কারবালা ও আল্লামা ইকবাল

শরিফ সাইদুর

প্রকাশিত : নভেম্বর ১৬, ২০১৯

কয়েকদিন আগে ফজর নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখি, ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে, সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফলে মসজিদের আঙিনায় বেড়ে ওঠা হাসনাহেনার পাতাগুলো ভিজে গেছে। সুন্দর আবহাওয়া অনুভব করতে করতে বাড়িতে এলাম। ঠাণ্ডা পানি পান করে গা এলিয়ে অভ্যাসবশত ফেসবুক খুললাম। খুলেই গুরুস্থানীয় এক বড় ভাইয়ের পুরনো পোস্ট নজরে আসলো।

`ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালাকে বাদ` ও আরও কয়েক বাক্যে পোস্টটি ছিল মুসলমানদের উত্তেজনা ও তেজের অসারতার প্রতি আফসোস দেখিয়ে। সেই পোস্টটে দেশ সেরা এক আলেম (নাম বললে প্রায় সবাই চিনবেন) সন্দেহ করলেন, এইটা শিয়াদের কথা!

`ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালাকে বাদ` কথাটা কার, আমি জানি না। কখনো শুনি গালিব শাগরেদ আলতাফ হোসেন হালির, কখনো শুনি ইকবালের। এইটা কার কথা, জ্ঞানীরাই ভালো বলতে পারবেন। সেই সকালেই আমি একটা বই ডাউনলোড করি। Syed Akbar Hayder নামের গবেষকের লেখা Reliving Karbala, Martyrdom in South Asian Memory.

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত এই বইয়ের ভূমিকায় লেখক জানিয়েছেন, বইটি তার ১৩ বছরের গবেষণা। ভূমিকা পড়ে মনে হলো, এমন ইংরেজিতে দাঁত বসানো কষ্ট হবে। অনেকগুলো অধ্যায়ে সাজানো বইটির একটি অধ্যায়ের নাম Iqbal and Karbala. অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তক, দার্শনিক ও কবি আল্লামা ইকবাল কারবালাকে কিভাবে দেখেন ও তার কবিতায় কারবালা কিভাবে এসেছে, তা নিয়ে।

সেই অধ্যায়ের কিছুটা পড়ে আমার চক্ষু চড়কগাছ। ইকবাল কারবালাকে নিয়ে, আহলে বায়াতের প্রতি ভালোবাসা এমনভাবে প্রকাশ করেছেন, তা দেখে প্রচণ্ড কৌতূহল সৃষ্টি হলো। কেউ কি ইকবালকে শিয়া মতাদর্শী বলেনি?

সে অধ্যায়ে ইকবালের গুরু জালালুদ্দিন রুমি, ফরিদ উদ্দিন আত্তার, আবদুর রহমান জামির কবিতার উদ্ধৃতিসহ পার্সি সাহিত্যের অনেকগুলো উদ্ধৃতি এসেছে। ইকবালের কবিতাগুলো পড়ে মনে হলো, আহলে বাইতের প্রতি, ইমাম হোসেনের আত্মত্যাগের প্রতি তার প্রেম, ভালোবাসা ও ভক্তি যেন উপচে পড়ছে। ফাতমাকে (রা.) উদ্দেশ্য করে ইকবাল বলেন, I would have circumambulated her grave and fallen into prostration on her dust.

ইকবাল আরও বলেন,
The first Muslim, the King of men, Ali
The treasure of faith, in the world of love, Ali
In the affection of his progeny, I live—
Like a jewel, I sparkle (in his love)

I learned the lesson of the Quran from Husain
In his fire, like a flame, I burn

কয়েক বছর আগে লাশ দাফনের কবরস্থানের পাশে দোয়ায় এক আগন্তুক আলেম আহলে বাইতের জন্যও দোয়া মাঙেন। আহলে বাইত শব্দগুচ্ছ উচ্চারণের সাথে সাথেই স্থানীয় মুয়াজ্জিনের অনুসন্ধিৎসু চোখসহ আরও কিছু চোখ সে আলেমের দিকে নিক্ষেপ হলো। যেন মারাত্মক কোনও ত্রুটি বা ঘাপলা ঘটে গেছে।

গত মহরমের সময়ে এক শ্রদ্ধেয় আলেমের পোস্ট আমি এক জনপ্রিয় গ্রুপে শেয়ার করি। সেই পোস্টে ইমাম হোসেনের পর `আলাইহিস সালাম` যুক্ত ছিল। এই শব্দদ্বয় দেখে এক ভাই প্রতিবাদ করলেন, আরেক ভাই সাথে সাথ জানিয়ে দিলেন, এর ব্যবহার হাদিস দ্বারা সমর্থিত। সাথে সাথেই সে ভাই বলে দিলেন, এগুলো শিয়াদের প্রোপাগাণ্ডা।

নিজেদের দুর্বলতা ও অযোগ্যতা ঢাকতে ইহুদিদের ষড়যন্ত্র দেখার সাধারণ প্রবণতা আমাদের এখানে আছে। যদিও আমি ইহুদিদের ষড়যন্ত্র অস্বীকার করছি না। ইদানীং ইয়াজিদ বা কারবালা ইস্যুতে শিয়াদের প্রোপাগাণ্ডার হুজুগ দেখা যায়। ইয়াজিদকে মিথ্যার স্বীকার প্রমাণ করতে টেনে আনা হয় শিয়া হুজুগ।

ইমাম হোসেনের প্রতি ভালোবাসা রাখা মুসলিমদের জন্য জরুরি বলে মনে করি। এক্ষেত্রে ইকবালের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখযোগ্য:

Allama Iqbal compares Husain’s exalted station within the Muslim community to that of Su¯rat al-Ikhla¯s in the Quran. This sura is a fundamental component of Muslim ritual prayers and concisely summarizes the Islamic creed of monotheism: “Say, He is Allah, the One, the Eternal; He begets not nor is He be gotten and there is none like Him.” Just as the words of this Quranic sura are pivotal, Husain is an integral part of the Muslim community. In fact, according to Iqbal, truth itself survives through the strength of Husain.

এলোমেলো এই লেখাটা শেষ করছি নফসের নামকরা চিকিৎসক ফরিদ উদ্দিন আত্তারের কবিতা দিয়ে। আত্তার বলেন,

Religion is your Husain,
while desires and hopes are pigs and dogs
yet you kill the first through thirst and feed these two.
How can you keep on cursing the wicked Yazid and Shimr?
You are a Shimr and a Yazid for your own Husain!
                                                  Farid Uddin Attar