আফতাব, গুলতেকিন ও শামীমা জামান

আফতাব, গুলতেকিন ও শামীমা জামান

গুলতেকিন নয়, জন্মদিনে বিয়ের খবর আমিই দেই

শামীমা জামান

প্রকাশিত : নভেম্বর ১৫, ২০১৯

এই বিষয়টি নিয়ে আর লেখার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু কিছু অভিযোগ, লেখা চোখে পড়লো যেখানে গুলতেকিন কেন হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে নিজের বিয়ের ঘোষণা দিলেন এইসব বাজে আলাপ হচ্ছে। সেখানে সত্যিটা জানানো জরুরি মনে করছি। যে কাজটি তিনি করেননি (যদি করতেনও সেটা কোনও অন্যায় হতো না) সেই ব্যাপারে তার দিকে নেতিবাচক মন্তব্য দেখে চুপ থাকা অনুচিত। যেহেতু গুলতেকিন নয়, জন্মদিনে গুলতেকিনের বিয়ের খবর আমিই প্রথম মিডিয়াতে আনি। গুলতেকিন-আফতাবের বিয়ে হয় ২৫ অক্টোবর। যা পরিবার ও অল্পকিছু কাছের বন্ধুরাই জানতেন। মিডিয়া ঘুণাক্ষরেও জানতো না। জানবে কি করে, এখনকার কপি পেস্ট মারা সাংবাদিকতার যুগে তথ্যের জন্য মেধা খরচ করেন কি দুদে সাংবাদিক ভাইয়েরা? উনাদের তথ্যের অন্যতম উৎস এখন সেলিব্রেটিদের ফেসবুক স্ট্যাটাস।

সে যাক গে। খবরটি নিয়ে ইতিবাচক কিছু কথা লেখার জন্য ছটফট করছিলাম। কিন্তু আমার উপর কারো কঠিন নিষেধাজ্ঞা ছিল, ‘খবরদার এ নিয়ে কিছু লিখবে না’। ফলে চুপ মেরেই ছিলাম। এমন নয় যে, চুপিসারে বিয়ে করে কাউকে না বলে সমাজের কাছে ভালো থাকতে চান গুলতেকিন। আবার এমনও নয়, মিডিয়াকে জানান দিয়ে বিয়ের ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় থাকা দরকার তার। এসব জাগতিক সস্তা বিষয়ে যেমন তার আগ্রহ নেই, তেমনি মিডিয়া বা আমজনতা কী ভাবলো, এসবের থোড়াই তিনি পরোয়া করেন। তিনি থাকেন তার একান্ত ব্যক্তিগত জগতের মাঝে। বিয়ের দিনে তাদের দুজনের যে রহস্যময় স্ট্যাটাস, কবিতা চালাচালি— এগুলো এতটাই আলো-আঁধারির যে, বাইরের কারো বোঝার উপায় নেই, ওটা ছিল তাদের বিয়ের ঘোষণা। এরপর কেটে গেছে দু’সপ্তাহ। মিডিয়া সরগরম মিথিলার অন্তর্বাস, ক্লিভেজ, ফাহমির শুয়ে থাকা নিয়ে।

‘মিথিলাকে কেন স্যালুট দিতে হবে‘ শিরোনামে নিউজ পোর্টাল ছাড়পত্রে কটা আর্টিকেল লিখতে যেয়ে শেষের দিকে খুব ইচ্ছে করছিল, এইখানেই লিখি, মিথিলাকে নয় স্যালুট দিন গুলতেকিনকে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞার কথা ভেবে লিখলাম না। হুমায়ূন স্যারের জন্মদিন গেল। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে সবাই কত কী যে লিখছে! আমারও কিছু লিখতে হয়। সেই লিখতে বসেই আর চেপে রাখতে পারলাম না। খুশির সংবাদটি সবাইকে জানাতে ইচ্ছে হলো। ‘অভিনন্দন প্রিয় গুলতেকিন’ শিরোনামের আর্টিকেলটি প্রকাশিত হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই প্রথমে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ সম্পাদক শ্রদ্ধেয় পীর হাবিব ভাই কথা বলেন আমার সাথে। তারপর তিনিই প্রথম বিস্তারিত তথ্যজুড়ে সংবাদটি প্রকাশ করেন। তার সংবাদ থেকেই বাকি পত্রপত্রিকা কপি পেস্ট করে। ততক্ষণে আমার আর্টিকেল ভাইরাল। সাধারণত নিউজ থেকে আর্টিকেল লেখা হয়। এক্ষেত্রে আর্টিকেল থেকে নিউজ হয়েছে। গুলতেকিন বা তার পরিবারের কেউ এসব কিছুই জানেন না। অথচ আপনারা ছি ছি করছেন তিনি এই দিনে কেন নিজের বিয়ের ঘোষণা দিলেন।

আমার ইনবক্সে সাংবাদিক ভাইয়েরা এসে নানান প্রশ্ন করছেন। আর্টিকেল থেকে নিউজ হওয়ার মধ্যবর্তী কয়েক মিনিটে। একজন বিরাট বড় জ্ঞানপাপী সাংবাদিক ও সুলেখক তো রীতিমতো রেগেমেগে গেলেন। বললেন, ‘আজকের দিনে নিশ্চিত না হয়ে এমন একটি লেখা আপনি কেন লিখলেন? আপনি জানেন, এই লেখার জন্য আপনার প্রতি পাবলিক রিয়াকশন কি হতে পারে? আপনার অল্প যা জনপ্রিয়তা আছে, সেটাও হারাবেন। গুলতেকিনের সাথে আমার কথা হয়েছে, এগুলো মিথ্যাচার। হা হা, গুলতেকিনের এখন আপনার সাথে কথা হওয়ার কথা না, উনার এখন ঘুমানোর কথা। উনি আমেরিকায়। মহান হে সাংবাদিক, আমার শীলার সাথে কথা হয়েছে। শীলা বলেছে, সব মিথ্যে। আপনারা নারীবাদীরা সব কিছুতে নারীবাদ টেনে এনে গুলতেকিনের আসলে চরিত্র হননই করছেন।’

এই বেলা আমি একটু চিন্তিত হলাম। শীলা অস্বীকার করেছে! নোভা কি আনফ্রেন্ড করে দিল এ লেখা দেখে? গুলতেকিন কি ভাব্বেন এসব লেখা দেখে! আর আপনারা বলছেন জন্মদিনে গুলতেকিন বিয়ের ঘোষণা দিলেন!

কবি ব্রাত্য রাইসু লিখেছেন, হুমায়ুনের জন্মদিনে গুলতেকিনের বিয়ের খবর প্রকাশের মধ্যে কি আছে? ১. নিউজ ভ্যালু। ২. নির্মমতা। ৩. ছোটলোকি। ৪. প্রতিশোধ। চমক! এ কাজটি সঠিক মনে করেন কিনা এ নিয়ে তিনি ফেসবুকে পল ক্রিয়েটও করেছেন। মেহের আফরোজ শাওনের পারিবারিক বন্ধু লেখক মুনিয়া মাহমুদ লিখেছেন, ‘গুলতেকিন তার সাবেক স্বামী হুমায়ূনের জন্মদিনকে তার বিয়ের আনন্দ থেকে ছোট করে দেখলে সেটা অবশ্যই কাম্য নয়। জন্মদিনে তিনি এই ঘোষণা দিয়ে হুমায়ূন ভক্তদের ডাবল আনন্দ দিয়েছেন...।’ আরো অনেকের অনেক লেখাই চোখে পড়লো। না জেনে লোকে কত কি ভেবে ফেলে! জন্মদিনে এই লেখা লিখে চমক দেয়ার ইচ্ছে একান্তই আমার নিজস্ব। গুলতেকিন তো জানেনই না, মিডিয়ারও কোনও দুরভিসন্ধি নয়। তারা যেদিন খবর পেয়েছে সেদিনই তো ছাপবে।

মানুষের কত কথা! ক‘জনকে দেখলাম, গুলতেকিন দ্বারা হুমায়ূন নির্যাতিত হয়ে ঘরছাড়া জীবনে কত কষ্ট করেছেন, সেসব বলতে বলতে গুলতেকিনকে দাজ্জাল স্ত্রী বানিয়ে দিচ্ছেন। জন্মদিনে শাওনের দীর্ঘ ইউটিউব সাক্ষাৎকারেও তিনি সেরকম কিছু ইঙ্গিতই দিলেন। অথচ গুলতেকিনের কাছের মানুষেরা জানেন, উনি কত নরম স্বভাবের। স্বামীর পেডোফেলিক স্বভাবে বিরক্ত হবেন না শাবানা আপুর মতো ঝিনুক নীরবে সহিবেন, সে সিদ্ধান্ত তার। নিজেকে অসম্মান করে স্বামীকে ধরে রাখবেন না ক্ষমা না করার সিদ্ধান্ত নেবেন, সে বিচারও তার। ঠিক তেমনি চার বছর একা ব্যাচেলর জীবনের কষ্ট সহ্য করে ৯ বছরের প্রেমকে সমাজে স্বীকৃতি দেবেন কিনা, সে সিদ্ধান্তও লেখকের। প্রতিটি মানুষকে তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করলে বিচার-বিবেচনাগুলো একপেশে হয় না। হুমায়ূন ভক্তরা ব্যক্তি হুমায়ুনকে ঈশ্বরের জায়গায় বসিয়ে ফেলেছেন, যেন উনার সাত খুন মাফ। তেমনি গুলতেকিন ভক্তরাও শাওনকে ডাইনি বানিয়ে ফেলেছিল। এখনো বলা হয়, হুমায়ূনের সম্পদের লোভে শাওন সব আঁকড়ে আছেন।

চ্যানেল আইয়ের একটা ছোট্ট অনুষ্ঠানে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে ডেকে শাওনকে শাহরিয়ার নাজিম জয় প্রশ্ন করছেন, ‘হুমায়ূনের সম্পত্তি ভাগ হয়েছে?’ কী অশ্লীল প্রশ্ন! যেন হুমায়ূনের স্ত্রী নন, উনি বিল গেটসের স্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করছেন। একজন লেখকের ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে ঠিক কতদূর বলা যায়, সেই ধারণাটুকুও এরা রাখেন না। তবে একটা ব্যাপার খুব ইতিবাচক। গুলতেকিনের বিয়ের খবরটি প্রায় সকলেই ভীষণ সুন্দরভাবেই নিয়েছেন। শত শত প্রশংসাবাণী আমি নিজেই পেয়েছি। যেখানে যে কোনও ইয়ং স্টারদের বিয়ের খবরের নিউজ লিংকে বেশির ভাগই গালি দেখি, সেখানে গুলতেকিনকে সকলে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, অভিনন্দিত করেছেন। নিউজ ফিড ভরে গেছে অভিনেত্রী আয়েশা আখতারের (ও মানিক কি বাত্তি জালাইলি) ছেলে কবি আফতাব আহমেদ ও প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁর নাতনি কবি গুলতেকিন খানের মনোরম ছবিতে।

লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট