এলিজা খাতুন

এলিজা খাতুন

এলিজা খাতুনের ৪ কবিতা

প্রকাশিত : জুন ০৩, ২০২৫

দিনপঞ্জি

চতুর্দিকে ঘুরছে চুপ থাকা দিন
গুদামজাত  চিনির আশপাশে
পিঁপড়ের রোজকার নোনা-সংগ্রাম!
নুন যেভাবে চুপচাপ নেমে যায় পিঠ বেয়ে

এখন আশ্চর্যরকম নিস্তাপ-ঘুমোনোর দিন
ফুরোনো ওষুধের দাগ মেখে অনুজ্জ্বল গ্লাস
যেভাবে পড়ে থাকে বারান্দার কোণে

মস্তিষ্কের কোষে কোষে তবু ছিটেফোঁটা আগুন
উদ্ভাসিত ক্ষুধার গায়ে রুটিপোড়া ঘ্রাণ মাখাতে না মাখাতেই
টাইপরাইটারের আঙুল থেকে বেরোনো
অজস্র শব্দযুদ্ধে চাপা পড়ে নাগরিক বৃষ্টির সুর

দুপুরে রোদপোড়া তামাটে শহর
বিকেলে জলে ভেসে যাওয়া -আকস্মিক বৈপরীত্য
দিনপঞ্জি লিখতে গিয়ে আমাকেও উপহাস করে ওঠে
ডায়েরির ভাঁজে জমে থাকা
বিস্মৃত গোলাপ-পাপড়ির বিবর্ণতা

আমি লজ্জিত হইনি
নতুন ডায়েরি কিনবো বলে কথা দিলাম সময়কে

সংকটকাল

সত্যের চেয়ে  অসত্যের ধুলো, অথবা
প্রয়োজনের চাইতে নিস্প্রয়োজনের বাতাস
উড়তে উড়তে মেঘ হয়ে জমে গেছে দেখে
সময় বড় শঙ্কায়,

যদি বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা
অবিশ্বাস্য রকমের প্রকাশ ঘটায় সংকটকালের!

মহড়ার সংলাপে কিংবা
বাস্তবতাযুক্ত অগোছালো কথপোকথনে প্রায়ই
খেই হারিয়ে যায় মূল আলাপের
ব্যাংকে বয়স্কভাতা গ্রহণের দিনে
অপেক্ষমান দীর্ঘ লাইন দেখে
কর্তব্যরত অফিসার দিশেহারা হয় যেভাবে

সময়ের মেঘেরা বাড়াতে থাকে জমাট জলের
পরিধি; পৃথিবীর অপেক্ষা কিংবা উপেক্ষাকে
নিদারুণ গোপন করার প্রয়াসে, অথবা
তুমুল ধারায় ঝরে ঝরে সেসব ফাঁস করে দিতে

পথের  বৈপরীত্যে

এ পথে মেঘভর্তি আকাশের তুমুল ছুটোছুটি
এ পথে নিরুদ্বেগ সরীসৃপের গোপন চলাচল
এ দুই দৃশ্যের বৈপরীত্যেও
সতেজ ফুলে ভরা হাত বাড়াতে ভয় নেই এতটুকু

মুশকিল এই যে, ঢাকনাবিহীন শীর্ণ নর্দমা
আজকাল বড় বেশি বিড়ম্বনাময়

মাথার ফিতের মতো পড়ে থাকা পথ
বেলা বাড়ার সাথে সাথে
ফ্লাটবাড়ির ছায়া থেকে সরে যেতে চাইলে
যে বিস্তৃতি আবশ্যক, তা বুঝেও
গলির প্রান্ত থেকে আসা মিছিল সরু হতে থাকে আরও

অথচ মানুষের কাঁধে চড়ে
কাদাপথ পার হওয়া মানুষের শৈশব ভিন্ন কথা বলে

পৃষ্ঠপোষকতা

ধান ও ধানক্ষেত বিষয়ক কবিতা পাঠের ঘোষণা দিয়ে

শহুরে দোকানে কাচের বাক্সে
শসা ও সস ঠাসা পাউরুটির মুখব্যাদান সাজিয়ে
পরাক্রমে চলেছে গোষ্ঠীচক্রের সাম্প্রতিক শব্দের ডেভেলপমেন্ট

মরা নদীর কল্পিত তরঙ্গ কাঁধে তুলে আশ্চর্য প্রহর
টাইপরাইটারের হাত থেকে বেরিয়ে সমুদ্রে রূপ নেয়

দিগন্ত বিস্তৃত অক্ষরের সমারোহ
শহরে ভিক্ষুকের থালার নৈবেদ্য হয়ে উঠবে, নাকি
সমুদ্রের গর্জন মেখে ফিরে আসবে এক একটি বিশাল সমুদ্র
তা নির্ধারণে ওদের চৌকশমাত্রা অনির্ধারিত

ইতিহাসের অন্যথা নয়, দেখা গেল
ডায়াসে সামনে রাখা স্ক্রিনে গুচ্ছ গুচ্ছ ধানের ছড়া

মহোদয়-আবিষ্ট মঞ্চে ওঠার আগেই কবিতার শরীর থেকে
ছেঁটে ফেলা হয়েছে কৃষকের ঘামসিক্ত শব্দ অক্ষর,
কালি-কলমের দাগে ঢাকা হয়েছে কাস্তের ধারালো দ্যুতি