চাঁদ সোহাগীর ডায়েরী

পর্ব ৩০

শ্রেয়া চক্রবর্তী

প্রকাশিত : অক্টোবর ০১, ২০১৯

একটা `তুই তোকারি`র প্রেম আমার করে ওঠা হলোনা ঠিকমতো। এই তো আশপাশে দেখি-শুনি হামেশাই, ‘এই তোকে না আজ ঘ্যামা লাগছে... উম্মা’। ভিড়ের মধ্যে, ‘এই তুই ওদিকে কি দেখছিলি রে... চল আজ বাড়ি।’ কিংবা ‘তোর পছন্দ করে কিনে দেয়া শাড়িটা পরেছি আজ।’ ‘এই শোন, আমার ফিরতে দেরি হবে। ডিনারটা বানিয়ে রাখিস কিন্তু।’ এই গোছের মিষ্টি একটা প্রেম আমার দ্বারা হলো না জাস্ট।

সেই কিশোরী বয়স থেকেই আমার প্রেফারেন্সে ছিল বড়দা, কাকু, জেঠু গোছের পিতৃপুরুষেরা। বয়সে দশ কুড়ি ত্রিশ বছরের পার্থক্যও সহজ সন্তরণযোগ্য বলে মনে হতো। মানে বয়স বেশি হওয়াটাই ছিল আকর্ষণের অন্যতম মাপকাঠি। ফাদার্স কমপ্লেক্স। স্নেহপ্রবণ পুরুষ আমার ভালো লাগতো। যে আটকায় না। সন্তানের মতো করে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে জানে। কিন্তু যা বোধগম্যতার বাইরে ছিল তা হলো, স্নেহপ্রবণতা একটি গুণ, যা আদৌ বয়সের প্যারামিটারের ওপর নির্ভরশীল নয়। পিতা হওয়ায় বয়স হলেই যে সকলে পিতৃসুলভ হবে, এমনটা তো নয়।

একটি সমবয়সী প্রেম যাও বা হলো, দিন গড়াতেই সে বলে, ‘আমরা এখন থেকে `তুমি` করে কথা বলবো।’ যাচ্চলে! পিতৃসুলভ হওয়ার বাসনায় সে তো হয়ে উঠলো করুণ প্রশাসক। এমনটা অবশ্য কেবল তার ক্ষেত্রেই হয়েছে, এমন নয়। অনেক পুরুষই আমাকে চেয়েছে, তারপর সে তার নিজের যাবতীয় স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রেখে সন্তর্পণে চেয়েছে মিউজিয়ামে রাখা দুর্লভ জিনিসটির মতোই আমাকেও প্রিসার্ভ করতে। বুঝতে পারে না সে, কোথায় হবে আমার যোগ্যতম স্থান। মাথায়, নয়নে না হৃদয়ে। এ কি তার দোষ? একটা ছাপোষা জীবনের মতো করে একজন সেরিব্রাল মহিলাকে গড়ে পিটে নেয়ার ভাবনাটাই যে ভুল।

আশপাশে এই সেদিন যে সকল সমবয়সীরা প্রেম করতো তাদের বয়সও ত্রিশের কোটা পার করে চলে গেল দ্রুত। তাদের অনেকেই এখন স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু সেই তুই তোকারির পরম্পরা সমানে চলেছে। সম্পর্কের মধ্যে এই সহজতা এই বন্ধুতা ভালো লাগে। কোনো জেনারেশন গ্যাপ নেই যেন। পরস্পরকে বোঝা হয়তো তাতে সহজ হয় খানিক।

আর আমার এই `তুই` না হয়ে উঠতে পারা জীবনে আমি দেখি, নিজেকে মাইল অতিক্রান্ত ধূসর সমতলের মতো। যার একদিকে পাহাড় অন্যদিকে সমুদ্র। নিজের জীবনটা আমার কোনোদিনই বাঁচা হলো না। অথচ যেন না-হাঁটা পথ দশ কুড়ি ত্রিশ মাইল আগের ফলক সেই কবেই ছুঁয়ে চলে এলাম। চলবে