কয়েক বছরের তুলনায় এবার হজ নিবন্ধনের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৫, ২০২৫

কয়েক বছরের তুলনায় এবার সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে হজ নিবন্ধনে। সরকারের অমনোযোগিতার কারণে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের আস্থাও দিন দিন কমছে।

প্রতি বছর হজযাত্রীর ১০ শতাংশের কম কোটা বরাদ্দ হয়, এবার তাও পূরণ করতে পারেনি ধর্ম মন্ত্রণালয়। নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হলেও হজযাত্রী পায়নি তারা। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু ও ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তার যোগসাজশে সরকারি হজ ব্যবস্থাপনাকে বারবার বিতর্কিত করার অভিযোগ উঠেছে।

চলতি বছর ২৭ জুলাই থেকে হজযাত্রীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর প্রায় ৩ মাসে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের প্রাথমিক নিবন্ধন করেছে ৭৩ হাজার ৪১৬ হজযাত্রী। যা শতকরা হিসাবে প্রায় ৫৭ শতাংশ। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, আগামী বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার কথা।

এবার হজে যেতে আগ্রহী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নিবন্ধনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। ১৬ অক্টোবর ছিল সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধনের শেষ সময়। কিন্তু এবার কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি। অনেক মুসলমানের ইচ্ছে থাকার সত্ত্বেও অতিরিক্ত বিমান ভাড়া ও নিবন্ধনের বাড়তি আর্থিক চাপ সামলাতে না পেরে নিয়ত করেও হজে যেতে পারছে না।

হজের নিবন্ধনের সময়ও আর বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এখনো হজের কোটা খালি রয়েছে ৫৩ হাজার ৭৮২ জনের। শতকরা হিসাবে প্রায় ৪৩ শতাংশ।

পাঁচ বছরে হজের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে ৮৫ হাজার ২৫৭ হজযাত্রী। যার মধ্যে পুরুষ ৬৩ আর মহিলা ৩৭ শতাংশ। আর ৬০ বছরের উপরে হজযাত্রী ছিল ৩২ শতাংশ। ২০২৩ সালে ১ লাখ ২২ হাজার ৫৫৮। এর মধ্যে ৬৩ পুরুষ আর ৩৭ শতাংশ মহিলা। ৬০ বছরের উপরে হজযাত্রী ছিল ৪০ শতাংশ।

একইভাবে ২০২২ সালে ৬০ হাজার ১৪৬ জন। পুরুষ ৬৫ আর মহিলা ৩৫ শতাংশ। ৬০ বছরের উপরে হজযাত্রী ছিল ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের কারণে হজ অনুষ্ঠিত হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৫২ জন। পুরুষ ৬৪ আর মহিলা ৩৬ শতাংশ। আর ৬০ বছরের উপরে ৫১ শতাংশ।

২০১৮ সালে ১ লাখ ২৭ হাজার ২৯৮ জন। এতে ৬৫ পুরুষ আর মহিলা ৩৫ শতাংশ। আর ৬০ বছরের উপরে হজযাত্রী ছিল ৫৪ শতাংশ। এই সময়গুলোতে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবারও হজ প্যাকেজের মূল্য প্রত্যাশিতভাবে কমানো হয়নি। স্বাভাবিক বিমান ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি খরচ ধরা হয়েছে। প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য যে টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

এছাড়া অর্থনৈতিক কারণে অনেকে বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা রাখলেও সেটি তুলতে পারছে না। পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব রয়েছে।

জানা গেছে, এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাথমিক নিবন্ধন করেছে ৪ হাজার ১০২ জন। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছে ৬৯ হাজার ৩১৪ জন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ২৬ মে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। ২৮ সেপ্টেম্বর সরকারিভাবে ৩টি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ঘোষিত হজ প্যাকেজ-১ (বিশেষ) এর খরচ ধরা হয় ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা।

হজ প্যাকেজ-২ এ খরচ ধরা হয় ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা এবং হজ প্যাকেজ-৩ এ খরচ ধরা হয় ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা। এই প্যাকেজের বাইরে রয়েছে খাবার খরচ। একইভাবে একদিন পর বেসরকারিভাবে ৩টি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে হাব। এর মধ্যে সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, “ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সম্প্রতি ওমরাহ পালন করার প্রবণতা বাড়ছে। তাই হজ নিবন্ধনে আগ্রত কম। অনেকের ধারণা, ওমরাহ পালন করলে আর হজ করার প্রয়োজন নেই। এই ভুল ধারণার কারণেও সাড়া কম। একই সঙ্গে মানুষের অর্থ সংকট ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবও রয়েছে।”

আল কুতুব হজ ট্রাভেলসের মালিক হাবিবুল্লাহ মুহাম্মাদ কুতুবুদ্দীন বলেন, “হজের নিবন্ধনের সময় শেষ হয়েছে। আর বৃদ্ধি করা হবে কিনা, জানি না। এবার প্রাক ও প্রাথমিক নিবন্ধনসহ প্রতি হজযাত্রীর ৩ লাখ ৮০ হাজার নির্ধারণ করা হয়। যেটি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত। এতে হজযাত্রী সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। হাব ও এজেন্সি মালিকরা এই অর্থ কমানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করা হলেও সাড়া মিলেনি।”

তিনি আরও বলেন, “এছাড়া এবার হজযাত্রীর বিমানের ভাড়ার টাকাও অগ্রিম নেওয়া হয়েছে। যার ফলে মাত্রাতিরিক্ত টাকা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধনে আগ্রত দেখানি হজযাত্রীরা। হজ নিবন্ধনে সরকারের ভার্বমূতি নষ্ট করতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কিছু ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তা জড়িত। যাদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যাক ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা হজ নিবন্ধনে সুযোগ পায়নি। সৌদি সরকারের আইনের বাধ্যবাধকতার কথা বলে এ ধরনের সুযোগ নেওয়া হয়েছে।”