কথাসাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ীর আজ মৃত্যুদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : মার্চ ৩০, ২০২০

কথাসাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ীর আজ মৃত্যুদিন। ১৯৬৫ সালের ৩০ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার জন্ম বিহারের পূর্ণিয়ার ভাট্টাবাজারে, ১৯০৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। পিতা ইন্দুভূষণের আদিবাড়ি নদীয়ার কৃষ্ণনগরে। ১৮৯৬ সালে জীবিকাসূত্রে ইন্দুভূষণ পূর্ণিয়ায় আসেন।

সতীনাথের স্কুলজীবন শুরু হয় পূর্ণিয়া জেলা স্কুলে। ১৯২৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর পাটনা সায়েন্স কলেজ থেকে আইএসসি পাস করে ১৯২৮ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক হন। ওই বছরেই মাতা রাজবালা দেবীর মৃত্যু ঘটে। ১৯৩০ সালে অর্থনীতিতে এমএ পাশ করেন এবং পরের বছরেই পাটনা আইন কলেজ থেকে বিএল পাশ করেন।

১৯৩২ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত সতীনাথ পিতার সহকর্মীরূপে পূর্ণিয়া কোর্টে ওকালতি শুরু করেন। এই সময় নানাবিধ সমাজসেবামূলক কাজেও জড়িয়ে পড়েন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, বলিপ্রথা ও মদের দোকানে পিকেটিং আন্দোলন। সাহিত্যচর্চা শুরু হয় এই সময়েই। বাড়ি বাড়ি বই সংগ্রহ করে পূর্ণিয়া গ্রন্থাগার স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন।

পরবর্তীকালে পিতা ইন্দুভূষণের নামে গ্রন্থাগারটির নাম হয় `ইন্দুভূষণ সাধারণ পাঠাগার`। প্রায় একক উদ্যমে বাংলা ম্যাগাজিন ক্লাব গঠন, সাহিত্যপাঠ, স্মরণশক্তি প্রতিযোগিতা, সাহিত্য আড্ডা প্রভৃতির প্রচলন হয়। এই কাজের সূত্রেই তিনি স্বনামধন্য সাহিত্যিক কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহসান্নিধ্য লাভ করেন।

পাশাপাশি তার রাজনৈতিক জীবনেরও সূচনা ঘটে। গান্ধীজীর অহিংস অসহযোগ আন্দোলন তাকে আকৃষ্ট করে এবং গান্ধিবাদী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পুলিশের চোখ এড়িয়ে গভীর রাতে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে স্বাধীনতা আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দেন ঘরে ঘরে। ১৯৪০ সালের জানুয়ারি মাসে সতীনাথ ভাদুড়ী প্রথমবারের জন্য কারারুদ্ধ হন।

১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তিনি দ্বিতীয়বার কারাবাসকালে জেল ভেঙে পালানোর চেষ্টা করেন। ফলে তাকে ভাগলপুর সেন্ট্রাল জেলে বদলি করা হয়। এই কারাবাসকালীন সময়ই তার `জাগরী` উপন্যাস রচনার প্রস্তুতিকাল। ১৯৪৪ সালে তিনি তৃতীয়বার কারাবরণ করেন। এই কারাবাসের সময় তার সঙ্গে ছিলেন ফণীশ্বরনাথ রেণু, অনাথবন্ধু বসু, ফণীগোপাল সেন, জয়প্রকাশ নারায়ণ, শ্রীকৃষ্ণ সিংহ, অনুগ্রহনারায়ণ সিংহ প্রমুখ।

১৯৪৫ সালে তার সাড়া জাগানো উপন্যাস `জাগরী` প্রকাশিত হয়। `চিত্রগুপ্ত` এই সাহিত্যিক ছদ্মনামে তিনি পরিচিত ছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তিনি কংগ্রেসের একজন সক্রিয়কর্মী ছিলেন এবং পূর্ণিয়া জেলা কংগ্রেসের সম্পাদকের পদে আসীন ছিলেন। কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ কাজকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে সমাজতন্ত্রী দলে যোগ দেন।

পার্টির দুর্নীতি আর দলাদলি তার অসহ্য বোধ হয়। জনৈক্য পুরনো গ্রামীণ কর্মী তার কাছে কংগ্রেস ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি অকপটে জানিয়েছিলেন যে, কংগ্রেসের কাজ ছিল স্বাধীনতা লাভ করা। সে কাজ হাসিল হয়ে গেছে। এখন `রাজকাজ` ছাড়া তার আর কোনো কাজ নেই। কংগ্রেসের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর সতীনাথ পূর্ণিয়ার কিশোর আর তরুণদের জন্য ব্যায়ামাগার গঠন ও শনিবারের সাহিত্যবাসর পরিচালনা করতে থাকেন।

১৯৪৯ সালে তিনি বিদেশ যাত্রা করেন। বিদেশে থাকাকালীন সময়েই তিনি তার গ্রন্থ `জাগরী`র জন্য বাংলাভাষায় প্রথম রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৫০) প্রাপ্তির সংবাদ পান। বিখ্যাত সাহিত্যিক ফণীশ্বরনাথ রেণু তার জীবনী মূলক স্মৃতিকথা `ভাদুড়িজি` রচনা করেন, যা হিন্দি সাহিত্যের অন্যতম সম্পদ। ১৯৬৫ সালের ৩০ মার্চ সতীনাথ ভাদুড়ীর প্রয়াণ ঘটে। মাত্র আটান্ন বছর বয়সে কোশীর শাখানদীর শ্মশানঘাটে তার মরদেহ ভস্মীভূত হয়ে মিশে যায় পূর্ণিয়ার মাটিতে।