ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশন ও ইসলাম

আশরাফুল আলম শাওন

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৭, ২০২৪

বাইজেন্টাইন সম্রাট হেরাক্লিয়াসকে একটা চিঠি দিয়েছিলেন মুহাম্মদ (সা.)। হেরাক্লিয়াস জেরুজালেমে থাকা অবস্থায় তার হাতে এই চিঠি পৌঁছেছিল। জেরুজালেমে এসে হেরাক্লিয়াস মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছিলেন।

সিরিয়ার হমসে ফিরে গিয়ে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সব প্রধান ব্যক্তিদের তিনি সেখানে ডাকলেন। সবাইকে উদ্দেশ্য করে হেরাক্লিয়াস বলেছিলেন, রোমানরা, যদি সঠিক নেতৃত্ব ও সাফল্য আপনাদের লক্ষ্য হয় এবং আপনারা আপনাদের সার্বভৌমত্ব অটল রাখতে চান, তাহলে এই নবির প্রতি আপনারা আনুগত্য স্বীকার করুন।

হেরাক্লিয়াসের কথা শোনার সাথে সাথে তারা উঠে দরজার দিকে হাঁটা শুরু করেছিল। তাদের এই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখে হেরাক্লিয়াস তাদেরকে আবার পিছন থেকে ডাকলেন। তিনিও বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি যা বিশ্বাস করেছেন তাদেরকে তা বিশ্বাস করানোর চেষ্টা বৃথা। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, আপনাদের বিশ্বাসের শক্তি পরীক্ষার জন্য আমি এটা বলেছি, এবং সেই শক্তির প্রমাণ আমি পেয়েছি।

হেরাক্লিয়াস বুঝতে পেরেছিলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মুহাম্মদের (সা) অনুসারীরা সিরিয়া জয় করবে। এবং সেটাই হয়েছিল। হেরাক্লিয়াসের এই ঘটনার মতো ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশনের পক্ষ থেকে ইসলামের সাথে এরকম পলিটিক্যাল সমঝোতার চেষ্টার ঘটনা ইতিহাসে সম্ভবত আর নাই। তবে ইসলামের ব্যাপারে ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশনের যে দ্বিধা, অস্থিরতা ও পলিটিক্যাল বিরোধিতা সেটা নিয়ে কথা বলার আগে মুহাম্মদের (সা.) জীবনের শেষদিকে একটু তাকাই।

মুহাম্মদ (সা.) তাঁর প্রথম জীবনে যেরকম নিঃসঙ্গতার জন্য হেরা পর্বতে চলে যেতেন, শেষ জীবনে তিনি নিঃসঙ্গতা খুঁজেছেন মদিনার কবরস্থানে, জান্নাতুল বাকীতে। প্রায়ই রাতের বেশিরভাগ সময় তিনি জান্নাতুল বাকীতে কাটাতেন। কবরবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলতেন, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা জীবিতদের চেয়ে ভালো আছ।

এরকম সময়েই একদিন ফজরের নামাজের পরে তিনি মসজিদে উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বললেন, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে একজনকে এই পৃথিবী এবং তাঁর সাথে মিলিত হওয়া— এই দুটি জিনিসের মধ্য থেকে একটা জিনিস বেছে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। এবং সেই বান্দা আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়া বেছে নিয়েছে।

এই কথা শুনে আবু বকর (রাঃ) কাঁদছিলেন। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছেন, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর আসন্ন মৃত্যুর কথা বলছেন। এরপর তিনি বলেছিলেন, আমার ভয় এটা নয় যে, আমার অনুসারীরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে। আমার ভয় এটা যে, তারা দুনিয়াবি চাওয়া-পাওয়ার জন্য একে অন্যের সাথে লড়াই করবে।

একবার মুহাম্মদ (সা.) খায়বারের উদ্দেশে তার দল নিয়ে যাত্রা করবেন। ঠিক তার আগে-আগে আবু আবস নামের এক ব্যক্তি আসলেন তার কাছে। তার কাছে একটা উট ছিল, কিন্তু সাথে করে নেওয়ার মতো কোনো খাবার ও পরিবারের জন্য রেখে যাওয়ার মতো কোনো খাবার কেনার টাকা ছিল না। এবং তার পরনের কাপড়টি ছিল ছেঁড়া। মুহাম্মদ (সা.) তাকে নিজের একটি জামা দিয়ে দিলেন।

কিন্তু এক-দুই দিন পরে তারা যখন খায়বারের দিকে যাত্রা করলেন, তখন তিনি দেখলেন আবু আবসের গায়ে অন্য একটি জামা। নবিজি (সা.) তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি তোমাকে যে জামাটি দিয়েছিলাম, সেটা কোথায়?
আবু আবস তাকে বললেন, সেই জামাটি ৮ দিরহাম দিয়ে বিক্রি করেছি। ২ দিরহাম দিয়ে সাথে করে নেওয়ার জন্য খেজুর কিনেছি এবং ২ দিরহাম পরিবারের কাছে রেখে এসেছি তাদের খাবার কেনার জন্য। বাকি ৪ দিরহাম দিয়ে আমি এই জামাটি কিনেছি।

নবিজি (সা.) আবু আবসের কথা শুনে হাসলেন। তিনি বলেছিলেন, বেঁচে থাকলে তোমার একদিন প্রাচুর্য হবে এবং পরিবারের জন্য রেখে যাওয়ার মতো প্রচুর সম্পত্তি থাকবে তোমার। তবে সেই দিনটা তোমার জন্য ভালো কিছু হবে না।

মক্কা বিজয়ের পরে হুনায়ন থেকে ফিরে আসলে মুহাম্মদ (সা.) বললেন, আমরা ছোট যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেছি কিন্তু আরো বড় পবিত্র যুদ্ধ আমাদের সামনে আছে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলা, সেই বড় পবিত্র যুদ্ধটা কী? তিনি বললেন, নিজের আত্মার (প্রবৃত্তির) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।

শোনা কথা, এটার ঐতিহাসিক সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত নই, মুহাম্মদ (সা.) নাকি বলেছিলেন, তার অনুসারীরা যতগুলি হালাল রাস্তায় অর্থ ব্যয় করবে তার মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো ঘরবাড়ি সাজানোর জন্য অর্থ ব্যয় করা।

এগুলি থেকে দুনিয়ার সাথে মানুষের সম্পর্কের ব্যাপারে ইসলামের কোর দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যায়। দুনিয়াকে ক্ষণস্থায়ী ভাবতে হবে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু বা প্রবৃত্তির আনুগত্য পালন করা যাবে না। এখন দুনিয়াকে ক্ষণস্থায়ী ভাবলে এবং প্রবৃত্তির উপাসনা না করলে একজন ব্যক্তির কোনো কাজকর্ম সমাজের বা কম্যুনিটির আর দশজনকে কিভাবে প্রভাবিত করবে, সেটা আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে যায়।

মুহাম্মদের (সা.) আগের আব্রাহামিক ধর্মগুলিতেও এরকম ইঙ্গিত দেওয়া আছে। কিন্তু মুহাম্মদের (সা.) ধর্ম ইসলাম কেন আলাদা? কারণ, ইসলাম প্রায়োগিকভাবে রাজনৈতিক। এখন ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশনের ইসলামের ব্যাপারে যে দ্বিধা, অস্থিরতা ও রাজনৈতিক বিরোধিতা সেটা কি ইসলামের এই রাজনৈতিক চরিত্রের কারণে?

আব্রাহামিক ধর্মের ধারাবাহিকতায় ইসলামের সবচেয়ে কাছের দুটি ধর্মের বর্তমান অবস্থার দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যায়। এখনকার দুনিয়ায়, ক্রিশ্চিয়ানিটি ও জুদাইজমকে (ইহুদি) কে ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশন এমনভাবে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে নিয়েছে যে, এই ধর্ম দুটির জন্ম যে মধ্য এশিয়ায় এবং আরব ও হিব্রু জনগোষ্ঠীর মধ্য দিয়ে এই দুটি মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটা ধারণা করা কঠিন।

এমনকি এই দুই ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থও এতটাই ইংরেজি নির্ভর যে এদের অরিজিন যে হিব্রু ভাষা সেটা অনুমান করাও কঠিন। ক্রিশ্চিয়ানিটি ও জুদাইজম এতটাই ওয়েস্টার্ন চেহারা অর্জন করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আরব জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশ যে ক্রিশ্চান ধর্মাবলম্বী কারো পারসেপশনেই জিনিসটা ধরা পড়বেনা। ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশনের নিজের ব্যাপারে একটা সুপিরিয়র ধারণা আছে। সে অন্য কোনো সভ্যতাকে হয় ধ্বংস করে ফেলে না-হলে নিজের মতো করে কনভার্ট করে নেয়। তার কাছে ইউরোপ মানেই এনলাইটেনমেন্ট, ইউরোপের বাইরে অন্য যেকোনো কিছুই ডার্কনেস।

একটা পপুলিস্ট এলিমেন্ট থেকে উদাহারণ দেই। আমেরিকান লেখক ড্যান ব্রাউনের সর্বশেষ বইয়ের আগের বই ‘ইনফার্নো’র কাহিনির ক্লাইম্যাক্সে দেখা যায়, ভিলেন খুব মহৎ উদ্দেশ্যে একটা ডেডলি ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তুরষ্কের ইস্তাম্বুলে (আগেকার কনস্ট্যানটিপোল) নিয়ে এসেছে। সেই মহৎ উদ্দেশ্যটা কী? পৃথিবীর জনসংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে, প্রকৃতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য এই জনসংখ্যা কমাতে হবে!

সারা ইউরোপ ঘুরে ভিলেন সেই ভাইরাসের টিউব নিয়ে এসেছে ইস্তাম্বুলে। বইয়ে দেখানো হয়েছে, পৃথিবীর এই জনসংখ্যার মধ্যে এশিয়ার জনসংখ্যা অস্বাভাবিক বেশি। এবং এই বিপুল সংখ্যক মানুষ আসলে মানুষের পর্যায়েও পড়ে না। এখানে ভাইরাস ছড়ানোর জন্য ইস্তাম্বুল বেছে নেওয়াটা ইন্টারেস্টিং! ইস্তাম্বুল হলো বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পতনের চিহ্ন, ইউরোপের শেষ ও এশিয়ার শুরু এবং এটা মুসলিম দেশ। যেন এখানকার এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে মেরে ফেলা সভ্যতার জন্য নৈতিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত।

ড্যান ব্রাউনের অন্য বইগুলিতেও অবশ্য একই জিনিস দেখা যায়, সভ্যতা ও ধর্ম আসলে গড়ে তুলেছে ইউরোপীয়ানরা। এবং সেটা রক্ষার দায়িত্ব এখন আমেরিকানদের। আর সেই সভ্যতার ওপর যে আঘাত করে সেই ক্যারেক্টারটা হয় এশিয়ান, নাইলে মিডল ইস্টের কেউ। ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশন আসলে বেসিক্যালি এই চিন্তাটাই ধারণ করে। হয় ধ্বংস করে ফেলো, নাহয় সেটাকে ওয়েস্টার্নাইজ করতে হবে।

আফ্রিকান, ল্যাটিন আমেরিকান, আমেরিকান নেটিভ, এমনকি পৃথিবীর অসংখ্য ছোট ছোট ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যায়। তবে ইসলামের ওয়েস্টার্নাইজেশন সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এর কারণ ইসলামের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চরিত্র। ইউরোপ-আমেরিকান ক্যাপিটালিজম বেইজড সিভিলাইজেশনের যে ওয়ার্ল্ড ভিউ আর ইসলামের যে ওয়ার্ল্ড ভিউ সেটা এতটাই দুই প্রান্তের যে, দুইটা মার্জ করা কখনোই সম্ভব নয়।

আর, ইসলামের পলিটিক্যাল-কালচারাল এক্সপ্রেশনও এরকম যে, সেই এক্সপ্রেশনকে ওয়েস্টার্ন রাস্তায় কনভার্ট করা কখনোই সম্ভব হয়নি। মৌলিকভাবেই ইসলামের রিচুয়াল এর যেকোনো কনভারশন বিরোধী। যেমন, বাইবেলের যেরকম ইংরেজিকরণ সম্ভব হয়েছে কোরআনের সেই ইংরেজিকরণ সম্ভব হয়নি। চার্চে ইংরেজিতে যেভাবে সারমন দেওয়া যায়, নামাজের ক্ষেত্রে কোরআনের আরবি সূরার অন্য কোনো বিকল্প সম্ভব নয়।

ইসলামের ডমিন্যান্ট রাজনৈতিক চরিত্রের কারণে ইসলামের ব্যাপারে ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশনের এই রাজনৈতিক বিরোধীতা সবসময়ই আগ্রাসী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পরে আরব বিশ্বের ভৌগলিক সীমানা ভাগের মধ্যে সেই রাজনৈতিক আগ্রাসন ছিল। পরবর্তীতে আমেরিকার সাথে রাশিয়ার কোল্ড ওয়ার শেষ হওয়ার পরে ইসলামের সাথে পশ্চিমের বিরোধ আরো বেড়েছে। ইরাক-ইরান যুদ্ধ, আফগানিস্তান ক্রাইসিস, ইরাক হামলা, সিরিয়ার যুদ্ধ, ইজরায়েলকে শক্তিশালী করা, প্যালেস্টাইন ক্রাইসিসেই সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়।

তবে এই খেলায় ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশনের সবচেয়ে স্ট্রং মুভমেন্ট ছিল ইসলাম ও মুসলিমদেরকে টেররিস্ট হিসাবে মার্ক করা, সন্দেহজনক হিসাবে চিহ্নিত করা। ইসলামকে কালচারালি কনজারভেটিভ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা। এবং মুসলিমদেরকে একটা কালচারাল ও আইডেন্টিটির ক্রাইসিসে ফেলে দেওয়া। এখানে কোনো আইডিওলজি কনজারভেটিভ বা লিবারেল না, কারো ওয়ার্ল্ড ভিউ নেগেটিভ বা পজিটিভ না, কারো চিন্তা-ধারা অন্ধকার বা আলোকিত না। এখানে জাস্ট দুইটা আলাদা আলাদা সিভিলাইজেশনের, কালচারের, ওয়ার্ল্ড ভিউয়ের বিপরীতমুখী অবস্থান।

ওয়েস্টার্ন মিডিয়া ইসলামকে মার্ক করেছিল রিলিজিওন অব ওয়ার হিসাবে। ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশনের ইসলামকে যুদ্ধের ধর্ম হিসাবে মার্ক করাটা বেশ মজার। ফানি। ওয়ারফেয়ারে পশ্চিমা নীতি বা ফিলোসফি হল, এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন ওয়ার। আর ইসলাম বলে যুদ্ধের সময় নারী ও শিশুর হেফাজত করতে হবে; এমনকি একটা গাছও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘটনা কেমন সার্কাস্টিক! গত শতাব্দীর শেষদিকে রাশিয়া যখন আফগানিস্তান আক্রমণ করে তখন রাশিয়ান ট্রুপ ইচ্ছাকৃতভাবে আফগানিস্তানের গাছ নষ্ট ও ধ্বংস করতে থাকে!

পশ্চিমা সভ্যতা সব সময়ই এটাকে তাদের সিভিলাইজেশনের ফাইট হিসাবেই দেখেছে। স্যামুয়েল হান্টিংটন এটাকে বলেছেন ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন এবং এটাই অনিবার্য। অথচ পরবর্তীতে ইরানের খামেনী এটার প্রতিক্রিয়ায় ‘ডায়লগ বিটুইন দ্য সিভিলাইজেশন’ এজেন্ডা প্রকাশ করে সমঝোতার আহবান জানিয়েছিলেন। ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশন যে সব সময় এটাকে তাদের সিভিলাইজেশনের রাজনৈতিক ফাইট হিসাবেই দেখেছে সেটার উদাহারণ দেওয়ার জন্য শেষে একটা সিনেমার রেফারেন্স দেই। ২০০৮ সালের রিডলি স্কটের বডি অব লাইজ। পলিটিক্যালি এরকম স্ট্রং সিনেমা খুব কম আছে।

সিআইএ কর্মকর্তা রাসেল ক্রো আমেরিকা থেকে ফোনে কথা বলছে ইরাকের সামারায় অবস্থান করা সিআইএ এজেন্ট ডি-ক্যাপ্রিও’র সাথে। ডিক্যাপ্রিও তাকে ফোনে আল সালিমের বক্তৃতা এন্টারপ্রিট করে শোনায়, মুসলিম বিশ্বের ওপর আমেরিকার যুদ্ধের প্রতিশোধ আমরা নেব।

এই সময় রাসেল ক্রো’র স্ত্রী সেখানে এসে  অবাক হয়। বলে, এড ইট’স সিক্স ও ক্লক ইন দ্য মর্ণিং!
রাসেল ক্রো উত্তর দেয়, সেভিং সিভিলাইজেশন হানি।
বডি অব লাইজের শেষে দেখা যায়, সিআইএ’র এর গেমটা এরকম যে আল সালিম মনে করছে সে তার কাজ করছে, অথচ দেখা যায় সে না জেনেই সিআইএ’র এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।

তবে সিনেমার শেষে এই দুই সিভিলাইজেশনের ফাইটে রিডলি স্কটের সমর্থন ছিল স্ট্রাগলিং সাইডের প্রতি। সিনেমার শেষে ডিক্যাপ্রিও মিডল ইস্টেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
রাসেল ক্রো: তাছাড়া এখানে থেকে তুমি কী করবে?
ডিক্যাপ্রিও: কেন নয়? আমি যদি মিডল ইস্ট পছন্দ করে থাকি?
রাসেল ক্রো: হা হা... কেউ মিডল ইস্ট পছন্দ করে না। এখানে পছন্দ করার কিছু নাই।
ডিক্যাপ্রিও: সেটাই হয়ত এখানকার সমস্যা? ইজন’ট ইট?

বডি অব লাইজে জর্ডানে ডিক্যাপ্রিও যে মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলে তার নাম আয়েশা। উইটি কো-ইনসিডেন্স। তবে পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে সবচেয়ে আগলি ও মীন মুভমেন্ট ছিল সালমান রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস বা ডেনমার্কের পত্রিকায় বা ফ্রান্সের শার্লি হেবদো-তে প্রফেটের (সা.) ক্রুড কার্টুন প্রকাশ করা। এটা যেকোনো ফিজিকাল বা আইডিওলজিকাল আঘাতের চেয়েও তীব্র।

কারণ, মুসলিমদের মধ্যে যারা ভালোবাসার তারা তাঁকে ভালবাসে, যারা বিশ্বাস করার তারা বিশ্বাস করে রিজারেকশনের দিন, হাশরের ময়দানে তার প্রতিটা উম্মতের হয়ে সুপারিশ করার জন্য তিনি সেখানে থাকবেন।