্তার মোড়ে বাড়ির ঠিকানা ভুইল্লা বইসা আছি
জানি আমারে নিতে আইবা না
তাও অপেক্ষা করতাছি
একটা টাক গাড়ি বুকের ওপর দিয়া উইঠা গেলে ভালা অয়
তাড়াতাড়ি নক্ষত্র জগতে চইলা যাওন যায়
ওই জগতে পরিচিতের সংখ্যা বাইড়া যাইতেছে
তাই আমি কিছু না লেইখ্যাও অনেক কিছু লেখতাছি
তুমি হুট কইরা একদিন আমারে পথ থেইক্যা কুড়াইয়া নিও
তুমারে অনেক কথা শোনাবো নে
যেইগুলা শেখ হাসিনার শাসনে আর কওন যায় না

স্মৃতিচারণাতাড়িত

বৃষ্টি হচ্ছে, হতেই পারে।
তোমাকে মনে পড়ছে, পড়তেই পারে।

আমাদের আর একসাথে ভেজা হবে না।
আমাদের আর এক ছাতার নিচে হাঁটা হবে না।
রেইনকোট পরে কেউ আর আমার কাছে চলে আসবে না।

একটি হলুদ ছাতা ছিল তার
তাকে ফিনফিনে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখেছি।
বাসা থেকে গাড়ি এসে তুমুল বৃষ্টিতেও নিয়ে গেছে তাকে।
আমরাই আবার ঝুম বৃষ্টিতে রিকশায় গেয়েছিলাম গান।

আমাদের ভালোবাসা ছিল কি ছিল না
জানা হয় নাই।

বৃষ্টিতে ভিজে এলে শে গোসল করে নিতে বলতো,
কখনো বৃষ্টিতে চারতলার বারান্দায় চা চানাচুর খাওয়া হতো
তখন বৃষ্টিতে হাতিরপুল ভিজে যেত।
রোকেয়া হলের পাশটার বাংলো বাড়িগুলি ভিজে যেত।
ভিজে যেত মধুর ক্যান্টিনের ছোট্ট উঠোন।

তখন আমাদের দেখা হতো।
তখন আমাদের কথা হতো।
তখন আমাদের মধু মাখামাখি হতো।

তখন বৃষ্টি হতো
তখন আমার নানা রকম বৃষ্টিতে ভিজতে পারতাম।