শামীমা জামান

শামীমা জামান

ঘুমিয়ে আছে মুরাদ টাকলা সব ক্ষমতার অন্দরে

শামীমা জামান

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৫, ২০২২

ইস্যু শেষ হতেই আমরা ভুলে যাই ভয়াবহতম ঘটনাটিও। এক ইস্যুর নিচে চাপা পড়ে যায় আরেক ইস্যু। এক্ষেত্রে নতুন ইস্যুটি যদি কোনো তারকার বিয়ের মতো তুচ্ছ ঘটনাও হয়, তবুও চাপা পড়ে যায় নৃশংসভাবে খুন হওয়ার ঘটনাটিও। যেন ট্রেন্ডি বিষয় ছাড়া আর কোনো বিষয় চলে না।

যাই হোক, ক‘দিন আগের টক অব দ্যা কান্ট্রি মুরাদ টাকলাকে সবাই এখন ভুলে গেছে। তিনি পালালেন, ব্যার্থ পর্যবাসিত হয়ে দেশে ফিরে এলেন। এই পর্যন্ত সবার নজরে ছিলেন। এরপর তিনি কোথায় আছেন, কী করছেন, আর কোনো খবর নেই। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়ে গেছে তার রগরগে ফোনালাপগুলো।

আহা, কী সেই ফোনালাপ! কী অপুর্ব ভাষা একজন মন্ত্রী মহোদয়ের! একজন নায়িকাকে তুই তোকারি করে কথা বলছেন। যদিও তিনি সব সেলিব্রিটিদেরই তুই তোকারি করে বলেন। এর কারণও আছে। লোকে দেখে যেন ভাবে, আরে, এত বড় সেলিব্রিটির সাথেও তুই তোকারি সম্পর্ক! কী আপন তাহারা!

এই অপকর্ম কলকাতার দাদারা করে থাকেন। নিজেকে বেশ একটা হম্বি তম্বি দেখাতে একদিনের পরিচিতকেও স্ক্রিনে সবার সামনে তুই তোকারি করে বলেন। ভাবখানা, আমি হলাম গুরু তোরা সব শিষ্য। যাই হোক, শুধু তুই তোকারি নয়, যে অকথ্য শব্দচয়ন তিনি নায়িকার সাথে করেছিলেন তা কোনো রিকশাঅলাও এখন আর করে না।

সভ্য সমাজের মানুষ, তারও অনেক অনেক ওপরের মন্ত্রণালয়ের সভ্য ব্যক্তির ভাষা কী করে এমন হয়! একটা মেয়েকে কোন কোন ভঙ্গিতে ভোগ করবেন সেই কথা মেয়েটিকে বলার মাঝেই যেন তিনি চরম পুলকে পৌঁছে গেছেন। অপর প্রান্ত থেকে নায়িকার আর কীইবা করার ছিল।

অনেকে মাহিকে দুষেছেন। কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন, ফোনালাপটিকে যদি ফোনোসেক্স ধরা হয় (মুরাদ আসলে সেটাই করেছিলেন) সেটি ছিল একপাক্ষিক। মাহির  পক্ষ থেকে রগরগে প্রতিউত্তর শোনা যায়নি। আরেকটি বিষয়ও উল্লেখ্য, মাহির সাথে কথা বলার আগেই মুরাদ ইমনকে বলছিলেন, ‘মাহিতো আমার ফোন ধরবে না।’

রগরগে জঘন্য আলাপের যে বিষয়টি রীতিমতো অপরাধের আওতায় আসে সেটি মাহিকে তুলে আনার জন্য দেশের সমস্ত বাহিনীর ভয় দেখিয়ে রীতিমতো হুমকি দিলেন। একজন মন্ত্রী যখন এমন হুমকি দেন তখন সামান্য নায়িকার ভয় না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এই অপরাধের জন্য তার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো মামলা হয়নি।

কে করবে মামলা? মাহি? অপরাধী তো কোনো যে সে লোক নয়, স্বয়ং মাননীয় সরকারের মন্ত্রী। হোক পদচ্যুত। তবু তার আছে ক্ষমতা। পদত্যাগ তো দুইদিনের পাবলিক দেখানো শো অফ। সরকারের যদি মুরাদের প্রতি সাপোর্টই না থাকে কিভাবে সে কোভিড টেস্ট ছাড়াই কানাডার উদ্দেশ্য দেশত্যাগ করতে পারো?

মতারেক রহমান বা জাইমা রহমান সম্পর্কে মুরাদ যে অকথ্য মন্তব্য করেছেন সেগুলো আসলে সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে কতটুকু বিব্রত করেছে? এমন ধরনের কথা মুরাদ কেবল খাস বাংলায় বলে ফেলেছেন। বাকিরা (আওয়ামী পন্থী) ভদ্র ভাষায় হলেও এর আশপাশ দিয়েই বলেন। এসব কথা মুরাদ কেবল মাননীয়াকে খুশি করতেই বলেন।

যেমনটি তিনি আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেন তিনি ঘুমাতে পারেন না, খেতে পারেন না কিছু শেখ রাসেলের কথা ভেবে! এভাবে বলে বলেই না তিনি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। তাই মুরাদ ভক্তদের চিন্তা নেই। ক’দিন ঘাপটি মেরে থেকে সময়মতো বহাল তবিয়তেই কাম ব্যাক করবেন তিনি। বস্তুত মুরাদ তো একা মুরাদ নয়। এমন মুরাদ ক্ষমতার চারিপাশেই গিজগিজ করে।

মুখোশের আড়ালে তাদেরকে চেনা যায় না। তবু মুরাদের বিচার চাইতে হবে। শুধুমাত্র পদচ্যুত করাই শাস্তি হয় না। মুরাদের স্ত্রী মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে ৯৯৯ এ কল করেছেন। তিনি নিজেও একজন ডাক্তার। মান ইজ্জতের কাছে মাথা নত করে কতটা বিপদগ্রস্থ না হলে তাকে এই কাজ করতে হয়! উন্নত দেশে এমন অভিযোগে সাথে সাথেই অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়।

অথচ পুলিশ যখন এসেছিল মুরাদ তখন বাসায়ই ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন একজন অপরাধী যার কাছে তার নিজের পরিবার ও নিরাপদ নয়, তার গ্রেফতার না হওয়াটা একমাত্র এই দেশেই সম্ভব।

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কবি