ঘূর্ণিঝড় কালমেগির তাণ্ডবে ফিলিপাইনে নিহত ৫৮
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : নভেম্বর ০৫, ২০২৫
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় কালমেগির সৃষ্ট প্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যায় ৫৮ জন নিহত হয়েছে। কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোরের দিকে কালমেগি আঘাত হানতে শুরু করে এবং বুধবার আঘাত হানে। কালমেগির প্রভাবে দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় সেবু দ্বীপের সব শহর প্লাবিত হয়েছে। কর্দমাক্ত বন্যার পানির তোড়ে ভেসে যাচ্ছে গাড়ি, ট্রাক এমনকি বিশাল আকারের কনটেইনার।
সেবুর বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপ-প্রশাসক রাফায়েলিতো আলেজান্দ্রো বলেন, “কেবল সেবুতেই এখন পর্যন্ত ২১ জনের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। টাইফুনের প্রভাবে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ জনে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী, বেশির ভাগ মানুষই পানিতে ডুবে মারা গেছে। কালমেগির আঘাত হানার আগের ২৪ ঘণ্টায় প্রাদেশিক রাজধানী সেবু সিটির আশপাশের এলাকায় ১৮৩ মিলিমিটার (৭ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা মাসিক গড় ১৩১ মিলিমিটারের চেয়েও অনেক বেশি বলে দেশটির সরকারি আবহাওয়া অফিসের বিশেষজ্ঞ চারম্যান ভারিলা জানিয়েছেন।”
মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে প্রাদেশিক গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো বলেন, “সেবুর পরিস্থিতি সত্যিই নজিরবিহীন। আমরা ভেবেছিলাম প্রবল বাতাসই বিপদ ডেকে আনবে। কিন্তু... প্রকৃত ঝুঁকির কারণ হচ্ছে পানি। বন্যার পানিতে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।”
স্থানীয় দুর্যোগ কর্মকর্তা এথেল মিনোজা বলেন, “সেবু সিটিতে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং উদ্ধারকর্মীরা এখনো পানিবন্দি মানুষদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।”
এছাড়া লেইতে প্রদেশে নিজ বাড়িতে পানিতে ডুবে এক বৃদ্ধ মারা গেছে। আর বোহলে এলাকায় গাছচাপা পড়ে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। সেবু সিটির ২৮ বছর বয়সি বাসিন্দা ডন ডেল রোসারিও বলেন, “ঝড়ের সময় আমি অন্যদের সঙ্গে একটি ভবনের ওপরের তলায় আশ্রয় নিয়েছিলেম। পানি খুব দ্রুত উঠছিল। ভোর ৪টার মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছিল না। আমি এখানে ২৮ বছর ধরে আছি। এর চেয়ে ভয়াবহ কিছু কখনও দেখিনি।”
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা আলেজান্দ্রো বলেন, “ঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ থেকে প্রায় ৪ লাখ মানুষকে আগাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালের দিকে ত্রাণ তৎপরতায় সহায়তা করার সময় একটি উড়োজাহাজ উত্তর মিন্দানাও দ্বীপে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে ফিলিপাইনের সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে।”
দেশটির সামরিক বাহিনীর পূর্ব মিন্দানাও কমান্ড বিবৃতিতে বলেছে, “প্রবল ঝড়ের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করতে গিয়ে উপকূলীয় শহর বুতুয়ানের পথে থাকা সুপার হিউই উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান চলছে। সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের কেউ জীবিত আছেন কিনা, তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।”
টাইফুন কালমেগি বর্তমানে ফিলিপাইনের পশ্চিমাঞ্চলের ভিসায়ান দ্বীপপুঞ্জ অতিক্রম করছে। ওই এলাকায় ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগে বাতাস বইছে এবং দমকা হাওয়ার গতি ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে বলে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। এতে অনেক এলাকায় গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ছে।
ফিলিপাইনে প্রতিবছর গড়ে অন্তত ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে; যা প্রায়ই এমন অঞ্চলে তাণ্ডব চালায় যেখানে লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের মাঝে বসবাস করে।
ফিলিপাইন গত সেপ্টেম্বরে দুটি শক্তিশালী ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছিল, যার একটি ছিল সুপার টাইফুন রাগাসা। ওই সময় ফিলিপাইনে তাণ্ডব চালিয়ে প্রতিবেশী তাইওয়ানেও আঘাতে রাগাসা। এতে তাইওয়ানে অন্তত ১৪ জন নিহত হন। সূত্র: এএফপি























