আসাদুজ্জামান সবুজ

আসাদুজ্জামান সবুজ

আসাদুজ্জামান সবুজের গদ্য ‘আমাদের পঞ্চপাণ্ডব’

প্রকাশিত : আগস্ট ২১, ২০২১

পঞ্চপাণ্ডব বললে মহাভারতে বর্ণিত পাণ্ডুর পাঁচ পুত্র বুঝি। যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকাল ও সহদেব। সেকথা সবাই জানে, তা আমার বলার দরকার নেই। আমি আজ বলবো আমাদের পঞ্চপাণ্ডবের কথা। তারা সবাই নিজ কর্মগুণে অনন্য। কাজ করে গেছেন দেশ ও মানুষের জন্য।

আজকের বাংলাদেশের অনেকে হয়তো তাদের নাও চিনতে পারে। এটা চলমান ধারা। আমরা আমাদের সিলেবাসের বাইরে জানতে নারাজ। এ যেন সতজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশ। যে দেশে আমরা বড়ই আজব প্রাণী। এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি...

শুধু এই লাইনে আটকে যায় আমি চারপাশ দর্শনে। সত্যিই তো! ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ে পড়েছি, ‘পাস করা বিদ্যা প্রকৃত বিদ্যা নয়।’ তবে সনদের বাইরে আমরা বের হতে পারি না, ভাবিও না। তবে কেউ কেউ আছে যারা আহমদ ছফা পড়েন। বইয়ের ফেরিঅলা পলান সরকারকে জানে। জানে চলচ্চিত্র পরিচালক অলিফার স্টোন ফিদেল কাস্তোকে নিয়ে তিনটি প্রামাণ্যচিত্র বানিয়েছেন।

আমার কাছে চলচ্চিত্র হচ্ছে সেই মাধ্যম যার মাধ্যমে এই জানানোর পরিধি আরও ছড়িয়ে দেয়া যায়। সে এক অলৌকিক বল। বেশি না বলে বলা যায়, নেতাজি সুভাষ বসু, মোহাম্মদ আলী, লালল সাঁই তাদের তো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সাহিত্য বা সংবাদে যত জেনেছি, একইভাবে চলচ্চিত্র দেখেও তাদের বিষয়ে ধারণা হয়েছে। তাই বাংলাদেশের পাঁচ পাণ্ডবের কথা আজ বলব। যাদের নিয়ে হয়নি কোনো বায়োপিক।

রমা চৌধুরী
১৯৭১ আমাদের গৌরবময় অহঙ্কারের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে এই ভূখণ্ডে অসংখ্য চলচ্চিত্র হয়েছে। তবে ভালোমানের ছবি হয়েছে খুবই কম। সবগুলো ছবিতেই একই দৃশ্য: রাজাকার, বুট, ধর্ষণ এইসব। তবে স্বাধীন দেশের এত বছর পার হলেও মুক্তিযোদ্ধা ও সেই সব নির্যাতিত বীরাঙ্গনা যোদ্ধাদের নিয়ে কয়টা ছবি হয়েছে? উত্তরটা আমার থেকে আপনাদের জানা আছে ভালো। তেমনি এক মুক্তিযোদ্ধার নাম রমা চৌধুরী।

রমা চৌধুরী ১৯৪১ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া গ্রামে জন্মান। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ছিলেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম নারী স্নাতকোত্তর (এমএ)। ৬২ সালে কক্সবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘ ষোল বছর তিনি বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭১ সালে তিনি উজ্জ্বলময় তরণী। তিন সন্তানের মা রমা চৌধুরী। স্বামী চলে যান ভারত। নিজ সন্তান ও মায়ের সামনে সতিত্ব হারান পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছে। এতেও যদি তারা শান্ত হতো। বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। জ্বলজ্বল করে চোখের সামনে জ্বলে ওঠে সব। পরিবারটিকে শেষ করে দেয়ায় ছিল তাদের একমাত্র কাজ, যাতে তারা বেঁচে থাকতে না পারে। নিজ সম্ভ্রম হারানোর ঘটনা আড়ালে রেখে তিন শিশু সন্তান ও মাকে নিয়ে নতুন আরেক যুদ্ধ শুরু করেন।

পথে পথে ঘুরা, জঙ্গলে রাত্রিযাপন। চারপাশে অনেক আত্মীয় থাকার পরও পাননি সহায়তা, ভালোবাসা। উল্টো লাঞ্চনার শিকার হন। হন অপমানিত। যুদ্ধ শেষ। দেশ মুক্ত হলেও রমা চৌধুরীর শুরু হয় নতুন আরেক যুদ্ধ। অসুস্থ সমাজ রমা চৌধুরীকে সহজভাবে গ্রহণ করেনি। দারিদ্র্য, হতাশা ও কষ্ট তাকে শেষ করে দেয়। সাগর, টগর, টুনু পরপর তিন সন্তানকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে যান। রমা চৌধুরী তুব থেমে থাকেননি।

তিনি যে সাহসী যোদ্ধা, থামার নন। বেঁচে থাকার জন্য শুরু করেন নতুন লড়াই। কলম তুলে নেন, শুরু করেন লেখালিখি। একাত্তরের জননীসহ ১৮টি বই তার ঝুলিতে। বই লিখে থামেননি, বাঁচার জন্য তা ফেরি করে বেড়িয়েছেন পথে, রাস্তায়। চালিয়েছেন দীপংকর স্মৃতি অনাথালয় নামের অনাথ আশ্রম। বীরাঙ্গনার এমন দুর্দশা দেখে অনেক মানুষ এসেছিল সাহায্যের ডালি নিয়ে। সবাইকে ফিরিয়ে দেন তিনি বিনয়ের সঙ্গে।

ফিরিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্যের প্রস্তাবও। সাধারণ জীবনযাপন করা এ সাহসিকা জননীর সঙ্গে ২০১৩ সালে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাক্ষাতের সময় রমা চৌধুরীকে `কী চান` জিজ্ঞেস করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। জবাবে রমা চৌধুরী বলেছিলেন, `নিজের জন্য কিছুই চাই না। বই বিক্রি করে বেশ ভালো আছি।`

২০১৭ সাল পর্যন্ত শারীরিক কষ্ট ও রোগব্যাধিকে সাথী করে বই ফেরি করে সংসার চালিয়েছেন। একমাত্র বেঁচে থাকা ছেলেকে মানুষ করার চেষ্টা করেছেন। দু`একটা সময় ছাড়া পুরোটা সময় কেউ পাশে ছিল না। একাই সাঁতার কেঁটে পার হয়েছেন অতল সাগর। `জননী সাহসিকা` নামে খ্যাত রমা চৌধুরী ভিক্ষা বা কারও দয়ায় বাঁচেননি। লড়েছেন শেষ দিন পর্যন্ত। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

রমা চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা নন শুধু, শিক্ষিকা, কথাসাহিত্যিক ও একজন মা। বহু বছর খালি পায়ে হেঁটেছেন। বলতেন, যে মাটিতে আমার মায়েরা ঘুমিয়ে আছে তাতে আমি হাঁটতে পারি না।

মুহাম্মদ খসরু
আমাদের ধ্রুপদী। ভারতের হুগলি জেলয় জন্ম। বাবার বাড়ি কেরানীগঞ্জের রুহিতপুরের মোহনপুর গ্রামে। ৫০ দশকে পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন। সস্তা মাখনে যখন ভরে গেছে চারপাশ তখন দর্শক ও নির্মাতাদের মনোযোগ ফিরাতে ৬৩ সালে শুরু করেন চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন, ওয়ার্কশপ ও লেখালিখি। এ দেশের চলচ্চিত্রে বিকল্প ধারার জনক তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে নানা বিষয়ে তার পড়ালেখা ছিল। জীবনের বেশিভাগ সময় পার করেছেন নিভৃতচারী হিসেবে।

কালজয়ী পত্রিকা `ধ্রুপদী ` সম্পাদনা করতেন। যা সেই সময়ে চলচ্চিত্র মহলে বেশ  সমাদৃত ছিল। সাক্ষাৎকার চতুষ্টয়, ঋত্বিক কুমার ঘটকের সাক্ষাৎকার, চলচ্চিত্রপত্রে `সূর্য দীঘল বাড়ি ` চিত্রনাট্য নিয়ে লেখা। এদেশে ফিল্ম স্টাডি সেন্টার, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ, জাতীয় ফিল্ম আর্কাইভ প্রতিষ্ঠানগুলোর গড়ার কারিগর মুহাম্মদ খসরু। ১৯৭৫ সনে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় পালন্ক ছবির সহকারী নির্মাতা হিসেবে কাজ করেন। ছবিটি নির্মাণ করেন রাজেন তরফদার।

বিসিটিআই প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। তাকে যারা ব্যক্তিগত ভাবে চেনে তার জানে, তিনি মানুষ হিসেবে ক্ষ্যাপাটে, রাগী ও মুখে অবিরাম খিস্তি। তার সব রাগ, ক্ষোভ ওই চলচ্চিত্রকে ঘিরেই। কথাগুলো কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান লিখেছেন ফিল্মফ্রিতে। তিনি নিজে চলচ্চিত্র বানাননি, তবে বানিয়েছেন বিকল্প ধারার বহু চলচ্চিত্র নির্মাতা। তারেক মাসুদ একবার চলচ্চিত্র সংসদের আড্ডায় তরুণ কর্মীদের বলেছিলেন, আমরা অনেকে বের হয়েছি খসরু ভাইয়ের কোটের বিভিন্ন পকেট থেকে।

আমরা বলতে মোরশেদুল ইসলাম, আকরাম খান, তানভীর মোকাম্মেল, মানজারি হাসীন মুরাদের মতো নির্মাতার কথা বলা হয়েছে।  মুহাম্মদ খসরু খুব একজেদি ও রাগি ছিলেন। আরেকবার তিনি তারেক মাসুদকে কোন একটা লেখা লিখতে দিয়ে দরজায় তালা মেরে দিয়েছিলেন।দরজার বাহির  থেকে বলেছিলেন,  ` লেখা শেষ হলে তালা খুলে দিবো।` শেষ করছি নিজে চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ` নামহীন গোত্রহীন চিত্রনাট্য করেছিলেন যত্ন করে। অনুদানে জমা দিয়েছিলেন দু`বার।কিন্তু অনুদান পাননি। কখনো কোনো তকবির করেননি, আপোষ হননি ন্যায় ও নীতির কাছে। ছবিটি করা হয়নি। ২০১৯ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনিও চলে যান না ফেরার দেশে।

মোস্তফা কামাল সৈয়দ
আধুনিক টেলিভিশনের রূপকার ও স্থপতি। তিনি সৎ, দায়িত্বশীল ও সাদা মনের মানুষ ছিলেন। ১৯৪৩ সালে ঢাকার তেজকুনি পাড়ার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের তার জন্ম। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে পাকিস্তান টেলিভিশন কর্পোরেশনে প্রযোজক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৪ সালের ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের উপ মহাপরিচালক হিসেবে সেচ্ছায় অবসর নেয়ার পূর্বপর্যন্ত টেলিভিশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। অবসরে যাবার পরপরই তিনি এনটিভির অনুষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব নেন। তিনি একাধারে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও নাটকে নিয়মিত কণ্ঠ দিতেন।

এনটিভি, চ্যালেন আই ও বিটিভির আজান পরবর্তী দোয়ার কণ্ঠ মোস্তফা কামাল সৈয়দের। আব্দুল্লাহ আল মামুনের অনুপ্রেরণায় তিনি বেশকিছু বছর নাট্যদল `থিয়েটার` এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মঞ্চ নাটকে আবহসংগীত ও আলোক সম্পাতের কাজ করতেন। ৭০ দশকের শেষের দিকে তার প্রযোজনায় অনেক কালজয়ী বিখ্যাত নাটক হয়েছে। যার মধ্যে মমতাজ উদদীন আমহদের লেখা নাটক `প্রজাপতি মন`, ৮০ দশকের শুরুতে আন্তন চেখভের গল্প অবলম্বনে মমতাজ উদদীন আহমদের লেখা `স্বপ্ন বিলাস`, `নিলয় না জানি`, `বন্ধু আমার`, `নীরবে নিঃশব্দে, কাজী আব্দুল ওয়াদুদের লেখা `নদী বক্ষে` উপন্যাসের নাট্যরূপ `কূল নাই কিনার নাই` প্রশংসিত হয়।

আশির দশকের শুরুর দিকে বিটিভির নাটকের শুরুতে সূচনা সঙ্গীতের পাশাপাশি ভূমিকা কিংবা পুরো নাটকের সারমর্ম সূচনা পর্বে নেপথ্য কণ্ঠ ভেসে আসতো। অনেক সময়ই নাটকের শেষে নেপথ্যে থেকে কিছু না বলা কথা প্রচার হতো। সে সময় বেশিরভাগ নাটকের ভূমিকায় বা উপসংহারে শোনা যেত মোস্তফা কামাল সৈয়দের কণ্ঠস্বর। ১৯৭৫ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত প্রযোজক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি তার কাজের স্বীকৃত স্বরূপ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, নাট্যসভা পুরস্কার, শের-ই-বাংলা স্মৃতি পুরস্কার ও টেনাশিনাস নাট্য পুরস্কার অর্জন করেন।

তিনি সেই ব্যক্তি যার তত্বাবধানে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রথম প্যাকেজ নাটকের সূচনা হয়। তিনিই প্রথম সঙ্গীতানুষ্ঠান নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রথমে রেকর্ডিং ও পরে লিপসিং করার নিয়ম শুরু করেন। ক্রিকেট পাগল এই মানুষটি টেলিভিশনে ক্রিকেট খেলা প্রচারের ক্ষেত্রেও চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনিই প্রথম সৃষ্টিশীল কাজে দক্ষতা প্রমাণ করার উদাহরণ তৈরি করেন। জীবন দশায় তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেনি। গতবছর ৩১ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বিনয়বাঁশী জলদাস
লোক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধারণ ও লালন করা শিল্পী লোকবাদক বিনয়বাঁশী জলদাস। মাটি ও সত্যিকারের শিল্পী বলতে যাদের নাম আসবে এই ভূখণ্ডে তাদের একজন বিনয়বাঁশী জলদাস। ব্রাত্যমানুষের মহাজন হয়ে ওঠার গল্প তার। জেলের দাসত্ব করার কথা অন্য আর দশ জলের মতো। কিন্তু করলেন দাসত্ব ঠিকই তবে তা হলো ঢোলের। এই সমাজে প্রান্তিকরা একটু বেশি অত্যাচারিত মেথর, জেলে, কৈবত মালো, গণিকা, নাপিত জাতরা। তাইতো বহু বছর আগে লালন সাঁই গানে `জাত গেল জাত গেল` বলেছেন। বিনয়বাঁশীর জীবনও সুখময় ছিল না। অভাব, কষ্ট গেছে পুরো জীবন। তবে খুব ছোটবেলা থেকে ঢোলের সাথে মিতালি। বাবা ছিলেন ঢুলী। বাবার কাছেই হাতেখড়ি, জড়িয়ে পড়া। বালক বেলা থেকেই অসাধারণ বাদক হয়ে ওঠেন। তাইতো জলকে দূরে ফেলে শেষপর্যন্ত ঢোল হয়েছিল তা প্রেম, রক্তকণিকা। নিজে মজেছেন, অন্যকে মাজিয়েছেন।

দুজন নারী বিনয়ের জীবনকে মহিমান্বিত করেছেন। একজন তার জননী স্বরবালা, অন্যজন সহধর্মিণী সুরবালা। বিভিন্ন উৎসবে বিনয় ঢোল বাজাতেন। কলকাতাও গেছেন সাতবার। ঢোল বাজাতে তার ডাক আসতো। ২০০১ সালে পান একুশে পদক। চট্টগ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিনয়বাঁশী ২০০২ সালে ৫ এপ্রিল মারা যান।

মানজারুল ইসলাম রানা
১৯৮৪ সালে খুলনায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। জাতীয় দলের হয়ে ছয় টেস্ট ও পঁচিশটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। ২০০০ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সূচনা হয় রানার। যদিও সেই ম্যাচে ব্যাট করেনি। তারপর তিন বছর পর ২০০৩ সনে ৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম এম আজিজ স্টেডিয়ামে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ইংল্যান্ড বিপক্ষে রানার ডাক আসে। অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ রফিকের স্থলাভিষিক্ত হয়ে তিনি তার তৃতীয় বলে মাইকেল ভনকে আউট করে ফেলে। ড্রেসিং রুমসহ পুরো গ্যালারি কেঁপে ওঠে। রানাই একমাত্র বাংলাদেশি ক্রিকেটার ছিল তখনকার সময়ে, যে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম ওভারেই উইকেট নিয়েছেন।

প্রথম টেস্ট ২০০৪ সালের ১৮ ফ্রেব্রুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রানার অভিষেক। এই ম্যাচে ২০.২ ওভার বল করে ৬৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। এই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ৩৫ রান ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৩২ রান করেন। ২০০৫ রানা ওডিআই দুবার ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হয়। প্রতিপক্ষ  জিম্বাবুয়ে। ১৬ মার্চ ২০০৭ বাংলাদেশের ক্রিকেটের কালো দিন। বাইক সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র রানা মারা যান। শোকের ছায়া নেমে আসে। পরের দিন বিশ্বকাপ ম্যাচে প্রতিপক্ষ ভারত। হাবিবুল বাশারের দল শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বে এক ভয়াবহ দল। কিন্তু লাল-সবুজের জার্সিতে রানা একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের নাম। তখন আজকের আধুনিক ক্রিকেটের রাজ্যে রানার মতো ক্রিকেটার কখনও ক্যামেরায় ধরা পরেনি। অল্প সময়ে ঝড়ে যাওয়া এই খেলোয়াড়কে আজ হয়তো অনেকে নাম শোনেনি। তারা জানবে না তার অবদান। বেঁচে থাকলে হয়তো রানা আরও সফল বয়ে আনতো।

লেখক: চলচ্চিত্র কর্মী ও নির্মাতা