এমন কিছু পড়ি নাই আগে

মাহফুজুর রহমান সজীব

প্রকাশিত : অক্টোবর ১০, ২০১৯

পড়লাম সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের উপন্যাস ‘কালকেতু ও ফুল্লরা’। দেড়শো পৃষ্ঠার বইটিকে বড় গল্প না বলে বরং উপন্যাসই বলি। এই বইয়ের রিভিউ লেখা টাফ। তারপরও যখন পড়লামই লিখলেই বা কী!

এই বই পড়তেই দু`সপ্তাহের মতো লেগে গেল। কারণ আট থেকে দশ পৃষ্ঠা পড়েই ভাবতাম, আর না পড়ি বরং। কালকেতু আর ফুল্লরা কি-কি করে যায়, কি-কি কথা বলে, আদি নাই অন্ত নাই। প্রতিদিন দিনাপাত শেষে কপালে না বোঝা বা কিছুটা বোঝা হলে অনুভূতির যে ভঙ্গি তৈরি হয়, তেমন রেখা নিয়ে যতটুকু মন চায় পড়ে যেতে থাকি।

লেখার টোনটাই এমন যে, বারবার টেনে নিয়ে আসে বইয়ের পাতায়। লেখাগুলো বাংলাতে লেখা হলেও বুঝেও বুঝি না। আজিব তো! এমন কিছুতো পড়ি নাই আগে। ইগনোরও করা যাবে না, একটু-একটু করে পড়তেও হবে। এ যেন হঠাৎ জীবনের খোলস থেকে বেরিয়ে পড়া কালকেতু ও ফুল্লরার যা খুশি করে চলার কয়েকদিনের জার্নি। কি কি বলে তারা, কি কি করে!

তো শেষের কাছাকাছি এসে এমন এক চড় খাই যে, বইটা পড়া শেষে বুকশেলফে যত্ন করে রেখে দেই। ভেতরটা এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেন ছুঁড়ি দিয়ে যেন লেখক!

তখন ফুল্লরা কালকেতুকে জনার কথা বলছিল। ত্রোয়দশী জনা! জনার পেটে বাচ্চা আসে, বস্তি থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ছয় মাস যখন বাচ্চার (ততদিনে ফুল্লরার কথা শুনে বুঝতে পারি রাস্তায় থাকে জনা, ভিক্ষা করে) তখন রাতে মেইনরোডের ধারে তার ছয়মাসের বাচ্চাকে রাস্তার পাশে রেখে রেইপ করে পাঁচজন। রাস্তায় থাকলেতো রেপ হতেই হবে, তাই না? চারজনের শেষ হলে পঞ্চমজন জনাকে গিলতে গেলে থেমে পড়ে। ওই পঞ্চমজনের মুখে রাস্তার ধারে রাখা বাচ্চার মগোজ ছিটকে এসে পড়ে। রাস্তার ধারে বাচ্চা রাখা, গাড়ি মাথার উপর দিয়ে গিয়ে মগজতো ছিটকে দিবেই, না কি? তো মা জনা স্বাভাবিকভাবেইতো নিবেই ব্যাপারটা, তাই না? বাচ্চার কাছে গিয়ে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। গায়ে তার তখন আর কোনও কাপড় নাই। পাগল আর উলঙ্গ হয়েই রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর আরেক নতুন জীবন শুরু তার।

তো কিছুদিন পর এরকম হাঁটতে হাঁটতেই আরেক রাতে আরেক ঘটনা ঘটে। বাসার জানালা দিয়ে এক কিশোরের চোখ পড়ে জনার উপর। পাগল-ছাগল জনাকে একা পেয়ে বাসা থেকে নেমে এসে সেই কিশোর জনার দেহ খোদাই করে। একটু পর সেখানে তার বাবাকে দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি বাসায় ফিরে যায়। রুমে ফিরে দেখে তার মুখের ভেতর জনার এক স্তনের বোঁটা! কিছু সময় পর সে বিহ্বল হয়ে নিচে গিয়ে দেখে, তার বাবা নেই জনার ওখানে। জনা পড়ে আছে। তার বাকি স্তনের বোঁটাও নেই। দু`জায়গাতেই রক্ত!

এখন এরপর আর কিছু লেখা টাফ হয়ে যাচ্ছে। একজন পাঠক হিসেবে কালকেতু ও ফুল্লরার চেয়ে জনাই আমার কাছে ফিরে-ফিরে আসছে। পরিশেষে বলি, এমন কিছু পড়ি নাই আগে। বোঝা না বোঝার দুলুনির ভেতর কেমন এক জাঁকজমক টোন বইটাতে।

উপন্যাস: কালকেতুন ও ফুল্লরা
লেখক: সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ
প্রকাশক: বৈভব

দাম: চারশো টাকা।

বই বিপণনের ওয়েব সাইট রকমারি ডককমে অর্ডার করলেই বইটি আপনার হাতে পৌঁছে যাবে।

একুশে বইমেলা ২০১৮