কবি কুসুমকুমারী দাশের আজ মৃত্যুদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫

কবি কুসুমকুমারী দাশের আজ মৃত্যুদিন। ১৯৪৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর কলকাতার রাসবিহারী এভিনিউয়ের বাড়িতে তিনি মারা যান। ১৮৭৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বাখরগঞ্জ জেলার বরিশাল শহরে তার জন্ম। পিতা চন্দ্রনাথ দাশ ও মাতা ধনমাণি।

চন্দ্রনাথ ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করায় গ্রামবাসীদের বিরোধিতায় গৈলা গ্রামের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে বরিশালে চলে আসেন। বরিশাল ব্রাহ্মসমাজ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের হাই স্কুলে কুসুমকুমারী ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন।

এরপর বালিকাদের অভাবের জন্য স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে কুসুমকুমারীকে তার বাবা কলকাতায়, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের গৃহে রেখে বেথুন স্কুলে ভর্তি করেন। একবছর পর ব্রাহ্মবালিকা বোর্ডিংয়ে লাবণ্যপ্রভা বসুর তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করেন।

প্রবেশিকা শ্রেণিতে পড়ার সময়েই ১৮৯৪ সালে তার বিয়ে হয় বরিশালের ব্রজমোহন ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সত্যানন্দ দাশের সঙ্গে। তারই অনুপ্রেরণায় কুসুমকুমারী সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যান। বরিশালের ব্রাহ্মসমাজের সভা-উৎসব-অনুষ্ঠানে কুসুমকুমারী যোগদান করতেন।

তিনি ১৩১৯ থেকে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই বরিশাল ছাত্র সংঘের সপ্তাহকালব্যাপী মাঠ উৎসবের মহিলা দিবসের উপাসনায় আচার্যের কাজ করেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এমন একটি স্বাভাবিক মর্যাদার অধিকারিণী হয়েছিলেন যে, শুধু মহিলাদের উৎসবে নয়, ব্রাহ্মসমাজের সাধারণ সভাতেও তিনি আচার্যের কর্মভার কাজ করেন। তিনি বরিশাল মহিলা সভার সম্পাদক ছিলেন।

ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেন কুসুমকুমারী। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, শিশুদের জন্য যে চিত্রশোভিত বর্ণশিক্ষার বই লিখেছিলেন, তার প্রথম ভাগে কুসুমকুমারী রচিত যুক্তাক্ষরবিহীন ছোট ছোট পদ্যাংশ ছিল। তিনি সম্পাদক মনোমোহন চক্রবর্তীর অনুরোধে লিখেছেন ব্রহ্মবাদী পত্রিকায়।

তার অল্প কিছু কবিতা প্রকাশিত হয় প্রবাসী ও মুকুল পত্রিকায়। তিনি নিয়মিত কবিতা লিখতেন। কিন্তু অধিকাংশই পাওয়া যায়নি। কারণ হয় সেগুলো হয় হারিয়ে গেছে নতুবা তিনি সেগুলো নষ্ট করেছেন। তার কবিতায় বারবার এসেছে ধর্ম, নীতিবোধ ও দেশাত্মবোধ।

কবিতা মুকুল (১৮৯৬) তার কাব্যগ্রন্থ। পৌরাণিক আখ্যায়িকা নামের একটি গদ্যগ্রন্থও তিনি রচনা করেন। ‘নারীত্বের আদর্শ’ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় কুসুমকুমারী স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন। তার পুত্র কবি জীবনানন্দ লিখেছেন, সাহিত্য পড়ায় ও আলোচনায় মাকে বিশেষ অংশ নিতে দেখেছি। দেশি-বিদেশি কোনো কোনো কবি ও ঔপন্যাসিকের কোথায় কী ভালো, কী বিশেষ তারা দিয়ে গেছেন- এ সবের প্রায় প্রথম পাঠ তার কাছ থেকে নিয়েছি। তার স্বাভাবিক কবিমনকে তিনি শিক্ষিত ও স্বতন্ত্র করে তোলবার অবসর পেয়েছিলেন। কিন্তু বেশি কিছু লিখবার সুযোগ পেলেন না।.... তখনকার দিনের সেই অসচ্ছল সংসারের একজন স্ত্রীলোকের পক্ষে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হলো না।