ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও ‘শ্যাল উই ট্যাল দ্য প্রেসিডেন্ট’

মো. খালিদ সাইফুল্লাহ ফয়সাল

প্রকাশিত : জুলাই ১৩, ২০১৯

হাসপাতালে শুয়ে থাকা এক রোগী, যে কি না আমেরিকায় একজন গ্রিক অবৈধ অভিবাসী, অজ্ঞাত কোনো এক ব্যক্তির হাতে গুলি খেয়ে পড়ে আছে হাসপাতালের বিছানায়। সাধারণ ঘটনার জন্য পুলিশ তদারকিতে আসলে মুখ খুলতে নারাজ হয় সে, শুধুমাত্র এফবিআই এর কর্তার সাথে কথা বলবে সেই অভিবাসী, অ্যাঞ্জেলা মেক্সিস।

কিন্তু কি এমন বলতে চায় সে, যার জন্য এফবিআই এর কর্তাকে আসতে হবে? শেষমেষ, মেট্রোপলিটন পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে ওয়াশিংটনে এফবিআইয়ের ফিল্ড এজেন্টদের প্রধান নিক স্টেমস এর কাছে একটি ফোনকল আসে, যেখানে অ্যাঞ্জেলো মেক্সিস এর আবদার জানানো হয়। আর কাহিনির প্রেক্ষাপট শুরু হয় এখান থেকেই।

খবর পেয়ে নিক স্টেমস তৎক্ষণাত দুজন ফিল্ড এজেন্টকে পাঠানো হয় উইলসন হাসপাতালে, অ্যাঞ্জেলো মেক্সিসের সাথে কথা বলার জন্য। দুই এজেন্ট, ব্যারি কোলভার্ট এবং মার্ক অ্যান্ড্রুজ, ভয়ে ভীত হয়ে কাঁপতে থাকা অ্যাঞ্জেলা মেক্সিসের সাথে কথা বলে। জানতে পারে একটি ভয়ানক চক্রান্তের কথা, তা মুহূর্তের মাঝে কাঁপিয়ে দেয় দুই এজেন্টকে।

কী ছিল সেটি? সদ্য নির্বাচিত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট অ্যাডয়ার্ড কেনেডিকে হত্যার খবর, আগামী এক সপ্তাহ পর দীর্ঘ এবং প্যাঁচানো এক পরিকল্পনার অংশ হতে যাচ্ছে স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট! মৃত্যু এখন তার থেকে মাত্র এক সপ্তাহ দূরে!  এই খিস্তি খাওয়া ঘোর বিপদের কথা শুনে হাঁটুতে কাঁপুনি ধরে যায় এজেন্টদের, খবরটি সত্য-মিথ্যা যাই হোক, তাদের কর্তা নিক স্টেমসকে রিপোর্ট করে এজেন্ট কোলভার্ট এবং অ্যান্ড্রুজ।

সাথে সাথে, ঘটনার গুরুত্ব বুঝে নিয়ে নিক অ্যান্ডুজকে আদেশ দেয় হাসপাতালে থাকা একমাত্র জলজ্যান্ত সাক্ষী অ্যাঞ্জেলো মেক্সিসকে পাহারা দেয়ার জন্য। আদেশ নিয়ে মার্ক ফিরে আসে উইলসন হাসপাতালে, কিন্তু, বড় অদ্ভুতভাবে এফবিআইকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কোনো কিছু করার সুযোগ না দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে গলা কেটে খুন হয়ে গেল অ্যাঞ্জেলো মেক্সিস ও তার পাশের কেবিনের রোগী!

মার্ক অ্যান্ড্রুজ তখনো অমানিশায় ডুবে আছে, হতবিম্ব হয়ে গিয়েছে এমন ধৃষ্ট নিষ্ঠুরতায়। ঘটনার বিস্তারিত খবর দেয়ার জন্য কর্তা নিক স্টেমসের বাসায় এবং অফিসে ফোন করেও পাওয়া যাচ্ছে না তাকে, অথচ তার অনেক আগে বাসায় পৌঁছে যাওয়ার কথা। একইভাবে, সহযোগী কালভার্টকেও ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। এক অজানা ভয় আর শঙ্কা জড়িয়ে ধরেছে মার্ক অ্যান্ড্রুজকে। শেষমেষ জানতে পারে যে, মারাত্মক এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মেরে ফেলা হয়েছে নিক স্টেমস এবং এজেন্ট কোলভার্টকে।

প্রেসিডেন্টের আসন্ন বিপদ সম্পর্কে যারা যারা জানে, তাদের একে একে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে পৃথিবী থেকে। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ খবরটি জেনে গেল পাঁচজন মানুষ। আর রাত সাড়ে নয়টার মধ্যে এদের চারজন হয়ে গেল খুন। এখন? আমেরিকার সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি কি বাঁচতে পারে পরিকল্পিত আততায়ীর হামলা থেকে? একা, সদ্য এফবিআইতে যোগদান করা শিক্ষানবীশ এজেন্ট মার্ক অ্যান্ড্রুজ কি করতে পারবে একা? আদৌ কি কিছু পারবে?

নিজের ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়ায় বলবো যে, লেখক জেফরি আর্চারের ‘শ্যাল উই ট্যাল দ্য প্রেসিডেন্ট’ বইটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি চমকপ্রদ এক রাজনৈতিক উপন্যাস, যেখানে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে এসে স্বার্থবাজরা ধেয়ে আসে সন্তর্পণে।  পুরো বইটি একটি চমৎকার রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় সাজানো, প্রতিটি তারিখ এবং প্রতিটি অংশ একদম পরিপূর্ণ করে তুলেছে এই উপন্যাসটিকে, বইটিকে।

আমেরিকার চল্লিশতম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দৃপ্ত ভঙ্গিতে শপথ গ্রহণ করলেন অ্যাডোয়ার্ড মুর কেনেডি। এই পর্যায়ে আসার জন্য স্বাভাবিকভাবেই তাকে অনেক কঠিন একটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। কিন্তু ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসের চমৎকার একটা দিনে এফবিআই’র গুটিকয়েক সদস্য এক ভয়াবহ তথ্য আবিষ্কার করলেন। প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র চলছে, আর সেই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মদদ দিচ্ছেন স্বয়ং এক সিনেটর!

পরিকল্পনার অংশ করে প্রেসিডেন্টকে আনা হয়েছে একটি আইন ঘোষণার দিনে, যেখানে প্রেসিডেন্ট মঞ্চে উঠবেন আর ঘোষণা করবেন সেই আইন, সংবিধান। কি এমন আইন ছিল সেটি? এখন এফবিআই বা কী করবে? তখন তারা পরস্পর ভেবে চলছে, ‘শ্যাল উই টেল দ্যা প্রেসিডেন্ট?’  দুর্দান্ত এই রাজনৈতিক থ্রিলার, উদ্বেগেপূর্ণ এই রোমাঞ্চিত বইটি পড়ার জন্য সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

একুশে বইমেলা ২০১৮