ছিনতাইকারীর চোখ এবং একজন রাশেদ রহমান

কুশল ভৌমিক

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯

রাশেদ রহমানকে নিয়ে লিখতে বরাবরই আমার অন্যরকম এক অনুভূতি হয়। প্রথমত তিনি আমার এলাকার বড় ভাই, আমার পিতার ছাত্র এবং আমাকে ভীষণ স্নেহ করেন। সুতরাং অনেকে ভাবতেই পারেন, স্বজনপ্রীতি। দ্বিতীয়ত, কোনো বই সম্পর্কে আমার লেখার যোগ্যতাও নিজের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ।

তবুও লিখছি এই আত্মম্ভর আশায় যে, লেখক হিসাবে আমি অকৃতি অধম হলেও পাঠকসত্তা নিয়ে আমি কিন্তু গর্বিত। এই পাঠবিমুখ যুগেও আমি প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিনটি বই পড়ি এবং গত দু‘দিনে শেষ করলাম ‘ছিনতাইকারীর চোখ’।

বইটি প্রকাশ করেছে বেহুলাবাংলা এবং বইটিতে মোট গল্প রয়েছে পাঁচটি। বাবা, অপারেশন গোপালপুর থানা, এক মিথ্যারাতের গল্প, ছিনতাইকারীর চোখ এবং লাল টিপ।

একজন গল্পকারের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে story telling power, গল্প বলার ক্ষমতা। গল্প নির্মাণ এবং বর্ণনা রীতির ভিন্নতাই একজন গল্পকারকে করে তোলে অনন্য। আসলে গল্প হলো কল্পিত পটভূমির শৈল্পিক বিন্যাস, যদিও রাশেদ রহমানের সংজ্ঞা ভিন্ন।

তিনি বলেন, ‘গল্প হলো, কিছু সত্য, কিছু মিথ্যা আর কিছু বানানো।’ এই সংজ্ঞায়নের মতোই সরল তার গল্পের বর্ণনারীতি। চারপাশের চেনাজানা মানুষের অজানা মনস্তত্ত্বকে পাঠকের সামনে তুলে ধরেন অপূর্ব দক্ষতায়। তার ‘বাবা’ গল্পটি আত্মজৈবনিক কীনা এমন প্রশ্নে তার ঠোঁটে দেখেছি রহস্যের হাসি, যেন এ রহস্য উন্মোচনের দায়ভার পাঠকের, লেখক নির্বিকার।

‘অপারেশন গোপালপুর থানা’ গল্পটি যেন মুক্তিযুদ্ধের এক জীবন্তচিত্র। কাদেরিয়া বাহিনীর কনিষ্ঠতম সদস্য শহীদুল ইসলাম ওরফে লালুর গ্রেনেড অপারেশনের বর্ণনা, বঙ্গবন্ধুর কোলে থাকা ছোট্ট লালুর নিষ্পাপ অথচ বলিষ্ঠ জীবনদর্শন আমাদের ফিরিয়ে নেয় ৭১ এর রক্তঝরা দিনে।

‘একটি মিথ্যা রাতের গল্প’ যেন গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতায় এক সম্ভাবনাময় কবির আত্মাহুতি, যিনি দৈবচোখে দেখেছেন, পৃথিবীতে এত আলো অথচ মানুষ কিছুই দেখে না। পুলিশের পৈশাচিক আক্রোশে কিভাবে একজন সবজিবিক্রেতার প্রেমময় লাজুক চোখ হয়ে ওঠে ছিনতাইকারীর চোখ, অথচ যেই চোখ প্রতিরাতে উন্মাদনার সঙ্গী হতো এক রমণীর।

সত্যি বলতে কী, রাশেদ রহমান একজন কুশলী গল্পকার। তার গল্প পাঠ মানেই পাঠকমনে এক অন্যরকম তৃপ্তি। ‘ছিনতাইকারীর চোখ’ পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় বেহুলাবাংলার ১২৩ ও ১২৪ নম্বর স্টলে।

একুশে বইমেলা ২০১৮