জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী

জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী

জ্যোতির্ময় চক্রবর্তীর কবিতা ‘তেজপাতার মজা’

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২

ভালোবাসার সময় গেছে জলে
নিজেকে নিয়েছি ঢেলে আকরিক ছাঁচে
প্রাচীন বটের নিচে
কামারশালার উত্তপ্ত বায়ুর আঁচে।

মোহগ্রস্ত গোসতের দোকানের পাশে
ডেলিভারি বয়
সদা উদগ্রীব বেশে
মহাজনের নাম সংকীর্তন
আর আবিরাম অনুপ্রাস
সত্য নয় জেনেও
মেষপালকের খেলায় দিনাতিপাত
হায়; নিদারুণ অবহেলায়।
এই রাখাল যদি আর বাঁশি না বাঁজায়
নথ খুলে জানিও বিদায় প্রিয়
কোনো এক আকুল বর্ষায়

স্মৃতির শতরঞ্চি পড়ে
টেরাকোটা রোদের ওপর
বসে এসে যত মুখ
অমোঘ নির্বাক
নির্লিপ্ত অবাক;
বেঁচে আছি আজও
বড় বিস্ময় জীবন
প্রকৃত প্রেম সহজ এক প্রহসন
এবং স্বীকার করি
প্রমত্ত প্রেম দেহে ভিন্ন নয়।

আদান প্রদান করি
যত ধ্যান জ্ঞান ও অনুমান
তাপ চাপ আর যত প্রবাহ কৌশল
সব বায়ু সব জল আর সব কঙ্কাল।
সকল সফল বেগ
আবেগ সমান
সমান ব্যর্থ
জমিন ও আসমান।

সময় ধ্রুব ধরে
কেন্দ্রীভূত শূন্যাভিমুখি
রক্তধারার বিবরণী চারিত পথে
আপাত সমতল এই প্রকৃত বক্রতলে
ভালোবাসা গড়ে দিল আমাদের ঘরবাড়ি
ঘুঙুর বেঁধে চুমু খেয়েছিলে বাছুরের গালে
তারাদের সাথে জাগা বাসরের রাত
সন্তানের প্রিয়মুখ পৃথিবী
আমাদের মায়াকানন
আদিমাতা মৃত্তিকা, জীব-উদ্ভিদ পরম্পরা
মানুষের মৃগচঞ্চল মন
ভেঙে যায় সনাতন ধ্যান
নিভৃত রক্ত রেস হবে অবসান
দমে দমে কে পাঠায় সমন!

শিলাচিহ্নে যে অতীত
আবার আসব কোনোদিন
সময় শূন্য গ্রহে
আগ্রহ বিগ্রহে জুড়ে দিতে অক্ষর
সেইদিন ভালবাসা করো সাক্ষর!

দুই.
আশ্রমের কোণে ভাড়া করা ঘর
দুঃসময় আমাদের করে দিল পর
ধুসর ঊসর গ্রথিত পথে এসেছি পালিয়ে
উসকো খুসকো চুলে মাথা নুয়ে নুয়ে
সর্বদূষণ ফার্নেস চেম্বারে দাঁড়িয়েছি এসে।

পেটের ভিতর রাখি রাক্ষস
একান্নবর্তী হাঁড়ির বলক ওঠা ভাতে পাত উঠে গেছে
মায়ের কথা মনে পড়ে
কাঁদতে পারি না আমি আর অঝোরে
ভেসে যায় গান অন্ধস্বরে
আমি গোত্রবিহীন একা প্রবর
নিজেকে রক্তাক্ত করে নিজের নখর।

খা খা দুপুর
পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাতাস
ঘাসের হাড়ে ওড়ে ফড়িঙ
হাত ফসকে খণ্ড বিখণ্ড প্যারাডাইস
ইস, ভেঙে চুরমার সিরামিক সংসার
দেয়ালে গেঁথে গেছে পিঠ ইঞ্চি দুয়েক,
নাগরিক সঙ্কট—
(নোট রাখো এই সব মিনিস্ট্রোক)
ডাঙায় তড়পানো মীন
কানকোয় লুকানো সিঁদুর দিন!

ব-দ্বীপ বিস্ময় বোবাকাহিনি আমি
তুমি তা কোনো দিনই পড়োনি
তুমি কানে তুলো গুজে বাঁচো
ভাঙা বিশ্বাস করো জড়ো
ঘুমিয়ে পড়ো; যেন উজানের গুণ টানো নাকডাকা ঘুমে
আমাকে ক্ষমা করো!
ঘুমঘরে নতজানু আমি তোমার পায়ের কাছে
ডানা আঁকা জন্মের বর্ণিল বিকিরণে
প্রজাপতি করে জনম দিও আমারও!